কালীগঞ্জে পিটিয়ে ও পুরুষাঙ্গে পেরেক ফুটিয়ে : শিশু নির্যাতন ১০ দিন পর মামলা গ্রেফতার ১
- আপলোড টাইম : ০৪:৩১:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জুলাই ২০১৭
- / ৩৮০ বার পড়া হয়েছে
ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে পারভেজ হোসেন (১৪) নামের এক শিশু শ্রমিককে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে পারভেজ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কাঁচপুরের এক আত্মীয়র বাসায় উঠেছে। নির্যাতনের শিকার শিশু পারভেজ হোসেন মাগুরার শালিকা উপজেলার সিমাখালীর পিয়ারপুর গ্রামের শিমুল হোসেনের ছেলে। সে জন্মের পর থেকে কালীগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর গ্রামে তার নানা জিল্লুর রহমানের বাড়িতে থাকতো। এদিকে লোমহর্ষক এই নির্যাতনের বিষয়টি প্রভাবশালী মহলের পক্ষ থেকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও সংবাদকর্মীদের অনুসন্ধানে ১০ দিন পর ফাঁস হয়ে পড়ে। অভিযোগ উঠেছে ভয়াবহ এই নির্যাতনের পরও কালীগঞ্জ থানা মামলা রেকর্ড করতে গড়িমসি করে। এজাহারে প্রভাবশালীদের নাম থাকায় পুলিশ মামলা রেকর্ড করছিলো না এমন অভিযোগ করেন নির্যাতিত শিশুর মা পারভিনা খাতুন। দুইবার এজাহার কাটাছেড়া করে অভিযোগ জমা দেওয়া হয়, পরপরও মামলা রেকর্ড কিংবা আসামীদের গ্রেফতার হচ্ছিল না। বিষয়টি জেলা পরিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করা হলে সোমবার বিকালে মামলা রেকর্ড হয় এবং একজন আসামী গ্রেফতার হয়। এদিকে ঘটনার পর হতে স্থানীয় এক আওয়ামীলীগ নেতা ও মেয়ের পরিবারের লোকজন মামলা না করার জন্য হুমকি দিয়ে আসছিলো। পারভেজের মা পারভীনা বেগম জানান, পারভেজ ও তার চাচাতো ভাই গত ২২ জুন বিকাল ৫টার দিকে কালীগঞ্জের দাসবায়সা গ্রামের আজিজুল ইসলামের মেয়ের সাথে রাস্তায় দাড়িয়ে কথা বলছিল। এ সময় মেয়ের বাবা আজিজুল ও তার লোকজন এসে পারভেজকে মারধর করে ধরে নিয়ে যায়। পারভেজের সাথে থাকা তার চাচাতো ভাই নাজমুল পালিয়ে এসে বাড়িতে এ খবর দেয়। এরপর পরিবারের লোকজন দাসবায়সা গ্রামে যেয়ে পারভেজকে খুজে না পেয়ে তারা ফিরে আসে। পারভেজের মা পারভীনা বেগম আরো জানান, ঐদিন সারারাত আজিজুল ও তার লোকজন আমার ছেলের উপর অমানুষিক নির্যাতন করে। পরের দিন ২৩ জুন দুপুর ১২টার সময় স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা সাগর বিশ্বাস তাদের ফোনে জানায় তোমাদের ছেলেকে পাওয়া গেছে এসে নিয়ে যাও। এরপর পরিবারের লোকজন যেয়ে দেখে পারভেজ অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। নির্যাতনের ফলে আমার ছেলে পারভেজ টয়লেট করে ফেলে। মলমুত্র তার সমস্ত শরীরে মেখে ছিল। ছেলের অবস্থা খারাপ দেখে ২৩ জুন দুপুর ২টার দিকে প্রথমে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। পারভেজের অবস্থার অবনতি দেখে ডাক্তাররা তাকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। সেখানে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর রাতেই ডাক্তাররা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। পারভেজ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০০ নং ওয়ার্ডের ইউনিট-২ এর বি-৪০ নং বেডে দুই দিন থাকার পর রোববার তাকে রিলিজ করে দেওয়া হয়। ৫/৬ দিন পর পারভেজের জ্ঞান ফিরলেও তার শরীর এখনো স্বাভাবিক হয়নি। মাথায় অপারেশন করা হয়েছে। চিকিৎসকরা তাকে কোলাহল মুক্ত পরিবেশে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বলে তার নিকটাত্মীয় শহিদুল ইসলাম জানান। এ ঘটনায় কোলাবাজার পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ এসআই মিজানুর রহমানের সাথে আলাপ করলে তিনি প্রথমে ঘটনাটি অস্বিকার করেন। পরে তিনি জানান, আমরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই ছেলেটিকে চড় খাপ্পড় মেরে স্থানীয় ২/৪ জন নেতা ঘটনাটি মিমাংশা করে ছেড়ে দিয়েছে। পরে তিনি ছেলের অভিভাবকদের ডেকে শিশু পারভেজকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে শোনা যায়। তবে পারভেজের পরিবারের দাবী দারোগার উপস্থিতিতেই আহত পারভেজকে অজ্ঞান অবস্থায় ভ্যানে ডেকে তুলে দেয়া হয়। স্থানীয় কোলা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার জাফর হোসেন জানান, কারা কিভাবে নির্যাতন করেছে এটা আমি বলতে পরবোনা। তবে পারভেজের চিকিৎসার জন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে ১২ হাজার টাকা এবং গ্রাম থেকে প্রায় লক্ষাধিক টাকা সংগ্রহ করে দিয়েছি। এদিকে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার খবর পেয়ে তিনি নির্যাতিত শিশু পারভেজকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন বলে তার নানা জিল্লুর রহমান জানান। কালীগঞ্জ থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় তিনি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। তিনি মামলা রেকর্ড করার বিষয়য়ে বলেন, পারভেজের মা ও নানা বিষয়টি মিমাংশা করার কথা বলেছেন। এ জন্য মামলাটি রেকর্ড করা হয়নি। সোমবার বিকালে মামলা রেকর্ড ও একজন আসামী গ্রেফতারের কথা ওসি জানান। তবে নির্যাতিত শিশুটির নানা জিল্লুর রহমান জানান, আমি কোন মিমাংশার কথা বলিনি। আমি নির্যাতনের সুষ্ঠ বিচার চাই। পারভেজের চাচাতো নানা লিটন চৌধুরী অভিযোগ করেন, আমরা কোন মিমাংশার মধ্যে নেই। আমরা সুবিচার চাই। যে ভাবে পারভেজকে পুরুষাঙ্গে পেরেক ঢুকিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে তা নজীর বিহীন বলেও তিনি দাবী করেন। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জানান, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি মামলা রেকর্ডের ব্যবস্থা করেছি। আশা করি নির্যাতিত পরিবারটি সুবিচার পাবেন। তিনি বলেন, শিশু নির্যাতনের বিষয়ে কারো ছাড় নেই। প্রয়োজনে পুলিশ আরো কঠোর হবে।