ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

ফোনে আড়িপাতা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:০১:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / ৮১ বার পড়া হয়েছে

নাগরিক অধিকার খর্ব হচ্ছে পদে পদে
নাগরিকদের ব্যক্তিগত ফোনে আড়িপাতা, ফোনালাপ রেকর্ড করা, সেগুলো মিডিয়ায় সরবরাহ এবং প্রকাশের বহু ঘটনা বাংলাদেশে প্রায়ই ঘটছে। এমনকি দেশের শীর্ষ রাজনীতিকদের ফোনালাপও রেকর্ড করে মিডিয়াকে দিয়ে ফাঁস করানোর ঘটনা ঘটেছে এ দেশে। অথচ এটি বেআইনি এবং ব্যক্তির মানবাধিকারের লঙ্ঘন। কাজটি যে-ই করে থাকুক সে বা তারা সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। যে মিডিয়া এগুলো প্রকাশ করেছে তারাও একইভাবে অন্যায় করেছে এবং সমান দোষী। সম্প্রতি এক রিট আবেদনের শুনানিতে সর্বোচ্চ আদালত এ বিষয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। তাতে আদালত বলেছেন, ব্যক্তিগত বিষয়গুলোতে আড়িপাতা যেমন ঠিক নয়, তেমনি মিডিয়া যেভাবে প্রচার করে সেটিও ঠিক নয়। এ জন্য সাংবাদিক, বিটিআরসিসহ সবারই সজাগ থাকা দরকার। এই ফোনালাপ কারা রেকর্ড করে সেই প্রশ্ন তুলে আদালত বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে যেকোনো এক পক্ষ করে থাকতে পারে, তৃতীয় পক্ষও করতে পারে। ‘তৃতীয়’ পক্ষের কী লাভ, মনে হয় বিটিআরসির এটা দেখা দরকার।
ফোনালাপের কথোপকথন মিডিয়ায় প্রকাশ করা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বলেও উল্লেখ করেন আদালত। এ বিষয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর আদেশ দেবেন আদালত। তাই এ নিয়ে বিস্তারিত মন্তব্যের অবকাশ নেই। তবে এই একই বিষয় নিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতেও তোলপাড় চলছে। সেখানেও বেআইনিভাবে ফোনালাপ রেকর্ড করার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে।
সম্প্রতি ইসরাইলি আড়িপাতার প্রযুক্তি ‘পেগাসাস’ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন দেশের সরকারের বিরুদ্ধে। ভারতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকের ফোনে আড়িপাতার অভিযোগ ওঠে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা আদালতের শরণাপন্ন হন এবং উচ্চ আদালত ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে কি না সে বিষয়ে সরকারকে হলফনামা দেয়ার নির্দেশ দেন। বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে সমস্যার মূলে হাত দিয়েছে। সর্বশেষ খবর হলো, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাত তুলে হলফনামা দিতে অস্বীকার করেছে; কিন্তু উচ্চ আদালত তা গ্রহণযোগ্য মনে করেননি।
ভারতের প্রধান বিচারপতিসহ অন্য বিচারপতিরা জোর দিয়ে বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হোক এমন কোনো তথ্য জানাতে তারা সরকারকে বাধ্য করছেন না। তারা শুধু জানতে চান, ‘সরকারের বিরুদ্ধে বহু গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক যে অভিযোগ এনেছেন, তা সত্য কি না; ওই নাগরিকদের ফোনে আড়িপাততে সরকার প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েছে কি না এবং নিয়ে থাকলে তা দেশের আইন ও নিয়মবহির্ভূত কি না। নিরাপত্তার বিষয়ে সরকারকে কোনো রকম আপস করার কথা তারা বলছেন না।’
সরকারি পক্ষের প্রধান কৌঁসুলি বা সলিসিটর জেনারেল আদালতকে জানান, সরকার বেআইনি কিছু করেনি। তবে তিনি জানান, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করার জন্য সরকার একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনে প্রস্তুত আছে। সেই প্রস্তাবও নাকচ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, কমিটি গঠনের বিষয় এখন বিবেচ্য নয়। বিবেচ্য, সরকার হলফনামা দেবে কি না। গত এক মাস ধরে ভারতে এই বিষয়টি নিয়ে আইন-আদালত চলছে এবং সরকার রীতিমতো চাপের মধ্যে পড়েছে। সংখ্যালঘুর স্বার্থ জড়িত এমন কোনো কোনো প্রশ্নে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ন্যায়ের পক্ষে অটল থাকার ক্ষেত্রে অনেকটাই ব্যত্যয় দেখা গেছে সাম্প্রতিক অতীতে; কিন্তু নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ইত্যাদি প্রশ্নে তাদের যে অনড় অবস্থান তার তুলনা বিরল। সে দিক থেকে ফোনে আড়িপাতার এই অভিযোগ আরেকটি দৃষ্টান্ত হতে যাচ্ছে বলেই মনে হয়। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট যদি সরকারকে হলফনামা দিতে বাধ্য করতে পারেন তাহলে সেটি ওই দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় অন্যতম মাইলফলক হয়ে থাকবে নিঃসন্দেহে। আমাদের দেশে সেই দৃঢ়তা অতটা নেই বলে জনগণ মনে করে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

ফোনে আড়িপাতা

আপলোড টাইম : ০৯:০১:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

নাগরিক অধিকার খর্ব হচ্ছে পদে পদে
নাগরিকদের ব্যক্তিগত ফোনে আড়িপাতা, ফোনালাপ রেকর্ড করা, সেগুলো মিডিয়ায় সরবরাহ এবং প্রকাশের বহু ঘটনা বাংলাদেশে প্রায়ই ঘটছে। এমনকি দেশের শীর্ষ রাজনীতিকদের ফোনালাপও রেকর্ড করে মিডিয়াকে দিয়ে ফাঁস করানোর ঘটনা ঘটেছে এ দেশে। অথচ এটি বেআইনি এবং ব্যক্তির মানবাধিকারের লঙ্ঘন। কাজটি যে-ই করে থাকুক সে বা তারা সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। যে মিডিয়া এগুলো প্রকাশ করেছে তারাও একইভাবে অন্যায় করেছে এবং সমান দোষী। সম্প্রতি এক রিট আবেদনের শুনানিতে সর্বোচ্চ আদালত এ বিষয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। তাতে আদালত বলেছেন, ব্যক্তিগত বিষয়গুলোতে আড়িপাতা যেমন ঠিক নয়, তেমনি মিডিয়া যেভাবে প্রচার করে সেটিও ঠিক নয়। এ জন্য সাংবাদিক, বিটিআরসিসহ সবারই সজাগ থাকা দরকার। এই ফোনালাপ কারা রেকর্ড করে সেই প্রশ্ন তুলে আদালত বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে যেকোনো এক পক্ষ করে থাকতে পারে, তৃতীয় পক্ষও করতে পারে। ‘তৃতীয়’ পক্ষের কী লাভ, মনে হয় বিটিআরসির এটা দেখা দরকার।
ফোনালাপের কথোপকথন মিডিয়ায় প্রকাশ করা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বলেও উল্লেখ করেন আদালত। এ বিষয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর আদেশ দেবেন আদালত। তাই এ নিয়ে বিস্তারিত মন্তব্যের অবকাশ নেই। তবে এই একই বিষয় নিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতেও তোলপাড় চলছে। সেখানেও বেআইনিভাবে ফোনালাপ রেকর্ড করার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে।
সম্প্রতি ইসরাইলি আড়িপাতার প্রযুক্তি ‘পেগাসাস’ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন দেশের সরকারের বিরুদ্ধে। ভারতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকের ফোনে আড়িপাতার অভিযোগ ওঠে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা আদালতের শরণাপন্ন হন এবং উচ্চ আদালত ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে কি না সে বিষয়ে সরকারকে হলফনামা দেয়ার নির্দেশ দেন। বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে সমস্যার মূলে হাত দিয়েছে। সর্বশেষ খবর হলো, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাত তুলে হলফনামা দিতে অস্বীকার করেছে; কিন্তু উচ্চ আদালত তা গ্রহণযোগ্য মনে করেননি।
ভারতের প্রধান বিচারপতিসহ অন্য বিচারপতিরা জোর দিয়ে বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হোক এমন কোনো তথ্য জানাতে তারা সরকারকে বাধ্য করছেন না। তারা শুধু জানতে চান, ‘সরকারের বিরুদ্ধে বহু গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক যে অভিযোগ এনেছেন, তা সত্য কি না; ওই নাগরিকদের ফোনে আড়িপাততে সরকার প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েছে কি না এবং নিয়ে থাকলে তা দেশের আইন ও নিয়মবহির্ভূত কি না। নিরাপত্তার বিষয়ে সরকারকে কোনো রকম আপস করার কথা তারা বলছেন না।’
সরকারি পক্ষের প্রধান কৌঁসুলি বা সলিসিটর জেনারেল আদালতকে জানান, সরকার বেআইনি কিছু করেনি। তবে তিনি জানান, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করার জন্য সরকার একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনে প্রস্তুত আছে। সেই প্রস্তাবও নাকচ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, কমিটি গঠনের বিষয় এখন বিবেচ্য নয়। বিবেচ্য, সরকার হলফনামা দেবে কি না। গত এক মাস ধরে ভারতে এই বিষয়টি নিয়ে আইন-আদালত চলছে এবং সরকার রীতিমতো চাপের মধ্যে পড়েছে। সংখ্যালঘুর স্বার্থ জড়িত এমন কোনো কোনো প্রশ্নে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ন্যায়ের পক্ষে অটল থাকার ক্ষেত্রে অনেকটাই ব্যত্যয় দেখা গেছে সাম্প্রতিক অতীতে; কিন্তু নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ইত্যাদি প্রশ্নে তাদের যে অনড় অবস্থান তার তুলনা বিরল। সে দিক থেকে ফোনে আড়িপাতার এই অভিযোগ আরেকটি দৃষ্টান্ত হতে যাচ্ছে বলেই মনে হয়। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট যদি সরকারকে হলফনামা দিতে বাধ্য করতে পারেন তাহলে সেটি ওই দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় অন্যতম মাইলফলক হয়ে থাকবে নিঃসন্দেহে। আমাদের দেশে সেই দৃঢ়তা অতটা নেই বলে জনগণ মনে করে।