ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

রোহিঙ্গাদের ফোন ব্যবহার

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৩৭:০৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ অক্টোবর ২০২১
  • / ৭২ বার পড়া হয়েছে

রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নাগরিক নয়। মানবিক কারণে তাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। সঙ্গত কারণেই দেশের একজন নাগরিকের মতো সকল সুযোগ-সুবিধা তারা ভোগ করতে পারবে না। চাইলেই তাদের পাসপোর্ট কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার সুযোগ নেই। তারা ভোটাধিকারও প্রয়োগ করতে পারবে না। মানবিক কারণে অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে শিক্ষার সুযোগ দেয়া হলেও যেহেতু তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হচ্ছে না, তাই মোবাইল ফোনের সংযোগ পাওয়ারও কথা নয়। উদ্বাস্তু বা শরণার্থীরা আশ্রিত দেশের মোবাইল ফোন ব্যবহার করা আন্তর্জাতিক শরণার্থী আইনবহির্ভূত। এরপরও রোহিঙ্গারা দেশের ৩২টি আশ্রয় শিবিরে অন্তত সাত লাখ মোবাইল সিম ব্যবহার করছে বলে তথ্য রয়েছে। কিভাবে তারা মোবাইল ফোন সংযোগ পাচ্ছে, কিভাবে ব্যবহার করছে এই প্রশ্ন থেকেই যায়। সম্প্র্রতি রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যা ঘটনায় মোবাইল ফোনের ব্যবহার হওয়ার সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর প্রশ্নটি সামনে এসেছে।
সাধারণ রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরতে ইচ্ছুক। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানসহ কয়েকটি বিষয়ে সেই দেশের একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ। দেশটির নতুন সরকার গঠন হলে তাদের ফেরার পথ সুগম হতে পারত। এজন্য কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পে প্রতিটি ব্লকে কমিটি গঠন করেছিলেন মুহিবুল্লাহ। এই খবর জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন আল-ইয়াকিন (আরসা) ক্যাডাররা। মুহিবুল্লাহকে অজ্ঞাত স্থান থেকে মোবাইল ফোনে অডিও বার্তা পাঠিয়ে এই কার্যক্রম থেকে ফিরে আসার হুমকি দেয়া হয়। তারপরও সাধারণ রোহিঙ্গাদের স্বার্থে নিজ দেশে মিয়ানমারে ফিরে যেতে অটল থাকেন তিনি। গত বুধবার লম্বাশিয়া এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান না থাকায় টহলে যায়নি পুলিশ। এ খবর মোবাইল ফোনে পৌঁছে যায় আরসা কমান্ডারের কাছে। সন্ত্রাসীরা লম্বাশিয়া ক্যাম্পে অবস্থান নেয় এবং নিজের কার্যালয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠক করার সময় হত্যা করে মুহিবুল্লাহকে। ইতোপূর্বে সন্ত্রাসীদের গুলিতে উখিয়া টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে ডজনের বেশি রোহিঙ্গা নেতার মৃত্যু হয়েছে। সব হত্যাকান্ডই ঘটানো হয় মোবাইল ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে প্রস্তুতি নিয়ে। অনেক রোহিঙ্গা অপহরণ, মানবপাচার, মাদক কারবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। নিজেদের মধ্যে মারামারি ও দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে আশ্রয় শিবিরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছে তারা। মিয়ানমারে ফিরতে চাইলেই তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। উদ্ধার করতে হলে দিতে হয় মুক্তিপণ। না হলে খুন করা হয়। সকল কর্মকা-ই চলে মোবাইল ফোনে নির্দেশের মাধ্যমে। ভারতের আশ্রয় শিবিরেও রয়েছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। ইউএনএইচসিআর ওই রোহিঙ্গাদের দেখভাল করছে। ওইসব ক্যাম্পে মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ। সরকারের অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের ৩২টি আশ্রয় শিবিরে রোহিঙ্গারা লাখ লাখ বাংলাদেশী মোবাইল সিম ব্যবহার করছে। তারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গোপন তথ্য বিদেশে পাচার করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। আশ্রয় শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গাদের মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলে একদিকে আশ্রয় শিবিরগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে, অন্যদিকে দেশের গোপনীয়তা বিদেশে পাচার রোধ সম্ভব হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

রোহিঙ্গাদের ফোন ব্যবহার

আপলোড টাইম : ০৮:৩৭:০৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ অক্টোবর ২০২১

রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নাগরিক নয়। মানবিক কারণে তাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। সঙ্গত কারণেই দেশের একজন নাগরিকের মতো সকল সুযোগ-সুবিধা তারা ভোগ করতে পারবে না। চাইলেই তাদের পাসপোর্ট কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার সুযোগ নেই। তারা ভোটাধিকারও প্রয়োগ করতে পারবে না। মানবিক কারণে অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে শিক্ষার সুযোগ দেয়া হলেও যেহেতু তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হচ্ছে না, তাই মোবাইল ফোনের সংযোগ পাওয়ারও কথা নয়। উদ্বাস্তু বা শরণার্থীরা আশ্রিত দেশের মোবাইল ফোন ব্যবহার করা আন্তর্জাতিক শরণার্থী আইনবহির্ভূত। এরপরও রোহিঙ্গারা দেশের ৩২টি আশ্রয় শিবিরে অন্তত সাত লাখ মোবাইল সিম ব্যবহার করছে বলে তথ্য রয়েছে। কিভাবে তারা মোবাইল ফোন সংযোগ পাচ্ছে, কিভাবে ব্যবহার করছে এই প্রশ্ন থেকেই যায়। সম্প্র্রতি রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যা ঘটনায় মোবাইল ফোনের ব্যবহার হওয়ার সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর প্রশ্নটি সামনে এসেছে।
সাধারণ রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরতে ইচ্ছুক। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানসহ কয়েকটি বিষয়ে সেই দেশের একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ। দেশটির নতুন সরকার গঠন হলে তাদের ফেরার পথ সুগম হতে পারত। এজন্য কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পে প্রতিটি ব্লকে কমিটি গঠন করেছিলেন মুহিবুল্লাহ। এই খবর জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন আল-ইয়াকিন (আরসা) ক্যাডাররা। মুহিবুল্লাহকে অজ্ঞাত স্থান থেকে মোবাইল ফোনে অডিও বার্তা পাঠিয়ে এই কার্যক্রম থেকে ফিরে আসার হুমকি দেয়া হয়। তারপরও সাধারণ রোহিঙ্গাদের স্বার্থে নিজ দেশে মিয়ানমারে ফিরে যেতে অটল থাকেন তিনি। গত বুধবার লম্বাশিয়া এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান না থাকায় টহলে যায়নি পুলিশ। এ খবর মোবাইল ফোনে পৌঁছে যায় আরসা কমান্ডারের কাছে। সন্ত্রাসীরা লম্বাশিয়া ক্যাম্পে অবস্থান নেয় এবং নিজের কার্যালয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠক করার সময় হত্যা করে মুহিবুল্লাহকে। ইতোপূর্বে সন্ত্রাসীদের গুলিতে উখিয়া টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে ডজনের বেশি রোহিঙ্গা নেতার মৃত্যু হয়েছে। সব হত্যাকান্ডই ঘটানো হয় মোবাইল ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে প্রস্তুতি নিয়ে। অনেক রোহিঙ্গা অপহরণ, মানবপাচার, মাদক কারবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। নিজেদের মধ্যে মারামারি ও দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে আশ্রয় শিবিরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছে তারা। মিয়ানমারে ফিরতে চাইলেই তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। উদ্ধার করতে হলে দিতে হয় মুক্তিপণ। না হলে খুন করা হয়। সকল কর্মকা-ই চলে মোবাইল ফোনে নির্দেশের মাধ্যমে। ভারতের আশ্রয় শিবিরেও রয়েছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। ইউএনএইচসিআর ওই রোহিঙ্গাদের দেখভাল করছে। ওইসব ক্যাম্পে মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ। সরকারের অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের ৩২টি আশ্রয় শিবিরে রোহিঙ্গারা লাখ লাখ বাংলাদেশী মোবাইল সিম ব্যবহার করছে। তারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গোপন তথ্য বিদেশে পাচার করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। আশ্রয় শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গাদের মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলে একদিকে আশ্রয় শিবিরগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে, অন্যদিকে দেশের গোপনীয়তা বিদেশে পাচার রোধ সম্ভব হবে।