নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি; অপরাধীদের শাস্তি কেন হয় না
- আপলোড টাইম : ০৯:৫৬:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ নভেম্বর ২০২১
- / ৮৮ বার পড়া হয়েছে
চাকরির নিয়োগে অসাধুতা অবলম্বন বাংলাদেশে একটি সাধারণ বিষয়। যারা এমন অনিয়ম- দুর্নীতি করতেন তারা এটা করতেন লুকোছাপা করে। এটা হতো সীমিত পরিসরে। ‘ধরা পড়ার ভয়’ ছাড়াও দুর্নীতি করার লজ্জা তাদের মধ্যে দেখা যেত। আমরা দেখলাম, বিগত এক যুগে নিয়োগ দুর্নীতি মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে লুকোছাপা আর লজ্জাবোধও দেখা যায় না। স্বাস্থ্য বিভাগে একটি নিয়োগে সরকারের প্রশাসনের এক কর্মকর্তা অন্য এক কর্মকর্তাকে সরাসরি কোটি টাকা ঘুষ সেধেছেন। গত বুধবার পত্রিকার প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় এবার ৬০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। প্রার্থীরা এ নিয়ে আগেই আপত্তি জানিয়েছিলেন, তবে তাদের পাত্তা দেয়া হয়নি। গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করে এ বিপুল জালিয়াতি সিন্ডিকেট শনাক্ত করতে পেরেছে পরে। প্রার্থীরা এর আগে বহু নিয়োগ পরীক্ষায় দুর্নীতি নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন, সেগুলো পাত্তা পায়নি। তবে লক্ষণ বলছে, নিয়োগ দুর্নীতির কারণে মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকারি চাকরিতে ব্যাপক হারে ঢুকে পড়ছে ঘুষদাতারা।
গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, গত শনিবার অনুষ্ঠিত ব্যাংকে নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি হয়েছে। পাঁচটি ব্যাংকে অফিসার (ক্যাশ) পদে এক হাজার ৫১১ জন নিয়োগে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্র ১১টি বুথে ৮৫ শতাংশ প্রশ্নের উত্তর সমাধান করে দেয়। ২০০ পরীক্ষার্থী তাদের সমাধান কিনেছেন। আরো দুই হাজার প্রার্থী তাদের সাথে এ নিয়ে চুক্তি করেছেন। একেকজনের কাছ থেকে পাঁচ থেকে ১৫ লাখ টাকার চুক্তি হয়। পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা ঢাকার আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইসিটি বিভাগ থেকে এটি ফাঁস করা হলো। এর সাথে জড়িত জালিয়াত চক্রের পাঁচ সদস্যকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করেছে। তাদের মধ্যে তিনজন ব্যাংকারও রয়েছেন। একই সিন্ডিকেট ব্যাংকের পরপর চারটি পরীক্ষায় একইভাবে জালিয়াতি করেছে। চাকরিপ্রার্থীরা এ দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। তার সূত্র ধরেই গোয়েন্দা পুলিশ জালিয়াত চক্রের সন্ধানে নামে।
সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ঘুষ-দুর্নীতি কতটা নিচে নেমেছে করোনাকালে স্বাস্থ্য বিভাগে একটি নিয়োগ তার উদাহরণ হয়ে থাকবে। ওই সময় দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় নিয়োগ কমিটির দু’জনকে বদলি করা হয়। নতুন করে নিয়োগ পান ডা: মো: আবুল হাশেম শেখ। নিয়োগ পাওয়ার পর তাকে ঘুষ সাধেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন উপসচিব শ্রীনিবাস দেবনাথ। হাশেমকে সরাসরি এক কোটি টাকা দেয়ার প্রস্তাব দেন দেবনাথ। পরে টাকা আরো বাড়ানোর পাশাপাশি উচ্চ পদোন্নতির লোভও দেখানো হয়। আবুল হাশেম স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব বরাবর চিঠি লিখে তাকে ঘুষ সাধার বিষয়টি জানান। শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্যের ওই নিয়োগ বাতিল হয়ে যায়। প্রশাসনের পদস্থ লোকেরা যারা প্রকাশ্যে ঘুষবাণিজ্য করেছেন তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে দেখা গেল না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির সাথে এটি কোনোভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এখানেও প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে দুর্নীতির সূচনা হয়েছিল।
প্রশ্ন ফাঁস ও নিয়োগ দুর্নীতি আমাদের জাতিকে মহামারীর মতো গ্রাস করেছে। এক দিকে প্রাইমারি থেকে মাস্টার্স; অন্য দিকে পিয়ন থেকে সরকারি কর্মকমিশনের সব পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য কোনো তদন্ত নেই। এর সাথে যোগ হয়েছে সরকারি প্রশাসনের ঘুষ জালিয়াত সিন্ডিকেট। এদের হাত থেকে দেশকে নিরাপদ করা না গেলে পুরো দেশই গুরুতর অবক্ষয়ে তলিয়ে যাবে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, বর্তমান সরকারই এসব দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে। তারা এ থেকে নিজেদের পৃথক করে জাতিকে বাঁচানোর জোরালো উদ্যোগ নিচ্ছে না। ‘জিরো টলারেন্সের’ নামে তাদের প্রচেষ্টার বেশির ভাগই প্রচারণা ছাড়া অন্য কিছু নয়। তা না হলে যারা এসব অন্যায়ের সাথে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করত সরকার। ফলে কেউ দ্বিতীয়বার এসব অন্যায়ের সাথে যুক্ত হওয়ার সাহস পেত না।