রোহিঙ্গা সঙ্কট : পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর
- আপলোড টাইম : ০৮:১৪:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর ২০২১
- / ৫৬ বার পড়া হয়েছে
রোহিঙ্গা সঙ্কট বাংলাদেশেকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে? মানবিক কারণে এগারো লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ কি এখন বিপদের মুখোমুখি? এই মানবতা কি আমাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে? সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ এবং গত সোমবার আশ্রয় ক্যাম্পের পাশে পাহাড়ে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার এবং অস্ত্র তৈরির কারখানা আবিষ্কারের পর এসব প্রশ্নই এখন আলোচিত হচ্ছে। বেপরোয়া হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গারা। ক্রমশ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবির। আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গারা জড়িয়ে পড়েছে মাদক ব্যবসায়। মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে আশ্রয় শিবিরগুলোতে আসছে ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক। রোহিঙ্গারা এদেশের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। আগ্নেয়াস্ত্র, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করছে। প্রতিদিন কোন না কোন ঘটনা ঘটছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। খুনের ঘটনা পর্যন্ত ঘটছে প্রতিনিয়ত। ক্যাম্পের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারে রোহিঙ্গারা রাতের আঁধারে অস্ত্র হাতে মহড়া চালাচ্ছে নিয়মিত। দলগত সশস্ত্র তৎপরতা, মাদক-মানবপাচার, চাঁদাবাজি, অপহরণ বাণিজ্য ও দোকান দখল থেকে শুরু করে তুচ্ছ ঘটনায়ও ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র।
গত সোমবার র্যাব অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেছে ১০টি অস্ত্র এবং অস্ত্র তৈরির বিপুল সরঞ্জাম। অভিযান পরিচালনাকরী র্যাব কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গোপন সূত্রের সংবাদে তারা কুতুপালং এক্স-৪ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে অভিযান চালায় পাহাড়ে। র্যাব সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। দীর্ঘ চার ঘণ্টা গুলিবিনিময়ের পর রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা পিছু হটলে অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পায় র্যাব। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়েছে তিন রোহিঙ্গাকে। এরা সবাই কুতুপালং আশ্রয় শিবিরের বাসিন্দা এবং সশস্ত্র রোহিঙ্গা সংগঠন আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্য। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসার পর থেকে এ পর্যন্ত ক্যাম্পসহ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় দুই শতাধিক দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে র্যাব। এ সময় গোলা-বারুদ পাওয়া গেছে ছয় শতাধিক। একই সঙ্গে এপিবিএন পুলিশ সদস্যরা উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পসহ পাহাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১১টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৪৮টি দেশী অস্ত্র উদ্ধার করেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৮২ জনকে। মামলা হয়েছে ৫৮টি। এই চিত্র খুবই ভয়াবহ। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা মনিটরিং করছে। এই ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। এ কারণে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা তাদের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে অনেকটা নির্বিঘ্নে। রোহিঙ্গারা যেভাবে অস্ত্র সংগ্রহ করছে, মাদক আনছে, তা দেশের জন্য খুব বিপজ্জনক। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে প্রতিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পই হবে অপরাধ তৈরির ক্ষেত্র। অদূর ভবিষ্যতে দেশের নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এখনই গ্রহণ করতে হবে যথাযথ পরিকল্পনা। বাড়াতে হবে গোয়েন্দা নজরদারি। সঠিক নীতিমালা গ্রহণ করে ক্যাম্পগুলোকে ২৪ ঘণ্টা গোয়েন্দা নজরদারি ও মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখতে হবে। তা না হলে সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।