ইপেপার । আজ বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫

ইসি গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপ আইন প্রণয়ন বেশি জরুরি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৩৭:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২১
  • / ৬৮ বার পড়া হয়েছে

নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে রাষ্ট্রপতির সংলাপ বা মতবিনিময় শুরু হচ্ছে আজ। বঙ্গভবনে আজ প্রথম দিনের সংলাপে অংশ নেবে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে এই মতবিনিময়ের আয়োজন করা হচ্ছে। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ। কিন্তু এই সংলাপ নিয়ে জনগণের মধ্যে বা রাজনৈতিক অঙ্গনেও কোনো রকম আগ্রহ বা উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো যেমন আশাবাদী নয় তেমনি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও কেবল নৈরাশ্যই প্রকাশ করেছেন। দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি এটিকে ‘অর্থহীন’ বলেছে। গণমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলের শরিক ১৪ দলের নেতারাও মনে করেন, রাষ্ট্রপতি আওয়ামী লীগের ইচ্ছার বাইরে গিয়ে কিছু করবেন না। কমিশন গঠনে ক্ষমতাসীন দলের পছন্দই প্রাধান্য পাবে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, সংলাপ থেকে তাদের কোনো প্রত্যাশা নেই। কারণ তারা মনে করেন, নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। বলা হয় যে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে নিয়ে রেখেছে বিএনপি। এই দাবি আদায়ে তারা রাজপথে ‘কার্যকর’ আন্দোলনও গড়ে তুলতে চায়। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার একটি দৈনিকের সাথে আলোচনায় এই সংলাপকে ‘নিতান্তই লোক দেখানো’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, দেশে নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, মানুষের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়া ফিরিয়ে আনতে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক সমঝোতা জরুরি। তবে রাষ্ট্রপতির সংলাপে তেমন কোনো সমাধান আসবে বলে মনে হয় না। স্মরণীয় যে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনও গঠন করা হয় এ ধরনের সংলাপের ভিত্তিতে গঠিত সার্চ কমিটির মাধ্যমে। কিন্তু সেই কমিশন বা তারও আগের কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদকে প্রধান করে একইভাবে গঠিত কমিশন সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। বরং তারা নিজেদের ক্ষমতাসীনদের বশংবদ ও আজ্ঞাবহ হিসেবে প্রমাণ করেছেন।

সেই অভিজ্ঞতা সামনে রেখে এখন সংশ্লিষ্ট রাজনীতিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, এ থেকে কোনো সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে সংবিধানের নির্দেশনা মেনে আইন তৈরি করা হোক এবং সেই আইনের ভিত্তিতে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য কমিশন গঠন করা হোক এটাই চায় বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। বিভিন্ন দলের নেতারা বলেছেন, সংলাপে গিয়ে কোনো লাভ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য স্বাধীন, শক্তিশালী এবং কার্যকর নির্বাচন কমিশনের বিকল্প নেই। এ জন্য দরকার আইনি অবকাঠামোর ভেতরে থেকে নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ইসি গঠন। সংবিধানে একটি আইনের মাধ্যমে ইসি গঠনের নির্দেশনা আছে; কিন্তু গত ৫০ বছরে কোনো সরকার এই আইন প্রণয়ন করেনি। স্পষ্টতই নির্বাচন কমিশন নিজেদের অনুগত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠন করার অভিলাষ এর মধ্যে নিহিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে সেটি পুরো ব্যবস্থাটিকেই ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন সবচেয়ে বেশি যেটা দরকার সেটি হলো, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অব্যাহত রেখে দেশ ও জাতির অগ্রগতির স্বার্থে পরিপূর্ণ সদিচ্ছার সাথে এমন একটি আইন প্রণয়ন করা, যার মাধ্যমে কমিশন গঠন করা হবে। এতে সব দলের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

ইসি গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপ আইন প্রণয়ন বেশি জরুরি

আপলোড টাইম : ১১:৩৭:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২১

নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে রাষ্ট্রপতির সংলাপ বা মতবিনিময় শুরু হচ্ছে আজ। বঙ্গভবনে আজ প্রথম দিনের সংলাপে অংশ নেবে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে এই মতবিনিময়ের আয়োজন করা হচ্ছে। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ। কিন্তু এই সংলাপ নিয়ে জনগণের মধ্যে বা রাজনৈতিক অঙ্গনেও কোনো রকম আগ্রহ বা উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো যেমন আশাবাদী নয় তেমনি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও কেবল নৈরাশ্যই প্রকাশ করেছেন। দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি এটিকে ‘অর্থহীন’ বলেছে। গণমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলের শরিক ১৪ দলের নেতারাও মনে করেন, রাষ্ট্রপতি আওয়ামী লীগের ইচ্ছার বাইরে গিয়ে কিছু করবেন না। কমিশন গঠনে ক্ষমতাসীন দলের পছন্দই প্রাধান্য পাবে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, সংলাপ থেকে তাদের কোনো প্রত্যাশা নেই। কারণ তারা মনে করেন, নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। বলা হয় যে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে নিয়ে রেখেছে বিএনপি। এই দাবি আদায়ে তারা রাজপথে ‘কার্যকর’ আন্দোলনও গড়ে তুলতে চায়। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার একটি দৈনিকের সাথে আলোচনায় এই সংলাপকে ‘নিতান্তই লোক দেখানো’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, দেশে নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, মানুষের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়া ফিরিয়ে আনতে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক সমঝোতা জরুরি। তবে রাষ্ট্রপতির সংলাপে তেমন কোনো সমাধান আসবে বলে মনে হয় না। স্মরণীয় যে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনও গঠন করা হয় এ ধরনের সংলাপের ভিত্তিতে গঠিত সার্চ কমিটির মাধ্যমে। কিন্তু সেই কমিশন বা তারও আগের কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদকে প্রধান করে একইভাবে গঠিত কমিশন সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। বরং তারা নিজেদের ক্ষমতাসীনদের বশংবদ ও আজ্ঞাবহ হিসেবে প্রমাণ করেছেন।

সেই অভিজ্ঞতা সামনে রেখে এখন সংশ্লিষ্ট রাজনীতিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, এ থেকে কোনো সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে সংবিধানের নির্দেশনা মেনে আইন তৈরি করা হোক এবং সেই আইনের ভিত্তিতে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য কমিশন গঠন করা হোক এটাই চায় বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। বিভিন্ন দলের নেতারা বলেছেন, সংলাপে গিয়ে কোনো লাভ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য স্বাধীন, শক্তিশালী এবং কার্যকর নির্বাচন কমিশনের বিকল্প নেই। এ জন্য দরকার আইনি অবকাঠামোর ভেতরে থেকে নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ইসি গঠন। সংবিধানে একটি আইনের মাধ্যমে ইসি গঠনের নির্দেশনা আছে; কিন্তু গত ৫০ বছরে কোনো সরকার এই আইন প্রণয়ন করেনি। স্পষ্টতই নির্বাচন কমিশন নিজেদের অনুগত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠন করার অভিলাষ এর মধ্যে নিহিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে সেটি পুরো ব্যবস্থাটিকেই ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন সবচেয়ে বেশি যেটা দরকার সেটি হলো, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অব্যাহত রেখে দেশ ও জাতির অগ্রগতির স্বার্থে পরিপূর্ণ সদিচ্ছার সাথে এমন একটি আইন প্রণয়ন করা, যার মাধ্যমে কমিশন গঠন করা হবে। এতে সব দলের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটবে।