গ্রাম ছাড়া পরিবারগুলির প্রায় সবাই তাদের নিজ ভিটেই ফিরেছে : জীবননগর গঙ্গাদাশপুরে শত শঙ্কার মাঝেও শান্তির বাতাস : অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে পুলিশ মোতায়েন কড়া নজরদারী
- আপলোড টাইম : ০৬:৩০:২৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ জুলাই ২০১৭
- / ৩৩২ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক/জীবননগর অফিস: দীর্ঘদিন পর এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সহযোগিতায় গ্রামের দুটি পক্ষের মধ্যে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে সামাজিক ভাবে বসবাসের স্বার্থে জীবননগর গঙ্গাদাশপুর গ্রাম ছেড়ে যাওয়া পরিবারগুলি তাদের নিজ নিজ ভিটেই ফিরে বসবাস শুরু করেছে। এছাড়া পুলিশের অতিরিক্ত টহলে শত শংকার মাঝেও নিজ গৃহে ফিরে ভূমিহীনরা উভয় পক্ষের মধ্যে সৌহার্দ্যরে প্রত্যাশা করছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলার শান্তি প্রিয় গ্রাম গঙ্গাদাশপুরে বিরোধপুর্ণ ১১৬ বিঘা জমি নিয়ে কয়েক দশক ধরে ভূমিহীন ও জমির মালিকদের সাথে হানাহানি-খুনোখুনী ঘরবাড়ি ভাংচুর, লুটপাটসহ প্রতিনিয়িত নানান ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে আসছিলো। বিরোধপূর্ণ জমি দখলকে কেন্দ্র করে প্রায়ই হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে অনেকটা নীরবে। এঘটনায় গোলদার গ্রুপের সদস্যরা ভূমিহীন গ্রুপের সাড়ে তিন শতাধিক খেটে খাওয়া নিরীহ সাধারন মানুষকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো তারা গোলদার গ্রুপের সদস্যদের ভয়ে সাড়ে তিন বছর গ্রামে প্রবেশ করতেও পারিনি।
একপর্যায়ে দীর্ঘদিন গ্রাম ছেড়ে ভূমিহীন পরিবারের সদস্যরা দিশেহারা হয়ে পড়ে। ২০১৫ সালের শেষের দিকে সকল ভয়ভীতি উপেক্ষা করে ভূমিহীনরা জোরপূর্বক গ্রামে বসবাস শুরু করে। এ ঘটনার জেরধরে ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারী সোমবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে গ্রামের পূর্বপাড়া মসজিদের কাছে ভুমিহীনদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে গোলদার গ্রুপ।
এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষের বোমা হামলা ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ভূমিহীন নেতা ও লীগ কর্মী মোহাম্মদ আলী (৫২) শাহাবুদ্দীন (৭০) তার স্ত্রী মালেকা খাতুন (৫৫)সহ ৩ জন নিহত হয় এবং আব্দুল মোমিন (৩৮) আ. গফুর (৫৫), আয়ূব আলী (৫২), আমীর হোসেন (৩৮) ও সুরাতন নেছা (৬২) আহত হয়।
এদিকে গোলদার গ্রুপের সদস্য বিশু গোলদারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমরা গ্রামে শান্তি চাই সকলে আমরা মিলে মিশে থাকতে চাই বিরোধপুর্ণ জমি নিয়ে আমরাও বড় বিপদে আছি, আমরাও দীর্ঘ দেড় বছর গ্রাম ছাড়া হয়ে আছি । আমাদের সকলেই প্রায় গ্রামে ফিরে গেছে এখোনো ১০ থেকে ১৫ টি পরিবার গ্রামে যেতে পারছে না। সকল বিষয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানে গ্রামে শান্তি ফিরে আসুক।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা, জীবননগর সার্কেল) কলিমুল্লাহ জানান, গঙ্গাদাশপুরের জনগণের মধ্যে যে বিরোধ রয়েছে তা আইনগতভাবে সমাধান হবে। তবে গ্রামের মানুষ গ্রামে ফিরে গেছে তারা যাতে শান্তিতে বসবাস করতে পারে সে জন্য পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছে ।
গঙ্গাদাশপুর গ্রামে বিরোধপুর্ণ বিষয় ও গ্রামছাড়া পরিবারগুলি গ্রামে ফিরে যাওয়া নিয়ে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেলিম রেজার সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এনামুল হকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, বিরোধপুর্ণ জমি দু’পক্ষের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধের জেরধরে গঙ্গাদাশপুর গ্রামে আবারও যেন কোন অপ্রীতিকর ঘটনার পুর্নাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা কোন পক্ষের হয়ে কাজ করছি না গ্রামের সার্বিক শান্তি কামনা করছি।
সীমান্ত ইউপি চেয়ারম্যান ময়েন উদ্দিন মঈন বলেন, গঙ্গাদাশপুর গ্রামে দীর্ঘদিন যাবৎ বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে একটি সংঘর্ষ লেগেই আছে এতে দুটি নিরীহ ব্যক্তির প্রান হারিয়েছে। আমরা সকলেই চাই এ বিষয়টি সকল নেতাকর্মী বসে দুরত্ব মিটিয়ে ফেলে গ্রামে শান্তি ফিরে আসুক।
উল্লেখ্য, ২০১২ সাল থেকে গঙ্গাদাসপুর গ্রামের ৬২টি ভূমিহীন পরিবারের সাথে ১১৬ বিঘা জমি নিয়ে গ্রামের গোলদার গ্রুপ ও ভুমিহীন পরিবারের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। গোলদার গ্রুপ একবার হামলা চালিয়ে ভূমিহীন ৬২টি পরিবারকে বাড়ি ছাড়া করে। এ হামলায় সেসময় উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হয় ভূমিহীনরা দীর্ঘ ৩ বছর বাইরে থাকার পর ২০১৫ সালের শেষের দিকে গ্রামে প্রবেশ করলে গোলদার গ্রুপের সাথে নতুন করে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে । গত ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারী রাতে এক হামলায় ৩জন নিহত ও ৫জন আহত হয়। এঘটনায় গোলদার গ্রুপের ৮০ থেকে ৯০ পরিবার গ্রাম ছাড়া হয়।