ইপেপার । আজ বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫

মূল্যস্ফীতি বাড়ছে
দ্রব্যমূল্যের চাপ আরো বাড়বে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৩:৫০:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জানুয়ারী ২০২২
  • / ৭১ বার পড়া হয়েছে

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে অনেক আগেই। নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন স্থবির হওয়ার উপক্রম। কোভিড মহামারী-উত্তর বাংলাদেশে বহু মানুষ যখন বেকার, বহু মানুষ চাকরি হারিয়ে উপার্জনহীন, অনেকের আয় বিপুলভাবে কমে গেছে, সেই সময় দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। এতে আরো বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সর্বশেষ হিসাবে দেশে মূল্যস্ফীতির পরিমাণ বলা হচ্ছে, ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী চলতি অর্থবছরের শুরুতে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশের মধ্যে রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন; সেটি হয়নি। তবে এই বৃদ্ধির হার আসলে কত, তা নিয়ে মতভেদ আছে। কারণ সরকারের হিসাবের সাথে একমত নন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক একটি দৈনিকের সাথে আলাপকালে বলেছেন, বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে আছে, এমনটাই দেখানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি নিয়ে সরকারের যে তথ্য তার সাথে বাস্তবতার তফাত আছে। তথ্যের এই তফাত যেকোনো দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক। কারণ অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান জাতির সবরকম আর্থিক কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে। ভুল তথ্যের ভিত্তিতে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে গেলে তার পরিণতি অশুভ হতে পারে। তা ছাড়া দাতা দেশ ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংস্থায় দেশের আস্থা বিনষ্ট হতে পারে। সম্প্রতি এমনই তথ্যবিভ্রাটের একটি ঘটনা তুলে ধরেছে আইএমএফ। তারা বলেছেন, বাংলাদেশের ফেডারেল রিজার্ভের তথ্যে বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটেনি। রিজার্ভের পরিমাণ বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। সেই বাড়তি অর্থ কোথায় গেল, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষ থেকেই কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। জাতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে এটি এক অত্যাশ্চর্য ঘটনা।
দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার পেছনে আন্তর্জাতিক বিশ্বে পণ্য ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সম্পর্ক আছে, এটি ঠিক। আর সে কারণে জ্বালানি তেল ও নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। সেই দাম বাড়ানোর প্রভাব পড়ছে নিত্যপণ্য ও সেবা খাতে। কিন্তু এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। তা না হলে বাংলাদেশী টাকার বিনিময় হার, আমদানি ও রফতানি খাতে নিশ্চিতভাবে বিরূপ প্রভাব পড়বে যেমনটা দেখা যাচ্ছে পণ্য ও সেবা খাতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ার মধ্যে। গত এক বছরে নিত্যপণ্যের বাজারে সরকারি হিসাবে চালের দাম বেড়েছে ৭৯ শতাংশ, খোলা আটার ২৪ দশমিক ১৪ শতাংশ, খোলা ময়দার ৩৭ দশমিক ৬৮, সয়াবিনের ২৮ দশমিক ১১, পাম অয়েলের ৩৮ ও মসুর ডালের ৩৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। এর ফলে মূলত সমস্যায় পড়ছে সাধারণ মানুষই। মূল্যস্ফীতির কারণগুলো যখন সবারই জানা, তখন করণীয় নির্ধারণও সহজ। মানুষের জন্য কাজের ক্ষেত্র বাড়াতে হবে, উৎপাদনশীলতা ও সব মানুষের সমভাবে সেবা পাওয়ার সুযোগ অবারিত করতে হবে এবং আর্থসামাজিক বৈষম্য দূর করার ব্যবস্থা নিতে হবে। বৈষম্য দূর করার বিষয়টি নিয়ে এ দেশে তেমন কোনো কাজই করা হয়নি; বরং উল্টোটাই হয়েছে। মূল্যস্ফীতির বিরূপ প্রভাবে দেশ যাতে অর্থনৈতিক স্থবিরতার দিকে না যায়, সেটিই এখন ভাবার বিষয়। এ ক্ষেত্রে অনেক বিশ্লেষক নীতিগত পরিবর্তনের প্রয়োজনের কথা বলেন; ব্যাংকের সঞ্চয় সুদহার পুনর্বিবেচনার কথা বলেন। এসব বিষয় আমলে নেয়া জরুরি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

মূল্যস্ফীতি বাড়ছে
দ্রব্যমূল্যের চাপ আরো বাড়বে

আপলোড টাইম : ০৩:৫০:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জানুয়ারী ২০২২

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে অনেক আগেই। নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন স্থবির হওয়ার উপক্রম। কোভিড মহামারী-উত্তর বাংলাদেশে বহু মানুষ যখন বেকার, বহু মানুষ চাকরি হারিয়ে উপার্জনহীন, অনেকের আয় বিপুলভাবে কমে গেছে, সেই সময় দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। এতে আরো বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সর্বশেষ হিসাবে দেশে মূল্যস্ফীতির পরিমাণ বলা হচ্ছে, ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী চলতি অর্থবছরের শুরুতে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশের মধ্যে রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন; সেটি হয়নি। তবে এই বৃদ্ধির হার আসলে কত, তা নিয়ে মতভেদ আছে। কারণ সরকারের হিসাবের সাথে একমত নন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক একটি দৈনিকের সাথে আলাপকালে বলেছেন, বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে আছে, এমনটাই দেখানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি নিয়ে সরকারের যে তথ্য তার সাথে বাস্তবতার তফাত আছে। তথ্যের এই তফাত যেকোনো দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক। কারণ অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান জাতির সবরকম আর্থিক কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে। ভুল তথ্যের ভিত্তিতে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে গেলে তার পরিণতি অশুভ হতে পারে। তা ছাড়া দাতা দেশ ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংস্থায় দেশের আস্থা বিনষ্ট হতে পারে। সম্প্রতি এমনই তথ্যবিভ্রাটের একটি ঘটনা তুলে ধরেছে আইএমএফ। তারা বলেছেন, বাংলাদেশের ফেডারেল রিজার্ভের তথ্যে বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটেনি। রিজার্ভের পরিমাণ বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। সেই বাড়তি অর্থ কোথায় গেল, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষ থেকেই কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। জাতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে এটি এক অত্যাশ্চর্য ঘটনা।
দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার পেছনে আন্তর্জাতিক বিশ্বে পণ্য ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সম্পর্ক আছে, এটি ঠিক। আর সে কারণে জ্বালানি তেল ও নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। সেই দাম বাড়ানোর প্রভাব পড়ছে নিত্যপণ্য ও সেবা খাতে। কিন্তু এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। তা না হলে বাংলাদেশী টাকার বিনিময় হার, আমদানি ও রফতানি খাতে নিশ্চিতভাবে বিরূপ প্রভাব পড়বে যেমনটা দেখা যাচ্ছে পণ্য ও সেবা খাতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ার মধ্যে। গত এক বছরে নিত্যপণ্যের বাজারে সরকারি হিসাবে চালের দাম বেড়েছে ৭৯ শতাংশ, খোলা আটার ২৪ দশমিক ১৪ শতাংশ, খোলা ময়দার ৩৭ দশমিক ৬৮, সয়াবিনের ২৮ দশমিক ১১, পাম অয়েলের ৩৮ ও মসুর ডালের ৩৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। এর ফলে মূলত সমস্যায় পড়ছে সাধারণ মানুষই। মূল্যস্ফীতির কারণগুলো যখন সবারই জানা, তখন করণীয় নির্ধারণও সহজ। মানুষের জন্য কাজের ক্ষেত্র বাড়াতে হবে, উৎপাদনশীলতা ও সব মানুষের সমভাবে সেবা পাওয়ার সুযোগ অবারিত করতে হবে এবং আর্থসামাজিক বৈষম্য দূর করার ব্যবস্থা নিতে হবে। বৈষম্য দূর করার বিষয়টি নিয়ে এ দেশে তেমন কোনো কাজই করা হয়নি; বরং উল্টোটাই হয়েছে। মূল্যস্ফীতির বিরূপ প্রভাবে দেশ যাতে অর্থনৈতিক স্থবিরতার দিকে না যায়, সেটিই এখন ভাবার বিষয়। এ ক্ষেত্রে অনেক বিশ্লেষক নীতিগত পরিবর্তনের প্রয়োজনের কথা বলেন; ব্যাংকের সঞ্চয় সুদহার পুনর্বিবেচনার কথা বলেন। এসব বিষয় আমলে নেয়া জরুরি।