ঝিনাইদহে মাটি কাটার শ’শ নারী শ্রমিকেরা বেতন পাচ্ছেন না
- আপলোড টাইম : ০৪:২২:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ জুন ২০১৭
- / ৩১৮ বার পড়া হয়েছে
ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহ জেলায় রাস্তার মাটি কাটায় নিয়োজিত ৬৭০ জন নারী শ্রমিক তিন মাস বেতন পাননি। তাঁদের অভিযোগ, বেশ কয়েক বছর তাঁরা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। দুই বছর হলো তাঁদের বেতন ঠিক সময়ে দেওয়া হয় না। এবার ঈদের আগে বেতন না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগে (এলজিইডি) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রুরাল এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড রোড মেইন্টেন্যান্স প্রোগ্রাম-২ (আরইআরএমপি-২) প্রকল্পের আওতায় ঝিনাইদহ জেলার ৬৭টি ইউনিয়নের ৬৭০ জন নারী শ্রমিক কাজ করছেন। প্রতিটি ইউনিয়নে ১০ জন করে নারী শ্রমিকের একটি গ্রুপ রয়েছে। তাঁদের গ্রুপ কমিটি করা আছে। যাঁর একজন সভাপতি ও একজন সম্পাদক আছেন। তাঁরাই সবকিছু দেখাশোনা করেন। আর তাঁদের কাজ দেখাশোনা করেন এলজিইডির সিও (কমিউনিটি অর্গানাইজার) ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তাঁদের কাজ গ্রামীণ রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ করা, রাস্তার পাশে মাটি দিয়ে ভাঙন রোধ করা এবং রাস্তার ধারের জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করা।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, ২০১৫ সালের নভেম্বরে দুই বছরের চুক্তিতে তাঁদের সর্বশেষ নিয়োগ দেওয়া হয়। আগামী নভেম্বরে তাঁদের মেয়াদ শেষ হবে। এরপর আবারও নিয়োগ হবে। ওই কর্মকর্তা জানান, এই নারীরা প্রতিদিন ১৫০ টাকা চুক্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন। মাস শেষে তাঁদের বেতন দেওয়ার কথা। প্রতি মাসে তাঁদের পাওনা হবে সাড়ে চার হাজার টাকা। এর মধ্যে দেড় হাজার টাকা জমা রাখা হয়। চুক্তির মেয়াদ শেষে এই টাকা দেওয়া হয়। আর কাজ চলা অবস্থায় প্রতি মাসের বেতন তিন হাজার টাকা মাস শেষে তাঁদের হাতে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু গত দুই বছর তাঁরা ঠিকমতো বেতন পাচ্ছেন না।
সদর উপজেলার পোগাহাটি ইউনিয়নের ষড়াবাড়িয়া গ্রামের রাস্তায় গিয়ে দেখা যায়, মমতাজ বেগমের নেতৃত্বে ১০ জন নারী কাজ করছেন। এলজিইডির খোয়া ফেলা একটি রাস্তার পাশে তাঁরা মাটি দিচ্ছেন। মমতাজ বেগম বলেন, স্বামী তাঁকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। দুই সন্তান নিয়ে বাবার সঙ্গে থাকেন। চার শতক জমি কিনে সেখানে মাটির ঘর আর টিনের ছাপড়া করে বসবাস করেন। এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ১১ বছরের ছেলে আকাশ অসচ্ছলতার কারণে পড়ালেখা ছেড়ে কাঠমিস্ত্রির কাজে নেমে পড়েছে। তিনি জানান, সকাল আটটা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত রাস্তায় মাটি কাটার কাজ করেন। মাস শেষে টাকা পেলে সংসার চলবে। কিন্তু চার মাস টাকা না পেলে তাঁরা কীভাবে বেঁচে থাকবেন? একই গ্রুপের সখিনা খাতুন বলেন, মাথা গোঁজার মতো কোনো জায়গা নেই তাঁর। বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের খালের ধারে সরকারি জায়গায় ঝুপড়ি ঘর বেঁধে বসবাস করেন। তাঁর চারজনের সংসার এই আয়ে চলে। কিন্তু বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
সদর উপজেলার কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের ধোপাবিলা রাস্তায় কাজ করা নারী সামছুন নাহার বলেন, তাঁর স্বামী মনির হোসেন আলমসাধু চালান। তিনি কিছু পয়সা উপার্জন করছেন, তাই বেঁচে আছেন। কিন্তু যাঁদের স্বামী নেই তাঁদের কষ্টের শেষ নেই। অনেকে ঠিকমতো খেতে না পেরে শরীরের শক্তি হারিয়ে ফেলছেন। তাঁরা ঈদের আগেই তাঁদের বকেয়া বেতনের দাবি জানিয়েছেন।
এব্যাপারে ওই প্রকল্পের পরিচালক সালমা শহীদ বলেন, প্রকল্পের টাকা ছাড় না হওয়ায় এই বেতন দেওয়া সম্ভব হয়নি। আশা করছেন ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে দিতে পারবেন।