মানবতার মাসুল!
- আপলোড টাইম : ০৯:২২:১৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ অক্টোবর ২০২১
- / ৫৫ বার পড়া হয়েছে
রোহিঙ্গা ক্যাম্প আবার রক্তাক্ত হলো। গত শুক্রবার মুখোশ পরিহিত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলায় ৬ রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছেন। হামলায় আহত হয়েছেন আরও ১৫ রোহিঙ্গা। কেন এই হত্যা? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বেশিদূর যেতে হয় না। প্রত্যাবাসনে আগ্রহী এবং এর বিরোধিতার জের হিসেবেই এই হত্যাকা-, এমনটাই পর্যবেক্ষক মহলের অভিমত। এর আগেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষের ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। বিশ্বের কাছে এটি ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে যে, রোহিঙ্গারা তাদের নিজেদের দেশে ফিরে যাক, এই সঙ্গত ও স্বাভাবিক সমাধান কারা চাইছে না। কারা বন্দুকের নলের মুখে রোহিঙ্গাদের দেশছাড়া করেছে। মিয়ানমার সরকার বছরের পর বছর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখছে। আর এই মানসিকতা থেকে উদ্ভূত সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই সক্রিয় রয়েছে আরসা ক্যাডার। আশ্রয়দাতা দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কেন এসব সহিংসতা সহ্য করবে? কেন বাংলাদেশের সরকারকে হতে হবে উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত?
যারা প্রত্যাবাসনে আগ্রহী, প্রত্যাবাসনে জনমত গঠনে প্রশাসনকে সহযোগিতা করছে এবং মসজিদ-মাদ্রাসায় মিয়ানমারে ফিরে যাবার পক্ষে মতামত পেশ করছে, তাদের নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্ন সামনে চলে আসছে। সেইসঙ্গে এমন সন্দেহও অমূলক নয় যে, তাদেরই একের পর এক সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এক মাসও হয়নি খুন হয়েছেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এ্যান্ড হিউম্যান রাইটস সংগঠনের চেয়ারম্যান মাস্টার মুহিবুল্লাহ। প্রত্যাবাসনের পক্ষে জনমত গঠনে তিনি ছিলেন সক্রিয়। তার হত্যায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) দিকেই।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনকারী পুরনো রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রায় শতাধিক রোহিঙ্গা পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে অস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ওইসময় আফগান যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে মিয়ানমার থেকে সহস্রাধিক রোহিঙ্গা (আরএসও জঙ্গী) আফগানিস্তান গিয়েছিল। সেখানে গেরিলাযুদ্ধে কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা নিহত হয়। মারা যাওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে চট্টগ্রামে ও কক্সবাজারে এনআইডিধারী রোহিঙ্গাদের স্বজনরাও রয়েছে। তারা বিভিন্ন জঙ্গী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত কিনা সে প্রশ্ন উঠছে। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন থেকে আশ্রিত ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীর মিয়ানমারে নিরাপদ ও সম্মানজনক পুনর্বাসনের বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উচ্চবাচ্য বর্তমানে অনুপস্থিত। বাস্তবে রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা বাংলাদেশের জন্য বহুমুখী বিষফোঁড়া হয়ে উঠছে ক্রমশ। ইতোমধ্যে এর আলামত মিলেছে প্রথমদিকে একাধিক রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড এবং অতিসম্প্রতি ক্যাম্পে রক্তপাতের ঘটনায়। চার বছরে আশিটির মতো হত্যাকান্ড ঘটেছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি সময়সাপেক্ষ বটে, তবে ইতোমধ্যে অনেকটা সময় ক্ষেপণও হয়ে গেছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে প্রত্যাশিত ভূমিকা এখনও পায়নি বাংলাদেশ। অসহায় নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া স্বদেশত্যাগী রোহিঙ্গাদের মানবতার চূড়ান্ত রূপ দেখাতে কার্পণ্য করেনি বাংলাদেশ। কিন্তু বর্তমানে রোহিঙ্গারা মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। অপরাধও সংঘটিত হচ্ছে নিয়মিতভাবে। অধুনা যুক্ত হয়েছে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থানকারীদের ভেতর রক্তক্ষয়ী দ্বন্দ্ব। মানবতার মাসুল তো এভাবে দেয়ার কথা ছিল না বাংলাদেশের। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশেই ফিরতে হবে। এজন্যে বিশ্বনেতাদের ইতিবাচক ভূমিকা দেখার অপেক্ষায় বাংলাদেশ। প্রত্যাবাসনে যত দেরি হবে ততোই অস্থিরতা বাড়বে। তাই প্রয়োজন শক্ত হাতে অপরাধ দমন এবং প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়াটিতে গতি আনা।