ঝিনাইদহে ভুয়া চিকিৎসকের জেল-জরিমানা : চুয়াডাঙ্গার নিউ জনতা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান : ভুয়া নিউরো সার্জারী ডাক্তারের জেল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক তোতাকে জরিমানা
- আপলোড টাইম : ০৩:৫৩:০২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ জুলাই ২০১৭
- / ৪২১ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল রোডের নিউ জনতা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে নিউরো সার্জারী পরিচয়দানকারী ডাক্তার এমএস আলমকে ৬ মাসের কারাদন্ড দিয়েছে। একইসাথে সেবা প্রদানে অবহেলা বা দায়িত্বহীনতার দায়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক তৌহিদ হোসেন তোতাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পাপিয়া আক্তারের নেতৃত্বে সদর হাসপাতাল রোডের নিউ জনতা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। চুয়াডাঙ্গা এনএসআই’র উপ পরিচালক জাফর ইকবাল, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সিব্বির আহমেদ ও পুলিশ সদস্যরা অভিযানে সহায়তা করেন। অভিযান পরিচালনাকালে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চে¤॥^ারে বসা ডা. এম এস আলমের প্যাডে দেয়া এমবিবিএস (ঢাকা), বিসিএস (স্বাস্থ্য), এমআরসিএস (ইউকে), এফসিপিএস (সার্জারী) ও এমএস (নিউরো সার্জারী) পরিচয়ের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ হয় আদালতের বিচারকের। এ সময় ডা. এম এস আলমকে উল্লেখিত পদবীর প্রমাণ দিতে বলা হয়। প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হলে ভুয়া এমএস (নিউরো সার্জারী) ডা. এম এস আলমকে মেডিক্যাল এবং ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০ এর ২৯ (১) ও (২) ধারায় ভুয়া পদবী ব্যবহারের দায়ে ৬ মাসের কারাদন্ড প্রদান করে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেয়া হয়। এদিকে সেবা প্রদানে অবহেলা বা দায়িত্বহীনতার দায়ে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক তৌহিদ হোসেন তোতাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদন্ডের আদেশ দিলে জরিমানার টাকা পরিশোধ করে মুক্তিপায় তোতা।
দন্ডপ্রাপ্ত ডাক্তার এম এস আলম ওরফে এ এস এম আলম ওরফে আবু মো. শাকুরুল আলম সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরের মৃত শামসুল আলমের ছেলে। এ ধরণের ভুয়া পরিচয়ে দাপটের সাথে শুধু চুয়াডাঙ্গায়ই নয়, ডজন খানেক জেলায় রয়েছে তার চে¤॥^ার। কোথাও সাইনবোর্ড, ব্যানার, বিলবোর্ড, ভিজিটিং কার্ডে পদবী আর ডিগ্রি লিখে উল্লেখ করেছেন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক। আবার কোথাও লিখেছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক। তবে কোন তথ্যেরই সতত্য মেলেনি। চে¤॥^ার গুলোতে কোথাও লিখেছেন তিনি ডা. এম এস আলম আবার কোথাও লিখেছেন ডা. এ এস এম আলম।
সম্প্রতি, কুষ্টিয়ায় তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে এমন তথ্য দিয়ে কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে রোগী দেখে সাধারন মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছিলেন। তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেরও সহকারী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানা গেলে এ ব্যাপারে সেখানকার সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও অনলাইনে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়।
ডা: এম এস আলম তার ভিজিটিং কার্ডে এম.বি.বি.এস, এম.আর.সি.এস (লন্ডন), এফ.সি.পি.এস (সার্জারি) এম.এস (নিউরো সার্জারী) এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এভাবে দিনে পর দিন প্রতারিত হচ্ছেন গ্রাম থেকে আসা সহজ সরল মানুষেরা। যারা চিকিৎসার জন্য শহরের বিভিন্ন নামিদামি ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে এসে ভুয়া ডাক্তারের ধোকায় পড়ছেন প্রতিনিয়িত।
এই ডাক্তার কুষ্টিয়া শহরের প্রধান ডাকঘরের সামনে সীম্যাক ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, পপুলার ডায়াগনষ্টিক ও নিউ এ্যাপোলো ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিকসহ বিভিন্ন ক্লিনিক এবং ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে রোগী দেখতেন।
শুধু কুষ্টিয়ায় নয় মাঝে মাঝে পাশ্ববর্তী আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা, গাংনীতেও রোগী দেখতেন তিনি। তবে এর আগে তিনি সনো হসপিটাল-২ তে নিয়মিত রোগী দেখতেন। সেখানে ভুয়া সহকারী অধ্যাপকের পরিচয় গোপন করে রোগী দেখতো। বিয়ষয়টি জানতে পেরে হাসপাতাল কতৃপক্ষ সেখান থেকে বের করে দেয় বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
এ ছাড়া তিনি গত ১বছর ধরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল রোডের নিউ জনতা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুয়া পরিচয়ে বীরদর্পে রোগী দেখে আসছিলেন। রোগী প্রতি সাক্ষাত ফি ও ব্যবস্থাপত্র বাবদ ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করতেন।
ঝিনাইদহ অফিস জানিয়েছে, নামের পাশে একাধিক ডিগ্রী থাকায় রোগীরা জানতো ডাক্তার মহাশয় মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। তিনশ টাকা ভিজিট ও সাথে বিভিন্ন টেষ্ট দিয়ে বিল করা হতো হাজার টাকার উপরে। খোদ শহরের উপর মাইকিং করে চলতে কথিত এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রচারনা। হতদরিদ্র রোগীরা মাত্র ৩০০ টাকার ভিজিটের জন্য ছুটে আসতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মনিরুজ্জামানের কাছে। কিন্ত বিধি বাম। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝিনাইদহ শহরের পুরাতন হাটখোলায় জননী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অবস্থিত ডাক্তারের চে¤॥^ারে আকস্মাৎ ঢুকে পড়েন ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির। সাথে ছিলেন ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা. রাশেদা সুলতানা, মেডিকেল অফিসার ডা. প্রসেনজিৎ বিশ্বাস পার্থ ও ঔষধ তত্বাবধায়ক নাজমুল হাসান। তারা কথিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মনিরুজ্জামানের কাছে বৈধ কাগজপত্র চান। এ সময় তিনি কিছুই দেখাতে পারেননি। ভ্রাম্যমান আদালতের কাছে ভুয়া ডাক্তার মনিরুজ্জামান স্বীকার করেছেন ডাক্তারী করার জন্য তার কোন ডিগ্রী বা যোগ্যতা নেই। ভুয়া এমবিবিএস, পোষ্ট গ্রাজুয়েশন ট্রেনিং ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞর সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে তিনি এতোদিন রোগীদের সাথে প্রতারণা করে আসছিলেন। ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির সাক্ষ্য ও তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে ভুয়া চিকিৎসক মনিরুজ্জামানকে ৩ মাসের কারাদন্ড ও ১৫ হাজার এবং ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের মালিককে সুধীর বিশ্বাসকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। ভুয়া চিকিৎসক মনিরুজ্জামান যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার কোমরপুর গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে। তাকে বৃহস্পতিবার বিকালে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা: রাশেদা সুলতানা জানান, শহরের উপর সাইনবোর্ড ও ক্লিনিক খুলে এমন প্রতারণা দেখে আমি হতবাক হয়েছি। তিনি অভিযোগ করেন ক্লিনিক মালিক সুধীর বিশ্বাস এ সব অপকর্মের মুল নায়ক। তার আরো বেশি শাস্তি হওয়া দরকার ছিল।