ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবাইর মাসরুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ : রাজস্ব প্রকল্পের উপকরণ প্রদানের নামে নানা অনিয়ম

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:৩০:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ জুলাই ২০১৭
  • / ১৮৮৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলাধীন কৃষকদের মাঝে রাজস্ব খাতে বরাদ্দকৃত ভুট্টা প্রদর্শনী প্লট অনুযায়ী কৃষি উপকরণ ও আন্তঃপরিচর্যা সহায়তা প্রদানে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবাইর মাসরুর উপকরণ ও আন্তঃপরিচর্যা সহায়তা প্রদানে ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। তার কাছ থেকে আন্তঃপরিচর্যার সহায়তা পাননি একজন কৃষকও। আর সহায়ক যে উপকরণও পেয়েছেন তা বরাদ্দের চেয়ে কম। এ ছাড়াও নিজের অভিযোগ অন্যের ঘাড়ে চাপাতে ‘২০১৬-১৭ অর্থ বছরের রাজস্ব খাতের অর্থায়নে ভুট্টা (হাইব্রিড এফ-১) প্রদর্শনীর উপকরণ বিতরণ’ ফরমে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নিচ্ছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সরকারিভাবে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ৬৪জন কৃষকের মধ্যে ভুট্টা প্রদর্শনী প্লটের জন্য কৃষি উপকরণ ও আর্থিক সহায়তা বরাদ্দ আসে। সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে বীজ, সারসহ আর্থিক সহায়তা প্রদান করে আসছে। এরই অংশ হিসেবে রাজস্ব প্রকল্পের আওতায় কৃষক প্রতি ভুট্টার বীজ, ডিএপি ও এমওপি সার, বোরিক এসিড, দস্তা সার, ম্যাগনেসিয়াম সালফেট, রেজিস্টার খাতা ক্রয়, সাইনবোর্ড তৈরি এবং আন্তঃপরিচর্যার ১ হাজার টাকা ও পরিবহনসহ আনুসাঙ্গিক বাবদ  ৬০০টাকা দেয়ার কথা।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতি কৃষককে ভুট্টার বীজ ৪ কেজির পরিবর্তে ৩ কেজি, ডিএপি ৩০ কেজির পরিবর্তে ২০ কেজি, এমওপি ১৫ কেজির পরিবর্তে ১০ কেজি, বোরিক এসিড দেড় কেজির পরিবর্তে ১ কেজি, দস্তা সার ২ কেজির পরিবর্তে ১ কেজি, সালফেট ১০ কেজির পরিবর্তে ৮ কেজি প্রদান করেন।
কুলচারার কৃষক মাহাবুল হোসেন বলেন, ভুট্টার বীজসহ যে সার ও কীটনাশক পেয়েছি তাতে একটু কম বেশি ছিল। তাছাড়া আমাদের নিয়ে মাঠ দিবস করা হয়নি।
কুশোডাঙ্গা গ্রামের কৃষক মনিরুদ্দিন জানান, ভুট্টা চাষের জন্য আমি বীজ, সার, কীটনাশক পেয়েছি। তবে বস্তায় করে দেওয়া হয়েছিল যা আমি আর পরে ওজন করিনি। কম থাকতেও পারে, দোকান থেকে কিনলেও একটু কমবেশি হয়। আর আমাদের এ গ্রামে মাঠ দিবস করা হয়নি।
প্রতিটি কৃষকের ভাষ্যমতে তাদের প্রাপ্য অনুযায়ী কৃষি উপকরণ নির্দিষ্ট পরিমাপে উপজেলা কৃষি অফিস বুঝিয়ে দেয়নি। তবে কম বেশি থাকতে পারে। কিন্তু সদর উপজেলার প্রতিটি গ্রামের কৃষকেরা বলছেন তারা কোনো আর্থিক সহায়তা পাননি।
৬৪টি প্রদর্শনী প্লটের মধ্যে ৪টি করে প্লট নিয়ে একটি করে মাঠ দিবস করে মোট ১৬টি মাঠ দিবস আয়োজন করার কথা। এ জন্য প্রতিটি মাঠ দিবসের অনুকূলে সরকারি বরাদ্দ দেয়া হয় ৬হাজার টাকা। কিন্তু সরেজিমন ঘুরে দেখা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবাইর মাসরুর সুবদিয়া ও গাড়াবাড়িয়া গ্রামে একটি করে দু’টিসহ বড় পরিসরে দু’টি মাঠ দিবস করে ১২টি মাঠ দিবসের ৭২হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ আছে।
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবাইর মাসরুর এ প্রতিবেদককে জানান, অভিযোগগুলো পুরোপুরি উদ্দেশ্যমূলক। আমার অফিসের কয়েকজন স্টাফ সাংবাদিকদের কাছে ভুল তথ্য সরবরাহ করে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করছে। কৃষকদের বরাদ্দকৃত বীজ ও সার কম দেয়া হয়নি। কৃষকদের মাঝে উপকরণসহ যা কিছু দেয়া হয়েছে আমার কাছে সব কিছুর ডকুমেন্ট আছে। কৃষকদের আন্তঃপরিচর্যার জন্য নগদ টাকা দেয়ার কোনো বিধান নেই। আন্তঃপরিচর্যার জন্য বালাইনাশক দেওয়া হয়- যা বিজাত বাছাইকরণ, বীজ শোধন, আগাছা দমন ও সেচকাজে ব্যবহার করবেন।
অভিযোগ আছে নিজের দুর্নীতি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সহকর্মীদের দিয়ে ‘২০১৬-১৭ অর্থ বছরের রাজস্ব খাতের অর্থায়নে ভুট্টা (হাইব্রিড এফ-১) প্রদর্শনীর উপকরণ বিতরণ’ শীর্ষক ফরমে চাপ দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নিচ্ছেন। ওই ফরমে উল্লেখ আছে বরাদ্দ অনুযায়ী উপকরণ কৃষক গ্রহণ করেছেন। সেখানে সনাক্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে স্বাক্ষর করবেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ। কর্মকর্তাদের অনেকে ফরমে স্বাক্ষর করতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাদের ধারণা মতে নিজে দুর্নীতি করেছেন আর এখন চাপে পড়ে সকলের ঘাড়ে দোষ চাপাতে এ কৌশল অবলম্বন করছেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবাইর মাসরুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ : রাজস্ব প্রকল্পের উপকরণ প্রদানের নামে নানা অনিয়ম

আপলোড টাইম : ০৪:৩০:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ জুলাই ২০১৭

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলাধীন কৃষকদের মাঝে রাজস্ব খাতে বরাদ্দকৃত ভুট্টা প্রদর্শনী প্লট অনুযায়ী কৃষি উপকরণ ও আন্তঃপরিচর্যা সহায়তা প্রদানে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবাইর মাসরুর উপকরণ ও আন্তঃপরিচর্যা সহায়তা প্রদানে ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। তার কাছ থেকে আন্তঃপরিচর্যার সহায়তা পাননি একজন কৃষকও। আর সহায়ক যে উপকরণও পেয়েছেন তা বরাদ্দের চেয়ে কম। এ ছাড়াও নিজের অভিযোগ অন্যের ঘাড়ে চাপাতে ‘২০১৬-১৭ অর্থ বছরের রাজস্ব খাতের অর্থায়নে ভুট্টা (হাইব্রিড এফ-১) প্রদর্শনীর উপকরণ বিতরণ’ ফরমে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নিচ্ছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সরকারিভাবে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ৬৪জন কৃষকের মধ্যে ভুট্টা প্রদর্শনী প্লটের জন্য কৃষি উপকরণ ও আর্থিক সহায়তা বরাদ্দ আসে। সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে বীজ, সারসহ আর্থিক সহায়তা প্রদান করে আসছে। এরই অংশ হিসেবে রাজস্ব প্রকল্পের আওতায় কৃষক প্রতি ভুট্টার বীজ, ডিএপি ও এমওপি সার, বোরিক এসিড, দস্তা সার, ম্যাগনেসিয়াম সালফেট, রেজিস্টার খাতা ক্রয়, সাইনবোর্ড তৈরি এবং আন্তঃপরিচর্যার ১ হাজার টাকা ও পরিবহনসহ আনুসাঙ্গিক বাবদ  ৬০০টাকা দেয়ার কথা।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতি কৃষককে ভুট্টার বীজ ৪ কেজির পরিবর্তে ৩ কেজি, ডিএপি ৩০ কেজির পরিবর্তে ২০ কেজি, এমওপি ১৫ কেজির পরিবর্তে ১০ কেজি, বোরিক এসিড দেড় কেজির পরিবর্তে ১ কেজি, দস্তা সার ২ কেজির পরিবর্তে ১ কেজি, সালফেট ১০ কেজির পরিবর্তে ৮ কেজি প্রদান করেন।
কুলচারার কৃষক মাহাবুল হোসেন বলেন, ভুট্টার বীজসহ যে সার ও কীটনাশক পেয়েছি তাতে একটু কম বেশি ছিল। তাছাড়া আমাদের নিয়ে মাঠ দিবস করা হয়নি।
কুশোডাঙ্গা গ্রামের কৃষক মনিরুদ্দিন জানান, ভুট্টা চাষের জন্য আমি বীজ, সার, কীটনাশক পেয়েছি। তবে বস্তায় করে দেওয়া হয়েছিল যা আমি আর পরে ওজন করিনি। কম থাকতেও পারে, দোকান থেকে কিনলেও একটু কমবেশি হয়। আর আমাদের এ গ্রামে মাঠ দিবস করা হয়নি।
প্রতিটি কৃষকের ভাষ্যমতে তাদের প্রাপ্য অনুযায়ী কৃষি উপকরণ নির্দিষ্ট পরিমাপে উপজেলা কৃষি অফিস বুঝিয়ে দেয়নি। তবে কম বেশি থাকতে পারে। কিন্তু সদর উপজেলার প্রতিটি গ্রামের কৃষকেরা বলছেন তারা কোনো আর্থিক সহায়তা পাননি।
৬৪টি প্রদর্শনী প্লটের মধ্যে ৪টি করে প্লট নিয়ে একটি করে মাঠ দিবস করে মোট ১৬টি মাঠ দিবস আয়োজন করার কথা। এ জন্য প্রতিটি মাঠ দিবসের অনুকূলে সরকারি বরাদ্দ দেয়া হয় ৬হাজার টাকা। কিন্তু সরেজিমন ঘুরে দেখা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবাইর মাসরুর সুবদিয়া ও গাড়াবাড়িয়া গ্রামে একটি করে দু’টিসহ বড় পরিসরে দু’টি মাঠ দিবস করে ১২টি মাঠ দিবসের ৭২হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ আছে।
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবাইর মাসরুর এ প্রতিবেদককে জানান, অভিযোগগুলো পুরোপুরি উদ্দেশ্যমূলক। আমার অফিসের কয়েকজন স্টাফ সাংবাদিকদের কাছে ভুল তথ্য সরবরাহ করে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করছে। কৃষকদের বরাদ্দকৃত বীজ ও সার কম দেয়া হয়নি। কৃষকদের মাঝে উপকরণসহ যা কিছু দেয়া হয়েছে আমার কাছে সব কিছুর ডকুমেন্ট আছে। কৃষকদের আন্তঃপরিচর্যার জন্য নগদ টাকা দেয়ার কোনো বিধান নেই। আন্তঃপরিচর্যার জন্য বালাইনাশক দেওয়া হয়- যা বিজাত বাছাইকরণ, বীজ শোধন, আগাছা দমন ও সেচকাজে ব্যবহার করবেন।
অভিযোগ আছে নিজের দুর্নীতি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সহকর্মীদের দিয়ে ‘২০১৬-১৭ অর্থ বছরের রাজস্ব খাতের অর্থায়নে ভুট্টা (হাইব্রিড এফ-১) প্রদর্শনীর উপকরণ বিতরণ’ শীর্ষক ফরমে চাপ দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নিচ্ছেন। ওই ফরমে উল্লেখ আছে বরাদ্দ অনুযায়ী উপকরণ কৃষক গ্রহণ করেছেন। সেখানে সনাক্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে স্বাক্ষর করবেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ। কর্মকর্তাদের অনেকে ফরমে স্বাক্ষর করতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাদের ধারণা মতে নিজে দুর্নীতি করেছেন আর এখন চাপে পড়ে সকলের ঘাড়ে দোষ চাপাতে এ কৌশল অবলম্বন করছেন।