ইপেপার । আজ বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫

জনশক্তি রফতানি সঙ্কুচিত , সুষ্ঠুতা প্রতিষ্ঠা সবচেয়ে জরুরি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:০০:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ অক্টোবর ২০২১
  • / ৬৪ বার পড়া হয়েছে

বৈশ্বিক মহামারীর কারণে পোশাক রফতানিসহ দেশের অর্থনৈতিক প্রতিটি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের খাত জনশক্তি রফতানিও সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। শুধু তা-ই নয়, অনেক দেশ থেকে প্রবাসী শ্রমিকরা চাকরি হারিয়ে প্রায় নিঃস্ব অবস্থায় দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন। অনেকে ছুটিতে দেশে এসে আটকা পড়েন। তাদের ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়। সম্প্রতি দেশের মহামারী পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। মৃত্যু ও শনাক্তের পরিমাণ কমে এসেছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও শুরু হয়েছে; কিন্তু বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতে স্থবিরতা এখনো কাটেনি। জনশক্তি রফতানির নতুন কোনো বাজার খোলেনি। পুরনো বাজারে নতুন করে কর্মী পাঠানোর তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। এমনকি যেসব প্রবাসী কর্মী দেশে এসে আটকা পড়েছিলেন তাদের ফিরে যাওয়ার পথও আমরা সুগম করতে পারিনি।
সৌদি আরব ও আমিরাতে ফিরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষমাণদের নিয়ে যেসব অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে সেগুলো এড়াতে পারলে ভালো হতো। বিমানবন্দরে সামান্য আরটি বা পিসিআর ল্যাব বসিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে করোনা টেস্ট করে কর্মীদের বিমানে ওঠার সুযোগটুকুও আমরা করে দিতে পারিনি। হাজার হাজার আটকে পড়া শ্রমিককে এ কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। এমনকি কেউ কেউ সময়মতো ফিরতে না পেরে চাকরি হারিয়েছেন, এমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাও ঘটেছে। এর চেয়ে দুঃখজনক ব্যর্থতা আর কী হতে পারে আমাদের জানা নেই। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারও আমরা এখনো পুনরুদ্ধার করতে পারিনি। অথচ দেশটি বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিতে আগ্রহী। সমস্যা মালয়েশিয়ার নয়, সমস্যা মূলত আমাদের। আমরা তাদের চাহিদামতো শ্রমিক পাঠানোর সুষ্ঠু প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে পারিনি। এমনই আরো অনেক ছোটখাটো সীমাবদ্ধতা ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে সৌদি আরব ও মালয়েশিয়াসহ বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোতে অনেক সম্ভাবনা থাকার পরও কর্মসংস্থানের সুযোগ নেয়া যাচ্ছে না।
গণমাধ্যমের বিভিন্ন রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, মহামারী পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর বাংলাদেশের বৃহত্তম দু’টি শ্রমবাজার মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাজার খোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে; কিন্তু জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে নতুন করে নানা সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আমাদের পক্ষে নতুন বাজার খোলা তো দূরের কথা, পুরনো বাজার ধরে রাখাও সম্ভব হবে না। জনশক্তি রফতানির বিদ্যমান শ্রমবাজার ধরে রাখার জন্য সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে।
জনশক্তি রফতানির সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে প্রধান তিনটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে- বন্ধ হওয়া শ্রমবাজার আবার চালু করা, যেসব শ্রমিক দেশের বাইরে আছেন তাদের সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে থাকার মতো সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং যারা দেশে ফিরে এসেছেন তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এ ক্ষেত্রে করোনাকালে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। এখন কেমন ভূমিকা রাখছে তার প্রমাণ বিমানবন্দরে আরটি/পিসিআর ল্যাব প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতার মধ্যেই প্রতিফলিত।
এমনই এক পরিস্থিতিতে বিদেশগামী শ্রমিকদের সাথে প্রতারণার দায়ে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সম্প্রতি সাতটি জনশক্তি রফতানিকারক এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে ১৯৬টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের কার্যক্রম স্থগিত করে অথবা বিভিন্ন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়। এগুলো সুষ্ঠুভাবে জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে খুবই জরুরি। এ ক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন করা না হলে দেশের এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাতে সুষ্ঠুতা ফিরিয়ে আনা যাবে না। কিন্তু সুষ্ঠুতার কোনো বিকল্প নেই। আশা করি জাতীয় অর্থনীতির পুনর্গঠনের স্বার্থে সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

জনশক্তি রফতানি সঙ্কুচিত , সুষ্ঠুতা প্রতিষ্ঠা সবচেয়ে জরুরি

আপলোড টাইম : ১১:০০:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ অক্টোবর ২০২১

বৈশ্বিক মহামারীর কারণে পোশাক রফতানিসহ দেশের অর্থনৈতিক প্রতিটি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের খাত জনশক্তি রফতানিও সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। শুধু তা-ই নয়, অনেক দেশ থেকে প্রবাসী শ্রমিকরা চাকরি হারিয়ে প্রায় নিঃস্ব অবস্থায় দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন। অনেকে ছুটিতে দেশে এসে আটকা পড়েন। তাদের ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়। সম্প্রতি দেশের মহামারী পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। মৃত্যু ও শনাক্তের পরিমাণ কমে এসেছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও শুরু হয়েছে; কিন্তু বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতে স্থবিরতা এখনো কাটেনি। জনশক্তি রফতানির নতুন কোনো বাজার খোলেনি। পুরনো বাজারে নতুন করে কর্মী পাঠানোর তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। এমনকি যেসব প্রবাসী কর্মী দেশে এসে আটকা পড়েছিলেন তাদের ফিরে যাওয়ার পথও আমরা সুগম করতে পারিনি।
সৌদি আরব ও আমিরাতে ফিরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষমাণদের নিয়ে যেসব অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে সেগুলো এড়াতে পারলে ভালো হতো। বিমানবন্দরে সামান্য আরটি বা পিসিআর ল্যাব বসিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে করোনা টেস্ট করে কর্মীদের বিমানে ওঠার সুযোগটুকুও আমরা করে দিতে পারিনি। হাজার হাজার আটকে পড়া শ্রমিককে এ কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। এমনকি কেউ কেউ সময়মতো ফিরতে না পেরে চাকরি হারিয়েছেন, এমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাও ঘটেছে। এর চেয়ে দুঃখজনক ব্যর্থতা আর কী হতে পারে আমাদের জানা নেই। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারও আমরা এখনো পুনরুদ্ধার করতে পারিনি। অথচ দেশটি বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিতে আগ্রহী। সমস্যা মালয়েশিয়ার নয়, সমস্যা মূলত আমাদের। আমরা তাদের চাহিদামতো শ্রমিক পাঠানোর সুষ্ঠু প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে পারিনি। এমনই আরো অনেক ছোটখাটো সীমাবদ্ধতা ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে সৌদি আরব ও মালয়েশিয়াসহ বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোতে অনেক সম্ভাবনা থাকার পরও কর্মসংস্থানের সুযোগ নেয়া যাচ্ছে না।
গণমাধ্যমের বিভিন্ন রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, মহামারী পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর বাংলাদেশের বৃহত্তম দু’টি শ্রমবাজার মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাজার খোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে; কিন্তু জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে নতুন করে নানা সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আমাদের পক্ষে নতুন বাজার খোলা তো দূরের কথা, পুরনো বাজার ধরে রাখাও সম্ভব হবে না। জনশক্তি রফতানির বিদ্যমান শ্রমবাজার ধরে রাখার জন্য সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে।
জনশক্তি রফতানির সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে প্রধান তিনটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে- বন্ধ হওয়া শ্রমবাজার আবার চালু করা, যেসব শ্রমিক দেশের বাইরে আছেন তাদের সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে থাকার মতো সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং যারা দেশে ফিরে এসেছেন তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এ ক্ষেত্রে করোনাকালে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। এখন কেমন ভূমিকা রাখছে তার প্রমাণ বিমানবন্দরে আরটি/পিসিআর ল্যাব প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতার মধ্যেই প্রতিফলিত।
এমনই এক পরিস্থিতিতে বিদেশগামী শ্রমিকদের সাথে প্রতারণার দায়ে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সম্প্রতি সাতটি জনশক্তি রফতানিকারক এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে ১৯৬টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের কার্যক্রম স্থগিত করে অথবা বিভিন্ন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়। এগুলো সুষ্ঠুভাবে জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে খুবই জরুরি। এ ক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন করা না হলে দেশের এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাতে সুষ্ঠুতা ফিরিয়ে আনা যাবে না। কিন্তু সুষ্ঠুতার কোনো বিকল্প নেই। আশা করি জাতীয় অর্থনীতির পুনর্গঠনের স্বার্থে সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।