চুয়াডাঙ্গায় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের লাঞ্চিতের ঘটনা: হুইপ ও ডিসি’র সাথে ব্যবসায়ীদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক
- আপলোড টাইম : ০৫:৩২:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ জুন ২০১৭
- / ৪১০ বার পড়া হয়েছে
চুয়াডাঙ্গায় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের লাঞ্চিতের ঘটনা: হুইপ ও ডিসি’র সাথে ব্যবসায়ীদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক
অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট সাময়িক স্থগিত: এসপি অপসারণের দাবিতে অনড় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ
দু’দিনের ধর্মঘটে ঈদের বিকিকিনিতে ভোগান্তিতে সাধারণ ক্রেতারা: দাবি আদায় না হলে ঈদের পর কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী
নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গা রেলবাজারে ভ্রাম্যমান আদালতে দু’ব্যবসায়ীকে জরিমানা করার ঘটনায় সৃষ্ট উত্তেজনা সামাল দিতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের মারপিট ও দোকান মালিক সমিতির সভাপতি-সম্পাদককে শারিরীক ভাবে লাঞ্চিত করার ঘটনায় পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দীনের অপসারণের দাবিতে জেলা দোকান মালিক সমিতির অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল বিকাল ৪টার দিকে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ও জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদের সাথে আধা ঘন্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় ব্যবসায়ীরা। হুইপ ছেলুন জোয়ার্দ্দার এমপি’র বাসভবনে আয়োজিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা শিল্প ও বনিক সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহারিন মালিক, জেলা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আসাদুল হোসেন জোয়ার্দ্দার লেমন, সাধারণ সম্পাদক ইবরুল হাসান জোয়ার্দ্দার ইবু, সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল কাদের জগলু, সহ-সভাপতি শাহাবুদ্দিন মালিক, যুগ্ম সম্পাদক সেলিম রেজা, জেলা পরিবেশক সমিতির সভাপতি হাজী সালাউদ্দিন চান্নু, বড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফী উদ্দিন আহম্মেদ।
বৈঠক শেষে হুইপ ছেলুন জোয়ার্দ্দার এমপি এ প্রতিবেদককে বলেন, ডিসি সাহেব, আমি এবং এডিসি(রাজস্ব)কে সাথে নিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে বসেছিলাম। খুব সুন্দর, সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে তাদের কথা ও দাবি দাওয়া শুনেছি। পবিত্র রমজানের এই মাসে দোকানপাট যদি সব বন্ধ থাকে তাহলে সকলের অসুবিধা হবে। এ ছাড়াও সাধারণ মানুষ যাতে ভোগান্তির শিকার না হয় সে কথা চিন্তা করে ব্যবসায়ী যারা এখানে উপস্থিত ছিলো সকলের সর্বসম্মতিক্রমে এখন, এই মূহুর্ত থেকে দোকানপাট বন্ধের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেবেন। আমি তাদের বলেছি, ঈদের বাজার, আপাতত দোকানপাট খুলে দেবেন। বাকী আপনাদের যে চাহিদা, দাবি-দাওয়া আছে, তা আমি আর ডিসি সাহেব ঠিক করে দেবো। পরে বলবো কী করতে হবে আর কী করতে হবে না।
এ ব্যাপারে দোকান মালিক সমিতির সভাপতি বলেন, হুইপ সাহেবের সাথে আলোচনার মাধ্যমে আমরা ব্যবসায়ীরা আশ্বস্ত হয়ে আমাদের আন্দোলন ধর্মঘট কর্মসূচী সাময়িক স্থগিত করেছি। তবে দাবি আদায়ে আমরা অনড় অবস্থানেই আছি। সাধারণ ভোক্তাদের কথা চিন্তা করে ঈদ সামনে রেখে দোকানপাট খোলার নির্দেশ দিয়েছি। তবে দাবি আদায় না হলে ঈদের পর বৃহত্তর কর্মসূচী নেয়া হবে।
সাধারণ সম্পাদক ইবরুল হাসান জোয়ার্দ্দার ইবু এ প্রতিবেদককে বলেন, হুইপ মহোদয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে উনার সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দোকান মালিক সমিতির সদস্যদের নিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের উপস্থিতিতে আমাদের দাবি সমূহ উনার সম্মুখে তুলে ধরা হয়। যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল তা যুক্তি তর্কের মাধ্যেমে সমন্বয় করেছি। এসপি অপসারণের দাবিটি আমরা জোরালো ভাবে তুলে ধরেছি। সে জায়গায় হুইপ মহোদয় এবং জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে- ‘এসপি অপসারণের দাবিটি আমরা মাথায় রাখলাম’। সামনে ঈদ ভোক্তা সাধারনের কথা মাথায় রেখে, হুইপ মহোদয়ের কথায় আশ্বস্ত হয়ে ফলপ্রসু আলোচনার ফলেই আমরা এই মূহুর্ত থেকে দোকানপাট খুলে দিচ্ছি। তবে এসপি অপসারণের দাবিটি যদি মাথায় না নেয় তাহলে ঈদের পর আলোচনার মাধ্যমে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবো।
এর আগে সকাল ১১টার পর থেকে শহরের সকল দোকান-পাট বন্ধ করে ধর্মঘট পালন করে সব শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা। বেলা সাড়ে ১১টায় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে “চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের রেল বাজার-এ দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার সময় পুলিশ সুপার কর্তৃক জেলা দোকান মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও সভাপতিকে শারীরিকভাবে আঘাত ও লাঞ্চিত করার প্রতিবাদে অযোগ্য পুলিশ সুপার দাবি করে তাঁর অপসারণ পূর্বক ন্যায় বিচারের দাবিতে” সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইবরুল হাসান জোয়ার্দ্দার ইবু। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সভাপতি আসাদুল হোসেন জোয়ার্দ্দার লেমনসহ সকল পর্যায়ের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।
এদিকে গতকাল রাতে জেলা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য, জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুর রাজ্জাকের সাথে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ও পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপুর অনুরোধক্রমে পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে ক্রেতা সাধারণের কথা চিন্তা করে সঠিক বিচার ও পুলিশ সুপারের অপসারণের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে সাময়িক ভাবে আন্দোলনের কর্মসূচী স্থগিত করা হলো।
অপরদিকে গত রবিবার ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনাকালে সৃষ্ট ঘটনা থেকে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়ে ভোক্তারা। অনেককে বাজারে এসে খালি ব্যাগ হাতে নিয়েই বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। গত দু’দিন ব্যবসায়ীদের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকায় পাইকারী ও খুচরা মুদি দোকান, চাউলের দোকান, কাঁচা বাজার, মাছ বাজার, হার্ডওয়ার সামগ্রির দোকান, হোটেল, রেস্তোরা, বেকারী, খাবারের দোকান, চায়ের দোকানসহ বেশ কয়েকটি ঔষধের দোকানও বন্ধ থাকতে দেখা যায়। এ ছাড়াও চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের সমবায় নিউ মার্কেট, প্রিন্স প্লাজা, পুরাতন গলি, রেলবাজারের সাহাবুদ্দিন মার্কেটসহ সমস্ত বিপণীবিতান বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা ধর্মঘট পালন করায় ঈদের বিকিকিনিতে নিদারুণ সমস্যায় পড়েন ক্রেতারা। এ ছাড়াও বন্ধ ছিলো শহরের ফাতেমা প্লাজা, আলী হোসেন সুপার মার্কেটসহ সকল প্রকার মোবাইল, কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রির দোকান গুলিও। এতেই শহরবাসীদের দীর্ঘশ্বাস পড়ে যায়। অনেকের ধারণা জন্মে ‘শান্তিপূর্ণ ভাবে এবারের ঈদ বাজার আর করা হলো না’। শেষ পর্যন্ত জাতীয় সংসদের হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, এমপি, জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুর রাজ্জাক এবং দোকান মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দদের মধ্যেকার ফলপ্রসূ আলোচনায় সাময়িক হলেও সমাধান পায় জেলাবাসী।