কুষ্টিয়া ভেড়ামারায় ‘টেপিড পাঞ্চ’ সমাপ্ত : বিপুল বিস্ফোরক উদ্ধার : ‘একজনকে ধরতে গিয়ে তিন নারী জঙ্গি আটক’
- আপলোড টাইম : ০৩:৫৭:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ জুলাই ২০১৭
- / ৩৫৩ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) পরিচালিত অপারেশন ‘টেপিড পাঞ্চ’ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এই অভিযানে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে শুরু হওয়া চূড়ান্ত অভিযানে এগুলো উদ্ধার করা হয়। সন্ধ্যার পর এসব বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করার কাজ শুরু হয়। শনিবার রাত ৯টার পর অভিযানটির সমাপ্তি ঘোষণা করেন পুলিশ সুপার মেহেদী হাসান। এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পুলিশ সুপার এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ওই আস্তানায় ‘টেপিড পাঞ্চ’ অভিযান চলাকালে সন্ধ্যায় একটি রুম থেকে বিপুল পরিমাণ শক্তিশালী বিস্ফোরকজাতীয় দ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল সেগুলো রুমের বাইরে নিয়ে এসে সেগুলো নিষ্ক্রিয় করার কাজ শুরু করেছে।’
বিস্ফোরকের ধরন সম্পর্কে পুলিশ সুপার বলেন, ‘যে পরিমাণ বিস্ফোরক আমরা পেয়েছি তা দিয়ে পাঁচতলা ভবনও ধ্বংস করা সম্ভব। ৮ ফুট গর্ত করে তার ওপর ২-৩ ফুট বালির বস্তা দিয়ে এগুলোর বিস্ফোরণ ঘটানোর মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করতে হবে।’ এজন্য প্রয়োজনীয় সতর্কমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্সও এনে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এর আগে, চূড়ান্ত অভিযানের শুরুতেই বিকাল পৌনে ৬টায় ভেড়ামারা শহরের বামনপাড়া তালতলা এলাকার জঙ্গি আস্তানাটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করা হয়। এরপর বেশ কয়েকটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। শনিবার সকালে এই বাড়িটি ঘিরে ফেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে অভিযান চালিয়ে তিন নারী জঙ্গিকে আটক করা হয়। সিটিটিসি ও কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ যৌথভাবে অভিযানটি চালিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, আটক তিনজনের মধ্যে একজন নব্য জেএমবির আমির আইয়ুব আলীর স্ত্রী তিথি। বাকি দু’জন হচ্ছে নব্য জেএমবির সেকেন্ড ইন কমান্ডের স্ত্রী সুমাইয়া ও আরমান আলীর স্ত্রী টলি আরা। টলি নিজের স্বামীকে ডিশ ব্যবসায়ী ও নিজেকে দর্জি পরিচয় দিয়ে বাসাটি ভাড়া নেন।
এদিকে, তথ্য ছিল নব্য জেএমবি’র এক শীর্ষ জঙ্গি আইয়ুব বাচ্চু নাটোরে একটি আস্তানায় অবস্থান করছে। তাকে ধরতেই কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সদস্যরা সম্ভাব্য স্থানগুলোতে তল্লাশির প্রস্তুতি নিয়ে নাটোরে রওনা দেন। কিন্তু নাটোরে পৌঁছার আগেই আবার খবর আসে কুষ্টিয়ার একটি আস্তানায় থাকতে পারে আইয়ুব বাচ্চু। পরে সেই আস্তানায় অভিযান চালাতে গিয়ে সন্ধান পান তিন দুধর্ষ নারী জঙ্গির। এদের মধ্যে আইয়ুব বাচ্চুর স্ত্রীও রয়েছে। এছাড়াও নব্য জেএমবি’র বর্তমান সেকেন্ড ইন কমান্ড আর্চারের স্ত্রী সুমাইয়া ও স্থানীয় পলাতক জঙ্গি আরমানের স্ত্রী তুলি। তাদের তিন জনকেই পুলিশ আটক করতে সক্ষম হয়েছে। সিটিটিসি এই গ্রেফতার অভিযানের নাম দিয়েছে ‘টেপিড পাঞ্চ’। এর অর্থ ‘দ্রুতগামী মুষ্ট্যাঘাত’। অভিযানের নামকরণ প্রসঙ্গে সিটিসিটির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আবদুল মান্নান বলেন, ‘রাত ৩টার পর অপারেশন চালাতে গিয়ে নারী জঙ্গিদের বাঁধার কবলে পড়েছিলাম। তারা বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টা করছিল। কিন্তু দ্রুততার সঙ্গে তাদের ক্যাপচারে নিয়ে নেওয়ায় তারা আর বোমার বিস্ফোরণ ঘটাতে পারেনি। অনেকটা কপালের জোরেই বেঁচে গেছি। এজন্যই এই অপারেশনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘টেপিড পাঞ্চ’। এসময় তাদের হেফাজত থেকে পাঁচ মাস বয়সী ও সাড়ে ছয় বছর বয়সী দুই শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে তিন নারীকে।’ ওই আস্তানায় সুইসাইডাল ভেস্ট ও প্রচুর বিস্ফোরকের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানান আবদুল মান্নান। তারপর সবাই নিরাপদ অবস্থানে থেকে আস্তানা ঘেরাও করে রাখেন। গতকাল শনিবার বিকাল থেকে সেই বিস্ফোরকগুলো নিষ্ক্রিয় করার কাজ করছে বোম্ব ডিজপোজাল ইউনিট।
সিটিটিসির দায়িত্বশীল আরেক কর্মকর্তা জানান তাদের কাছে তথ্য ছিল নব্য জেএমবির নেতা আইয়ুব বাচ্চু নাটোর জেলায় অবস্থান করছে। অভিযান পরিচালনাকারী টিম সেই গন্তব্যে যাওয়ার পথেই কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার একটি আস্তানার তথ্য পান। তাদের কাছে খবর আসে, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারাতেই আইয়ুব বাচ্চু অবস্থান করছে। এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু সেখানে আইয়ুব বাচ্চুকে খুঁজে পায়নি সিটিটিসির টিম। সেখানে তাকে খুঁজে না পাওয়া গেলেও একই আস্তানায় তিন জঙ্গির তিন স্ত্রী ও দুই শিশুকে খুঁজে পাওয়া গেছে। আইয়ুব বাচ্চুর স্ত্রী তিথীর সঙ্গে ছিল তাদের পাঁচ মাসের কন্যা সন্তান। একইভাবে পলাতক আরমানের স্ত্রীর সঙ্গে ছিল সাড়ে ছয় বছরের একটি শিশু।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতার হওয়া সুমাইয়া নব্য জেএমবির সেকেন্ড ইন কমান্ড জঙ্গি আর্চারের স্ত্রী। আর তুলি পলাতক স্থানীয় জঙ্গি আরমানের স্ত্রী। এই আরমানের মাধ্যমেই নব্য জেএমবির পলাতক সদস্যরা সেখানে আস্তানা গড়ে তুলতে পেরেছিল। আরমানই স্থানীয়ভাবে এই জঙ্গি সদস্যদের নানাভাবে পৃষ্টপোষকতা দিয়েছে বলে সিটিটিসির কাছে তথ্য রয়েছে।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার জঙ্গি আস্তানা প্রসঙ্গে সিটিটিসি প্রধান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের টিম একজনকে ধরতে গিয়ে তিন নারী জঙ্গিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এটা অনেকটা সৌভাগ্যক্রমে হয়েছে। মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘যারা পালিয়ে গেছে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।