১১ই জুনের কথা ভুলে যান : আজ থেকে আসুন একসাথে কাজ করি-পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দীন
- আপলোড টাইম : ০৪:৪৯:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই ২০১৭
- / ৪৪৮ বার পড়া হয়েছে
চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ ও ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের মতবিনিময় সভায় পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দীন
১১ই জুনের কথা ভুলে যান : আজ থেকে আসুন একসাথে কাজ করি
নিজস্ব প্রতিবেদক: ১১ই জুনের কথা ভুলে যান, ব্যবসায়ী-পুলিশ একযোগে কাজ করে যাবে। সেদিনের ঘটনায় উভয়েরই ভুল ছিল, সেসব ভুলে গিয়ে আসুন আমরা একসাথে কাজ করি। চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ ও ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দীন।
গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় চেম্বার ভবনে এ মতবিনিময় সভা আহ্বান করা হয়। চুয়াডাঙ্গা শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিকের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, জেলার আত্মসামাজিক উন্নয়নে ব্যবসায়ীরা যে যার অবস্থান থেকে কাজ করে যাবে, পুলিশ তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। পুলিশ সুপার বলেন, ব্যবসায়ীদের কেউ যদি কোন প্রকার হয়রানি করে, তাহলে সে যে দলেরই বা যত ক্ষমতাশালী ব্যক্তিই হোক না কেন আইনের আওতায় তাকে আসতেই হবে। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে জেলা পুলিশ।
মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে ইয়াকুব হোসেন মালিক বলেন, আজ থেকে আমরা চুয়াডাঙ্গাকে নতুন করে গড়বার অঙ্গিকার নিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ ও ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ এক নতুন অঙ্গিকারে আবদ্ধ হলাম। আমরা পুলিশ প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। আর পুলিশ প্রশাসন আমাদের আইনি সহায়তা দেবেন। পুলিশের সহযোগিতা পেলে জেলাকে একটি ব্যবসাবান্ধব জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো।
জেলা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইবরুল হাসান বলেন, গত ১১ই জুন জেলা প্রশাসন কর্তৃক রেল বাজারে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার সময় পুলিশ সুপার অনাকাঙ্খিতভাবে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এর প্রতিবাদে চুয়াডাঙ্গা ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের ডাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মহান জাতীয় সংসদের হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি’র হস্তক্ষেপে তাৎক্ষনিকভাবে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এরপর হুইপ মহোদয়ের পরামর্শে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ ও ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের ডাকে চুয়াডাঙ্গা চেম্বারে সন্তোষজনক সমাধান হয়। এরপরই ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। এজন্য তিনি চেম্বার সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিকসহ চেম্বারের সকল নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি দোকান মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, গত ১১ জুলাইয়ের ঘটনার প্রতিবাদে শান্তিপুর্ণভাবে যারা ধর্মঘট পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সেই সকল নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. তরিকুল ইসলাম ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহসহ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।
এসময় সহ-সভাপতি মুনজুরুল আলম মালিক লার্জ, পরিচালক এ.কে.এম. সালাউদ্দিন মিঠু, কিশোর কুমার কুন্ডু, আরিফ হোসেন জোয়ার্দ্দার সোনা, এস এম তসলিম আরিফ বাবু, সেলিম আহমেদ, এ.এন.এম আরিফ, জেলা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আসাদুল হোসেন জোয়ার্দ্দার লেমন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল কাদের জগলু, সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুজ্জামান খোকন, সহ-সভাপতি শাহাবুদ্দিন মল্লিক, নীল রতন সাহা, মহিদুল ইসলাম ভাষা, জেলা পরিবেশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসলাম উদ্দীন, বড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফী উদ্দিন আহম্মেদ, কাঁচামাল আড়ৎদার মালিক সমিতির প্রতিনিধি মো. স্বপন, রেল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. নাজমুল আলম, মৎস্য আড়ৎদার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফিরোজ হোসেন, হোটেল-বেকারী-রেস্তোরা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌহিবুর রহমান, পুরাতন বাজার দোকান মালিক সমিতির প্রতিনিধি আব্দুল খালেক, ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেবসহ জেলার সকল পর্যায়ের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তরিকুল ইসলাম ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কলিমুল্লাহ সভাস্থলে উপস্থিত হলে তাদেরকে চেম্বার নেতৃবৃন্দ ফুলেল শুভেচ্ছা জানান এবং কোলাকুলি করেন।
প্রসঙ্গত, গত ১১ জুন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দীনের অপসারনের দাবিতে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেয়। শহরের রেলবাজারে ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালতের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ সুপার নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করার প্রতিবাদে এ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। ঈদুল ফিতর সামনে রেখে ভোক্তা ও ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি’র সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে তাদের আন্দোলন সাময়িক স্থগিত করে। ঈদের পর আন্দোলনে নামার পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বড় বাজার ফেরীঘাট রোডের মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের তৃতীয় তলায় দোকান মালিক সমিতির জেলা কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় পূনরায় আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারী দেওয়া হয়। বলা হয় চলমান আন্দোলন, ঈদ পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য দোকান মালিকদেরকে আলোচনা সভায় ডাকা হয়েছে। সকলের স্বতস্ফুর্ত সাড়া ও সম্মতিক্রমে আন্দোলনের নতুন কৌশলসহ নানা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। হুইপ মহোদয়ের সাথে আলোচনার পর তা জানানো হবে।