শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি
- আপলোড টাইম : ০৮:৪৪:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
- / ৮৫ বার পড়া হয়েছে
তারিখ যেন আর না পেছায়
করোনা মহামারীর কারণে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে। গত ২৪ আগস্ট প্রকাশিত জাতিসঙ্ঘ শিশু তহবিল বা ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯-এর কারণে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে স্কুল বন্ধ থাকা দেশের মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয়। দীর্ঘ ১৭ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কারণে শিশু-কিশোররা স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাথে দেয়া সাক্ষাৎকারে শিক্ষামন্ত্রীও স্বীকার করেছেন। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর দেশের স্কুল ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাবনা- চলতি মাসে অষ্টম, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর মতো পাবলিক পরীক্ষা-সংশ্লিষ্ট নির্ধারিত কিছু শ্রেণীর শিক্ষার্থীর জন্য শ্রেণিকক্ষে ক্লাস শুরু করে স্কুল খুলে দেয়া। পরে ধাপে ধাপে অন্যান্য শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে আনা। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বলেছেন খুব তাড়াতাড়ি স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার জন্য। করোনাসংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির বৈঠকেও খোলার পক্ষে মত দেয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণ নিম্নমুখী হওয়ায় ১২ সেপ্টেম্বর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হচ্ছে।
যেকোনো সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা আসতে পারে, এমনটি ধরে নিয়েই স্কুল-কলেজগুলোর কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতি নিচ্ছে। শিক্ষা প্রশাসন স্কুল কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে খোলার প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলেছে। কী প্রস্তুতি নিতে হবে, তা যখন একবার ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার উদ্যোগ নেয়া হয়; তখনই জানানো হয়েছিল। নির্দেশনায় ছিল- তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে শ্রেণিকক্ষে বেঞ্চ সাজানো। পাঁচ ফুটের কম দৈর্ঘ্যরে বেঞ্চে একজন শিক্ষার্থী এবং পাঁচ ফুটের বেশি দৈর্ঘ্যরে বেঞ্চে দুজন শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস করানো। স্কুলে ঢোকার আগেই তাপমাত্রা পরীক্ষা করা। সবার জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক ইত্যাদি। তবে শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ অন্যান্য জনবলের সমস্যাসহ নানামুখী সীমাবদ্ধতায় স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং অন্য পরিকল্পনাগুলো ঠিকমতো বাস্তবায়ন করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে মেডিক্যাল কলেজসহ চিকিৎসাশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার সম্ভাব্য একটি তারিখ জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, চিকিৎসাশিক্ষার শ্রেণিকক্ষে ক্লাস শুরু হবে ধাপে ধাপে। এর মধ্যে মেডিক্যাল কলেজের প্রথম, দ্বিতীয় ও পঞ্চম বর্ষের ক্লাস শুরুর সম্ভাব্য তারিখ ঠিক করা হয়েছে ১৩ সেপ্টেম্বর। এ দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ২৬ আগস্ট একটি সভা হয়। এতে নেয়া পরিকল্পনা হলো টিকা দেয়া সাপেক্ষে ১৫ অক্টোবরের পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলতে পারবে। যদিও কোনো বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সুনির্দিষ্ট তারিখ এখনো জানায়নি। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে স্নাতক চতুর্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষার্থীদের শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছিল ঢাবি কর্তৃপক্ষ। অবশ্য ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কিছু পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে নেয়া শুরু হয়েছে।
সবার মতো আমরাও মনে করি, করোনার দোহাই দিয়ে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর বন্ধ রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। কারণ গণপরিবহন, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্পকারখানা, দোকানপাটসহ সব কিছুই চলছে। দৈনন্দিন কোনো কাজই থেমে নেই। শুধু শিক্ষাব্যবস্থা ছাড়া। এটি কোনোভাবেই বিবেচনাপ্রসূত হতে পারে না। তাই আগামী ১১ সেপ্টেম্বর ঘোষিত সর্বশেষ ছুটি শেষে সব পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। আর এক মুহূর্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হলে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে। এমনিতেই এতদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে। তাই এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। সাথে সাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরপরই শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি ঝরে পড়া রোধে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে।