ইপেপার । আজ রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫

রাঙ্গুনিয়ায় ফখরুলের ওপর হামলা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:২০:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ জুন ২০১৭
  • / ৪৩৬ বার পড়া হয়েছে

72b8145d8193b96217f1cd00781deb65-59465506628ee

রাঙ্গুনিয়ায় ফখরুলের ওপর হামলা : নিন্দার ঝড়
আজ সারাদেশে বিএনপি’র বিক্ষোভ
সমীকরণ ডেস্ক: ভয়াবহ পাহাড়ধসে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে রাঙ্গামাটি যাওয়ার পথে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে  মির্জা ফখরুলসহ আহত কেন্দ্রীয় নেতারা। হামলার ঘটনায় রাজধানীতে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করেছে বিএনপি। আজ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছেন, এ ন্যক্কারজনক হামলার পরিণতি শুভ হবে না। এ ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। গতকাল সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের রাঙ্গুনিয়া ইছাখালি এলাকায় ৩০-৪০ জনের সশস্ত্র এক দল দুর্বৃত্ত এই হামলা চালায়। হামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান রুহুল আলম চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান শামীম, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মীর ফাওয়াজ হোসেন শুভ, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বকরসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে বহরের সাতটি গাড়ি। ফলে রাঙ্গামাটি যেতে পারেনি বিএনপির প্রতিনিধি দল। রাঙ্গুনিয়া থেকে ফিরে যান বিএনপি নেতারা। পরে তারা চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিকেলে ঢাকায় চলে যান। এই ঘটনার জন্য সরকার দলীয় ক্যাডারদের দায়ী করেছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রাঙ্গুনিয়ার এমপি ড. হাছান মাহমুদের অনুসারী সন্ত্রাসীরা এই হামলা চালিয়েছে।
যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল সকালে পাহাড়ধসে রাঙ্গামাটির ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণের জন্য যাচ্ছিলেন। চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক দিয়ে ১৫/১৬টি গাড়ির একটি বহর নিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। গাড়িবহর রাঙ্গুনিয়ার উপজেলা সদর ইছাখালীতে পৌঁছালে ৩০-৪০ জনের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী গাড়ির বহরের সামনে লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিতে হামলা চালায়। গাড়ি বহরের নেতৃবৃন্দ কিছু বুঝে উঠার আগেই তাদের গাড়ি ও তাদের ওপর হামলা করে। হামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাত কেটে যায় এবং আহত হন। এ ছাড়াও আহত হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাক্তার ফাওয়াদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুর রহমান শামীম, চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর। হামলার পর  গাড়ির বহর ও নেতৃবৃন্দ রাঙ্গামাটি যেতে না পেরে আবার চট্টগ্রামে চলে যান। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মহসিন চৌধুরী পুরো ঘটনা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের সন্ত্রাসীরা ঘটিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। ঘটনার সময় তিনি রাঙ্গামাটি-রানীর হাট সড়কে  দলীয় নেতাকর্মীসহ অবস্থান করছিলেন। তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিব ওই সড়ক দিয়ে রাঙ্গামাটি যাওয়ার কথা ছিল। রানীর হাট এলাকায় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়ো হওয়ায় তারা হামলার শিকার হওয়ার আশঙ্কায় সড়ক পরিবর্তন করে রাঙ্গুনিয়া দিয়ে রাঙ্গামাটি যাওয়ার পথে এ ন্যক্কারজনক ঘটনার শিকার হন। এ ঘটনায় প্রমাণ করে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস দিয়ে দেশ চালায়। এর জন্য একদিন আওয়ামী লীগকে মাশুল দিতে হবে। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক কুতুব উদ্দিন বাহার বলেন, গাড়ির বহরে তিনি ছিলেন। গাড়ির বহর ইছাখালী পৌঁছালে ছাত্রলীগ যুবলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা করে। রাঙ্গুনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ ইমতিয়াজ আহসানুল কাদের ভূঁইয়া হামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, হামলার পর পরই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। ঘটনা  তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া  হবে। এর আগে বেশি কিছু বলতে চাচ্ছি না। প্রত্যক্ষদর্শী একটি সূত্র জানায়, রাঙ্গুনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ ইমতিয়াজ আহসানুলকে ঘটনার পর স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আপনারা নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। দেশের মানুষ আপনাদের কাছে নিরাপদ নয়।
ঘটনা তদন্ত হচ্ছে-পুলিশ সুপার: মির্জা ফখরুলের গাড়ি বহরে হামলার ঘটনার তদন্ত হচ্ছে জানিয়ে চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা বলেন, কাজটি ভালো হয়নি। যারাই করুক। আমরা এটা সমর্থন করি না। হামলা কেন করা হবে? এটা অন্যায় করা হয়েছে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি তাদের কাছ থেকে। সন্ধ্যার পরও কোনো মামলা হয়নি। মামলা হলে অবশ্যই আমরা ঘটনা খতিয়ে দেখবো। কেউ মামলা করতে চাইলে মামলা নেয়া হবে। তিনি বলেন, যতটুক খবর নিয়েছি বিএনপি নেতারা মূল সড়ক দিয়ে যাননি। বিষয়টি পুলিশের নজর এড়িয়ে গেছে। ফলে রাস্তায় কোনো পুলিশ না থাকায় কেউ এটা করে ফেলেছে। পুলিশ জানলে অবশ্যই তাদের নিরাপত্তা দিতো।
মির্জা ফখরুলের ওপর হামলা অন্যায় -ওবায়দুল কাদের: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওপর হামলা অন্যায় বলে মন্তব করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ গতকাল রবিবার রাজধানীতে বিমানবন্দর সড়কে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যে বা যারাই মির্জা ফখরুলের গাড়িবহরে হামলা করুক না কেন, সেটা অন্যায়। আওয়ামী লীগ এটা খতিয়ে দেখছে, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। চট্টগ্রামের ডিসি-এডিশনাল এসপির সঙ্গে কথা বলেছি। কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মির্জা ফখরুলের গাড়িবহরে হামলা : বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নিন্দা, বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে বহনকারী ত্রাণবাহী গাড়িবহরে হামলার প্রতিবাদ করেছে কয়েকটি রাজনৈতিক দল। গতকাল রবিবার দুপুরে তাৎক্ষণিক বিবৃতিতে জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, মির্জা ফখরুলের গাড়ি বহরের ওপর আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনার মধ্য দিয়ে তাদের ফ্যাসিবাদী চরিত্রই অত্যন্ত নগ্নভাবে ফুটে উঠেছে। গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ওপর নগ্ন হামলা কার্যত: গণতন্ত্র এবং মানুষের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর চরম আঘাত। এ থেকে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, সরকার পাহাড় ধসে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার প্রকৃত অবস্থা দেশবাসীকে জানতে দিতে চায় না। খেলাফত মজলিসের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেছেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ত্রাণবাহী গাড়িবহরে হামলা সরকারি দলের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। পার্বত্য এলাকায় পাহাড় ধসে মর্মান্তিক হতাহতের ঘটনায় সরকার বলতে গেলে নির্বিকার। রাঙ্গামাটির পরিস্থিতি ‘মহা বিপর্যয়কর’। বিপর্যস্ত জনপদের মানুষের পাশে দাঁড়াতে বর্তমান সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া তাদের প্রতিবাদে জানান, সরকার তাঁর ব্যর্থতা আড়াল করতে ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার কোনওরকম অপকৌশল গ্রহণ করবে না বলেই আমরা বিশ্বাস করতে চাই।সরকারের উচিত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের গাড়ির বহরে হামলার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক মো. আকরামুল হাসান বলেন, মানুষ কতটা জালিম হয় এই সরকারকে দেখলেই শুধু সেটা বোঝা যায়। পাহাড় ভেঙে মাটি চাপা পড়ে মানুষ মরে অথচ আওয়ামী লীগ নেত্রী যায় আনন্দ ভ্রমণে। তারা নিজেরা দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করে না এবং কাউকে সাহায্য করতে দিতেও চায় না।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

রাঙ্গুনিয়ায় ফখরুলের ওপর হামলা

আপলোড টাইম : ০৫:২০:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ জুন ২০১৭

72b8145d8193b96217f1cd00781deb65-59465506628ee

রাঙ্গুনিয়ায় ফখরুলের ওপর হামলা : নিন্দার ঝড়
আজ সারাদেশে বিএনপি’র বিক্ষোভ
সমীকরণ ডেস্ক: ভয়াবহ পাহাড়ধসে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে রাঙ্গামাটি যাওয়ার পথে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে  মির্জা ফখরুলসহ আহত কেন্দ্রীয় নেতারা। হামলার ঘটনায় রাজধানীতে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করেছে বিএনপি। আজ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছেন, এ ন্যক্কারজনক হামলার পরিণতি শুভ হবে না। এ ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। গতকাল সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের রাঙ্গুনিয়া ইছাখালি এলাকায় ৩০-৪০ জনের সশস্ত্র এক দল দুর্বৃত্ত এই হামলা চালায়। হামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান রুহুল আলম চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান শামীম, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মীর ফাওয়াজ হোসেন শুভ, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বকরসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে বহরের সাতটি গাড়ি। ফলে রাঙ্গামাটি যেতে পারেনি বিএনপির প্রতিনিধি দল। রাঙ্গুনিয়া থেকে ফিরে যান বিএনপি নেতারা। পরে তারা চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিকেলে ঢাকায় চলে যান। এই ঘটনার জন্য সরকার দলীয় ক্যাডারদের দায়ী করেছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রাঙ্গুনিয়ার এমপি ড. হাছান মাহমুদের অনুসারী সন্ত্রাসীরা এই হামলা চালিয়েছে।
যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল সকালে পাহাড়ধসে রাঙ্গামাটির ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণের জন্য যাচ্ছিলেন। চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক দিয়ে ১৫/১৬টি গাড়ির একটি বহর নিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। গাড়িবহর রাঙ্গুনিয়ার উপজেলা সদর ইছাখালীতে পৌঁছালে ৩০-৪০ জনের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী গাড়ির বহরের সামনে লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিতে হামলা চালায়। গাড়ি বহরের নেতৃবৃন্দ কিছু বুঝে উঠার আগেই তাদের গাড়ি ও তাদের ওপর হামলা করে। হামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাত কেটে যায় এবং আহত হন। এ ছাড়াও আহত হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাক্তার ফাওয়াদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুর রহমান শামীম, চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর। হামলার পর  গাড়ির বহর ও নেতৃবৃন্দ রাঙ্গামাটি যেতে না পেরে আবার চট্টগ্রামে চলে যান। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মহসিন চৌধুরী পুরো ঘটনা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের সন্ত্রাসীরা ঘটিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। ঘটনার সময় তিনি রাঙ্গামাটি-রানীর হাট সড়কে  দলীয় নেতাকর্মীসহ অবস্থান করছিলেন। তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিব ওই সড়ক দিয়ে রাঙ্গামাটি যাওয়ার কথা ছিল। রানীর হাট এলাকায় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়ো হওয়ায় তারা হামলার শিকার হওয়ার আশঙ্কায় সড়ক পরিবর্তন করে রাঙ্গুনিয়া দিয়ে রাঙ্গামাটি যাওয়ার পথে এ ন্যক্কারজনক ঘটনার শিকার হন। এ ঘটনায় প্রমাণ করে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস দিয়ে দেশ চালায়। এর জন্য একদিন আওয়ামী লীগকে মাশুল দিতে হবে। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক কুতুব উদ্দিন বাহার বলেন, গাড়ির বহরে তিনি ছিলেন। গাড়ির বহর ইছাখালী পৌঁছালে ছাত্রলীগ যুবলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা করে। রাঙ্গুনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ ইমতিয়াজ আহসানুল কাদের ভূঁইয়া হামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, হামলার পর পরই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। ঘটনা  তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া  হবে। এর আগে বেশি কিছু বলতে চাচ্ছি না। প্রত্যক্ষদর্শী একটি সূত্র জানায়, রাঙ্গুনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ ইমতিয়াজ আহসানুলকে ঘটনার পর স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আপনারা নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। দেশের মানুষ আপনাদের কাছে নিরাপদ নয়।
ঘটনা তদন্ত হচ্ছে-পুলিশ সুপার: মির্জা ফখরুলের গাড়ি বহরে হামলার ঘটনার তদন্ত হচ্ছে জানিয়ে চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা বলেন, কাজটি ভালো হয়নি। যারাই করুক। আমরা এটা সমর্থন করি না। হামলা কেন করা হবে? এটা অন্যায় করা হয়েছে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি তাদের কাছ থেকে। সন্ধ্যার পরও কোনো মামলা হয়নি। মামলা হলে অবশ্যই আমরা ঘটনা খতিয়ে দেখবো। কেউ মামলা করতে চাইলে মামলা নেয়া হবে। তিনি বলেন, যতটুক খবর নিয়েছি বিএনপি নেতারা মূল সড়ক দিয়ে যাননি। বিষয়টি পুলিশের নজর এড়িয়ে গেছে। ফলে রাস্তায় কোনো পুলিশ না থাকায় কেউ এটা করে ফেলেছে। পুলিশ জানলে অবশ্যই তাদের নিরাপত্তা দিতো।
মির্জা ফখরুলের ওপর হামলা অন্যায় -ওবায়দুল কাদের: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওপর হামলা অন্যায় বলে মন্তব করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ গতকাল রবিবার রাজধানীতে বিমানবন্দর সড়কে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যে বা যারাই মির্জা ফখরুলের গাড়িবহরে হামলা করুক না কেন, সেটা অন্যায়। আওয়ামী লীগ এটা খতিয়ে দেখছে, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। চট্টগ্রামের ডিসি-এডিশনাল এসপির সঙ্গে কথা বলেছি। কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মির্জা ফখরুলের গাড়িবহরে হামলা : বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নিন্দা, বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে বহনকারী ত্রাণবাহী গাড়িবহরে হামলার প্রতিবাদ করেছে কয়েকটি রাজনৈতিক দল। গতকাল রবিবার দুপুরে তাৎক্ষণিক বিবৃতিতে জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, মির্জা ফখরুলের গাড়ি বহরের ওপর আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনার মধ্য দিয়ে তাদের ফ্যাসিবাদী চরিত্রই অত্যন্ত নগ্নভাবে ফুটে উঠেছে। গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ওপর নগ্ন হামলা কার্যত: গণতন্ত্র এবং মানুষের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর চরম আঘাত। এ থেকে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, সরকার পাহাড় ধসে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার প্রকৃত অবস্থা দেশবাসীকে জানতে দিতে চায় না। খেলাফত মজলিসের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেছেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ত্রাণবাহী গাড়িবহরে হামলা সরকারি দলের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। পার্বত্য এলাকায় পাহাড় ধসে মর্মান্তিক হতাহতের ঘটনায় সরকার বলতে গেলে নির্বিকার। রাঙ্গামাটির পরিস্থিতি ‘মহা বিপর্যয়কর’। বিপর্যস্ত জনপদের মানুষের পাশে দাঁড়াতে বর্তমান সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া তাদের প্রতিবাদে জানান, সরকার তাঁর ব্যর্থতা আড়াল করতে ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার কোনওরকম অপকৌশল গ্রহণ করবে না বলেই আমরা বিশ্বাস করতে চাই।সরকারের উচিত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের গাড়ির বহরে হামলার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক মো. আকরামুল হাসান বলেন, মানুষ কতটা জালিম হয় এই সরকারকে দেখলেই শুধু সেটা বোঝা যায়। পাহাড় ভেঙে মাটি চাপা পড়ে মানুষ মরে অথচ আওয়ামী লীগ নেত্রী যায় আনন্দ ভ্রমণে। তারা নিজেরা দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করে না এবং কাউকে সাহায্য করতে দিতেও চায় না।