ইপেপার । আজ শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫

জেহালা বাজারে অর্পিত সম্পত্তিতে ৫ যুগ ধরে বসবাসকারী একটি পরিবারকে উচ্ছেদ! : আরো ৪ পরিবারকে উচ্ছেদের হুমকি : জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা : সিএস ও এসএ রেকর্ডভূক্ত নয়, তবুও আরএস রেকর্ডমূলে জমি দাবি : নেই সংশোধনের উদ্যোগ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:২৬:০৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই ২০১৭
  • / ৪২৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: আলমডাঙ্গার জেহালা বাজারে বসতঘর ভেঙ্গে অর্পিত সম্পত্তি লীজসূত্রে প্রায় ৫ যুগ ধরে বসবাসকারি একটি পরিবারকে উচ্ছেদের পর সেখানে গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। বসতবাড়ি ভেঙ্গে উচ্ছেদকারি ইউপি মেম্বর গতকাল ১৬ জুলাই ঘটনাস্থলে গিয়ে নতুন করে নানা হুমকি, গালিগালাজ করে বাকী পরিবারগুলোকে আবারও উঠে যাওয়ার আলটিমেটাম দিয়ে এসেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গার জেহালা বাজারে বসতঘর ভেঙ্গে অর্পিত সম্পত্তি লীজসূত্রে প্রায় ৫ যুগ ধরে বসবাসকারি একটি পরিবারকে গত ১৫ জুলাই উচ্ছেদ ও বাকী কয়েকটি পরিবারকে উঠে যেতে নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ উঠে জেহালা ইউপি সদস্য হিরালাল দোবের বিরুদ্ধে। ধনাঢ্য ব্যবসায়ি মুন্সিগঞ্জের শ্যাম সুন্দর আগরওয়ালার পক্ষে তিনি অবৈধভাবে ওই দরিদ্র পরিবারের বসতবাড়ি ভাংচুর ও অন্যান্যদের উঠে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে নির্যাতিত পরিবারগুলোর দাবি।
গতকাল বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভেঙ্গে দেওয়া বসতঘরের স্থলে, সামনে ও পেছনে গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। গতকালই তড়িঘড়ি করে সেখানে বৃক্ষ রোপণ করে নিজেদের দখলদারিত্বের নজির স্থাপনের অপচেষ্টা করা হয়েছে। দুর্দশাগ্রস্থ পরিবারের মহিলারা অভিযোগ তোলেন  ইউপি সদস্য হিরা লাল দোবের নেতৃত্বে গাছ লাগান হয়েছে। সে সময় ইউপি মেম্বর নানা ধরণের গালিগালাজ ও হুমকি ধামকিও দেন বলে তাদের অভিযোগ।
এছাড়া, গত পরশু ১৬ জুলাই দেওয়া এক সপ্তার মধ্যে সকলে উঠে যাওয়ার আল্টিমেটাম আবারও মনে করিয়ে দেন। “বাংলাদেশে যেখানে খুশি সেখানেই তাদের নামে মামলা করতে পারিস। আমার কিছুই করতে পারবি না। এখানে যদি থাকতে পারিস, তাহলে তোদের স্যান্ডেল আর আমার মুখ থাকল” এমন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে এসেছেন ইউপি সদস্য বলে জানিয়েছেন তারা।
এ প্রতিবেদক যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছেন, তখন একটি ভেঙ্গে নেওয়া ঘরের দাওয়ায় বসেছিলেন ৯০ বছরের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বৃদ্ধা রসেনা খাতুন। তিনি জানালেন, মাত্র ৭ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়। তারপর থেকেই এখানে বসবাস। তার ২ মেয়ে। নানা হুমকির মুখে ১ মেয়ে সম্প্রতি ঘর ভেঙ্গে চলে গেছে। গতকাল আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আকরাম হোসেন বলেন, আগামি ৩/৪ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহি অফিসার সমস্ত ডকুমেন্ট দেখে মাপজোক করে বিরোধের নিষ্পত্তি করে দেবেন। সে পর্যন্ত দু’পক্ষকেই শান্ত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যথায় নির্দেশ অমান্যকারি পক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে এসেছেন।
একাধিক নির্যাতিত পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা বাজারের মোট ২ দাগে মোট ১১ শতক অর্পিত জমিতে ৪/৫টি পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছে। পরিবারগুলোর দাবি পাকিস্থান শাসনামল থেকে অর্থাৎ প্রায় ৫ যুগ ধরে তারা বংশানুক্রমে লীজসূত্রে ওই জমিতে বসবাস করছেন। এলাকার ধন্যাঢ্য ব্যবসায়ি জেহালা বাজারের বাসিন্দা শ্যাম সুন্দর আগরওয়ালা সম্প্রতি ওই সরকারি খাস জমির নিকটে প্রায় ২০ শতক জমি ক্রয় করেছেন। সেই পুকুর ভরাট করে ধনাঢ্য ব্যবসায়ি শ্যাম সুন্দর আগরওয়ালার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণের পরিকল্পনা থাকতে পারে মন্তব্য করে অভিযোগকারীরা বলেছেন, সেখানে যাওয়ার কোন রাস্তা নেই। রাস্তা সৃষ্টি করতেই শ্যাম সুন্দর আগরওয়ালা বেশ কয়েক বছর ধরে তাদেরকে উচ্ছেদ করার অপচেষ্টা করে আসছেন। তারই অংশ হিসেবে গত পরশু জেহালা ইউপি মেম্বর হিরালাল দোবে ও শ্যাম সুন্দর আগরওয়ালার কর্মচারি আনিস তাদের বাড়িতে যায়। রাজমিস্ত্রী ইকতার আলীর স্ত্রী রাণী খাতুন বলেন, হিরালাল দোবে মেম্বর ও আনিস তাদের বসত বাড়ি ভেঙ্গে নিয়ে গেছে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বলেন, তাদের একটা বিয়েযোগ্য মেয়ে আছে। তাকে কোথায় রাখবেন? কে দেবেন নিরাপত্তা? এই চিন্তাটাই এখন তাদের পরিবারের বড় সমস্যা। এছাড়া ওই লীজের জমিতে বসবাসরত স মিল শ্রমিক তৈয়ব আলীর স্ত্রী সাইদা খাতুন, দিনমজুর শহিদুল ইসলামের স্ত্রী ঝর্ণা খাতুন, মৃত আলমঙ্গীর আলীর বিধবা স্ত্রী আয়েশা খাতুন ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের পিয়ন দলিলুর রহমানের স্ত্রী রোজিনা খাতুন অভিযোগ তুলে বলেন, শুধু একটি বসতবাড়ি ভেঙ্গে নিয়ে গিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি হিরালাল মেম্বর। বাকী পরিবারদেরকে ১ সপ্তাহের মধ্যে বসতঘর ভেঙ্গে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে গেছে। তা না হলে তিনি মেশিন নিয়ে গিয়ে ঘরিবাড়ি ভেঙ্গে দেবেন। সেই মেশিনভাড়া ঘন্টায় ১২ হাজার টাকা। মেশিন ভাড়ার টাকাও অসহায় পরিবারগুলিকে গুণতে হবে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত হিরালাল দোবের সাথে গত পরশু ১৬ জুলাই এ সংবাদ লেখার সময় মোরাইলফোনে কথা হয়। তিনি বলেন, ওই ৮ শতক জমি শ্রী শ্রী হরিবাসর নাথ মন্দিরের রেকর্ডীয় সম্পত্তি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মাপজোক করে সীমানা নির্ধারণ করে দিয়ে গেছে। কিন্তু ওই সম্পত্তিতে বসবাসকারিরা সেখান থেকে উঠতে চাচ্ছে না। তারা প্রথমে ৩ মাস সময় নিয়েছিল মন্দির কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে। এমনকি সেখান থেকে উঠে যাওয়ার সত্বে অনেক টাকাও নিয়েছে। তারপরও উঠেনি। ইতোপূর্বে পুলিশ দিয়ে উপজেলা নির্বাহি অফিসার তাদেরকে উচ্ছেদের চেষ্টা করেছিল বলে দাবি করে হিরালাল মেম্বর। সরকারিভাবে পুলিশকে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর কথা, বা আদালত সে নির্দেশ দেবেন। কিন্তু আপনি কীভাবে উচ্ছেদ করছেন প্রশ্ন করলে তিনি সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলতে বলেন।
একই সময়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি ভূমি সহকারি বজলুল হকের সাথে মোবাইলফোনে কথা হয়। তিনি বলেন, ওই ১১ শতক ভিপি জমির মধ্যে ৮ শতক জমি শ্যাম সুন্দর আগরওয়ালার নামে আরএস রেকর্ডে রেকর্ডভুক্ত হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে আজ অবধি কোন রেকর্ড সংশোধনি মামলা করা হয়নি বলেও তিনি জানান। গত বছর পর্যন্ত তাদেরকে লীজ প্রদান করা হলেও এ বছর কেন লীজ প্রদান করা হচ্ছে না জিজ্ঞেস করলে লীজের বিষয়টি তার এখতিয়ারভূক্ত নয় বলে জানান তিনি।
এই ১১ শতক ভিপি জমির মধ্যে ৮ শতক জমি শ্যাম সুন্দর আগরওয়ালার নামে আরএস রেকর্ডে রেকর্ডভুক্ত হলেও সিএস ও এসএ রেকর্ডে এর কোন বুনিয়াদ খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও এখনো পর্যন্ত রেকর্ড সংশোধনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে ভুক্তভোগীরা জানায়।
একই সাথে এই অসহায় পরিবারগুলো তাদের বসত ভিটা রক্ষার্থে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

জেহালা বাজারে অর্পিত সম্পত্তিতে ৫ যুগ ধরে বসবাসকারী একটি পরিবারকে উচ্ছেদ! : আরো ৪ পরিবারকে উচ্ছেদের হুমকি : জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা : সিএস ও এসএ রেকর্ডভূক্ত নয়, তবুও আরএস রেকর্ডমূলে জমি দাবি : নেই সংশোধনের উদ্যোগ

আপলোড টাইম : ০৫:২৬:০৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই ২০১৭

নিজস্ব প্রতিবেদক: আলমডাঙ্গার জেহালা বাজারে বসতঘর ভেঙ্গে অর্পিত সম্পত্তি লীজসূত্রে প্রায় ৫ যুগ ধরে বসবাসকারি একটি পরিবারকে উচ্ছেদের পর সেখানে গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। বসতবাড়ি ভেঙ্গে উচ্ছেদকারি ইউপি মেম্বর গতকাল ১৬ জুলাই ঘটনাস্থলে গিয়ে নতুন করে নানা হুমকি, গালিগালাজ করে বাকী পরিবারগুলোকে আবারও উঠে যাওয়ার আলটিমেটাম দিয়ে এসেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গার জেহালা বাজারে বসতঘর ভেঙ্গে অর্পিত সম্পত্তি লীজসূত্রে প্রায় ৫ যুগ ধরে বসবাসকারি একটি পরিবারকে গত ১৫ জুলাই উচ্ছেদ ও বাকী কয়েকটি পরিবারকে উঠে যেতে নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ উঠে জেহালা ইউপি সদস্য হিরালাল দোবের বিরুদ্ধে। ধনাঢ্য ব্যবসায়ি মুন্সিগঞ্জের শ্যাম সুন্দর আগরওয়ালার পক্ষে তিনি অবৈধভাবে ওই দরিদ্র পরিবারের বসতবাড়ি ভাংচুর ও অন্যান্যদের উঠে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে নির্যাতিত পরিবারগুলোর দাবি।
গতকাল বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভেঙ্গে দেওয়া বসতঘরের স্থলে, সামনে ও পেছনে গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। গতকালই তড়িঘড়ি করে সেখানে বৃক্ষ রোপণ করে নিজেদের দখলদারিত্বের নজির স্থাপনের অপচেষ্টা করা হয়েছে। দুর্দশাগ্রস্থ পরিবারের মহিলারা অভিযোগ তোলেন  ইউপি সদস্য হিরা লাল দোবের নেতৃত্বে গাছ লাগান হয়েছে। সে সময় ইউপি মেম্বর নানা ধরণের গালিগালাজ ও হুমকি ধামকিও দেন বলে তাদের অভিযোগ।
এছাড়া, গত পরশু ১৬ জুলাই দেওয়া এক সপ্তার মধ্যে সকলে উঠে যাওয়ার আল্টিমেটাম আবারও মনে করিয়ে দেন। “বাংলাদেশে যেখানে খুশি সেখানেই তাদের নামে মামলা করতে পারিস। আমার কিছুই করতে পারবি না। এখানে যদি থাকতে পারিস, তাহলে তোদের স্যান্ডেল আর আমার মুখ থাকল” এমন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে এসেছেন ইউপি সদস্য বলে জানিয়েছেন তারা।
এ প্রতিবেদক যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছেন, তখন একটি ভেঙ্গে নেওয়া ঘরের দাওয়ায় বসেছিলেন ৯০ বছরের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বৃদ্ধা রসেনা খাতুন। তিনি জানালেন, মাত্র ৭ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়। তারপর থেকেই এখানে বসবাস। তার ২ মেয়ে। নানা হুমকির মুখে ১ মেয়ে সম্প্রতি ঘর ভেঙ্গে চলে গেছে। গতকাল আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আকরাম হোসেন বলেন, আগামি ৩/৪ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহি অফিসার সমস্ত ডকুমেন্ট দেখে মাপজোক করে বিরোধের নিষ্পত্তি করে দেবেন। সে পর্যন্ত দু’পক্ষকেই শান্ত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যথায় নির্দেশ অমান্যকারি পক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে এসেছেন।
একাধিক নির্যাতিত পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা বাজারের মোট ২ দাগে মোট ১১ শতক অর্পিত জমিতে ৪/৫টি পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছে। পরিবারগুলোর দাবি পাকিস্থান শাসনামল থেকে অর্থাৎ প্রায় ৫ যুগ ধরে তারা বংশানুক্রমে লীজসূত্রে ওই জমিতে বসবাস করছেন। এলাকার ধন্যাঢ্য ব্যবসায়ি জেহালা বাজারের বাসিন্দা শ্যাম সুন্দর আগরওয়ালা সম্প্রতি ওই সরকারি খাস জমির নিকটে প্রায় ২০ শতক জমি ক্রয় করেছেন। সেই পুকুর ভরাট করে ধনাঢ্য ব্যবসায়ি শ্যাম সুন্দর আগরওয়ালার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণের পরিকল্পনা থাকতে পারে মন্তব্য করে অভিযোগকারীরা বলেছেন, সেখানে যাওয়ার কোন রাস্তা নেই। রাস্তা সৃষ্টি করতেই শ্যাম সুন্দর আগরওয়ালা বেশ কয়েক বছর ধরে তাদেরকে উচ্ছেদ করার অপচেষ্টা করে আসছেন। তারই অংশ হিসেবে গত পরশু জেহালা ইউপি মেম্বর হিরালাল দোবে ও শ্যাম সুন্দর আগরওয়ালার কর্মচারি আনিস তাদের বাড়িতে যায়। রাজমিস্ত্রী ইকতার আলীর স্ত্রী রাণী খাতুন বলেন, হিরালাল দোবে মেম্বর ও আনিস তাদের বসত বাড়ি ভেঙ্গে নিয়ে গেছে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বলেন, তাদের একটা বিয়েযোগ্য মেয়ে আছে। তাকে কোথায় রাখবেন? কে দেবেন নিরাপত্তা? এই চিন্তাটাই এখন তাদের পরিবারের বড় সমস্যা। এছাড়া ওই লীজের জমিতে বসবাসরত স মিল শ্রমিক তৈয়ব আলীর স্ত্রী সাইদা খাতুন, দিনমজুর শহিদুল ইসলামের স্ত্রী ঝর্ণা খাতুন, মৃত আলমঙ্গীর আলীর বিধবা স্ত্রী আয়েশা খাতুন ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের পিয়ন দলিলুর রহমানের স্ত্রী রোজিনা খাতুন অভিযোগ তুলে বলেন, শুধু একটি বসতবাড়ি ভেঙ্গে নিয়ে গিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি হিরালাল মেম্বর। বাকী পরিবারদেরকে ১ সপ্তাহের মধ্যে বসতঘর ভেঙ্গে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে গেছে। তা না হলে তিনি মেশিন নিয়ে গিয়ে ঘরিবাড়ি ভেঙ্গে দেবেন। সেই মেশিনভাড়া ঘন্টায় ১২ হাজার টাকা। মেশিন ভাড়ার টাকাও অসহায় পরিবারগুলিকে গুণতে হবে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত হিরালাল দোবের সাথে গত পরশু ১৬ জুলাই এ সংবাদ লেখার সময় মোরাইলফোনে কথা হয়। তিনি বলেন, ওই ৮ শতক জমি শ্রী শ্রী হরিবাসর নাথ মন্দিরের রেকর্ডীয় সম্পত্তি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মাপজোক করে সীমানা নির্ধারণ করে দিয়ে গেছে। কিন্তু ওই সম্পত্তিতে বসবাসকারিরা সেখান থেকে উঠতে চাচ্ছে না। তারা প্রথমে ৩ মাস সময় নিয়েছিল মন্দির কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে। এমনকি সেখান থেকে উঠে যাওয়ার সত্বে অনেক টাকাও নিয়েছে। তারপরও উঠেনি। ইতোপূর্বে পুলিশ দিয়ে উপজেলা নির্বাহি অফিসার তাদেরকে উচ্ছেদের চেষ্টা করেছিল বলে দাবি করে হিরালাল মেম্বর। সরকারিভাবে পুলিশকে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর কথা, বা আদালত সে নির্দেশ দেবেন। কিন্তু আপনি কীভাবে উচ্ছেদ করছেন প্রশ্ন করলে তিনি সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলতে বলেন।
একই সময়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি ভূমি সহকারি বজলুল হকের সাথে মোবাইলফোনে কথা হয়। তিনি বলেন, ওই ১১ শতক ভিপি জমির মধ্যে ৮ শতক জমি শ্যাম সুন্দর আগরওয়ালার নামে আরএস রেকর্ডে রেকর্ডভুক্ত হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে আজ অবধি কোন রেকর্ড সংশোধনি মামলা করা হয়নি বলেও তিনি জানান। গত বছর পর্যন্ত তাদেরকে লীজ প্রদান করা হলেও এ বছর কেন লীজ প্রদান করা হচ্ছে না জিজ্ঞেস করলে লীজের বিষয়টি তার এখতিয়ারভূক্ত নয় বলে জানান তিনি।
এই ১১ শতক ভিপি জমির মধ্যে ৮ শতক জমি শ্যাম সুন্দর আগরওয়ালার নামে আরএস রেকর্ডে রেকর্ডভুক্ত হলেও সিএস ও এসএ রেকর্ডে এর কোন বুনিয়াদ খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও এখনো পর্যন্ত রেকর্ড সংশোধনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে ভুক্তভোগীরা জানায়।
একই সাথে এই অসহায় পরিবারগুলো তাদের বসত ভিটা রক্ষার্থে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।