মেহেরপুর গাংনীতে সালিশে গৃহবধু ও যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা দায়ের : পুলিশি অভিযান : ইউপি সদস্য ও কাজি সহ ১৩ জন গ্রেপ্তার : দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেওয়ায় মেহেরপুর প্রশাসক পরিমল সিংহ সর্বমহলে প্রশংসিত
- আপলোড টাইম : ০৪:৩৮:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ জুলাই ২০১৭
- / ১২৩৩ বার পড়া হয়েছে
মেহেরপুর প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার তেতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের করমদি গ্রামে সালিশের নামে গৃহবধু ও যুবককের নির্যাতনের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যায় নির্যাতিত নারীর পিতা বাদি হয়ে ১৭ জনকে আসামি করে গাংনী থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে ওই ইউনিয়নের একজন ইউপি সদস্য ও কাজিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন- করমদি গ্রামের মৃত চেতন মন্ডলের ছেলে তেঁতুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল হামিদ (৫২) ও একই গ্রামের নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) রমজান আলীর ছেলে শিহাব উদ্দীন (২৫)। দেশের শীর্ষ জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ অঞ্চলের জনপ্রিয় আঞ্চলিক দৈনিক সময়ের সমীকরণ পত্রিকায় গাংনীতে সালিসে গৃহবধু ও যুবককে নির্যাতনের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন পড়ে বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। নির্যাতনের ঘটনায় সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকেও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। নির্যাতিতা গৃহবধুর পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা-উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, মানবাধিকার সংগঠন মউকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।
গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মতর্কা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, গতকাল দিনভর বিভিন্নভাবে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হয়। তদন্তে ঘটনার সত্যতা মেলে। গ্রাম্য মতবর কিংবা জনপ্রতিনিধিদের এ ধরনের বিচার করার ক্ষমতা দেয়া হয়নি। এ ঘটনায় পুলিশের তাৎক্ষণিক অভিযানে আসামি দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ বিচারকদের একজন ছিলেন। অপরদিকে নিকাহ রেজিস্ট্রার রমজান আলীর ছেলে গৃহবধু এবং ওই যুবকের তালাকনামা সম্পন্ন করেছিলেন বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এছাড়াও তাদের স্বীকারোক্তিতে অভিযুক্ত সালিশপতিদের নাম পাওয়া গেছে। তবে মামলা তদন্ত এবং আসামি গ্রেপ্তারের স্বার্থে তাদের নাম পরিচয় প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি জানান। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের ৩/৪টি দল অভিযানে পরিচালনা করছে। এদিকে পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি মেহেরপুর জেলা প্রশাসন ও গাংনী উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। জেলা প্রশাসন ও গাংনী উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি আমলে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন। মেহেরপুর প্রশাসক পরিমল সিংহ বলেন, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ, ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ও ছবি দেখেছি। এই নির্যাতন ও অবিচারের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ছুটিতে থাকায় গাংনী সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসএম জামাল আহম্মেদকে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে মেহেরপুর জেলার মানবাধিকার সংগঠনের তিন সদস্যর একটি দল নির্যাতিতা গৃহবধুর বাপের বাড়ি গিয়ে তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। মানবাধিকার সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা বলেন, তাদেরকে আইনী সহায়তা প্রদান করা হবে। এ ধরণের বর্বরোচিত ঘটনার বিচার হওয়া প্রয়োজন। সালিশের নামে নির্যাতনকারীদের সাজা দাবি করেন তিনি। উল্লেখ্য, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের করমদী গ্রামে সালিসের নামে স্থানীয় এক গৃহবধূ ও যুবককে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। পরকীয়ার অভিযোগে ওই দুজনকে গত রোববার প্রকাশ্যে বেঁধে গ্রাম ঘোরানো হয় ও মারধর করা হয়। ওই গৃহবধূ ও তাঁর বোনকে গ্রাম থেকেও তাড়িয়ে দিয়েছেন সালিসে উপস্থিত থাকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় মাতবরেরা। সালিসে দুজনকে মারধরের সেই ভিডিও চিত্র পাওয়া গেছে। ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, ওই যুবকের ডান হাত গৃহবধূর বাম হাতের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে ঘরের বারান্দা থেকে উঠানে নামানো হচ্ছে। এরপর অনেক মানুষের উপস্থিতিতে তাঁদের দুজনকে গ্রামের রাস্তায় ঘোরানো হয়। একপর্যায়ে গৃহবধূর বাড়ির পাশে সালিস বসে। সেখানে দুজনকে হাত বেঁধে বসিয়ে রাখা হয়।