ইপেপার । আজ রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫

নতুন ভ্যাট আইন এবং আবগারি শুল্কের বর্ধিত হার বাস্তবায়ন করা থেকে : পিছু হটছে সরকার

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:০৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ জুন ২০১৭
  • / ৩৪২ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ ডেস্ক: শেষ পর্যন্ত নতুন ভ্যাট আইন এবং আবগারি শুল্কের বর্ধিত হার বাস্তবায়ন করা থেকে পিছিয়ে আসছে সরকার। পহেলা জুলাই থেকে তা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের আগে এ নিয়ে জনরোষ সৃষ্টি হতে পারে- এমন শঙ্কা থেকেই এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। এ ব্যাপারে জাতীয় সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলের এমপিসহ দেশের ব্যবসায়ী সমাজের দাবির বিষয়টিও গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয়েছে। সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনার পর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সরকারের নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। অর্থমন্ত্রণালয় এবং এনবিআরের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হলে প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি হবে অতিরিক্ত প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। এই হিসাব মেলাতে বুধবার ব্যস্ত সময় পার করেছেন মন্ত্রণালয়ের বাজেট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পাশাপাশি পুরনো আইনে বিভিন্ন খাতের ভ্যাট হার নির্ধারণে ব্যস্ত ছিলেন এনবিআরের কর্মকর্তারাও। তবে এ বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত আসবে আগামী ২৮ জুন জাতীয় সংসদে অর্থবিল পাসের মাধ্যমে। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা দেবেন।
জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বুধবার সাংবাদিকদের  বলেন, জনগণের জন্য যা ভালো হবে, আগামী বাজেটে তা করা হবে। পহেলা জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২৮ জুন প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে যা বলার বলবেন। এর আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।
সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশের পর অর্থ মন্ত্রণালয় নতুন করে বাজেটের হিসাব-নিকাশের প্রাথমিক কাজ শেষ করেছে। এটি অর্থমন্ত্রীর কাছে জমাও দেয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হলে বাজেটে ভ্যাট থেকে আদায় কমবে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। তা মেটাতে নতুন করে হিসাব করা হয়েছে।

জানা গেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে (২০১৭-২০১৮) মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট থেকে মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৯১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। আর সংশোধিত বাজেটে (২০১৬-২০১৭) তা হচ্ছে ৬৮ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। ফলে প্রস্তাবিত বাজেটে অতিরিক্ত ২২ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা বেশি ভ্যাট আদায় করতে হবে। অতিরিক্ত এ অর্থ নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে আদায়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
এনবিআরের সূত্রে জানা গেছে, নতুন আইনে ১৫ শতাংশ ভ্যাট হারের পরিবর্তে ৮-১০টি সেবা খাতের জন্য হ্রাসকৃত হারে ভ্যাট আরোপ করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এসব খাতের মধ্যে আছে- আবাসন, জুয়েলারি, রড ও বিদ্যুৎ। হ্রাসকৃত হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে পৃথক ৩টি পদ্ধতি বিবেচনা করা হচ্ছে। এসব হ্রাসকৃত হার হবে ৫ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে। এর মধ্যে প্রথম হচ্ছে- যেসব খাতের হ্রাসকৃত হার ১০ শতাংশ থাকবে, নতুন আইনে সেসব খাত রেয়াত সুবিধা নিতে পারবে। দ্বিতীয় হচ্ছে- ৮-১০টি খাতের জন্যই সমহারে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপ এবং সর্বশেষ বা তৃতীয় পদ্ধতি হচ্ছে খাতভেদে পৃথকভাবে ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা, যা বর্তমান আইনেও আছে।
সূত্রমতে, এসব বিষয়ে মঙ্গলবার এনবিআর থেকে ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তবে কোন হারে ভ্যাট আদায় করা হবে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
এনবিআরের সূত্রে জানা গেছে, ভ্যাট অব্যাহতির তফসিল সংশোধন করে অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্যের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। এ তালিকায় নতুন করে যুক্ত হচ্ছে অ্যালুমিনিয়ামের তৈজসপত্র, প্লাস্টিকের থালা-বাটি, জেনারেটর মতো আরও কিছু নিত্যব্যবহার্য পণ্য।
প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংকস্থিতি ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৮০০ টাকা, ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত আড়াই হাজার টাকা, ১ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ১২ হাজার টাকা এবং ৫ কোটি টাকার ঊর্ধ্বের ব্যাংক হিসাবের ক্ষেত্রে ২৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দেয়া হয়। আয়কর পরিবর্তন : বড় পরিবর্তন আসছে আয়কর খাতেও। ব্যবসায়ীসহ সব মহলের ব্যাপক সমালোচনার মুখে করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করা হতে পারে। একই সঙ্গে শেয়ারবাজারের করমুক্ত লভ্যাংশের সীমাও বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে এ সীমা ২৫ হাজার টাকা। তাছাড়া সারচার্জ ও শেয়ারবাজারের স্বার্থে কর্পোরেট করহারেও ছাড় দেয়া হতে পারে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

নতুন ভ্যাট আইন এবং আবগারি শুল্কের বর্ধিত হার বাস্তবায়ন করা থেকে : পিছু হটছে সরকার

আপলোড টাইম : ০৫:০৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ জুন ২০১৭

সমীকরণ ডেস্ক: শেষ পর্যন্ত নতুন ভ্যাট আইন এবং আবগারি শুল্কের বর্ধিত হার বাস্তবায়ন করা থেকে পিছিয়ে আসছে সরকার। পহেলা জুলাই থেকে তা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের আগে এ নিয়ে জনরোষ সৃষ্টি হতে পারে- এমন শঙ্কা থেকেই এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। এ ব্যাপারে জাতীয় সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলের এমপিসহ দেশের ব্যবসায়ী সমাজের দাবির বিষয়টিও গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয়েছে। সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনার পর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সরকারের নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। অর্থমন্ত্রণালয় এবং এনবিআরের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হলে প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি হবে অতিরিক্ত প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। এই হিসাব মেলাতে বুধবার ব্যস্ত সময় পার করেছেন মন্ত্রণালয়ের বাজেট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পাশাপাশি পুরনো আইনে বিভিন্ন খাতের ভ্যাট হার নির্ধারণে ব্যস্ত ছিলেন এনবিআরের কর্মকর্তারাও। তবে এ বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত আসবে আগামী ২৮ জুন জাতীয় সংসদে অর্থবিল পাসের মাধ্যমে। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা দেবেন।
জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বুধবার সাংবাদিকদের  বলেন, জনগণের জন্য যা ভালো হবে, আগামী বাজেটে তা করা হবে। পহেলা জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২৮ জুন প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে যা বলার বলবেন। এর আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।
সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশের পর অর্থ মন্ত্রণালয় নতুন করে বাজেটের হিসাব-নিকাশের প্রাথমিক কাজ শেষ করেছে। এটি অর্থমন্ত্রীর কাছে জমাও দেয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হলে বাজেটে ভ্যাট থেকে আদায় কমবে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। তা মেটাতে নতুন করে হিসাব করা হয়েছে।

জানা গেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে (২০১৭-২০১৮) মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট থেকে মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৯১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। আর সংশোধিত বাজেটে (২০১৬-২০১৭) তা হচ্ছে ৬৮ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। ফলে প্রস্তাবিত বাজেটে অতিরিক্ত ২২ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা বেশি ভ্যাট আদায় করতে হবে। অতিরিক্ত এ অর্থ নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে আদায়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
এনবিআরের সূত্রে জানা গেছে, নতুন আইনে ১৫ শতাংশ ভ্যাট হারের পরিবর্তে ৮-১০টি সেবা খাতের জন্য হ্রাসকৃত হারে ভ্যাট আরোপ করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এসব খাতের মধ্যে আছে- আবাসন, জুয়েলারি, রড ও বিদ্যুৎ। হ্রাসকৃত হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে পৃথক ৩টি পদ্ধতি বিবেচনা করা হচ্ছে। এসব হ্রাসকৃত হার হবে ৫ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে। এর মধ্যে প্রথম হচ্ছে- যেসব খাতের হ্রাসকৃত হার ১০ শতাংশ থাকবে, নতুন আইনে সেসব খাত রেয়াত সুবিধা নিতে পারবে। দ্বিতীয় হচ্ছে- ৮-১০টি খাতের জন্যই সমহারে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপ এবং সর্বশেষ বা তৃতীয় পদ্ধতি হচ্ছে খাতভেদে পৃথকভাবে ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা, যা বর্তমান আইনেও আছে।
সূত্রমতে, এসব বিষয়ে মঙ্গলবার এনবিআর থেকে ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তবে কোন হারে ভ্যাট আদায় করা হবে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
এনবিআরের সূত্রে জানা গেছে, ভ্যাট অব্যাহতির তফসিল সংশোধন করে অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্যের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। এ তালিকায় নতুন করে যুক্ত হচ্ছে অ্যালুমিনিয়ামের তৈজসপত্র, প্লাস্টিকের থালা-বাটি, জেনারেটর মতো আরও কিছু নিত্যব্যবহার্য পণ্য।
প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংকস্থিতি ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৮০০ টাকা, ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত আড়াই হাজার টাকা, ১ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ১২ হাজার টাকা এবং ৫ কোটি টাকার ঊর্ধ্বের ব্যাংক হিসাবের ক্ষেত্রে ২৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দেয়া হয়। আয়কর পরিবর্তন : বড় পরিবর্তন আসছে আয়কর খাতেও। ব্যবসায়ীসহ সব মহলের ব্যাপক সমালোচনার মুখে করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করা হতে পারে। একই সঙ্গে শেয়ারবাজারের করমুক্ত লভ্যাংশের সীমাও বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে এ সীমা ২৫ হাজার টাকা। তাছাড়া সারচার্জ ও শেয়ারবাজারের স্বার্থে কর্পোরেট করহারেও ছাড় দেয়া হতে পারে।