ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫

চুয়াডাঙ্গায় ভুমিষ্ঠ সন্তান ক্লিনিক থেকে সরিয়ে নেয়ায় চাঞ্চল্য : দুই পরিবারের নানা নাটক সন্তান জন্মের ১২ দিন আগেই করা হয় এফিডেভিট

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:০৯:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ জুলাই ২০১৭
  • / ৪৫০ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গায় ভুমিষ্ঠ সন্তান ক্লিনিক থেকে সরিয়ে নেয়ায় চাঞ্চল্য : দুই পরিবারের নানা নাটক
সন্তান জন্মের ১২ দিন আগেই করা হয় এফিডেভিট
IMG_20170829_190548নিজস্ব প্রতিবেদক: শ্যামলী খাতুন যখন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা তখন তার পেটের সন্তান শুধুই বিক্রিই করা হয়নি। ভুমিষ্ঠ হওয়ার আগেই তাকে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। দিন পনের আগেই নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে এফিডেভিটের মাধ্যমে দত্তক দেয়া হয়েছে পেটের সন্তান। পৃথিবীর আলো দেখার আগেই তার নাম রাখা হয়েছে ফারদিন। গত ২১ জুন চুয়াডাঙ্গা নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে এফিডেভিটে উল্লেখ করা হয়, শ্যামলী খাতুন তার সদ্য ভুমিষ্ঠ পূত্রসন্তান ফারদিনকে তার আপন বোন ফরিদা খাতুনের কাছে দত্তক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা স্বামী-স্ত্রী। অথচ সেসময় তাদের সন্তান তখনও আসেনি পৃথিবীতে। এমনকি ফরিদা খাতুন আপন বোন তো দূরের কথা, তাদের পরিচিতও নন। তার প্রায় ১২ দিন পর গত সোমবার সকাল ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে সড়কের ইউনাইটেড ক্লিনিকে পুত্রসন্তান প্রসব করে শ্যামলী। সিজার করে সন্তান ভুমিষ্ঠ হওয়ার কিছুক্ষণ পরই যখন ক্রেতার লোকজন ক্লিনিক থেকে নবজাতককে সরিয়ে নেন, তখনই বিষয়টি জানাজানি হয়।
এফিডেভিট সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার বেলগাছী গ্রামের আশরাফুল ইসলাম ওরফে আশিকুর ও তার স্ত্রী শ্যামলী খাতুন গত মাসের ২১ তারিখে নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে গিয়ে তাদের সন্তান দত্তক দেয়ার জন্য একটি এফিডেভিট করেন। ১শ’ টাকার স্ট্যাম্পে করা এফিডেভিটে উল্লেখ করা হয়, শ্যামলীর আপন বোন ফরিদা খাতুন খাতুন নিঃসন্তান হওয়ায় তাদের সদ্য ভুমিষ্ঠ পুত্রসন্তান ফারদিনকে ফরিদা খাতুন ও তার স্বামী ওল্টুর রহমানের সম্মতিতে দত্তক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আশরাফুল ও শ্যামলী।
এফিডেভিটে আশরাফুল ইসলাম ওরফে আশিকুর ও তার স্ত্রী শ্যামলী খাতুন আরও উল্লেখ করে, ফরিদা খাতুন এবং ওল্টুর রহমান এই নাবালক পুত্রকে নিজের পুত্র হিসেবে দায়িত্বের সাথে লালন পালন করিবে এবং শরীর মন সমস্ত কিছুর অধিকারি হবে। নাবালক পুত্রকে আমরা ভবিষ্যতে দাবি করিব না। দাবি করিলেও আইনগতভাবে তা অগ্রাহ্য হবে। নাবালক পুত্র ওল্টুর রহমান ও ফরিদা খাতুনের ওয়ারিশ বলে গন্য হবে।
এদিকে, গত সোমবার অর্থাৎ ৩ জুলাই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সড়কের ইউনাইটেড ক্লিনিকে পুত্রসন্তান প্রসব করে শ্যামলী। সন্তান ভুমিষ্ঠ হওয়ার কিছুক্ষণ পরই ক্রেতার লোকজন নবজাতককে সরিয়ে নেন, তখনই বিষয়টি জানাজানি হয়। প্রসূতির জ্ঞান ফেরার আগেই তার কোল থেকে নবজাতক পুত্র সন্তানকে সরিয়ে নেয়া হয় অজ্ঞাতস্থানে। এর কারণ জানতে গেলে জ্ঞান ফেরার পর প্রসূতি শ্যামলী ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নেয়ার জন্য বলেন, ‘আমার এক বোনের সন্তান হয় না, তাই তাকে আমার সন্তান দেয়া হয়েছে।’ তবে, নিজের আপন বোন উল্লেখ করলেও তার নাম ঠিকানা বলতে পারেনি সে। শ্যামলীর অসংলগ্ন কথাবার্তার একপর্যায়ে তার পাশে থাকা কয়েকজন বলেন ফেলেন শ্যামলী যখন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা তখনই অন্যকে দেয়া হবে বলে অঙ্গীকার করার বদলে চিকিৎসাসহ যাবতীয় খবর নেয়া হয়েছে। সিজার করানো থেকে শুরু করে সব খরচই করেছে ক্রেতা পক্ষের আল্লাহর দান ফার্মেসির মালিক হুমায়ুন। প্রথমে শ্যামলী খাতুন তার সন্তান বিক্রির কথা অস্বীকার করলেও পরে অবশ্য সেও বলেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সড়কের আল্লাহর দান ফার্মেসির মালিক হুমায়ুনের মাধ্যমে হাতিকাটার নান্নু তার এক আত্মীয়র জন্য কিনেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শ্যামলী খাতুনের সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তান বিক্রি করা হয়েছে আলমডাঙ্গার খাদিমপুর ইউনিয়নের পাঁচকমলাপুর গ্রামের ওল্টুর রহমানের স্ত্রী ফরিদা খাতুনের কাছে। তিনিই ওই সন্তানের দায়-দায়িত্ব নিয়েছেন। গতকাল কয়েকজন সাংবাদিক ওল্টুর রহমানের সাথে বাড়িতে গেলে তার স্ত্রীর সাথে কথা বলতে দেয়নি পরিবারের লোকজন। ফরিদা খাতুন আচি ঘরে আছে বলে জানায় তারা।
পাঁচকমলাপুর গ্রামের স্থানীয়রা জানায়, বেশকিছুদিন আগে ফরিদা খাতুন পিতার বাড়িতে যায়। গর্ভবতি হওয়ায় তিনি দীর্ঘদিন সেখানেই ছিলো বলে জানতেন স্থানীয়রা। তবে সন্তান দত্তক নেয়ার বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না।
এদিকে, সন্তান কেনার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে অভিযুক্ত আল্লার দান ফার্মেসির হুমায়নের সাথে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। গত সোমবার ঘটনা জানাজানির পর থেকেই তার মোবাইলফোন বন্ধ রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গার কলোনিপাড়ার আশরাফুল ইসলাম কিছুদিন শ্যামলিকে নিয়ে দৌলাতদিয়াড় বঙ্গজপাড়ায় ভাড়ায় বসবাস করলেও পরবর্তীতে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের আরামপাড়ার একটি বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করে আসছে। গত সোমবার শ্যামলির সন্তান প্রসবের পর নবজাতককে অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে নেয়ার পর যখন বিক্রির বিষয়টি জানাজানি হয়, তখন থেকেই আশিকুর কৌশলে চলাচল করে। সন্ধ্যায় তিনি এ বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালাতে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

চুয়াডাঙ্গায় ভুমিষ্ঠ সন্তান ক্লিনিক থেকে সরিয়ে নেয়ায় চাঞ্চল্য : দুই পরিবারের নানা নাটক সন্তান জন্মের ১২ দিন আগেই করা হয় এফিডেভিট

আপলোড টাইম : ০৫:০৯:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ জুলাই ২০১৭

চুয়াডাঙ্গায় ভুমিষ্ঠ সন্তান ক্লিনিক থেকে সরিয়ে নেয়ায় চাঞ্চল্য : দুই পরিবারের নানা নাটক
সন্তান জন্মের ১২ দিন আগেই করা হয় এফিডেভিট
IMG_20170829_190548নিজস্ব প্রতিবেদক: শ্যামলী খাতুন যখন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা তখন তার পেটের সন্তান শুধুই বিক্রিই করা হয়নি। ভুমিষ্ঠ হওয়ার আগেই তাকে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। দিন পনের আগেই নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে এফিডেভিটের মাধ্যমে দত্তক দেয়া হয়েছে পেটের সন্তান। পৃথিবীর আলো দেখার আগেই তার নাম রাখা হয়েছে ফারদিন। গত ২১ জুন চুয়াডাঙ্গা নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে এফিডেভিটে উল্লেখ করা হয়, শ্যামলী খাতুন তার সদ্য ভুমিষ্ঠ পূত্রসন্তান ফারদিনকে তার আপন বোন ফরিদা খাতুনের কাছে দত্তক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা স্বামী-স্ত্রী। অথচ সেসময় তাদের সন্তান তখনও আসেনি পৃথিবীতে। এমনকি ফরিদা খাতুন আপন বোন তো দূরের কথা, তাদের পরিচিতও নন। তার প্রায় ১২ দিন পর গত সোমবার সকাল ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে সড়কের ইউনাইটেড ক্লিনিকে পুত্রসন্তান প্রসব করে শ্যামলী। সিজার করে সন্তান ভুমিষ্ঠ হওয়ার কিছুক্ষণ পরই যখন ক্রেতার লোকজন ক্লিনিক থেকে নবজাতককে সরিয়ে নেন, তখনই বিষয়টি জানাজানি হয়।
এফিডেভিট সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার বেলগাছী গ্রামের আশরাফুল ইসলাম ওরফে আশিকুর ও তার স্ত্রী শ্যামলী খাতুন গত মাসের ২১ তারিখে নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে গিয়ে তাদের সন্তান দত্তক দেয়ার জন্য একটি এফিডেভিট করেন। ১শ’ টাকার স্ট্যাম্পে করা এফিডেভিটে উল্লেখ করা হয়, শ্যামলীর আপন বোন ফরিদা খাতুন খাতুন নিঃসন্তান হওয়ায় তাদের সদ্য ভুমিষ্ঠ পুত্রসন্তান ফারদিনকে ফরিদা খাতুন ও তার স্বামী ওল্টুর রহমানের সম্মতিতে দত্তক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আশরাফুল ও শ্যামলী।
এফিডেভিটে আশরাফুল ইসলাম ওরফে আশিকুর ও তার স্ত্রী শ্যামলী খাতুন আরও উল্লেখ করে, ফরিদা খাতুন এবং ওল্টুর রহমান এই নাবালক পুত্রকে নিজের পুত্র হিসেবে দায়িত্বের সাথে লালন পালন করিবে এবং শরীর মন সমস্ত কিছুর অধিকারি হবে। নাবালক পুত্রকে আমরা ভবিষ্যতে দাবি করিব না। দাবি করিলেও আইনগতভাবে তা অগ্রাহ্য হবে। নাবালক পুত্র ওল্টুর রহমান ও ফরিদা খাতুনের ওয়ারিশ বলে গন্য হবে।
এদিকে, গত সোমবার অর্থাৎ ৩ জুলাই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সড়কের ইউনাইটেড ক্লিনিকে পুত্রসন্তান প্রসব করে শ্যামলী। সন্তান ভুমিষ্ঠ হওয়ার কিছুক্ষণ পরই ক্রেতার লোকজন নবজাতককে সরিয়ে নেন, তখনই বিষয়টি জানাজানি হয়। প্রসূতির জ্ঞান ফেরার আগেই তার কোল থেকে নবজাতক পুত্র সন্তানকে সরিয়ে নেয়া হয় অজ্ঞাতস্থানে। এর কারণ জানতে গেলে জ্ঞান ফেরার পর প্রসূতি শ্যামলী ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নেয়ার জন্য বলেন, ‘আমার এক বোনের সন্তান হয় না, তাই তাকে আমার সন্তান দেয়া হয়েছে।’ তবে, নিজের আপন বোন উল্লেখ করলেও তার নাম ঠিকানা বলতে পারেনি সে। শ্যামলীর অসংলগ্ন কথাবার্তার একপর্যায়ে তার পাশে থাকা কয়েকজন বলেন ফেলেন শ্যামলী যখন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা তখনই অন্যকে দেয়া হবে বলে অঙ্গীকার করার বদলে চিকিৎসাসহ যাবতীয় খবর নেয়া হয়েছে। সিজার করানো থেকে শুরু করে সব খরচই করেছে ক্রেতা পক্ষের আল্লাহর দান ফার্মেসির মালিক হুমায়ুন। প্রথমে শ্যামলী খাতুন তার সন্তান বিক্রির কথা অস্বীকার করলেও পরে অবশ্য সেও বলেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সড়কের আল্লাহর দান ফার্মেসির মালিক হুমায়ুনের মাধ্যমে হাতিকাটার নান্নু তার এক আত্মীয়র জন্য কিনেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শ্যামলী খাতুনের সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তান বিক্রি করা হয়েছে আলমডাঙ্গার খাদিমপুর ইউনিয়নের পাঁচকমলাপুর গ্রামের ওল্টুর রহমানের স্ত্রী ফরিদা খাতুনের কাছে। তিনিই ওই সন্তানের দায়-দায়িত্ব নিয়েছেন। গতকাল কয়েকজন সাংবাদিক ওল্টুর রহমানের সাথে বাড়িতে গেলে তার স্ত্রীর সাথে কথা বলতে দেয়নি পরিবারের লোকজন। ফরিদা খাতুন আচি ঘরে আছে বলে জানায় তারা।
পাঁচকমলাপুর গ্রামের স্থানীয়রা জানায়, বেশকিছুদিন আগে ফরিদা খাতুন পিতার বাড়িতে যায়। গর্ভবতি হওয়ায় তিনি দীর্ঘদিন সেখানেই ছিলো বলে জানতেন স্থানীয়রা। তবে সন্তান দত্তক নেয়ার বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না।
এদিকে, সন্তান কেনার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে অভিযুক্ত আল্লার দান ফার্মেসির হুমায়নের সাথে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। গত সোমবার ঘটনা জানাজানির পর থেকেই তার মোবাইলফোন বন্ধ রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গার কলোনিপাড়ার আশরাফুল ইসলাম কিছুদিন শ্যামলিকে নিয়ে দৌলাতদিয়াড় বঙ্গজপাড়ায় ভাড়ায় বসবাস করলেও পরবর্তীতে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের আরামপাড়ার একটি বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করে আসছে। গত সোমবার শ্যামলির সন্তান প্রসবের পর নবজাতককে অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে নেয়ার পর যখন বিক্রির বিষয়টি জানাজানি হয়, তখন থেকেই আশিকুর কৌশলে চলাচল করে। সন্ধ্যায় তিনি এ বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালাতে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।