চুয়াডাঙ্গার গাড়াবাড়িয়ায় উচ্চ ফলনশীল বিদেশী ফল : ‘সুইট মাস মিলন’ এর সফল উৎপাদন : বদলে দিতে পারে এ অঞ্চলের কৃষকের ভাগ্য
- আপলোড টাইম : ০৫:৫২:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ জুন ২০১৭
- / ১৬৬৪ বার পড়া হয়েছে
এম এ মামুন: চুয়াডাঙ্গা সদরের গাড়াবাড়িয়ায় উচ্চ ফলনশীল বিদেশি ফল সুইট মাস মিলন ( গটঝ গঊখঙঘ ঋজটওঞ)’র সফল উৎপাদন শুরু হয়েছে। বিদেশী এই ফলটি উচ্চ ফলনশীল ও পুষ্টিমান সম্পন্ন এবং এর উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় বাজার মূল্য অনেক বেশি হওয়ায় মিলন চাষে ঝুকছে এই অঞ্চলের কৃষক। আমাদের দেশের বড় বড় রেস্তোরায় এই ফলের ব্যাপক চাহিদা থাকার কারনে এর বাজার মূল্য অন্যান্য ফলের তুলনায় অনেক বেশি। প্রতি বছর ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকার গ্রীষ্মকালীন ‘সুইট মাস মিলন’( গটঝ গঊখঙঘ ঋজটওঞ) ফল বিদেশ থেকে আমদানী করা হয়। যার পুরোটায় আসে তাইওয়ান, থাইল্যান্ড এবং ইন্ডিয়া থেকে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে দেশের ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকার আমদানী নির্ভর বাজারের কিছুটা হলেও দখল করতে স্বক্ষম হয়েছে চুয়াডাঙ্গার সবজি গ্রাম খ্যাত গাড়াবাড়িয়ার ‘এগ্রি কণসার্ন ফার্মের উৎপাদিত ‘সুইট মাস মিলন’। সারা দেশের মধ্যে একমাত্র চুয়াডাঙ্গার গাড়াবাড়িয়া গ্রামেই ১২ বিঘা জমিতে ‘সুইট মাস মিলন’ ফলের আবাদ হয়েছে। আগামী দিনে অন্যান্য অর্থকরী ফসলের পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল নতুন এই ফল চাষ ও উৎপাদনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। ‘এগ্রি কণসার্ন ফার্ম কর্তৃপক্ষ আশা করেন দেশে এর উৎপাদন বাড়লে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়েও মধ্য প্রাচ্যের সহ¯্রাধিক কোটি টাকার বাজারে রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
চুয়াডাঙ্গার এগ্রি কণসার্ন ফার্মের দায়িত্বপ্রাপ্ত এরিয়া ম্যানেজার খাইরুল ইসলাম জানান, গাড়াবাড়িয়া গ্রামের মাঠে কৃষক বন্ধু ড. শেখ আব্দুল কাদেরের কৃষি গবেষণাধর্মী ‘এগ্রি কর্ণসান’ ফার্মের আওতায় গত ৭ বছর ধরে গবেষণার পর গ্রীষ্মকালীন ‘সুইট মাস মিলন’ ফল ( গটঝ গঊখঙঘ ঋজটওঞ) চাষে সাফল্য আসে। গত ২০১৪ সাল থেকে এর উৎপাদন শুরু করা হয়। ফার্ম কর্তৃপক্ষ চলতি বছরেও সারাদেশের মধ্যে মাত্র ১২ বিঘা জমিতে এর আবাদ করেন। মার্চ মাস থেকে এর চারা দেওয়াসহ অন্যান্য কাজ শেষে এপ্রিলে চারা রোপন করলে মাত্র ৬০ দিনের মধ্যে এর ফলন পাওয়া যায়। বিঘা প্রতি উৎপাদন হয় প্রায় আড়াই থেকে তিন মেট্রিক টন। কর্তৃপক্ষ চলতি বছরে আশানুরুপ সাফল্যও পেয়েছে। গ্রীষ্মকালীন এই ফলের বাজার ও ব্যবহার সাধারণত রাজধানী ঢাকা, চিটাগাং, সিলেট, কক্সবাজার, রাজশাহী ও খুলনাসহ দেশের আর্ন্তজাতিক মানের হোটেল রেস্তোরা ও বড় বড় ফাস্ট ফুডের দোকান। এছাড়া মধ্য প্রাচ্যের দেশসমূহ। ‘সুইট মাস মিলনের ( গটঝ গঊখঙঘ ঋজটওঞ) সাথে অল্প দুধ, চিনি ও বরফ মিশিয়ে এক গ্লাস মিক্সড ফ্রুটস জুস বিক্রি করা হয় ২শ থেকে ২৫০ টাকায়। এর ক্রেতা সাধারণত বিদেশী পর্যটক, বায়ারসহ দেশের উচ্চ বিত্ত পরিবার। এছাড়া রাজধানীর চেইন শপ, ফলের দোকানে থেকেও সাধারণ মানুষ ‘সুইট মাস মিলন’ ক্রয় করে থাকে। এর স্থানীয় বাজার মূল্যও অনেক ভাল। এর একটি ফল ১ হাজার থেকে ১২শ’টাকায় বিক্রয় হয়। আগামীতে এই ফলের চাষ বৃদ্ধি করতে কর্তৃপক্ষ কৃষকদের মাঝে এর বীজ অবমুক্ত করবেন বলে জানান। কর্তৃপক্ষ মনে করছে দেশে এর উৎপাদন বাড়াতে পারলে দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের সহ¯্রাধিক কোটি টাকার বাজারে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। ফার্ম কর্তৃপক্ষ জানান, চলতি বছরে ‘সুইট মাস মিলন’ ফলের আবাদে বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আর বিক্রয় হচ্ছে এক থেকে দেড়লাখ টাকায়। অন্যান্য ফলের পাশাপাশি এই ফলের আবাদে করলে কৃষকরা লাভবান হবে। এদিকে একই কথা বলছেন চুয়াডাঙ্গার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষিবিদ তালহা জুবাইর মাশরুর। তিনি বলেন, ‘মাস মিলন’ ফলটি দেশে নতুন। এটার বাজার দেশে এবং বিদেশে রয়েছে। যেহেতু এটা একটা উচ্চ ফলনশীল, তাই এই ফল চাষে কৃষকরা লাভবান হবে।