ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

৭ মাসেও ‘স্বাধীনতা সড়ক’ চালু হয়নি,তা হলে উদ্বোধনের অর্থ কী?

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:৫৩:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অক্টোবর ২০২১
  • / ৮১ বার পড়া হয়েছে

উদ্বোধনের পর প্রায় সাত মাস হয়ে গেলেও মেহেরপুরের মুজিবনগর থেকে ভারতের কলকাতা সরাসরি যাওয়ার ‘স্বাধীনতা সড়ক’ আজো চালু করা হয়নি। ভারত ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সীমান্ত ফটকও খোলেনি। অথচ বিগত ১২ মার্চ শেষ হয়ে গেছে স্বাধীনতা সড়কের বাংলাদেশ অংশের নির্মাণকাজ। এরপর গত স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে অবস্থানকালে কয়েকটি চুক্তি সই করার অনুষ্ঠানে দেশের একমাত্র স্বাধীনতা সড়কের এ নামকরণ করেছিলেন আনুষ্ঠানিকভাবেই।
একটি সহযোগী দৈনিক পত্রিকার প্রাসঙ্গিক প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল, অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে আমাদের জাতীয় নেতারাসহ ভারতের নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা এ সড়কযোগেই মেহেরপুরের মুজিবনগর পৌঁছেছিলেন। উল্লেখ্য, সেদিন সেখানে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের পর স্বাধীন দেশের সর্বপ্রথম সরকারের শপথ ও গার্ড অব অনার, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়কের নিয়োগ প্রভৃতি সম্পন্ন হয়েছিল এক জনাকীর্ণ অনুষ্ঠানে। মুজিবনগর দিবসের এই ঐতিহাসিক তাৎপর্যের প্রেক্ষাপটে উভয় দেশ সড়কটার নামকরণ করেছে ‘স্বাধীনতা সড়ক’। তবে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিজ অংশের নির্মাণ ও উদ্বোধন প্রায় সাত মাস আগে সম্পন্ন করলেও প্রতিবেশী ভারত নিজের অংশের কাজ শেষ করেনি আজো। তাই এত তোড়জোড় সত্ত্বেও সড়কটি চালু করা যায়নি দীর্ঘ দিনেও। অবশ্য দু’দেশের সীমান্তে চেকপোস্ট নির্মিত হচ্ছে। জানা যায়, কেবল লোক পারাপার নয়; দু’রাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করার জন্য মুজিবনগরে (সাবেক বৈদ্যনাথতলা) স্থলবন্দরের প্রয়োজনে জমি কেনা হচ্ছে। এ দিকে সড়কটি দেখার জন্য প্রতিদিন মানুষ গিয়ে ভিড় করছেন। সরেজমিন দেখা গেছে, দর্শনার্থীরা বাংলাদেশের শেষপ্রান্তে ব্যারিকেডের কাছে ভারতীয় অংশের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনেকে বারবার এসে ভিড় করে দেখছেন, ভারতের অংশের কাজ শেষ করা হলো কি না।
এলজিইডি জানায়, তাদের অর্থায়নে বাংলাদেশের মুজিবনগরে এক কোটি ছয় লাখ টাকা ব্যয়ে ১৮ ফুট প্রশস্ত পাকাকরণ এবং দু’পাশে তিন ফুট করে সড়ক শাসনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম সরকারের গার্ড অব অনার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সাবেক আনসার হামিদুল বলেছেন, স্বাধীনতার অর্ধশতক পার হওয়ার পর মুজিবনগরের যথার্থ মূল্যায়ন হচ্ছে। মুজিবনগর উপজেলার চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন বিশ্বাস বলেছেন, ‘স্বাধীনতা সড়ক চালু হলে সহজেই মুক্তিযুদ্ধের আবেগ ও স্মৃতির স্পর্শ পাওয়া যাবে। ফলে পর্যটকের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাবে।’ মেহেরপুর জেলার প্রশাসক (ডিসি) মনসুর আলম খান বলেন, সড়কটি চালু হলে স্বাধীনতাযুদ্ধে দু’টি দেশের অবদান ও অনুভূতি ফুটে উঠবে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী, জেলা আওয়ামী লীগ প্রধান এবং স্থানীয় এমপি ফরহাদ হোসেন জানান, বাংলাদেশ সড়কটি চালু করতে প্রস্তুত। অপর দিকে ভারতের চূড়ান্ত প্রস্তুতির জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে।’
বাংলাদেশের তিন দিকেই বিশাল ভারত। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসা, শিক্ষা, ব্যবসায় ও পর্যটনসহ নানা প্রয়োজনে সে দেশে যাচ্ছেন। অন্য দিকে ভারত থেকেও বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রত্যহ বাংলাদেশে আসছেন বিভিন্ন কাজে। উভয়ের চলাচল ও যোগাযোগের স্বার্থে অবিলম্বে ‘স্বাধীনতা সড়ক’ চালু করা অপরিহার্য। অন্যথায়, সাত মাস আগে ঘটা করে এর নামকরণের অর্থ হারিয়ে যাবে। উচিত ছিল, উদ্বোধনের সাথে সাথে সড়কটি চালু করা। এ ক্ষেত্রে ভারত সরকার আর যেন বিলম্ব না করে, এটাই আমাদের প্রত্যেকের প্রত্যাশা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

৭ মাসেও ‘স্বাধীনতা সড়ক’ চালু হয়নি,তা হলে উদ্বোধনের অর্থ কী?

আপলোড টাইম : ০২:৫৩:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অক্টোবর ২০২১

উদ্বোধনের পর প্রায় সাত মাস হয়ে গেলেও মেহেরপুরের মুজিবনগর থেকে ভারতের কলকাতা সরাসরি যাওয়ার ‘স্বাধীনতা সড়ক’ আজো চালু করা হয়নি। ভারত ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সীমান্ত ফটকও খোলেনি। অথচ বিগত ১২ মার্চ শেষ হয়ে গেছে স্বাধীনতা সড়কের বাংলাদেশ অংশের নির্মাণকাজ। এরপর গত স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে অবস্থানকালে কয়েকটি চুক্তি সই করার অনুষ্ঠানে দেশের একমাত্র স্বাধীনতা সড়কের এ নামকরণ করেছিলেন আনুষ্ঠানিকভাবেই।
একটি সহযোগী দৈনিক পত্রিকার প্রাসঙ্গিক প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল, অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে আমাদের জাতীয় নেতারাসহ ভারতের নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা এ সড়কযোগেই মেহেরপুরের মুজিবনগর পৌঁছেছিলেন। উল্লেখ্য, সেদিন সেখানে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের পর স্বাধীন দেশের সর্বপ্রথম সরকারের শপথ ও গার্ড অব অনার, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়কের নিয়োগ প্রভৃতি সম্পন্ন হয়েছিল এক জনাকীর্ণ অনুষ্ঠানে। মুজিবনগর দিবসের এই ঐতিহাসিক তাৎপর্যের প্রেক্ষাপটে উভয় দেশ সড়কটার নামকরণ করেছে ‘স্বাধীনতা সড়ক’। তবে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিজ অংশের নির্মাণ ও উদ্বোধন প্রায় সাত মাস আগে সম্পন্ন করলেও প্রতিবেশী ভারত নিজের অংশের কাজ শেষ করেনি আজো। তাই এত তোড়জোড় সত্ত্বেও সড়কটি চালু করা যায়নি দীর্ঘ দিনেও। অবশ্য দু’দেশের সীমান্তে চেকপোস্ট নির্মিত হচ্ছে। জানা যায়, কেবল লোক পারাপার নয়; দু’রাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করার জন্য মুজিবনগরে (সাবেক বৈদ্যনাথতলা) স্থলবন্দরের প্রয়োজনে জমি কেনা হচ্ছে। এ দিকে সড়কটি দেখার জন্য প্রতিদিন মানুষ গিয়ে ভিড় করছেন। সরেজমিন দেখা গেছে, দর্শনার্থীরা বাংলাদেশের শেষপ্রান্তে ব্যারিকেডের কাছে ভারতীয় অংশের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনেকে বারবার এসে ভিড় করে দেখছেন, ভারতের অংশের কাজ শেষ করা হলো কি না।
এলজিইডি জানায়, তাদের অর্থায়নে বাংলাদেশের মুজিবনগরে এক কোটি ছয় লাখ টাকা ব্যয়ে ১৮ ফুট প্রশস্ত পাকাকরণ এবং দু’পাশে তিন ফুট করে সড়ক শাসনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম সরকারের গার্ড অব অনার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সাবেক আনসার হামিদুল বলেছেন, স্বাধীনতার অর্ধশতক পার হওয়ার পর মুজিবনগরের যথার্থ মূল্যায়ন হচ্ছে। মুজিবনগর উপজেলার চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন বিশ্বাস বলেছেন, ‘স্বাধীনতা সড়ক চালু হলে সহজেই মুক্তিযুদ্ধের আবেগ ও স্মৃতির স্পর্শ পাওয়া যাবে। ফলে পর্যটকের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাবে।’ মেহেরপুর জেলার প্রশাসক (ডিসি) মনসুর আলম খান বলেন, সড়কটি চালু হলে স্বাধীনতাযুদ্ধে দু’টি দেশের অবদান ও অনুভূতি ফুটে উঠবে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী, জেলা আওয়ামী লীগ প্রধান এবং স্থানীয় এমপি ফরহাদ হোসেন জানান, বাংলাদেশ সড়কটি চালু করতে প্রস্তুত। অপর দিকে ভারতের চূড়ান্ত প্রস্তুতির জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে।’
বাংলাদেশের তিন দিকেই বিশাল ভারত। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসা, শিক্ষা, ব্যবসায় ও পর্যটনসহ নানা প্রয়োজনে সে দেশে যাচ্ছেন। অন্য দিকে ভারত থেকেও বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রত্যহ বাংলাদেশে আসছেন বিভিন্ন কাজে। উভয়ের চলাচল ও যোগাযোগের স্বার্থে অবিলম্বে ‘স্বাধীনতা সড়ক’ চালু করা অপরিহার্য। অন্যথায়, সাত মাস আগে ঘটা করে এর নামকরণের অর্থ হারিয়ে যাবে। উচিত ছিল, উদ্বোধনের সাথে সাথে সড়কটি চালু করা। এ ক্ষেত্রে ভারত সরকার আর যেন বিলম্ব না করে, এটাই আমাদের প্রত্যেকের প্রত্যাশা।