মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল এখন নিজেই রোগী : দালালচক্রের হাতে বন্দি কর্মকর্তা-কর্মচারিরা : নামমাত্র ২৫০ শয্যার কার্যক্রম
- আপলোড টাইম : ০৪:১৭:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ জুন ২০১৭
- / ৫৪২ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে। লোকবলের অভাবে হাসপাতালটি এখন দিন দিন রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। তার উপর হাসপাতালের চিকিৎসাসেবাকে পুঁজি করে গড়ে উঠেছে দালালচক্র। হাসপাতালের কতিপয় কর্মচারীর সহযোগিতায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে এই দালালচক্র বলে অভিযোগও রয়েছে। হাসপাতালের ভর্তি রোগী বাইরের ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রায়ই দুই পক্ষের মধ্যে টানাটানির প্রতিযোগিতা এখন যেন চির চেনা দৃশ্য। বিভিন্ন ক্লিনিকের নিয়োজিত প্রায় ৩ডজন দালাল হাসপাতালের রোগীদের উন্নত চিকিৎসার নামে প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোয় ভাগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দালালদের দাপটের কাছে অসহায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিব্রতবোধ করা ছাড়া আর যেন কিছুই করার নেই।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল নামে ২৫০শয্যা বিশিষ্ট হলেও ১০০শয্যার কার্যক্রম চালু আছে। ফলে ১০০ বেডের লোকবল দিয়ে ২৫০ বেডের নামমাত্র চিকিৎসা সেবা চলছে। ফলে প্রতিনিয়ত রোগীদের পোহাতে হয় দূর্ভোগ। ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মঞ্জুরীকৃত রাজস্ব পদের সংখ্যা ২০৭ জন। আর উন্নয়ন খাতে ৭জন। রাজস্বখাতে শূন্যপদ রয়েছে ৬৭। চিকিৎসকের শূন্য পদও অনেক। এগুলো হলো সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারী), সিনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থো-সার্জারী), জুনিয়ার কনসালটেন্ট (প্যাথলোজি), জুনিয়ার কনসালটেন্ট (রেডিওলজি) ও জুনিয়ার কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন)। হাসপাতালটি ৫০ শয্যা থাকাকালীন ৪জন সুইপার পদ মঞ্জুরী ছিল। ১০০ শয্যায় উন্নীত হওয়ার পরও লোকবল একই রয়ে যায়। ফলে ২৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়ার পরও একই লোকবল দিয়ে চলছে গড়ে ৭০০ রোগীর পরিচ্ছনতার কাজ। এর মধ্যে আবার শূন্য রয়েছে ১টি পদ। পথ্য বাবদ বরাদ্দ বাড়েনি। ১০০ শয্যার বরাদ্দে চলছে ২৫০ শয্যার রোগীর খাবার সরবরাহ। এর মধ্যে বাড়তি ভর্তি রোগীতো রয়েছেই। হাসপাতালের জেনারেটর, এক্সরে মেশিন ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন দীর্ঘদিন অকেজো হয়ে পড়ে আছে। হাসপাতালের এমন হাজারো সমস্যা সমাধানের দিকে নজর না দিয়ে বিবাদমান দুটি পক্ষের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী পরস্পরের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। একপক্ষের প্ররোচনায় দালালদের সহায়তায় চিকিৎসাসেবা নিয়ে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে গত ১০ জুন হাসপাতালের আরএমও ডাক্তার এহসানকে লাঞ্ছিত করে একদল যুবক। সেবার মনোভাব নিয়ে এ হাসপাতালে দীর্ঘদিন চাকুরি করছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অফিস সহায়ক শাহ আলম। হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীদের সহযোগিতাও করেন তিনি। তার কাজে সংক্ষুব্ধ অসাধু কিছু কর্মচারি ও দালাল। সে কারনে বিভিন্নভাবে তার ক্ষতি করার চেষ্ট করছে দালালরা বলেও এই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শাহ আলম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন। এব্যাপারে হাসপাতাল চলাকালিন ডাক্তারের চেম্বারে দেখা হয়, ডাক্তার শরিফুল ইসলাম ও পৃথক চেম্বারে ডাক্তার লিপু সুলতান-এর সাথে। দালালচক্র সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ডা: শরিফুল বলেন, আমি ৩বছর হাসপাতালে কর্মরত আছেন। দালালচক্রদের প্রশাসনিকভাবে দমন করা জরুরী হয়ে পড়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দালালচক্রের কাছ এক প্রকার জিম্মি হয়ে রয়েছে বলে একাধিক রোগীদের কাছ থেকে জানা গেছে। হাসপাতালের সামনে ১২টি ওষুধের দোকান আছে। সেখানে দালালরা বসে থাকে। হাসপাতালে কোন রোগী আসলে চিলের দৃষ্টিতে দালালরা রোগীদের লক্ষ করে থাকে বলে অনেকে সাংবাদিকদের জানায়। রোগী ভর্তি হলে রোগীর ওষুধের তালিকা কতিপয় নার্স ও আয়ার মাধ্যমে দালালদের হাতে চলে যায় বলেও অভিযোগ রয়েছে। রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসার পরেই দালালদের তৎপরতা শুরু হয়। একপর্যায়ে হাসপাতালের কিছু কর্মচারীদের সহযোগীতায় বিভিন্ন ক্লিনিকে ভালো চিকিৎসা সেবা দেবার জন্য নিয়ে যাওয়ার অভিযোগও নতুন নয়। এর বিনিময়ে কতিপয় নার্স, আয়া ও কর্মচারীরা কমিশন পেয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মিজানুর রহমান জানান, ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের অবকাঠামোতে চলছে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের কার্যক্রম। ফলে রোগীদের ওষুধপত্র, চিকিৎসা সেবা, রোগীদের খাবার ও ময়লা পরিস্কারে ব্যাপক অসুবিধা হচ্ছে। এছাড়া বাইরে দালালদের চাপে হাসপাতালের কিছু কর্মচারী নাজেহালের শিকার হচ্ছে। ২৫০শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম চালু ও পদ মঞ্জুরী করলে চিকিৎসা সেবার মান আরো বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।