ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

প্রতিবেশী দেশে পুলিশ সদস্য আটক

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:২১:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / ৯৯ বার পড়া হয়েছে

অবারিত হচ্ছে প্রতারণার সুযোগা
আমাদের পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে বেআইনি কর্মকাণ্ডের অভিযোগ নিয়মিত উঠছে। একটি অনলাইন কোম্পানির মাধ্যমে মানুষের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর বনানী থানার পুলিশ পরিদর্শক শেখ সোহেল রানার বিরুদ্ধে। তিনি দেশ থেকে পালাতে গিয়ে ভারতে আটক হয়েছেন। ছিনতাই, অপহরণের মতো অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে বিগত বছরগুলোতে বর্ধিত হারে উঠছে। তাদের অপরাধের পরিধি বেড়েই চলেছে। অনেক সদস্যের মধ্যে নতুন নতুন অপরাধের সংযোগ ঘটছে। এ বাহিনীর বিশেষায়িত শাখা-প্রশাখার কিছু সদস্য নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। মানুষের নিরাপত্তায় নিয়োজিত বাহিনীর কিছু সদস্যের এভাবে ভ্রষ্ট হওয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে এমন খবর আমাদের জানা নেই।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি অনলাইনে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রি করে। রাজধানীর গুলশানে কার্যালয়। এটি পণ্য দেয়ার কথা বলে টাকা নেয়; কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভোক্তাদের পণ্য সরবরাহ করে না। একই ধরনের প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিরুদ্ধে আরো বড় ধরনের প্রতারণার অভিযোগের এখনো সুরাহা হয়নি। বিগত এক দশকে অনেক মাল্টি লেভেল কোম্পানি মানুষের অর্থ হাতিয়ে পার পেয়ে গেছে একই কায়দায়। এর মূল কারণÑ ক্ষমতাশালী লোকেরা এগুলোর সাথে জড়িত ছিলেন। সাধারণ মানুষের অর্থ এভাবে লুটে কোনো শাস্তির মুখোমুখি হননি তারা। ই-অরেঞ্জের প্রতারণার অভিযোগে করা মামলায় পুলিশ কর্মকর্তা সোহেল রানার বোন-ভগ্নিপতি জেলে গেছেন। একই মামলায় তার স্ত্রীও পলাতক। তিনি কোম্পানিটির একজন মালিক। তার বিরুদ্ধে মামলা হলেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি; বরং পালানোর সুযোগ পেয়েছেন। দুর্ভাগ্য হচ্ছেÑ প্রতিবেশী দেশের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তাকে ধরে মিডিয়ায় দেখিয়েছে। আমাদের একজন পুলিশ কর্মকর্তার বিদেশে আটক হওয়ার খবর ও ছবি দেশের জন্য সম্মানজনক নয়। একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে সোহেল রানার বিরুদ্ধে মামলা করা সহজ নয়। ভুক্তভোগীরা আদালতের আদেশ নিয়ে মামলা করার প্রয়াস চালান। সর্বশেষ তার বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করা হয় গত বৃহস্পতিবার। পুলিশ সূত্রমতে, সম্ভাব্য অপরাধী হিসেবে সোহেল রানার ওপর নজরদারি ছিল। সত্যিই যদি পুলিশের এ কর্মকর্তার ওপর নজরদারি থেকেই থাকে; তাহলে কিভাবে দেশ থেকে বিদেশে পালিয়ে যান তিনি?
সাধারণ মানুষের অন্যায়ে জড়ানো মামুলি বিষয় হতে পারে; কিন্তু আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর একজন সদস্য যিনি সর্বদা ন্যায়নিষ্ঠ কর্তব্যপরায়ণ হওয়ার শপথ নেন, তার অপরাধে জড়ানো দুশ্চিন্তার বিষয়। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের অপরাধমুক্ত রাখতে নিজেদের গোয়েন্দা কার্যক্রম থাকার কথা। কোনো সদস্যের পদস্খলনের শঙ্কা দেখা দিলে তার বিরুদ্ধে আগেই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা। ই-অরেঞ্জের মতো কোম্পানি এক দিনে গড়ে উঠেনি। হাজার কোটি টাকা প্রতারণা করতে বহুদিন লেগেছে। এর মধ্যে সোহেল রানার বিষয়ে পুলিশের শৃঙ্খলা বিভাগ কেন ব্যবস্থা নিতে পারেনি এই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। দেশে প্রতারণা এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। একটি-দু’টি নয়, সারা দেশে প্রতারণার হাজারো অভিযোগ উঠছে। জাতিকে অগণিত প্রতারকের হাত থেকে কে বাঁচাবে? যেখানে পুলিশ সদস্যদের অনেকে প্রতারণার ফাঁদ পাতছে। এর পেছনের কার্যকারণÑ নৈতিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়। সমাজে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়া অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে যখন ব্যবস্থা নেয়া হয় না, তখন ভালোদের মধ্যেও অন্যায়, অবৈধ পথ গ্রহণের প্রবণতা বাড়ে। এতে আমাদের পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্যও নেমে পড়েছেন। বেগতিক এই অবস্থা থেকে প্রথমে পুলিশ বাহিনীকে রক্ষা করতে হবে। সে জন্য দরকার তাদের মধ্যে থাকা অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনি ব্যবস্থা নেয়া। পুলিশ সদস্যদের মধ্যে নৈতিকতা ফিরে এলে তারা জাতির বাদবাকি অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। দুঃকজনক হলোÑ আপাতত সে ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

প্রতিবেশী দেশে পুলিশ সদস্য আটক

আপলোড টাইম : ০৮:২১:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

অবারিত হচ্ছে প্রতারণার সুযোগা
আমাদের পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে বেআইনি কর্মকাণ্ডের অভিযোগ নিয়মিত উঠছে। একটি অনলাইন কোম্পানির মাধ্যমে মানুষের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর বনানী থানার পুলিশ পরিদর্শক শেখ সোহেল রানার বিরুদ্ধে। তিনি দেশ থেকে পালাতে গিয়ে ভারতে আটক হয়েছেন। ছিনতাই, অপহরণের মতো অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে বিগত বছরগুলোতে বর্ধিত হারে উঠছে। তাদের অপরাধের পরিধি বেড়েই চলেছে। অনেক সদস্যের মধ্যে নতুন নতুন অপরাধের সংযোগ ঘটছে। এ বাহিনীর বিশেষায়িত শাখা-প্রশাখার কিছু সদস্য নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। মানুষের নিরাপত্তায় নিয়োজিত বাহিনীর কিছু সদস্যের এভাবে ভ্রষ্ট হওয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে এমন খবর আমাদের জানা নেই।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি অনলাইনে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রি করে। রাজধানীর গুলশানে কার্যালয়। এটি পণ্য দেয়ার কথা বলে টাকা নেয়; কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভোক্তাদের পণ্য সরবরাহ করে না। একই ধরনের প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিরুদ্ধে আরো বড় ধরনের প্রতারণার অভিযোগের এখনো সুরাহা হয়নি। বিগত এক দশকে অনেক মাল্টি লেভেল কোম্পানি মানুষের অর্থ হাতিয়ে পার পেয়ে গেছে একই কায়দায়। এর মূল কারণÑ ক্ষমতাশালী লোকেরা এগুলোর সাথে জড়িত ছিলেন। সাধারণ মানুষের অর্থ এভাবে লুটে কোনো শাস্তির মুখোমুখি হননি তারা। ই-অরেঞ্জের প্রতারণার অভিযোগে করা মামলায় পুলিশ কর্মকর্তা সোহেল রানার বোন-ভগ্নিপতি জেলে গেছেন। একই মামলায় তার স্ত্রীও পলাতক। তিনি কোম্পানিটির একজন মালিক। তার বিরুদ্ধে মামলা হলেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি; বরং পালানোর সুযোগ পেয়েছেন। দুর্ভাগ্য হচ্ছেÑ প্রতিবেশী দেশের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তাকে ধরে মিডিয়ায় দেখিয়েছে। আমাদের একজন পুলিশ কর্মকর্তার বিদেশে আটক হওয়ার খবর ও ছবি দেশের জন্য সম্মানজনক নয়। একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে সোহেল রানার বিরুদ্ধে মামলা করা সহজ নয়। ভুক্তভোগীরা আদালতের আদেশ নিয়ে মামলা করার প্রয়াস চালান। সর্বশেষ তার বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করা হয় গত বৃহস্পতিবার। পুলিশ সূত্রমতে, সম্ভাব্য অপরাধী হিসেবে সোহেল রানার ওপর নজরদারি ছিল। সত্যিই যদি পুলিশের এ কর্মকর্তার ওপর নজরদারি থেকেই থাকে; তাহলে কিভাবে দেশ থেকে বিদেশে পালিয়ে যান তিনি?
সাধারণ মানুষের অন্যায়ে জড়ানো মামুলি বিষয় হতে পারে; কিন্তু আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর একজন সদস্য যিনি সর্বদা ন্যায়নিষ্ঠ কর্তব্যপরায়ণ হওয়ার শপথ নেন, তার অপরাধে জড়ানো দুশ্চিন্তার বিষয়। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের অপরাধমুক্ত রাখতে নিজেদের গোয়েন্দা কার্যক্রম থাকার কথা। কোনো সদস্যের পদস্খলনের শঙ্কা দেখা দিলে তার বিরুদ্ধে আগেই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা। ই-অরেঞ্জের মতো কোম্পানি এক দিনে গড়ে উঠেনি। হাজার কোটি টাকা প্রতারণা করতে বহুদিন লেগেছে। এর মধ্যে সোহেল রানার বিষয়ে পুলিশের শৃঙ্খলা বিভাগ কেন ব্যবস্থা নিতে পারেনি এই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। দেশে প্রতারণা এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। একটি-দু’টি নয়, সারা দেশে প্রতারণার হাজারো অভিযোগ উঠছে। জাতিকে অগণিত প্রতারকের হাত থেকে কে বাঁচাবে? যেখানে পুলিশ সদস্যদের অনেকে প্রতারণার ফাঁদ পাতছে। এর পেছনের কার্যকারণÑ নৈতিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়। সমাজে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়া অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে যখন ব্যবস্থা নেয়া হয় না, তখন ভালোদের মধ্যেও অন্যায়, অবৈধ পথ গ্রহণের প্রবণতা বাড়ে। এতে আমাদের পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্যও নেমে পড়েছেন। বেগতিক এই অবস্থা থেকে প্রথমে পুলিশ বাহিনীকে রক্ষা করতে হবে। সে জন্য দরকার তাদের মধ্যে থাকা অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনি ব্যবস্থা নেয়া। পুলিশ সদস্যদের মধ্যে নৈতিকতা ফিরে এলে তারা জাতির বাদবাকি অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। দুঃকজনক হলোÑ আপাতত সে ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।