ক্ষতির মুখে কৃষক : কৃষিপণ্য সংরক্ষণে ব্যবস্থা নিন
- আপলোড টাইম : ০৪:২৯:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২
- / ৬৫ বার পড়া হয়েছে
সম্প্রতি দেশের একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে আলু, পেঁয়াজ, রসুন ও ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে। পাইকারি বাজারে এসব পণ্যের দাম নেমেছে কৃষকের উৎপাদন খরচের কাছাকাছি কিংবা নিচে। খুচরা পর্যায়ে আলুর দাম কমে কেজিতে ১২ টাকায় নেমেছে। ভোক্তাদের জন্য ইতিবাচক হলেও উৎপাদকদের জন্য মোটেও তা সুখকর নয়। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবে আলুর উৎপাদন খরচ কেজিপ্রতি ৯ টাকা ৭৩ পয়সা। অর্থাৎ কৃষক ১১ টাকার ওপরে বিক্রি করলে লাভবান হন। টিসিবির দৈনিক নিত্যপণ্যের দামের তালিকা অনুসারে আলু বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৮ টাকা কেজি। বগুড়া জেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে। আগাম আলুতে যেখানে খরচের দুই থেকে তিনগুণ লাভ থাকার কথা, এবার সেখানে লোকসান দিতে হচ্ছে। বিগত মৌসুমে খেত থেকেই প্রতি কেজি আগাম জাতের গ্যানুলা ও ডায়মন্ড আলু ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর এ বছর ওই আলু মাত্র আট টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত ক’বছরে নতুন আলু এত কম দামে বিক্রি হয়নি। বাজারে এখনো হিমাগারে রাখা গত মৌসুমের আলু বিক্রি হচ্ছে। তাই বাজারে নতুন আলুর চাহিদা কম। জানা যায়, শুধু আলু নয়— দাম কমেছে পেঁয়াজ-রসুনেরও। রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকায় খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি। রসুনের দাম ৪০ থেকে ৭০ টাকা। কৃষি বিপণনের হিসাবে পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ কেজিপ্রতি ১৯ টাকা ২৪ পয়সা। আর রসুনে খরচ ৩০ টাকা ৮৭ পয়সা। অর্থাৎ পাইকারি বাজারেই পেঁয়াজ-রসুন বিক্রি হচ্ছে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে। এটি একটি অশনিসংকেত। এমন পরিস্থিতি চলমান থাকলে ভবিষ্যতে চাষিরা শুধু আলু নয়, যেকোনো ফসল উৎপাদনেই উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন। সেক্ষেত্রে হয়তো আগামী বছরই আলুর উৎপাদন কমে যাবে। তখন আবার নির্ভর করতে হবে আমদানির ওপর। চাষিদের উৎপাদনে যেমন উৎসাহ দিতে হবে, তেমনি তাদের উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণেরও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। উৎপাদনের সঙ্গে সংরক্ষণের বিষয়টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। একইসঙ্গে ভাবতে হবে কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ নিয়েও। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, বর্তমান বিশ্ব হলো প্রতিযোগিতার। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে আমাদের বর্ধিত উৎপাদনের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে সেই উৎপাদন নষ্ট হয়ে গেলে সেটা আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। কাজেই সরকারকে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদিত কৃষিপণ্য সংরক্ষণের সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং আলুচাষিরা যাতে বিপাকে না পড়েন, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।