গাংনীতে এবার মসজিদের ইমাম ও যুবতীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন
- আপলোড টাইম : ০৪:৪৭:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ জুলাই ২০১৭
- / ৪০৫ বার পড়া হয়েছে
মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুরের গাংনীতে এবার মসজিদের ইমাম নাজমুল হুসাইন ও বেলী খাতুন নামের দু’জন যুবক যুবতীকে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে এমন অভিযোগে গত ১লা জুলাই গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মথুরাপুর গ্রামে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। নির্যাতন শেষে তাদের বিয়ে দিয়ে দিয়েছে সমাজপতিরা। গাছের সাথে বাধা অবস্থায় ইমাম ও যুবতী ছবি সামাজিক ও ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকাই তোলপাড় শুরু হয়েছে। এবিষয়ে সোমবার এ অভিযুক্ত সমাজপতিদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি না হলে আত্মহত্যার হুমকী দিয়েছে নির্যাতিত মসজিদের ইমাম নাজমুল হুসাইন। নাজমুল হুসাইন তেঁতুলবাড়িয়া মোল্লাপাড়ার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে ও রামদেবপুর মালিপাড়া জামে মসজিদের ইমাম এবং বেলী খাতুন মথুরাপুর গ্রামের ঝড়– মন্ডলের মেয়ে।
ইমাম নাজমুল হুসাইন জানান, বেলী খাতুনের খালা অমেলা খাতুনকে তিনি আল কোরআন পড়াতেন। এ সূত্র ধরে তাদের বাড়িতে আমার যাতায়াত ছিল। ঘটনার দিন সকাল ১১টায় বেলী খাতুনের খালা আল কোরআনের একটি সূরা সংক্রান্ত বিষয়ে জানার জন্য মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মথুরাপুর গ্রামের তার নিজ বাড়িতে আমাকে ডেকে নেন। পরে সেখান থেকে বের হওয়ার পরপরই বেলী খাতুনের সাথে অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে এমন অভিযোগ তুলে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে যায় স্থানীয় সমাজপতি মুকাদ্দেস আলী, রিপন হোসেন, বাদল হোসেন, মৌমিনুল হক ও তানজিল হোসেনসহ তাদের সহযোগীরা। পরে আমার উপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়। নির্যাতন শেষে আমাকে ও বেলী খাতুনকে গাছের সাথে রশি দিয়ে বেধে আবারো মারপিট করে। পরে জোরপূর্বক বেলীর সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়। বিয়ের পরপরই একটি ফাঁকা নন জুডিসিয়াল ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেন সমাজপতিরা। তিনি সাংবাদিকদের জানান, সমাজপতিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে তিনি আত্মহত্যা করবেন।
বেলী খাতুনের খালা অমেলা খাতুন জানান, আল কোরআনের একটি সূরা বুঝতে না পারার কারনে ইমাম নাজমুল হুসাইনকে ডেকে আনা হয়। তবে ইমাম নাজমুল হুসাইন ও বেলীর মধ্যে কোন সম্পর্ক রয়েছ কিনা জানিনা। বেলী খাতুনের খালু মেসকাত মন্ডল জানান, নির্যাতনে বাধা দিতে গেলে সমাজপতিদের হামলায় আহত হন তিনি।
নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজপতি রিপন হোসেন বলেন, ইমাম নাজমুল হুসাইন ও বেলী খাতুন আপত্তির কর অবস্থায় ধরা পড়েছে। এজন্য তাদের বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়েছে। হুসাইন ও বেলী খাতুন অপরাধ করলে তাদের পুলিশে না দিয়ে গাছের সাথে বেধে নির্যাতন করলেন কেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি জানান, ধরেছি আমরা বিচার করবো আমরা। আমরাই এলাকার সমাজপতি।
স্থানীয়রা জানান, ইমাম নাজমুল হুসাইন এলাকায় গত ৪/৫ বছর আল কোরআনের শিক্ষা দিয়ে আসছিল। তার পিতা দেলোয়ার হোসেন পার্শ্ববর্তী খাঁসমহল গ্রামের একটি মসজিদের ইমাম হিসেবে গত ৩৫ বছর যাবৎ দায়িত্বে রয়েছেন। ইমাম হুসাইনের পিতা দেলোয়ার হোসেন জানান, আমার ছেলে যদি কোন অপরাধ করে থাকে তার জন্য আইন আদালত রয়েছে সেখানেই তার সাজা হবে। কিন্তু অজ্ঞাত ক্ষমতার বলে সমাজপতিরা ছেলেকে গাছের সাথে বেধে অমানবিক নির্যাতন করেছে। অভিযুক্ত সমাজপতিদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবি করেন তিনি। গাংনী থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, ইমাম হুসাইন কিংবা তার পক্ষে কেউ কোন অভিযোগ দেননী। অভিযোগ দিলে মামলা হিসেবে নেয়া হবে। এখন পর্যন্ত মামলা না হওয়ায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নী।