ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের বারান্দায় সন্তান প্রসবে বাধ্য এক মা! : গর্ভবতীকে ভর্তি না নেওয়ায় অভিযোগে স্বজনদের বিক্ষোভ : নার্সের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:১৭:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জুলাই ২০১৭
  • / ৩১১ বার পড়া হয়েছে

মেহেরপুর প্রতিনিধি: মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের বারান্দায় সন্তান প্রসবে বাধ্য হলেন এক মা। হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ড থেকে এই মাকে বের করে দেওয়ায় হাসপাতালের বারান্দায় সন্তান প্রসবে বাধ্য হন তিনি। অভিযোগ উঠেছে ক্লিনিকে নেওয়ার নাম করে এই প্রসূতি মাকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয় প্রসূতি বিভাগের ইনচার্জ রাহেলী মিনতি সরকার। এ নিয়ে রোগীর স্বজনরা অভিযুক্ত ওই নার্সের শাস্তির দাবিতে হাসপাতালে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। গতকাল সোমবার সকাল ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এঘটনায় হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টারের সাথে কথা বললে এবিষয়ে কিছু জানেন বলে সাংবাদিকদের জানান। এবং ওই ওয়ার্ড মাস্টার ধমকের সুরে এই প্রতিবেদককে আরো জানায় বারান্দায় হয়েছে কে বললো আপনাকে, প্রসব হয়েছে তো ইমারজেন্সিতে। ওয়ার্ড মাস্টারের এহেন আচরণে হতবাক সবাই।
এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে আগামী ৫ জুলাইয়ের (বুধবার) মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে।
রোগীর স্বজন ও হাসপাতালে থাকা অন্য রোগীর স্বজনরা জানান মেহেরপুর সদর উপজেলার বামন পাড়ার সাইফুলের স্ত্রী রোজি খাতুনের প্রসব বেদনা শুরু হলে সোমবার ভোরে তাকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। এসময় ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বে ছিলেন মিনতি সাহা। সকাল ৮টার দিকে প্রসূতির প্রসব যন্ত্রনা বেড়ে গেলে তার সাথে থাকা তার চাচি মোমেনা খাতুন কর্তব্যরত নার্সসহ আয়াদের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে। এসময় মিনতি তাদের অনুরোধ উপেক্ষা করে আশেপাশের ক্লিনিকে যাওয়ার জন্য ওয়ার্ড থেকে বের করে দেয়। প্রসূতি রোজি খাতুন হাসপাতালের সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় তার প্রচন্ড প্রসব যন্ত্রণা বেড়ে যায় এবং হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে শুয়ে পড়তে বাধ্য হয়। এসময় প্রসবের ব্যবস্থা নিতে পুনরায় অনুরোধ করা হলে অপর এক নার্সের সহায়তায় তাকে প্রসূতি ওয়ার্ডের লেবার রুমে নিয়ে সন্তান প্রসবে ব্যবস্থা নেওয়া হলে সেখানে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। এসময় সাহায্যকারী নার্সকেও অপমান করে অভিযুক্ত নার্স মিনতি। এ খবর রোগীর স্বজনরা জানতে পেরে হাসপাতালে ছুটে গিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে এবং নার্স মিনতির শাস্তির দাবি করে।
রোজি খাতুনের চাচি মোমেনা বেগম বলেন, ভোর ৫টার দিকে তার দেবরের মেয়ে রোজী খাতুনের প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। হাসপাতালে ভর্তি করার পর থেকে নার্সরা চিকিৎসা দেবার পরিবর্তে দুর্ব্যবহার করতে থাকে। তাদের বার বার চিকিৎসা দেবার কথা বলার পরও কোন চিকিৎসা না দিয়ে দুর্ব্যবহার শুরু করে। এক পর্যায়ে রোজির প্রসব বেদনা উঠলে হাসপাতালের নার্স মিনতি আমাদের ক্লিনিকে যাবার কথা বলে বের করে দেয়।
মেহেরপুর পৌরসভার ১ নম্বর সংরক্ষিত ওয়াডের্র সাবেক মহিলা কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম বলেন, আমার সামনে তাদের বের করে দেওয়া হয়। এসময় আমিসহ কয়েকজন রোগী এর প্রতিবাদ করলে নার্সরা আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।
এদিকে, এ ঘটনার পর হাসপাতালে গিয়ে নার্স রাহেলী মিনতি সরকারকে পাওয়া যায়নি। রোগীর স্বজনরা জানান, ঘটনার পর থেকে মিনতি আত্মগোপনে রয়েছেন। পরে মোবাইল ফোনে তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য গ্রহন করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মৃণাল কান্তি মন্ডলকে প্রধান করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৫ জুলাই বুধবারের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রাপ্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের বারান্দায় সন্তান প্রসবে বাধ্য এক মা! : গর্ভবতীকে ভর্তি না নেওয়ায় অভিযোগে স্বজনদের বিক্ষোভ : নার্সের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন

আপলোড টাইম : ০৪:১৭:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জুলাই ২০১৭

মেহেরপুর প্রতিনিধি: মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের বারান্দায় সন্তান প্রসবে বাধ্য হলেন এক মা। হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ড থেকে এই মাকে বের করে দেওয়ায় হাসপাতালের বারান্দায় সন্তান প্রসবে বাধ্য হন তিনি। অভিযোগ উঠেছে ক্লিনিকে নেওয়ার নাম করে এই প্রসূতি মাকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয় প্রসূতি বিভাগের ইনচার্জ রাহেলী মিনতি সরকার। এ নিয়ে রোগীর স্বজনরা অভিযুক্ত ওই নার্সের শাস্তির দাবিতে হাসপাতালে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। গতকাল সোমবার সকাল ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এঘটনায় হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টারের সাথে কথা বললে এবিষয়ে কিছু জানেন বলে সাংবাদিকদের জানান। এবং ওই ওয়ার্ড মাস্টার ধমকের সুরে এই প্রতিবেদককে আরো জানায় বারান্দায় হয়েছে কে বললো আপনাকে, প্রসব হয়েছে তো ইমারজেন্সিতে। ওয়ার্ড মাস্টারের এহেন আচরণে হতবাক সবাই।
এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে আগামী ৫ জুলাইয়ের (বুধবার) মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে।
রোগীর স্বজন ও হাসপাতালে থাকা অন্য রোগীর স্বজনরা জানান মেহেরপুর সদর উপজেলার বামন পাড়ার সাইফুলের স্ত্রী রোজি খাতুনের প্রসব বেদনা শুরু হলে সোমবার ভোরে তাকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। এসময় ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বে ছিলেন মিনতি সাহা। সকাল ৮টার দিকে প্রসূতির প্রসব যন্ত্রনা বেড়ে গেলে তার সাথে থাকা তার চাচি মোমেনা খাতুন কর্তব্যরত নার্সসহ আয়াদের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে। এসময় মিনতি তাদের অনুরোধ উপেক্ষা করে আশেপাশের ক্লিনিকে যাওয়ার জন্য ওয়ার্ড থেকে বের করে দেয়। প্রসূতি রোজি খাতুন হাসপাতালের সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় তার প্রচন্ড প্রসব যন্ত্রণা বেড়ে যায় এবং হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে শুয়ে পড়তে বাধ্য হয়। এসময় প্রসবের ব্যবস্থা নিতে পুনরায় অনুরোধ করা হলে অপর এক নার্সের সহায়তায় তাকে প্রসূতি ওয়ার্ডের লেবার রুমে নিয়ে সন্তান প্রসবে ব্যবস্থা নেওয়া হলে সেখানে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। এসময় সাহায্যকারী নার্সকেও অপমান করে অভিযুক্ত নার্স মিনতি। এ খবর রোগীর স্বজনরা জানতে পেরে হাসপাতালে ছুটে গিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে এবং নার্স মিনতির শাস্তির দাবি করে।
রোজি খাতুনের চাচি মোমেনা বেগম বলেন, ভোর ৫টার দিকে তার দেবরের মেয়ে রোজী খাতুনের প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। হাসপাতালে ভর্তি করার পর থেকে নার্সরা চিকিৎসা দেবার পরিবর্তে দুর্ব্যবহার করতে থাকে। তাদের বার বার চিকিৎসা দেবার কথা বলার পরও কোন চিকিৎসা না দিয়ে দুর্ব্যবহার শুরু করে। এক পর্যায়ে রোজির প্রসব বেদনা উঠলে হাসপাতালের নার্স মিনতি আমাদের ক্লিনিকে যাবার কথা বলে বের করে দেয়।
মেহেরপুর পৌরসভার ১ নম্বর সংরক্ষিত ওয়াডের্র সাবেক মহিলা কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম বলেন, আমার সামনে তাদের বের করে দেওয়া হয়। এসময় আমিসহ কয়েকজন রোগী এর প্রতিবাদ করলে নার্সরা আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।
এদিকে, এ ঘটনার পর হাসপাতালে গিয়ে নার্স রাহেলী মিনতি সরকারকে পাওয়া যায়নি। রোগীর স্বজনরা জানান, ঘটনার পর থেকে মিনতি আত্মগোপনে রয়েছেন। পরে মোবাইল ফোনে তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য গ্রহন করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মৃণাল কান্তি মন্ডলকে প্রধান করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৫ জুলাই বুধবারের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রাপ্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।