ইপেপার । আজ বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫

একই দিনে একাধিক নিয়োগ পরীক্ষা: বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কা বেশি মেধাবীর

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১১:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২১
  • / ৭৫ বার পড়া হয়েছে

করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসায় দেশে গত মাস থেকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থায় নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এতে বিপুলসংখ্যক চাকরিপ্রার্থী শিক্ষিত বেকার যারা আশায় আছেন, তাদের অপেক্ষার পালা শেষ হলো। সাম্প্রতিক সময়ে সপ্তাহের ছুটির দিনে একসাথে অনেক পরীক্ষা হচ্ছে। তবে বারবার নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ একই দিনে পড়ায় বিপাকে পড়ছেন চাকরিপ্রার্থীরা। গতকাল শুক্রবারও বিসিএস প্রিলিমিনারিসহ বেশ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। চাকরিপ্রার্থীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনায় না নিয়েই একই দিনে সব পরীক্ষা নিয়ে নেয়া হচ্ছে। অবস্থা এমন যে, কেউ কেউ একাধিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে আবেদন করে প্রবেশপত্র পেয়েও একই দিন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় একটা ছাড়া বাকিগুলোতে অংশ নিতে পারছেন না। প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও একই সময়ে পরীক্ষা পড়ায় ভালো ভালো চাকরির পরীক্ষায় বসতে পারছেন না।
আমাদের দেশের বাস্তবতায় বেকারদের শুধু নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্যই হাজার হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়। বেকার সময়ে এ অর্থ জোগান দেয়া অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। অনেকে টিউশনি করে আবেদন এবং যাতায়াতের টাকা সংগ্রহ করেন। কিন্তু করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর অনেকেই টিউশনি করতে পারেননি। এতে তাদের কষ্ট ও দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। এক দিকে চাকরি পেতে প্রাণপণ চেষ্টা, অন্য দিকে আবেদনকারী সব বাছাই পরীক্ষায় বসতে না পারা। একই সময়ে অনেক পরীক্ষা হওয়ায় মাত্র একটিতে অংশ নিতে পারেন। অথচ সব পরীক্ষায় অংশ নিতেই তারা আবেদন করেন। প্রতিটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রত্যেককে আলাদাভাবে নির্ধারিত ফির মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। বাস্তবে অনেক পরীক্ষায় আবেদন করাই বেকারদের সাধ্যের বাইরে বলা চলে। তবুও ধারদেনা করে আবেদন সম্পন্ন করেন। কিন্তু একই তারিখে একাধিক পরীক্ষা পড়ায় পছন্দের একাধিক পদে আবেদন করা সত্ত্বেও একটি পরীক্ষা দিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। এতে হতাশার সাথে সাথে তাদের মানসিক যাতনাও বাড়িয়ে দিচ্ছে। একই দিনে এতগুলো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে সঙ্গত কারণেই মেধাবীদের চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে। অপেক্ষাকৃত ভালো পদের বিপরীতে অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থী বেড়ে যায়। আবার যেসব চাকরির বিজ্ঞাপনে শূন্য পদের সংখ্যা বেশি, সেসব পদের বিপরীতে স্বাভাবিকভাবে পরীক্ষার্থী বেড়ে যাবে। বাকিগুলোতে উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে। একসাথে অনেক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় সমন্বয়ের অভাবে এ বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় যে প্রতিযোগিতা হওয়ার কথা, তা হচ্ছে না। তাতে অনেক মেধাবী প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়বেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী চাকরির স্থান দখল করবেন। দুঃসময়ে একই দিনে একাধিক নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাকরিপ্রার্থীরা। কোনটি রেখে কোন পরীক্ষা দেবেন তা নিয়ে মানসিক চাপে পড়ছেন। বিশেষ করে গতকাল শুক্রবার বিসিএসের মতো পরীক্ষা থাকায় চাকরিপ্রার্থীরা বেশি দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েন। অথচ নিয়োগ পরীক্ষার আবেদনে এবং যাতায়াতের জন্য কত টাকা বেকারদের যে খরচ করতে হয়, তার হিসাব কে রাখে। যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতি মেধাবী ছাত্রটিও চাকরির আশায় দিন গুনছেন, সেখানে এক দিনে এতগুলো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া কতটুকু সমীচীন, তা অবশ্যই বিবেচ্য। নিয়োগ পরীক্ষার সমন্বয়হীনতায় শিক্ষিত বেকার তরুণদের সমস্যা নতুন করে আরো বাড়ছে। এ থেকে উত্তরণে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একটি শাখা খুলে পরীক্ষার তারিখ যাতে এক দিনে বেশি না পড়ে, সেই বিষয়টি তদারক করতে পারে। এতে সহজে এমন বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে পরিত্রাণ মিলতে পারে বলে আমরা মনে করি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

একই দিনে একাধিক নিয়োগ পরীক্ষা: বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কা বেশি মেধাবীর

আপলোড টাইম : ১০:১১:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২১

করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসায় দেশে গত মাস থেকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থায় নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এতে বিপুলসংখ্যক চাকরিপ্রার্থী শিক্ষিত বেকার যারা আশায় আছেন, তাদের অপেক্ষার পালা শেষ হলো। সাম্প্রতিক সময়ে সপ্তাহের ছুটির দিনে একসাথে অনেক পরীক্ষা হচ্ছে। তবে বারবার নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ একই দিনে পড়ায় বিপাকে পড়ছেন চাকরিপ্রার্থীরা। গতকাল শুক্রবারও বিসিএস প্রিলিমিনারিসহ বেশ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। চাকরিপ্রার্থীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনায় না নিয়েই একই দিনে সব পরীক্ষা নিয়ে নেয়া হচ্ছে। অবস্থা এমন যে, কেউ কেউ একাধিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে আবেদন করে প্রবেশপত্র পেয়েও একই দিন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় একটা ছাড়া বাকিগুলোতে অংশ নিতে পারছেন না। প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও একই সময়ে পরীক্ষা পড়ায় ভালো ভালো চাকরির পরীক্ষায় বসতে পারছেন না।
আমাদের দেশের বাস্তবতায় বেকারদের শুধু নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্যই হাজার হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়। বেকার সময়ে এ অর্থ জোগান দেয়া অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। অনেকে টিউশনি করে আবেদন এবং যাতায়াতের টাকা সংগ্রহ করেন। কিন্তু করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর অনেকেই টিউশনি করতে পারেননি। এতে তাদের কষ্ট ও দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। এক দিকে চাকরি পেতে প্রাণপণ চেষ্টা, অন্য দিকে আবেদনকারী সব বাছাই পরীক্ষায় বসতে না পারা। একই সময়ে অনেক পরীক্ষা হওয়ায় মাত্র একটিতে অংশ নিতে পারেন। অথচ সব পরীক্ষায় অংশ নিতেই তারা আবেদন করেন। প্রতিটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রত্যেককে আলাদাভাবে নির্ধারিত ফির মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। বাস্তবে অনেক পরীক্ষায় আবেদন করাই বেকারদের সাধ্যের বাইরে বলা চলে। তবুও ধারদেনা করে আবেদন সম্পন্ন করেন। কিন্তু একই তারিখে একাধিক পরীক্ষা পড়ায় পছন্দের একাধিক পদে আবেদন করা সত্ত্বেও একটি পরীক্ষা দিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। এতে হতাশার সাথে সাথে তাদের মানসিক যাতনাও বাড়িয়ে দিচ্ছে। একই দিনে এতগুলো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে সঙ্গত কারণেই মেধাবীদের চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে। অপেক্ষাকৃত ভালো পদের বিপরীতে অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থী বেড়ে যায়। আবার যেসব চাকরির বিজ্ঞাপনে শূন্য পদের সংখ্যা বেশি, সেসব পদের বিপরীতে স্বাভাবিকভাবে পরীক্ষার্থী বেড়ে যাবে। বাকিগুলোতে উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে। একসাথে অনেক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় সমন্বয়ের অভাবে এ বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় যে প্রতিযোগিতা হওয়ার কথা, তা হচ্ছে না। তাতে অনেক মেধাবী প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়বেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী চাকরির স্থান দখল করবেন। দুঃসময়ে একই দিনে একাধিক নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাকরিপ্রার্থীরা। কোনটি রেখে কোন পরীক্ষা দেবেন তা নিয়ে মানসিক চাপে পড়ছেন। বিশেষ করে গতকাল শুক্রবার বিসিএসের মতো পরীক্ষা থাকায় চাকরিপ্রার্থীরা বেশি দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েন। অথচ নিয়োগ পরীক্ষার আবেদনে এবং যাতায়াতের জন্য কত টাকা বেকারদের যে খরচ করতে হয়, তার হিসাব কে রাখে। যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতি মেধাবী ছাত্রটিও চাকরির আশায় দিন গুনছেন, সেখানে এক দিনে এতগুলো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া কতটুকু সমীচীন, তা অবশ্যই বিবেচ্য। নিয়োগ পরীক্ষার সমন্বয়হীনতায় শিক্ষিত বেকার তরুণদের সমস্যা নতুন করে আরো বাড়ছে। এ থেকে উত্তরণে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একটি শাখা খুলে পরীক্ষার তারিখ যাতে এক দিনে বেশি না পড়ে, সেই বিষয়টি তদারক করতে পারে। এতে সহজে এমন বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে পরিত্রাণ মিলতে পারে বলে আমরা মনে করি।