ইপেপার । আজ বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

নিষিদ্ধ হচ্ছে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৪৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ অগাস্ট ২০১৬
  • / ৪২১ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ ডেস্ক: এবার নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। ইতোমধ্যে এই সংগঠনের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হলে আনসার আল ইসলাম হবে সপ্তম জঙ্গি সংগঠন। এর আগে বিভিন্ন সময় জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে আরো ৬টি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়। এর মধ্যে সর্বপ্রথম ‘শাহদাৎ-আল-হিকমা’ সংগঠনটিকে সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এরপর একে একে হরকাতুল জিহাদ (হুজি), জেএমবি, জেএমজেবি, হিযবুত তাহরীর, আনসারউল্লাহ বাংলা টিমকে নিষিদ্ধ করা হয়। ট্রান্সন্যাশনাল অ্যান্ড কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, সন্ত্রাসী ও জঙ্গি কার্যক্রমের অভিযোগের পর সরকার আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। পরে এই সংগঠনের নেতাকর্মী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়াতে নতুন সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ গঠন করে। এখন তারা এই সংগঠনের নামেই জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে। বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এদের নিষিদ্ধ করার জন্য গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে খুব তাড়াতাড়ি পুলিশ সদরদপ্তরের নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব পাঠানো হবে। পরে পুলিশ সদরদপ্তর থেকে প্রস্তাবটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি হামলার ঘটনায় আনসার আল ইসলামমের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। কোনো জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার পরে তাদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। এদের দমনে কঠোর নজরদারি ও অভিযান চলছে। তারপরও এই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে উদ্যোগ নেয়া হবে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ২০১৪ সালে আনসারউল্লাহ বাংলাটিমের আদলেই আনসার আল ইসলাম গঠিত হয়। শুরু থেকেই তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক সংগঠনের সামরিক শাখার দায়িত্বে রয়েছেন। আত্মগোপনে থাকা জিয়া সংগঠনের সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। শুরুতে এই সংগঠনটির নাম জানা যায়নি। কিন্তু ২০১৫ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে বস্নগার ও গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী রাজীব আহমেদ খুনের ঘটনার পর আনসার আল ইসলামের নাম গোয়েন্দারা জানতে পারে। এ সময় থেকেই গোয়েন্দারা এই সংগঠনের তৎপরতা দমনে কাজ করে যাচ্ছে। তিনটি সাংগঠনের কাঠামো তিনটি ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে ‘দাওয়াহ’ এবং ‘আশকারি’ হচ্ছে প্রধান দুটি অংশ। এ ছাড়া তাদের কাঠামোতে একটি শক্তিশালী ‘মিডিয়া ও আইটি’ বিভাগ রয়েছে। দাওয়াহ এর মাধ্যমে প্রথমে নতুন নতুন সদস্য সংগ্রহ করা হয়। এরপর তাদের ও পরিবারের সদস্যদের থাকা-খাওয়া-চিকিৎসাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়। দ্বিতীয় স্তর হচ্ছে আশকারি। এই বিভাগটি মূলত সামরিক বিভাগ। অপারেশন চালানোর জন্য টার্গেট নির্ধারণ, অস্ত্র সংগ্রহ, পরিকল্পনা প্রণয়ন, সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদান, এবং চূড়ান্ত অপারেশন সফল করা এই বিভাগের প্রধান কাজ। চাকরিচ্যুৎ সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল হক বর্তমানে এই বিভাগের দায়িত্বে রয়েছে। আত্মগোপনে থেকেই তিনি সংগঠনের তৎপরতা চালাচ্ছে বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তারকৃত আনসারউল্লা বাংলাটিম ও আনসার আল ইসলামের সদস্যরাও জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানিয়েছেন। আনসার আল ইসলামের ‘মিডিয়া ও আইটি’ বিভাগটি খুবই শক্তিশালী। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ তরুণদের সমন্বয়ে এই বিভাগটি গঠন করা হয়েছে। প্রযুক্তির দক্ষতার কারণে তারা যে কোনো সময় বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে সক্ষম। তারা বিভিন্ন দেশে তাদের অনুসারীদের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে।

গোয়েন্দারা জানান, আনসারউল্লাহ বাংলা টিম পীর, মুক্তমনা লেখক, বস্নগার ও প্রকাশকদের টার্গেট করেছিল। তারা টার্গেট অনুযায়ী ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চকর্মী ও ব্লগার রাজীবকে হত্যার মাধ্যমে টার্গেট শুরু করে। পরে একের পর এক হত্যাকাণ্ড চালায়। আনসারউল্লাহ বাংলা টিম কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়লে নাম পরিবর্তন করে ২০১৪ সাল থেকে আনসার আল ইসলাম নামে তৎপরতা চালাতে শুরু করে। প্রথম দিকে তারা আল-কায়দা ইন ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্ট (একিউআইএম)-এর শাখা হিসেবে নিজেদের ঘোষণা করে। এর কিছুদিন পর তারা আনসার আল ইসলাম গঠন করে। রাজধানীর পুরনো ঢাকার একটি মাদ্রাসার প্রধান তখন থেকে সংগঠনের সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করছে। আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ নেতা জসিমউদ্দিন রাহমানিসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলেও আনসার আল ইসলামের ওই মাদ্রাসা শিক্ষককে এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

নিষিদ্ধ হচ্ছে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম

আপলোড টাইম : ১০:৪৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ অগাস্ট ২০১৬

সমীকরণ ডেস্ক: এবার নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। ইতোমধ্যে এই সংগঠনের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হলে আনসার আল ইসলাম হবে সপ্তম জঙ্গি সংগঠন। এর আগে বিভিন্ন সময় জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে আরো ৬টি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়। এর মধ্যে সর্বপ্রথম ‘শাহদাৎ-আল-হিকমা’ সংগঠনটিকে সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এরপর একে একে হরকাতুল জিহাদ (হুজি), জেএমবি, জেএমজেবি, হিযবুত তাহরীর, আনসারউল্লাহ বাংলা টিমকে নিষিদ্ধ করা হয়। ট্রান্সন্যাশনাল অ্যান্ড কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, সন্ত্রাসী ও জঙ্গি কার্যক্রমের অভিযোগের পর সরকার আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। পরে এই সংগঠনের নেতাকর্মী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়াতে নতুন সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ গঠন করে। এখন তারা এই সংগঠনের নামেই জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে। বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এদের নিষিদ্ধ করার জন্য গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে খুব তাড়াতাড়ি পুলিশ সদরদপ্তরের নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব পাঠানো হবে। পরে পুলিশ সদরদপ্তর থেকে প্রস্তাবটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি হামলার ঘটনায় আনসার আল ইসলামমের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। কোনো জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার পরে তাদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। এদের দমনে কঠোর নজরদারি ও অভিযান চলছে। তারপরও এই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে উদ্যোগ নেয়া হবে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ২০১৪ সালে আনসারউল্লাহ বাংলাটিমের আদলেই আনসার আল ইসলাম গঠিত হয়। শুরু থেকেই তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক সংগঠনের সামরিক শাখার দায়িত্বে রয়েছেন। আত্মগোপনে থাকা জিয়া সংগঠনের সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। শুরুতে এই সংগঠনটির নাম জানা যায়নি। কিন্তু ২০১৫ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে বস্নগার ও গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী রাজীব আহমেদ খুনের ঘটনার পর আনসার আল ইসলামের নাম গোয়েন্দারা জানতে পারে। এ সময় থেকেই গোয়েন্দারা এই সংগঠনের তৎপরতা দমনে কাজ করে যাচ্ছে। তিনটি সাংগঠনের কাঠামো তিনটি ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে ‘দাওয়াহ’ এবং ‘আশকারি’ হচ্ছে প্রধান দুটি অংশ। এ ছাড়া তাদের কাঠামোতে একটি শক্তিশালী ‘মিডিয়া ও আইটি’ বিভাগ রয়েছে। দাওয়াহ এর মাধ্যমে প্রথমে নতুন নতুন সদস্য সংগ্রহ করা হয়। এরপর তাদের ও পরিবারের সদস্যদের থাকা-খাওয়া-চিকিৎসাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়। দ্বিতীয় স্তর হচ্ছে আশকারি। এই বিভাগটি মূলত সামরিক বিভাগ। অপারেশন চালানোর জন্য টার্গেট নির্ধারণ, অস্ত্র সংগ্রহ, পরিকল্পনা প্রণয়ন, সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদান, এবং চূড়ান্ত অপারেশন সফল করা এই বিভাগের প্রধান কাজ। চাকরিচ্যুৎ সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল হক বর্তমানে এই বিভাগের দায়িত্বে রয়েছে। আত্মগোপনে থেকেই তিনি সংগঠনের তৎপরতা চালাচ্ছে বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তারকৃত আনসারউল্লা বাংলাটিম ও আনসার আল ইসলামের সদস্যরাও জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানিয়েছেন। আনসার আল ইসলামের ‘মিডিয়া ও আইটি’ বিভাগটি খুবই শক্তিশালী। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ তরুণদের সমন্বয়ে এই বিভাগটি গঠন করা হয়েছে। প্রযুক্তির দক্ষতার কারণে তারা যে কোনো সময় বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে সক্ষম। তারা বিভিন্ন দেশে তাদের অনুসারীদের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে।

গোয়েন্দারা জানান, আনসারউল্লাহ বাংলা টিম পীর, মুক্তমনা লেখক, বস্নগার ও প্রকাশকদের টার্গেট করেছিল। তারা টার্গেট অনুযায়ী ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চকর্মী ও ব্লগার রাজীবকে হত্যার মাধ্যমে টার্গেট শুরু করে। পরে একের পর এক হত্যাকাণ্ড চালায়। আনসারউল্লাহ বাংলা টিম কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়লে নাম পরিবর্তন করে ২০১৪ সাল থেকে আনসার আল ইসলাম নামে তৎপরতা চালাতে শুরু করে। প্রথম দিকে তারা আল-কায়দা ইন ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্ট (একিউআইএম)-এর শাখা হিসেবে নিজেদের ঘোষণা করে। এর কিছুদিন পর তারা আনসার আল ইসলাম গঠন করে। রাজধানীর পুরনো ঢাকার একটি মাদ্রাসার প্রধান তখন থেকে সংগঠনের সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করছে। আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ নেতা জসিমউদ্দিন রাহমানিসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলেও আনসার আল ইসলামের ওই মাদ্রাসা শিক্ষককে এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।