ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

নির্বাচন কমিশন ও সুষ্ঠু নির্বাচন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:১৮:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ অক্টোবর ২০২১
  • / ৭১ বার পড়া হয়েছে

গল্পটি উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর। শিয়াল বড্ড চালাক দেখিয়া কুমির ভাবিল, তাহার সাতটি ছেলেকে শিয়ালের নিকট লেখাপড়া শিখাইতে পাঠানো যাক। পড়ানোর নামে শিয়াল প্রতিদিন কুমিরের একটি করিয়া বাচ্চা খাইয়া ফেলিত। আর কুমির বাচ্চা দেখিতে চাহিলে একই বাচ্চাকে শিয়াল ঘুরাইয়া-ফিরাইয়া দেখাইত। এমনি করিয়া শিয়াল যখন কুমিরের সাতটি বাচ্চাই খাইয়া ফেলিল, তখন সেইখান হইতে শিয়াল পালাইয়া গেল। পলায়নরত শিয়ালকে পাকড়াও করিয়া তাহার পা কামড়াইয়া ধরিল কুমির। শিয়াল বলিল, আমার লাঠিগাছা ধরিয়া কে টানাটানি করিতেছে রে? কুমির ভাবিল, তাই তো! পা ধরিতে গিয়া লাঠি ধরিতেছি কেন? শিগিগর লাঠি ছাড়িয়া পা ধরি! কুমির শিয়ালের পা ছাড়িয়া দিলে অমনি শিয়াল একলাফে পালাইয়া বনের ভিতরে ঢুকিয়া যায়।
এই গল্পের পর আমরা এখন সুষ্ঠু নির্বাচন লইয়া কিছু পর্যবেক্ষণ শেয়ার করিতে পারি। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। কিন্তু সেই নির্বাচন যখন আর নির্বাচন থাকে না, তখন মানুষ ইহার সমাধানের জন্য অনেক ধরনের পরামর্শ দিয়া থাকেন। যাহারা কোনো দিন ইউনিয়ন পর্যায়েও নির্বাচন করেন নাই, তাহারা কত ধরনের থিউরি ও বিজ্ঞ মতামত ব্যক্ত করেন। সুতরাং তাহাদের মতামতও হয় অন্ধ উইপোকাদের মতো। নিঃসন্দেহে তাহা হাস্যকর এবং বাস্তববিবর্জিত। লন্ডনভিত্তিক সাময়িকী ইকোনমিস্টের গবেষণা শাখা ‘ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট’ বলিতেছে, এশিয়ায় এমন অনেক দেশ রহিয়াছে যেইগুলি না-গণতান্ত্রিক, না-কর্তৃত্ববাদী। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এই ধরনের শাসনব্যবস্থাকে আখ্যায়িত করেন—‘হাইব্রিড রেজিম’ বা দো-আঁশলা শাসনব্যবস্থা হিসাবে। তৃতীয় বিশ্বের কথিত গণতান্ত্রিক অনেক দেশে ইহার নূতন নূতন রূপ দেখা যায়। এখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন যেহেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেহেতু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের বিষয়টিও অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ বলিয়া মনে করেন। কিন্তু একটি সুষ্ঠু নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনই কি যথেষ্ট? তৃতীয় বিশ্বের কিছু কিছু দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পূর্ণত নির্ভর করিয়া থাকে প্রশাসনের ওপর। এইখানে পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ধরা যাক একটি নির্বাচনি এলাকায় অর্ধশতাধিক ভোটকেন্দ্র রহিয়াছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ভোটার সংখ্যার অনুপাতে একাধিক বুথ থাকে। বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, আগস্ট ১৯, ২০০২-এ বলা হইয়াছে, রিটার্নিং অফিসার প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের জন্য ভোট গ্রহণের উদ্দেশ্যে একজন প্রিজাইডিং অফিসার এবং প্রিজাইডিং অফিসারকে সহায়তা করিবার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং পোলিং অফিসার নিয়োগ করিবেন। একটি কেন্দ্রে একজন প্রিজাইডিং অফিসার থাকেন, যিনি কোনো স্কুলের হেডমাস্টার কিংবা মাদ্রাসার সুপার পদমর্যাদার কেহ হইয়া থাকেন। সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার হন মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদমর্যাদার। প্রতিটি বুথে সাধারণত দুই জন পোলিং এজেন্ট থাকেন। ইহার পাশাপাশি নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রতিটি দলের প্রতিনিধিও থাকেন। তাহা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নানান স্তরের বাহিনী মোতায়েন এবং ক্ষেত্রবিশেষে সামরিক বাহিনীও কোথাও কোথাও মোতায়েন করা হয়। সুতরাং মেকানিজমটা হয় ইহার ভিতর দিয়াই। বিশ্বের স্বনামধন্য কিছু গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলিতেছে, নির্বাচন কারচুপির মেকানিজমটা তৃতীয় বিশ্বের কিছু দেশ খুব ভালোভাবে আয়ত্ত করিয়া ফেলিয়াছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

নির্বাচন কমিশন ও সুষ্ঠু নির্বাচন

আপলোড টাইম : ১১:১৮:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ অক্টোবর ২০২১

গল্পটি উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর। শিয়াল বড্ড চালাক দেখিয়া কুমির ভাবিল, তাহার সাতটি ছেলেকে শিয়ালের নিকট লেখাপড়া শিখাইতে পাঠানো যাক। পড়ানোর নামে শিয়াল প্রতিদিন কুমিরের একটি করিয়া বাচ্চা খাইয়া ফেলিত। আর কুমির বাচ্চা দেখিতে চাহিলে একই বাচ্চাকে শিয়াল ঘুরাইয়া-ফিরাইয়া দেখাইত। এমনি করিয়া শিয়াল যখন কুমিরের সাতটি বাচ্চাই খাইয়া ফেলিল, তখন সেইখান হইতে শিয়াল পালাইয়া গেল। পলায়নরত শিয়ালকে পাকড়াও করিয়া তাহার পা কামড়াইয়া ধরিল কুমির। শিয়াল বলিল, আমার লাঠিগাছা ধরিয়া কে টানাটানি করিতেছে রে? কুমির ভাবিল, তাই তো! পা ধরিতে গিয়া লাঠি ধরিতেছি কেন? শিগিগর লাঠি ছাড়িয়া পা ধরি! কুমির শিয়ালের পা ছাড়িয়া দিলে অমনি শিয়াল একলাফে পালাইয়া বনের ভিতরে ঢুকিয়া যায়।
এই গল্পের পর আমরা এখন সুষ্ঠু নির্বাচন লইয়া কিছু পর্যবেক্ষণ শেয়ার করিতে পারি। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। কিন্তু সেই নির্বাচন যখন আর নির্বাচন থাকে না, তখন মানুষ ইহার সমাধানের জন্য অনেক ধরনের পরামর্শ দিয়া থাকেন। যাহারা কোনো দিন ইউনিয়ন পর্যায়েও নির্বাচন করেন নাই, তাহারা কত ধরনের থিউরি ও বিজ্ঞ মতামত ব্যক্ত করেন। সুতরাং তাহাদের মতামতও হয় অন্ধ উইপোকাদের মতো। নিঃসন্দেহে তাহা হাস্যকর এবং বাস্তববিবর্জিত। লন্ডনভিত্তিক সাময়িকী ইকোনমিস্টের গবেষণা শাখা ‘ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট’ বলিতেছে, এশিয়ায় এমন অনেক দেশ রহিয়াছে যেইগুলি না-গণতান্ত্রিক, না-কর্তৃত্ববাদী। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এই ধরনের শাসনব্যবস্থাকে আখ্যায়িত করেন—‘হাইব্রিড রেজিম’ বা দো-আঁশলা শাসনব্যবস্থা হিসাবে। তৃতীয় বিশ্বের কথিত গণতান্ত্রিক অনেক দেশে ইহার নূতন নূতন রূপ দেখা যায়। এখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন যেহেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেহেতু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের বিষয়টিও অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ বলিয়া মনে করেন। কিন্তু একটি সুষ্ঠু নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনই কি যথেষ্ট? তৃতীয় বিশ্বের কিছু কিছু দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পূর্ণত নির্ভর করিয়া থাকে প্রশাসনের ওপর। এইখানে পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ধরা যাক একটি নির্বাচনি এলাকায় অর্ধশতাধিক ভোটকেন্দ্র রহিয়াছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ভোটার সংখ্যার অনুপাতে একাধিক বুথ থাকে। বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, আগস্ট ১৯, ২০০২-এ বলা হইয়াছে, রিটার্নিং অফিসার প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের জন্য ভোট গ্রহণের উদ্দেশ্যে একজন প্রিজাইডিং অফিসার এবং প্রিজাইডিং অফিসারকে সহায়তা করিবার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং পোলিং অফিসার নিয়োগ করিবেন। একটি কেন্দ্রে একজন প্রিজাইডিং অফিসার থাকেন, যিনি কোনো স্কুলের হেডমাস্টার কিংবা মাদ্রাসার সুপার পদমর্যাদার কেহ হইয়া থাকেন। সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার হন মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদমর্যাদার। প্রতিটি বুথে সাধারণত দুই জন পোলিং এজেন্ট থাকেন। ইহার পাশাপাশি নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রতিটি দলের প্রতিনিধিও থাকেন। তাহা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নানান স্তরের বাহিনী মোতায়েন এবং ক্ষেত্রবিশেষে সামরিক বাহিনীও কোথাও কোথাও মোতায়েন করা হয়। সুতরাং মেকানিজমটা হয় ইহার ভিতর দিয়াই। বিশ্বের স্বনামধন্য কিছু গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলিতেছে, নির্বাচন কারচুপির মেকানিজমটা তৃতীয় বিশ্বের কিছু দেশ খুব ভালোভাবে আয়ত্ত করিয়া ফেলিয়াছে।