আফগানিস্তানে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন
- আপলোড টাইম : ০৮:৩৭:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১
- / ১০১ বার পড়া হয়েছে
সঙ্কট মোকাবিলায় সহযোগিতাই কাম্য
অবশেষে আফগানিস্তানে বিজয়ী তালেবান তাদের অন্তর্র্বতী সরকারের দায়িত্বশীলদের পূর্ণ নামের তালিকা ঘোষণা করেছে। প্রধানমন্ত্রী করা হয়েছে মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দকে। তিনি শুরুতে একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আক্রমণকারী যুক্তরাষ্ট্র ও তার সাথে সহযোগিতাকারী আফগান নগারিকদের ক্ষমা করে দেয়ার ঘোষণা পুনরায় ব্যক্ত করেছেন। কাবুল দখল করার পর কোনো ধরনের রক্তপাত না হওয়ার প্রধান কারণ, তালেবানের ক্ষমার নীতি। এই ধরনের মনোভাব পোষণের কারণ, তারা পুরো জাতির মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করে জাতি গঠন করতে চান। এ দিকে তালেবানের অস্থায়ী সরকারের সাথে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে প্রতিবেশী চীন ও উজবেকিস্তান। নতুন সরকার নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে রাশিয়াও। অন্য দিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র এ সরকারকে অনুমোদন করেনি। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, কাজের মূল্যায়নের ওপর নির্ভর করবে তালেবান সরকারের স্বীকৃতির বিষয়।
যুক্তরাষ্ট্র ২০০১ সালে আফগানিস্তান আক্রমণের সময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল তালেবান। শত শত জঙ্গিবিমান হাজার হাজার টন বোমা ফেলে কাবুলকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। আগ্রাসী বাহিনীর সাথে সামরিক শক্তির বিশাল ব্যবধান সত্ত্বেও তালেবান তখন তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেনি। তারা কৌশলগত পশ্চাৎপসরণ করেছিল। দীর্ঘ যুদ্ধের মধ্যে ন্যাটো বাহিনীর আক্রমণে তালেবানের কয়েক হাজার যোদ্ধাসহ লক্ষাধিক আফগান নাগরিক প্রাণ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তিমত্তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল তালেবান। তাই তারা ফিরে যাওয়ার সময় চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছিল তালেবানের সাথে। শেষ সময়ে তালেবান দ্রুত আফগানিস্তানের ওপর পূর্ণ কর্তৃত্ব কায়েম করেছে। তাতে প্রমাণিত হয়েছে তালেবানের প্রতি সমগ্র দেশের মানুষের বিপুল সমর্থন রয়েছে। এ অবস্থায় তাদের নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী সরকার গঠন করাই স্বাভাবিক বিষয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে শান্তি ফিরিয়ে এনে পুনর্গঠন একটি কঠিন কাজ। সেই লক্ষ্যে তারা বাছাই করে ৩৩ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন করেছে।
মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে সংবাদমাধ্যম উৎসাহী খবর দিচ্ছে। এসব প্রতিবেদনের দৃষ্টিভঙ্গি খবর জানানো নয়, যেন ‘বিদ্বেষ’ পোষণ করা। আফগানিস্তানে স্কুল-কলেজ কিভাবে চলবে, তাদের নারী ও পুরুষ নীতি কী হবেÑ এগুলো তাদের নিজস্ব বিষয়। আমেরিকা যেসব বিষয় চাপিয়ে দেয়ার জন্য সেখানে লক্ষাধিক মানুষ হত্যা করেছিল সেগুলো আফগানিস্তানের মানুষ মেনে নেয়নি। এখন যুক্তরাষ্ট্র সেখানে পরাজিত শক্তি। অনেক খবর পড়লে মনে হবে, যুক্তরাষ্ট্র যাদের সন্ত্রাসী মনে করে কিংবা যাদের সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করেছে তাদের মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়ে তালেবান মহা ভুল করেছে। এমন প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ‘তালেবান’ পুরো সংগঠনটিই তো যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী তালিকায় ছিল। এখন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এমনকি গুয়ানতানামো বে কারাগারে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন, এমন পাঁচজন এ মন্ত্রিসভায় রয়েছেন। বিজয়ী শক্তি নিজেদের সবচেয়ে যোগ্য লোকদের তাদের মন্ত্রী করবে যাদের যোগ্যতা দক্ষতা দিয়ে তারা পরাশক্তিকে পরাস্ত করেছে। এসব লোকই এখন দেশটি নতুন বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে। রাষ্ট্রক্ষমতায় তাদের কার্যক্রম কেমন সে ব্যাপারে মন্তব্য করার আগে সে জন্য তাদের সময় দিতে হবে।
খবর পাওয়া যাচ্ছে, তালেবানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হচ্ছে। দেশের নানা জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে তা ঘটছে। এর উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, নারীদের প্রতিবাদ। এই বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা নগণ্য। তালেবান মানেই খুনি হত্যাকারী অসংযমী বলে যেমন ধারণা প্রতিষ্ঠা করেছে পশ্চিমা মিডিয়া, প্রতিবাদ বিক্ষোভ করার এসব খবর তার বিরুদ্ধে প্রমাণ হাজির করে। স্বৈরাচারী কায়দায় দমনপীড়ন চালালে এভাবে মানুষ প্রতিবাদ করতে পারত না। তবে এসব ব্যাপারে তালেবান যদি বাড়াবাড়ি করে, সীমালঙ্ঘন করে সেটি তাদের জন্য ভালো কিছু হবে না। মন্ত্রিসভা গঠনের পরপরই চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে জাতিগত আফগানদের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে। এসব বিশ্লেষণের উদ্দেশ্য কতটা তাদের ভালোর জন্য আর কতটা কেবল সমালোচনার জন্য, সেটি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে, একটি কার্যকর সরকার পরিচালনার জন্য টিম স্পিরিট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন দরকার উদ্ভূত সঙ্কটের আশু সমাধান। তাদের সেই সুযোগ দিতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত আফগানদের সহযোগিতা করা; তাদের দুর্বলতার সুযোগ গ্রহণ করা নয়। একটি পূর্ণ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আফগানিস্তানের বিকাশ পুরো অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন। দেশটির নতুন শাসকদের প্রতি সেই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অগ্রসর হওয়াই উত্তম। তালেবান সত্যিকার অর্থে কল্যাণকামী হলে তাদের স্বীকৃতি বিলম্বিত করা হবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এর দ্বারা শুভ কোনো কিছু অর্জন করা যাবে না। আমরা আশা করব, নতুন সরকারের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হবে।