ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি নয়

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১৪:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২১
  • / ৭৫ বার পড়া হয়েছে

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের ভাষণে বলে গেছেন, ‘ধর্ম নিয়ে তোমরা বাড়াবাড়ি করো না। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে বহু জাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।’ অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আজও দেশে দেশে ধর্ম নিয়ে চলছে বাড়াবাড়ি। ধর্মান্ধরা অন্য ধর্মের মানুষকে শত্রুজ্ঞান করছে। পরধর্মসহিষ্ণুতার সংস্কৃতি প্রায় ভূলুণ্ঠিত। ধর্ম নিয়ে হানাহানি পর্যন্ত চলছে। শারদীয়া দুর্গাপূজার সময় বাংলাদেশে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ির উদাহরণ দেখা গেল আরও একবার। সাম্প্রতিককালে এমনটি আর দেখা যায়নি। সত্য প্রকাশের দায়বোধ থেকে আমাদের বলতেই হবে যে, ফেসবুকের অপব্যবহার করে ধর্মান্ধ ও ধর্মব্যবসায়ীরা সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে দেয়ার কাজ করছে। পূজার সময় কুমিল্লার একটি পূজামন্ডপে নাটক সাজানো হলো; হনুমানের মূর্তির পায়ে রেখে দেয়া হলো পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। কৌশলে ফেসবুকের মাধ্যমেই তা মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া হলো। এক শ্রেণীর অসচেতন মানুষ ঘটনাটির পূর্বাপর বিশ্লেষণ না করেই সেটিকে সত্য বলে ধরে নিয়ে পবিত্র গ্রন্থ অবমাননার অভিযোগে সহিংস হয়ে উঠল। তারা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মন্দির ও পূজামন্ডপে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করল। ধর্মের দোহাই দিয়ে এদেশেই জঙ্গী হামলা হয়েছে। একজন সাচ্চা মুসলমানের পক্ষে কখনই ধর্মের দোহাই দিয়ে মানবহত্যা সম্ভব নয়।
এবারের দুর্গাপূজার সময় ও তার পরে দেশের যেসব অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে সবখানে প্রতিটি হামলার পেছনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী লোকদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার কথা বারবার বলতে হবে। পাশাপাশি সারা দেশেরই সংখ্যালঘু নাগরিকদের জানমাল রক্ষায় সার্বিক ব্যবস্থা নিতে হবে। অতীতে দেখা গেছে এসব পরিস্থিতিতে প্রশাসনের পাশে সহায়ক শক্তি হিসেবে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা গেলে গুটিকতক সাম্প্রদায়িক সরীসৃপের পক্ষে একটিও কুকর্ম করা সম্ভব নয়।’ মানুষের সম্মিলিত শক্তিই সবচেয়ে বড় সামাজিক শক্তি, যা মানুষের বিপন্নতায় প্রকৃত সহায় হয়ে ওঠে। ধর্মকে ব্যবহার করে সংখ্যালঘুর উপাসনালয়ে আক্রমণ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া কখনই ইসলামের নির্দেশনা নয়। চরম পরিতাপের বিষয় হচ্ছে এই শিক্ষার অভাব রয়েছে আমাদের সমাজে। দেশের ধর্মভীরু অথচ প্রকৃত ধর্মশিক্ষা পায়নি কিংবা ধারণ করতে পারেনি এমন বহু নিরীহ সাধারণ মানুষকে প্ররোচিত করে থাকে ধর্মব্যবসায়ীরা। তারা সাম্প্রদায়িকতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহারের মাধ্যমে অন্য ধর্মের মানুষকে পদানত করার ছক আঁকে। সাধারণ ধার্মিকেরা সরলভাবে তাদেরই পাতা ফাঁদে পা দেয়। এবারও কোন কোন স্থানে এমন প্রবণতাই লক্ষ্য করা গেছে। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা থেকে নিজেকে সংযত রাখা গেলে সমাজে সকল ধর্মের মানুষই সহাবস্থান করতে পারে শান্তি ও সম্প্রীতির সঙ্গে। সেটিই সর্বসময় প্রত্যাশিত।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি নয়

আপলোড টাইম : ০৯:১৪:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২১

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের ভাষণে বলে গেছেন, ‘ধর্ম নিয়ে তোমরা বাড়াবাড়ি করো না। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে বহু জাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।’ অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আজও দেশে দেশে ধর্ম নিয়ে চলছে বাড়াবাড়ি। ধর্মান্ধরা অন্য ধর্মের মানুষকে শত্রুজ্ঞান করছে। পরধর্মসহিষ্ণুতার সংস্কৃতি প্রায় ভূলুণ্ঠিত। ধর্ম নিয়ে হানাহানি পর্যন্ত চলছে। শারদীয়া দুর্গাপূজার সময় বাংলাদেশে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ির উদাহরণ দেখা গেল আরও একবার। সাম্প্রতিককালে এমনটি আর দেখা যায়নি। সত্য প্রকাশের দায়বোধ থেকে আমাদের বলতেই হবে যে, ফেসবুকের অপব্যবহার করে ধর্মান্ধ ও ধর্মব্যবসায়ীরা সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে দেয়ার কাজ করছে। পূজার সময় কুমিল্লার একটি পূজামন্ডপে নাটক সাজানো হলো; হনুমানের মূর্তির পায়ে রেখে দেয়া হলো পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। কৌশলে ফেসবুকের মাধ্যমেই তা মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া হলো। এক শ্রেণীর অসচেতন মানুষ ঘটনাটির পূর্বাপর বিশ্লেষণ না করেই সেটিকে সত্য বলে ধরে নিয়ে পবিত্র গ্রন্থ অবমাননার অভিযোগে সহিংস হয়ে উঠল। তারা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মন্দির ও পূজামন্ডপে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করল। ধর্মের দোহাই দিয়ে এদেশেই জঙ্গী হামলা হয়েছে। একজন সাচ্চা মুসলমানের পক্ষে কখনই ধর্মের দোহাই দিয়ে মানবহত্যা সম্ভব নয়।
এবারের দুর্গাপূজার সময় ও তার পরে দেশের যেসব অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে সবখানে প্রতিটি হামলার পেছনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী লোকদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার কথা বারবার বলতে হবে। পাশাপাশি সারা দেশেরই সংখ্যালঘু নাগরিকদের জানমাল রক্ষায় সার্বিক ব্যবস্থা নিতে হবে। অতীতে দেখা গেছে এসব পরিস্থিতিতে প্রশাসনের পাশে সহায়ক শক্তি হিসেবে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা গেলে গুটিকতক সাম্প্রদায়িক সরীসৃপের পক্ষে একটিও কুকর্ম করা সম্ভব নয়।’ মানুষের সম্মিলিত শক্তিই সবচেয়ে বড় সামাজিক শক্তি, যা মানুষের বিপন্নতায় প্রকৃত সহায় হয়ে ওঠে। ধর্মকে ব্যবহার করে সংখ্যালঘুর উপাসনালয়ে আক্রমণ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া কখনই ইসলামের নির্দেশনা নয়। চরম পরিতাপের বিষয় হচ্ছে এই শিক্ষার অভাব রয়েছে আমাদের সমাজে। দেশের ধর্মভীরু অথচ প্রকৃত ধর্মশিক্ষা পায়নি কিংবা ধারণ করতে পারেনি এমন বহু নিরীহ সাধারণ মানুষকে প্ররোচিত করে থাকে ধর্মব্যবসায়ীরা। তারা সাম্প্রদায়িকতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহারের মাধ্যমে অন্য ধর্মের মানুষকে পদানত করার ছক আঁকে। সাধারণ ধার্মিকেরা সরলভাবে তাদেরই পাতা ফাঁদে পা দেয়। এবারও কোন কোন স্থানে এমন প্রবণতাই লক্ষ্য করা গেছে। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা থেকে নিজেকে সংযত রাখা গেলে সমাজে সকল ধর্মের মানুষই সহাবস্থান করতে পারে শান্তি ও সম্প্রীতির সঙ্গে। সেটিই সর্বসময় প্রত্যাশিত।