ইপেপার । আজ রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রোগির মোবাইল চুরির সময় হাতেনাতে শিশু আটক : গণধোলাই : শিশু শুভকে ১০ ঘন্টা লাশ রাখা ঘরে আটকে রাখলেন আরএমও! : মোবাইল চুরির অপরাধে শুভ দশ ঘন্টা পর থানায় : ডাক্তার রানার বিরুদ্ধে সিভিল সার্জনের হস্তক্ষেপ কামনা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:৫৮:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই ২০১৭
  • / ৫০২ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে মোবাইলফোন চুরির সময় হাতেনাতে আটক হওয়া শুভকে অবশেষে থানায় নিয়েছে পুলিশ। গতকাল সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ড থেকে হাতেনাতে ওই শিশুকে আটক করে রোগীর স্বজনরা। পরে গণধোলাইয়ের পর তাকে নিয়ে লাশ রাখা হিমঘরে রাখে হাসপাতালের আরএমও। দীর্ঘ ১০ ঘন্টা লাশ ঘরে আটকে রাখার পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাকে সদর থানায় নেয় পুলিশ। দীর্ঘ ১০ ঘন্টা লাশ রাখা ঘরে শিশুকে আটকে রাখার ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের বিতর্কিত আরএমও’র বিরুদ্ধেও ফুঁসে উঠেছে স্থানীয়রা।
এবিষয়ে গতকাল মোবাইলফোনে আরএমও আবু হাসান মোহাম্মদ ওয়াহেদ রানার কাছে জানতে চাইলে তিনি চুরির অপরাধে শিশুকে লাশ ঘরে ১০ ঘন্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অপরাধ ঢাকতে তিনি নানা অজুহাত দেখাতে থাকেন।
জানা যায়, গতকাল বুধবার সকাল ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডের রোগির মোবাইলফোন চুরির সময় হাতেনাতে আটক হয় এক শিশু। পরে রোগির স্বজন এবং উপস্থিত সকলে ওই শিশুকে গণধোলাই দেয়। ওই শিশুর নাম শুভ। বয়স ১৪ বছর। পিতার নাম বাদল। পিতা মারা গেছে অনেক আগেই, মা ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করে। বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার আরাপপুরে। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আবু হাসান মোহাম্মদ ওয়াহেদ রানা ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশু শুভকে গণধোলাই শেষে তাকে নিয়ে লাশ ঘরে আটকে রাখে। সেখানে তাকে আটকে রেখে চলে যান আরএমও। দুপুর পর্যন্ত তিনি ফিরে না আসায় সেখানেই না খাওয়া অবস্থায় আটকা থাকে শিশু শুভ। পরে স্থানীয়দের মধ্যে কয়েকজন দুপুরের পর ওই শিশুর জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করে দেয়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও তাকে ছাড়ানো বা পুলিশে দেয়ার কোন খবর পাওয়া যায়নি। ওই শিশুকে আটকে রেখে চলে যাওয়ার পর আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি আরএমও’র।
এদিকে, আটকে রাখার প্রায় ১০ ঘন্টা পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে পুলিশ ওই শিশু শুভকে উদ্ধার করে। রাতেই তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা হেফাজতে নেয়া হয়। যেহেতু মোবাইলফোন চুরির সময় তাকে হাতেনাতে আটক করেছে স্থানীয়রা, তাই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে সদর থানা পুলিশ।
এ বিষয়ে গতকাল রাতে ভারপ্রাপ্ত আরএমও আবু হাসান মোহাম্মদ ওয়াহেদ রানার কাছে জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে ফোনে তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে পরেরদিন অফিসে গিয়ে তার বক্তব্য নেয়ার কথা বলেন। অবশেষে তিনি জানান, শুভকে লাশ রাখা ঘরে হয়েছিল কারণ তার সাথে আর কেউ আছে কিনা তা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। তবে শুভকে কেন পুলিশে সোপর্দ করা হলোনা তার কোন সদুত্তোর দিতে পারেননি আরএমও।
তবে, চুরির অপরাধে আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের এখতিয়ার আরএমও’র আছে কিনা জানতে চাইলে এই প্রতিবেদককে এড়িয়ে যান ভারপ্রাপ্ত আরএমও আবু হাসান মোহাম্মদ ওয়াহেদ রানা।
উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন আগে ডায়রিয়া আক্রান্ত এক রোগী ভোরে হাসপাতালে ভর্তি হতে আসলে সেই সময় ভারপ্রাপ্ত আরএমও আবু হাসান মোহাম্মদ ওয়াহেদ রানা সেই রোগীকে ভর্তি না করিয়ে ফেরত পাঠায়। এসময় একজন সাংবাদিকের অনুরোধে একজন সিনিয়র চিকিৎসকের অনুরোধে ডায়রিয়া রোগী সেই ভর্তি নেন বর্তমান আরএমও রানা। এছাড়া ভারপ্রাপ্ত আরএমও’র দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময় ডাক্তার রানা সাংবাদিক, রোগী, রোগীর সাথে আসা স্বজনদের সাথে দূর্ব্যবহার করার ঘটনাও নতুন নয়। এবিষয়ে চুয়াডাঙ্গার সুযোগ্য সিভিল সার্জনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রোগির মোবাইল চুরির সময় হাতেনাতে শিশু আটক : গণধোলাই : শিশু শুভকে ১০ ঘন্টা লাশ রাখা ঘরে আটকে রাখলেন আরএমও! : মোবাইল চুরির অপরাধে শুভ দশ ঘন্টা পর থানায় : ডাক্তার রানার বিরুদ্ধে সিভিল সার্জনের হস্তক্ষেপ কামনা

আপলোড টাইম : ০৪:৫৮:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই ২০১৭

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে মোবাইলফোন চুরির সময় হাতেনাতে আটক হওয়া শুভকে অবশেষে থানায় নিয়েছে পুলিশ। গতকাল সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ড থেকে হাতেনাতে ওই শিশুকে আটক করে রোগীর স্বজনরা। পরে গণধোলাইয়ের পর তাকে নিয়ে লাশ রাখা হিমঘরে রাখে হাসপাতালের আরএমও। দীর্ঘ ১০ ঘন্টা লাশ ঘরে আটকে রাখার পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাকে সদর থানায় নেয় পুলিশ। দীর্ঘ ১০ ঘন্টা লাশ রাখা ঘরে শিশুকে আটকে রাখার ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের বিতর্কিত আরএমও’র বিরুদ্ধেও ফুঁসে উঠেছে স্থানীয়রা।
এবিষয়ে গতকাল মোবাইলফোনে আরএমও আবু হাসান মোহাম্মদ ওয়াহেদ রানার কাছে জানতে চাইলে তিনি চুরির অপরাধে শিশুকে লাশ ঘরে ১০ ঘন্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অপরাধ ঢাকতে তিনি নানা অজুহাত দেখাতে থাকেন।
জানা যায়, গতকাল বুধবার সকাল ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডের রোগির মোবাইলফোন চুরির সময় হাতেনাতে আটক হয় এক শিশু। পরে রোগির স্বজন এবং উপস্থিত সকলে ওই শিশুকে গণধোলাই দেয়। ওই শিশুর নাম শুভ। বয়স ১৪ বছর। পিতার নাম বাদল। পিতা মারা গেছে অনেক আগেই, মা ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করে। বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার আরাপপুরে। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আবু হাসান মোহাম্মদ ওয়াহেদ রানা ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশু শুভকে গণধোলাই শেষে তাকে নিয়ে লাশ ঘরে আটকে রাখে। সেখানে তাকে আটকে রেখে চলে যান আরএমও। দুপুর পর্যন্ত তিনি ফিরে না আসায় সেখানেই না খাওয়া অবস্থায় আটকা থাকে শিশু শুভ। পরে স্থানীয়দের মধ্যে কয়েকজন দুপুরের পর ওই শিশুর জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করে দেয়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও তাকে ছাড়ানো বা পুলিশে দেয়ার কোন খবর পাওয়া যায়নি। ওই শিশুকে আটকে রেখে চলে যাওয়ার পর আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি আরএমও’র।
এদিকে, আটকে রাখার প্রায় ১০ ঘন্টা পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে পুলিশ ওই শিশু শুভকে উদ্ধার করে। রাতেই তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা হেফাজতে নেয়া হয়। যেহেতু মোবাইলফোন চুরির সময় তাকে হাতেনাতে আটক করেছে স্থানীয়রা, তাই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে সদর থানা পুলিশ।
এ বিষয়ে গতকাল রাতে ভারপ্রাপ্ত আরএমও আবু হাসান মোহাম্মদ ওয়াহেদ রানার কাছে জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে ফোনে তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে পরেরদিন অফিসে গিয়ে তার বক্তব্য নেয়ার কথা বলেন। অবশেষে তিনি জানান, শুভকে লাশ রাখা ঘরে হয়েছিল কারণ তার সাথে আর কেউ আছে কিনা তা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। তবে শুভকে কেন পুলিশে সোপর্দ করা হলোনা তার কোন সদুত্তোর দিতে পারেননি আরএমও।
তবে, চুরির অপরাধে আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের এখতিয়ার আরএমও’র আছে কিনা জানতে চাইলে এই প্রতিবেদককে এড়িয়ে যান ভারপ্রাপ্ত আরএমও আবু হাসান মোহাম্মদ ওয়াহেদ রানা।
উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন আগে ডায়রিয়া আক্রান্ত এক রোগী ভোরে হাসপাতালে ভর্তি হতে আসলে সেই সময় ভারপ্রাপ্ত আরএমও আবু হাসান মোহাম্মদ ওয়াহেদ রানা সেই রোগীকে ভর্তি না করিয়ে ফেরত পাঠায়। এসময় একজন সাংবাদিকের অনুরোধে একজন সিনিয়র চিকিৎসকের অনুরোধে ডায়রিয়া রোগী সেই ভর্তি নেন বর্তমান আরএমও রানা। এছাড়া ভারপ্রাপ্ত আরএমও’র দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময় ডাক্তার রানা সাংবাদিক, রোগী, রোগীর সাথে আসা স্বজনদের সাথে দূর্ব্যবহার করার ঘটনাও নতুন নয়। এবিষয়ে চুয়াডাঙ্গার সুযোগ্য সিভিল সার্জনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।