চলন্ত নাগরদোলায় দাঁড়িয়ে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রাণ হারালো স্কুলছাত্র রিদু
- আপলোড টাইম : ০৫:৩৯:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ জুলাই ২০১৭
- / ৫৫০ বার পড়া হয়েছে
ভাই-বোনদের সাথে ঈদের ছুটিতে কাটাতে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ পার্কে গিয়ে নিমিষেই ম্লান ঈদের আনন্দ
চলন্ত নাগরদোলায় দাঁড়িয়ে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রাণ হারালো স্কুলছাত্র রিদু
নিজস্ব প্রতিবেদক: ঈদের ছুটিতে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে চাচাতো ভাই ও ফুফাতো পাঁচ বোনের সাথে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ পার্কে গিয়েছিলেন ভিজে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র ইসতিয়াক আহমেদ রিদু। পার্কে ঘুরাঘুরি করে বেশ আনন্দেই কাটছিলো তাদের সময়। আর এই ঈদ বিনোদনে কমতি না রাখতেই তারা পুলিশ পার্কের যন্ত্রচালিত নাগরদোলায় চড়ে। চলন্ত নাগরদোলায় বসে থাকা মুহূর্তে সেলফি তুলতে যায় ইসতিয়াক আহমেদ রিদু। নাগরদোলার ওপর দাঁড়িয়ে সেলফি তোলার সময় আকস্মিক মাটিতে পড়ে যায় সে। নিমিষেই ম্লান হয়ে যায় রিদুর ভাই-বোনদের ঈদ আনন্দ। হতবিহ্বল হয়ে যায় পার্কের দর্শনার্থীরা। আতঙ্কের ছাপ তাদের চোখে-মুখে। মুহূর্তেই মধ্যেই যেনো অন্ধকার নেমে আসে সকলের মাঝে। চলন্ত নাগরদোলায় সেলফি তুলতে গিয়ে আছড়ে পড়ে গুরুতর জখম হয় রিদু। পুলিশ ও উপস্থিত দর্শনার্থীরা তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রিদুকে মৃত ঘোষণা করেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ পার্কে এ দুঘটনা ঘটে। নিহত ইসতিয়াক আহমেদ রিদু (১৪) চুয়াডাঙ্গা শহরের সাদেক আলী মল্লিকপাড়ার ১ নং পানির ট্যাংক এলাকার বাসিন্দা চুয়াডাঙ্গা যুগ্ম জেলা জজ আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) অ্যাডভোকেট ইমতিয়াজ আহমেদ উজ্জ্বল ও শাহীন আরা পারভীন রূপালী দম্পতির একমাত্র সন্তান। সে চুয়াডাঙ্গার ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে চাচাতো ভাই ফয়সাল আর ফুফাতো বোন ক্যাথীসহ পাঁচ বোনের সাথে বাড়ির পাশে পুলিশ পার্কে বেড়াতে যায় রিদু। বিনোদনের জন্য তারা পার্কের নাগরদোলায় উঠে। রিদুর সাথে থাকা সকলে নাগরদোলায় চড়ে যখন ভয় পাচ্ছিলো, তাদের সাহস দিতে তখন সে চলন্ত নাগরদোলায় দাঁড়িয়ে সেলফি তুলতে যায়। এসময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে অসাবধানতাবশত মাটিতে পড়ে যায় সে। এতে নাগরদোলার লোহার আঘাতে মারাত্মক জখম হয় রিদু। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে রিদুকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক কানিজ নাঈমা জানান, মাথায় আঘাতজনিত কারণে ইসতিয়াক আহমেদ রিদুর মৃত্যু হয়েছে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চুয়াডাঙ্গা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, চলন্ত অবস্থায় নাগরদোলায় দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে সেলফি তুলতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হয় রিদু। পরে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে, রিদুর লাশ তার নিজ বাড়িতে পৌছুলে মা-বাবা, আত্মীয়স্বজনের কান্নার রোল পড়ে। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে বাবা-মা। এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তরিকুল ইসলামসহ রিদুর পিতার সতীর্থ আইনজীবিরা নিহতের বাড়িতে গিয়ে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেন, ঈদ বিনোদনে সকলকে সতর্ক হতে হবে। বাড়তি বিনোদন যেনো প্রাণহানির কারণ না হয়। যে ভাবে মেধাবী স্কুলছাত্র রিদুকে প্রাণ হারাতে হয়েছে, এ ভাবে আরেকটি প্রাণ হারানোর আগে সকলকে সতর্ক হতে হবে।