ইপেপার । আজ বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫

ভারতে পাচার কিশোরীদের ফেরাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ হাইকমিশন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:৩১:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ জুলাই ২০১৭
  • / ৮০৩ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ ডেস্ক: তখন সন্ধ্যা, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের নদীতে ভাসছিল একটি মাছ ধরার নৌকা। জেলের জালের স্তুপের আড়ালে শুয়েছিল পায়েল নামে ১৬ বছরের এক বাংলাদেশি কিশোরী। ভারত যাওয়ার উদ্দেশে নৌকায় চেপেছিল সে। সীমান্ত পার হলেই নাচের শিক্ষক হিসেবে একটা চাকরি জুটবে তার, দালালের কাছে এমন আশ্বাস পেয়েই ঝুঁকিটা নিয়েছিল এই কিশোরী। কিন্তু কয়েকদিন পর তার জায়গা হলো ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের পুনে শহরের একটি পতিতালয়ে! বাংলাদেশ থেকে দুই হাজার কিলোমিটার দূরে ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশের ওই পতিতালয়ের এক বদ্ধ রুমে  নির্যাতনের শিকার হয় সে। এ ব্যাপারে পায়েল রয়টার্সকে জানায়, নিয়মিত মারধর করা হতো সেখানে। এছাড়া প্রচুর পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে বাধ্য করা হতো তাকে। গত বৃহস্পতিবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯ মাস ১১ দিন আগে পায়েলকে উদ্ধার করে পুনের এক আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়। কেউ তাকে বাড়ি ফিরতে সাহায্য করবে, এমনটা তার চিন্তায়ও আসেনি ওই সময়। কিন্তু ঘটনাচক্রে তার কপাল খুলে যায়। একই সময়ে দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে দিল্লিতে বসে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রধান কনস্যুলার মোশাররফ হোসাইন ভারতে পাচার হওয়া বাংলাদেশি নারীদের দেশে ফেরাতে ট্রাভেল পারমিট নিশ্চিতের কাজ করছিলেন। পায়েলের দুরবস্থার তথ্য পাওয়ার পর তাকে দেশে ফেরত পাঠাতে ব্যবস্থা নেন তিনি। এ ব্যাপারে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে মোশাররফ হোসাইন বলেন, ‘এখানে আটকে পড়া অনেক বাংলাদেশি ছেলে-মেয়েকে খুঁজে পেয়েছি আমি। আমাদের ধীরগতির তদন্ত প্রক্রিয়ার কারণে তারা দীর্ঘদিন বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় আটকে ছিল। তাদের উদ্ধারে আমি দ্রুত কাজ শুরু করি। কেরালায় এক মেয়ের সন্ধান পাই, যে গত সাত বছর থেকে ভারতের একটি সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে দেশে ফেরার প্রহর গুনছিল।’ ২০১৫ সালের মার্চে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ভারতে পাচার হয়ে যাওয়া বাংলাদেশি মেয়েদের দ্রুত উদ্ধার করে দেশে পাঠানোর জন্য কাজ করছেন মোশাররফ। গত বছরজুড়ে ভারতের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে মেয়েদের উদ্ধার করেছেন তিনি। দুই সপ্তাহ আগে পুনের একটি অলাভজনক ‘রেসকিউ ফাউন্ডেশনে’ পায়েলের সন্ধান পান এ কর্মকর্তা। পায়েলের কাছে সব শুনে তার বাড়ির ঠিকানা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হন তিনি। এরপর গত সপ্তাহে পায়েলের ‘ট্রাভেল পারমিট’ অনুমোদন করেন। এতে আগামী দুই মাসের মধ্যে পায়েল বাংলাদেশে ফিরতে পারবে।    দেশে ফেরার ব্যাপারে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে পায়েল বলেন, ‘আমার দেশে ফেরার কথা শুনে মা কাঁদছিলেন। আমি তাকে বলেছি যে, গত কয়েকমাস আগেও আমি খুব খারাপ অবস্থায় ছিলাম, কিন্তু এখন ভাল আছি।’ পায়েল আরও বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্র থেকে সরাসরি বাড়ি ফিরে যাব বলে আমি অনেক খুশি, আর অন্তত পতিতালয়ে ফিরতে হবে না।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

ভারতে পাচার কিশোরীদের ফেরাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ হাইকমিশন

আপলোড টাইম : ০৪:৩১:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ জুলাই ২০১৭

সমীকরণ ডেস্ক: তখন সন্ধ্যা, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের নদীতে ভাসছিল একটি মাছ ধরার নৌকা। জেলের জালের স্তুপের আড়ালে শুয়েছিল পায়েল নামে ১৬ বছরের এক বাংলাদেশি কিশোরী। ভারত যাওয়ার উদ্দেশে নৌকায় চেপেছিল সে। সীমান্ত পার হলেই নাচের শিক্ষক হিসেবে একটা চাকরি জুটবে তার, দালালের কাছে এমন আশ্বাস পেয়েই ঝুঁকিটা নিয়েছিল এই কিশোরী। কিন্তু কয়েকদিন পর তার জায়গা হলো ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের পুনে শহরের একটি পতিতালয়ে! বাংলাদেশ থেকে দুই হাজার কিলোমিটার দূরে ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশের ওই পতিতালয়ের এক বদ্ধ রুমে  নির্যাতনের শিকার হয় সে। এ ব্যাপারে পায়েল রয়টার্সকে জানায়, নিয়মিত মারধর করা হতো সেখানে। এছাড়া প্রচুর পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে বাধ্য করা হতো তাকে। গত বৃহস্পতিবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯ মাস ১১ দিন আগে পায়েলকে উদ্ধার করে পুনের এক আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়। কেউ তাকে বাড়ি ফিরতে সাহায্য করবে, এমনটা তার চিন্তায়ও আসেনি ওই সময়। কিন্তু ঘটনাচক্রে তার কপাল খুলে যায়। একই সময়ে দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে দিল্লিতে বসে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রধান কনস্যুলার মোশাররফ হোসাইন ভারতে পাচার হওয়া বাংলাদেশি নারীদের দেশে ফেরাতে ট্রাভেল পারমিট নিশ্চিতের কাজ করছিলেন। পায়েলের দুরবস্থার তথ্য পাওয়ার পর তাকে দেশে ফেরত পাঠাতে ব্যবস্থা নেন তিনি। এ ব্যাপারে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে মোশাররফ হোসাইন বলেন, ‘এখানে আটকে পড়া অনেক বাংলাদেশি ছেলে-মেয়েকে খুঁজে পেয়েছি আমি। আমাদের ধীরগতির তদন্ত প্রক্রিয়ার কারণে তারা দীর্ঘদিন বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় আটকে ছিল। তাদের উদ্ধারে আমি দ্রুত কাজ শুরু করি। কেরালায় এক মেয়ের সন্ধান পাই, যে গত সাত বছর থেকে ভারতের একটি সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে দেশে ফেরার প্রহর গুনছিল।’ ২০১৫ সালের মার্চে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ভারতে পাচার হয়ে যাওয়া বাংলাদেশি মেয়েদের দ্রুত উদ্ধার করে দেশে পাঠানোর জন্য কাজ করছেন মোশাররফ। গত বছরজুড়ে ভারতের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে মেয়েদের উদ্ধার করেছেন তিনি। দুই সপ্তাহ আগে পুনের একটি অলাভজনক ‘রেসকিউ ফাউন্ডেশনে’ পায়েলের সন্ধান পান এ কর্মকর্তা। পায়েলের কাছে সব শুনে তার বাড়ির ঠিকানা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হন তিনি। এরপর গত সপ্তাহে পায়েলের ‘ট্রাভেল পারমিট’ অনুমোদন করেন। এতে আগামী দুই মাসের মধ্যে পায়েল বাংলাদেশে ফিরতে পারবে।    দেশে ফেরার ব্যাপারে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে পায়েল বলেন, ‘আমার দেশে ফেরার কথা শুনে মা কাঁদছিলেন। আমি তাকে বলেছি যে, গত কয়েকমাস আগেও আমি খুব খারাপ অবস্থায় ছিলাম, কিন্তু এখন ভাল আছি।’ পায়েল আরও বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্র থেকে সরাসরি বাড়ি ফিরে যাব বলে আমি অনেক খুশি, আর অন্তত পতিতালয়ে ফিরতে হবে না।’