ইপেপার । আজ বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫

স্বাস্থ্য বিভাগের ১৭ ফাইল গায়েব, হোতাদের খুঁজে বের করুন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৩:১১:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ নভেম্বর ২০২১
  • / ৬৬ বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি কক্ষের আলমারি থেকে ১৭টি ফাইল গায়েব হয়ে গেছে। সচিবালয়ের নিচতলার স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের একটি কক্ষ থেকে ফাইল গায়েবের এ ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়নি। গত ২৮ অক্টোবর শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তারা মন্ত্রণালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর ছয়জন কর্মচারীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। গত বছরও ওই দফতর থেকে একটি ক্রয়-সংক্রান্ত ফাইল গায়েব হয়েছিল। এবার একসাথে ১৭টি ফাইল উধাও হলো। এ নিয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। সাংবাদিকদের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব বলেন, গায়েব হওয়া ফাইলগুলো ক্রয়-সংক্রান্ত। এগুলোতে তেমন গোপন কিছু নেই। এ নিয়ে তেমন সমস্যা হবে না; কিন্তু মূল বিষয় হচ্ছে ফাইল মিসিং হওয়া।

রাষ্ট্রের সবচেয়ে সংবেদনশীল ও সুরক্ষিত একটি দফতর থেকে ফাইল গায়েব হয়ে যাওয়া সামান্য কোনো ঘটনা নয়; কিন্তু বিষয়টি যেভাবে দেখা হচ্ছে তাতে মনে হতে পারে বিষয়টিকে খুবই হালকাভাবে দেখা হচ্ছে। কে কী উদ্দেশ্যে নথি সরিয়েছে? আর এতে লাভবান হবে কারা? এমন সব প্রশ্ন মানুষের মনে জাগছে। জানা গেছে, খোয়া যাওয়া নথিগুলোর বেশির ভাগ বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও বিভাগের কেনাকাটা সম্পর্কিত। এ জন্যই সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দুর্নীতি থেকে কাউকে সুরক্ষা দিতেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে নথিগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

নিয়মিত মামলা দায়ের না করে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করায় সংশয় শিকড় গেড়েছে। একটি দৈনিক পত্রিকাকে ডিএমপি রমনা বিভাগের ডিসি বলেছেন, জিডি করা হলে পুলিশ কম গুরুত্ব দিয়ে থাকে। মামলার গুরুত্ব সবসময় বেশি। যদি সরাসরি মামলা দায়ের করা হতো তাহলে বিষয়টি তদন্তে আরো গুরুত্ব পেত। বিষয়টি নিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশ ছাড়া দেশের অন্যতম সুরক্ষিত কার্যালয় থেকে নথি গায়েব হতে পারে না। অবশ্যই কেউ তুলে নিয়ে গেছে। কাউকে সুরক্ষা দেয়ার জন্যই নথি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে স্বাস্থ্য বিভাগ অনিয়ম-দুর্নীতিতে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এ নিয়ে একদলীয় জাতীয় সংসদেও তোলপাড় হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের গবেষণায় সুনির্দিষ্টভাবে দুর্নীতির নানা উদাহরণ উন্মোচিত হয় গত বছরের জুনে; কিন্তু সেসব তথ্যভিত্তিক ও বস্তুনিষ্ঠ দুর্নীতির অভিযোগ খ-ন করতে ব্যর্থ হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। করোনা পরীক্ষায় জালিয়াতি, পিপিই কেনায় দুর্নীতি, লোক নিয়োগে উৎকোচ-বাণিজ্য, বিদেশ থেকে চিকিৎসাসেবার অতি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দেশে এনে বিমানবন্দরে ফেলে রাখাÑ এমন হাজারো অভিযোগ স্বাস্থ্যমন্ত্রী এক কথায় উড়িয়ে দেন এ বলে যে, স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতির অভিযোগ তোলা একশ্রেণীর মানুষের ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি দাবি করেন, মন্ত্রণালয়ে সবকিছু ঠিকমতো চলছে। অথচ তার সময়েই স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালককে তাৎক্ষণিকভাবে বিদায় নিতে হয়েছে এবং নতুন নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এটি যে দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই ঘটেছে তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।

আমাদের দেশে গত এক যুগে বড় বড় দুর্নীতির নানা ঘটনা জনগণের সামনে উঠে এসেছে; কিন্তু সুষ্ঠু তদন্ত বা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত একেবারেই কম। দু-একজন চুনোপুঁটি মার্কা ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছেন রাঘব বোয়ালরা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ফাইল গায়েবের পেছনে যেসব রথী-মহারথী অর্থাৎ হোতারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করে ধরা হবে, এমনটাই প্রত্যাশা করে দেশের আমজনতা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

স্বাস্থ্য বিভাগের ১৭ ফাইল গায়েব, হোতাদের খুঁজে বের করুন

আপলোড টাইম : ০৩:১১:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ নভেম্বর ২০২১

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি কক্ষের আলমারি থেকে ১৭টি ফাইল গায়েব হয়ে গেছে। সচিবালয়ের নিচতলার স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের একটি কক্ষ থেকে ফাইল গায়েবের এ ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়নি। গত ২৮ অক্টোবর শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তারা মন্ত্রণালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর ছয়জন কর্মচারীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। গত বছরও ওই দফতর থেকে একটি ক্রয়-সংক্রান্ত ফাইল গায়েব হয়েছিল। এবার একসাথে ১৭টি ফাইল উধাও হলো। এ নিয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। সাংবাদিকদের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব বলেন, গায়েব হওয়া ফাইলগুলো ক্রয়-সংক্রান্ত। এগুলোতে তেমন গোপন কিছু নেই। এ নিয়ে তেমন সমস্যা হবে না; কিন্তু মূল বিষয় হচ্ছে ফাইল মিসিং হওয়া।

রাষ্ট্রের সবচেয়ে সংবেদনশীল ও সুরক্ষিত একটি দফতর থেকে ফাইল গায়েব হয়ে যাওয়া সামান্য কোনো ঘটনা নয়; কিন্তু বিষয়টি যেভাবে দেখা হচ্ছে তাতে মনে হতে পারে বিষয়টিকে খুবই হালকাভাবে দেখা হচ্ছে। কে কী উদ্দেশ্যে নথি সরিয়েছে? আর এতে লাভবান হবে কারা? এমন সব প্রশ্ন মানুষের মনে জাগছে। জানা গেছে, খোয়া যাওয়া নথিগুলোর বেশির ভাগ বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও বিভাগের কেনাকাটা সম্পর্কিত। এ জন্যই সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দুর্নীতি থেকে কাউকে সুরক্ষা দিতেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে নথিগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

নিয়মিত মামলা দায়ের না করে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করায় সংশয় শিকড় গেড়েছে। একটি দৈনিক পত্রিকাকে ডিএমপি রমনা বিভাগের ডিসি বলেছেন, জিডি করা হলে পুলিশ কম গুরুত্ব দিয়ে থাকে। মামলার গুরুত্ব সবসময় বেশি। যদি সরাসরি মামলা দায়ের করা হতো তাহলে বিষয়টি তদন্তে আরো গুরুত্ব পেত। বিষয়টি নিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশ ছাড়া দেশের অন্যতম সুরক্ষিত কার্যালয় থেকে নথি গায়েব হতে পারে না। অবশ্যই কেউ তুলে নিয়ে গেছে। কাউকে সুরক্ষা দেয়ার জন্যই নথি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে স্বাস্থ্য বিভাগ অনিয়ম-দুর্নীতিতে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এ নিয়ে একদলীয় জাতীয় সংসদেও তোলপাড় হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের গবেষণায় সুনির্দিষ্টভাবে দুর্নীতির নানা উদাহরণ উন্মোচিত হয় গত বছরের জুনে; কিন্তু সেসব তথ্যভিত্তিক ও বস্তুনিষ্ঠ দুর্নীতির অভিযোগ খ-ন করতে ব্যর্থ হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। করোনা পরীক্ষায় জালিয়াতি, পিপিই কেনায় দুর্নীতি, লোক নিয়োগে উৎকোচ-বাণিজ্য, বিদেশ থেকে চিকিৎসাসেবার অতি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দেশে এনে বিমানবন্দরে ফেলে রাখাÑ এমন হাজারো অভিযোগ স্বাস্থ্যমন্ত্রী এক কথায় উড়িয়ে দেন এ বলে যে, স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতির অভিযোগ তোলা একশ্রেণীর মানুষের ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি দাবি করেন, মন্ত্রণালয়ে সবকিছু ঠিকমতো চলছে। অথচ তার সময়েই স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালককে তাৎক্ষণিকভাবে বিদায় নিতে হয়েছে এবং নতুন নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এটি যে দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই ঘটেছে তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।

আমাদের দেশে গত এক যুগে বড় বড় দুর্নীতির নানা ঘটনা জনগণের সামনে উঠে এসেছে; কিন্তু সুষ্ঠু তদন্ত বা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত একেবারেই কম। দু-একজন চুনোপুঁটি মার্কা ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছেন রাঘব বোয়ালরা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ফাইল গায়েবের পেছনে যেসব রথী-মহারথী অর্থাৎ হোতারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করে ধরা হবে, এমনটাই প্রত্যাশা করে দেশের আমজনতা।