আর্থিক প্রতারণা গ্রাস করেছে চার দিক
- আপলোড টাইম : ০৯:১০:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১
- / ৯২ বার পড়া হয়েছে
মূল্যবোধের অবক্ষয় চূড়ান্ত
রাতারাতি ধনী হওয়ার লিপ্সা বাংলাদেশে এখন গণরোগ হয়ে উঠেছে। জনসাধারণের বড় একটি অংশের মধ্যে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ায় সমাজে দেখা দিচ্ছে বড় ধরনের অস্থিরতা। প্রায় প্রতিদিন এমন খবর পাওয়া যাচ্ছেÑ প্রতারণা করে লুটে নেয়া হচ্ছে সাধারণ মানুষের অর্থ। সমাজের সব শ্রেণিপেশার মধ্যে এই লোভীদের অবাধ বিচরণ। তারা নিজেদের সম্প্রদায়গত পরিচয় ব্যবহার করছে নিছক বড়লোক হওয়ার সিঁড়ি হিসেবে। সহযোগী একটি দৈনিকের খবর অনুযায়ী, একজন শিক্ষক, তিনি একজন নারী, ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। এর পেছনে কাজ করছে মানুষের নৈতিক অবস্থানের পতন। প্রায় সবাই আর্থিক লাভের পেছনে ছুটছে। মাল্টিলেভেল মার্কেটিং তথা এমএলএম কোম্পানি খুলে অনেকে বড় দান মেরে চলে গেছে।
শিক্ষিকা সীমা আক্তারের বাড়ি পাবনা জেলা শহরের আটুয়া হাউজপাড়া মহল্লায়। শিক্ষকতা করেন স্থানীয় পাবনা পুলিশ লাইন্স স্কুলে। খবরে জানা যাচ্ছে, শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি গরু-ছাগলের খামার চালানোসহ বিভিন্ন ব্যবসার কথা বলতেন। এসব ব্যবসায় টাকা খাটানোর জন্য মানুষকে প্রলুব্ধ করতেন। শিক্ষক পরিচিতির কারণে মানুষ তার ওপর আস্থা পেয়েছে। যদিও সংবাদে এ ব্যাপারে উল্লেøখ নেই। তবে অনুমান করা অসঙ্গত হবে না। কারণ এ ধরনের পরিচিতি মানুষকে আস্থাবান করার জন্য টনিক হিসেবে কাজ করে। দেশে এমন প্রতারণার অসংখ্য ঘটনায় এই টেকনিক ব্যবহার করতে দেখা গেছে। সীমা প্রথমে লগ্নি করা অর্থের বিপরীতে বেশি সুদ দিতেন। এতে করে মানুষ আরো বেশি আগ্রহী হতো। এভাবে লগ্নি যখন ১০ কোটি টাকা হয় তখন তিনি উধাও হয়ে যান। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশ তাকে খুঁজে পেয়ে আটক করেছে। অন্য দিকে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে অব্যাহতি দিয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, সময়মতো কেউ পদক্ষেপ নেয় না। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর এমন পদক্ষেপ কোনো কাজে আসে না।
এই নারী মানুষের অর্থ নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলছেন, এগুলো তাদের ফেরত দেবেন। এ ধরনের ঘটনায় সাধারণত লগ্নিকারীরা তাদের অর্থ ফেরত পান না। সীমাও হয়তো একসময় মামলা থেকে রেহাই পেয়ে যাবেন; কিন্তু সারা দেশে সীমাদের মতো অসংখ্য প্রতারক সক্রিয়। তারা অনেককে নিঃস্ব করে দিচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সমবায় ব্যাংক ও মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের নামে অনেক কেলেঙ্কারি হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে লোভনীয় অফার দেয়া হয়। তাদের ব্যাংক রেটের চেয়ে বেশি সুদের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। এর সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে ই-কমার্সের ধারণা। তারা অনেক কম মূল্যে পণ্য কেনার প্যাকেজ দেয়। ইভেলি, ই-অরেঞ্জ এগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ। কেন্দ্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ’র তদন্তে অনেক কোম্পানির নাম পাওয়া যাচ্ছে, যারা শত শত কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে।
প্রতারণা থেকে বাঁচাতে ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি বা অর্থবিষয়ক জ্ঞান বাড়ানোর প্রচারণার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, লগ্নিকারীরা যদি প্রতিষ্ঠানের অর্থিক অবস্থা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখেন তাহলে কেউ তাদেরকে প্রতারিত করতে পারবে না। আমরা যদি সীমার ঘটনাটি তলিয়ে দেখি তাহলে বোঝা যাবে, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ সারা দেশের মানুষের জন্য প্রযোজ্য নয়। উচ্চমধ্যবিত্ত ও শহুরে মানুষ হয়তো প্রচারণার মাধ্যমে কিছুটা সতর্ক হবে; কিন্তু সীমাদের মতো সারা দেশে যে হাজার হাজার প্রতারক আছে তাদের কিভাবে রোধ করা যাবে। তার চেয়েও বড় বিষয়, ছড়িয়ে পড়া লোভের সংস্কৃতি। মূল্যবোধের অবক্ষয় এখানে বড় ভূমিকা রাখছে। মানুষের লকলকে লোভের সুযোগ নেয় প্রতারকরা। এর সবচেয়ে বড় সমাধান হতে পারে জাতীয় মূল্যবোধের গঠন। ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’ এই নৈতিক শিক্ষাই হতে পারে সমস্যার সমাধান।