রিমান্ড নিয়ে উচ্চআদালতের মন্তব্য
- আপলোড টাইম : ০৯:১৭:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২১
- / ১০৩ বার পড়া হয়েছে
আইনের সমান প্রয়োগ নিশ্চিত হোক
‘রিমান্ড’ নিয়ে বাংলাদেশের জনসমাজে অনাকাক্সিক্ষত ভীতি বিরাজ করছে। আইনের যে স্পিরিট থেকে রিমান্ডের বিধান করা হয়েছে সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে প্রতিপালিত না হওয়ায় এই ভীতি ছড়িয়েছে। সাধারণত নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে সত্য উদ্ঘাটনে বিচারব্যবস্থায় রিমান্ডকে চূড়ান্ত উপায় হিসেবে বিবেচনা করা যায়। আদালত যদি মনে করেন, বিষয়টি মানবাধিকার রক্ষার জন্য প্রয়োজন তখন রিমান্ড দেবেন। বাংলাদেশে বিগত এক দশকে দেখা গেছে, একটি শ্রেণীর বিরুদ্ধে পুলিশ রিমান্ড চাচ্ছে। ওই সব মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা রিমান্ডে গেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক মামলাগুলোর ক্ষেত্রে এটা বেশি ঘটেছে। ধারণা ছিল, একজন মানুষ এক দিন কিংবা দু’দিনের জন্য পুলিশ রিমান্ডে যাবেন। বড়জোর সোট এক সপ্তাহ হবে। তবে দেখা যাচ্ছে, কোনো কোনো ব্যক্তির সপ্তাহের পর সপ্তাহ রিমান্ড হয়েছে। কেউ কেউ মাসাধিককাল রিমান্ডে থেকেছে। এতে যদি আমাদের দেশের মানুষের অপরাধপ্রবণতা কমে যেত তাহলে বলা যেত- ‘বেশি রিমান্ড প্রদান কার্যকর হচ্ছে।’ সেটিও দেখা যাচ্ছে না। বরং দেশে নানা ধরনের অপরাধ ব্যাপক হারে বেড়েছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও দিন দিন অবনতি ঘটছে।
প্রসঙ্গটি আমরা উপস্থাপন করছি কারণ, মাননীয় উচ্চ আদালত এ নিয়ে মন্তব্য করেছেন। গত ৪ আগস্ট চিত্রনায়িকা পরীমণিকে বাসায় অভিযান চালিয়ে আটক করে র্যাব। পরে তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে মামলা করা হয়। ওই মামলায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তিন দফায় সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সিএমএম আদালত শুনানিতে ১৯ আগস্ট পরীমণির জামিন আবেদন নাকচ করে দেন। এরপর ২২ আগস্ট তার পক্ষে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করা হয়। আদালত তার আবেদনের শুনানির দিন রাখেন ১৩ সেপ্টেম্বর। শুনানির দিন নির্ধারণ দেরিতে করা সংক্রান্ত আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং অন্তর্বতীকালীন জামিন চেয়ে উচ্চআদালতে আবেদন করেন তিনি। পরে ২৬ আগস্ট উচ্চ আদালত, মহানগর দায়রা জজ আদালতের ১৩ সেপ্টেম্বরের শুনানির দিন নির্ধারণ কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চান। উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে ভোগান্তির ব্যাপারটি। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল রিমান্ড সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের মন্তব্য। দু’জন বিচারপতির সমন্বয়ে গড়া বেঞ্চ থেকে মন্তব্য করা হয়েছে, ‘রিমান্ডের উপাদান ছাড়া তদন্ত কর্মকর্তা প্রার্থনা দিলো, আপনি (ম্যাজিস্ট্রেট) মঞ্জুর করে দিলেন, এগুলো কোনো সভ্য সমাজে হতে পারে না। রিমান্ড অতি ব্যতিক্রমী বিষয়।’ এসময় উচ্চ আদালতের পক্ষ থেকে জামিনশুনানি কতদিনের মধ্যে করা হবে সে বিষয়ে নিম্ন আদালতকে একটি নির্দেশিকা দেয়ার কথাও জানানো হয়। পরীমণির অপরাধের প্রমাণ আদালতে হবে। তিনি যদি কোনো আইন লঙ্ঘন করে থাকেন তার শাস্তি অবশ্যই তিনি পাবেন। কিন্তু অপরাধের বিষয় প্রমাণিত হওয়ার আগে দীর্ঘ দিন ভোগান্তিতে ফেলা এবং একই সাথে রিমান্ডে নেয়ার প্রশ্নটির সুরাহা হওয়া প্রয়োজন। এটি দেশের সব নাগরিক নারী-পুরুষের ব্যাপারেও হওয়া প্রয়োজনীয়।
বিগত এক দশকে রিমান্ড যেন একটি সাধারণ চিত্র ছিল। রিমান্ড থেকে ফিরে আসার পর অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অনেকের স্বাস্থ্যের চরম অবনতি হতে দেখা গেছে। অনেকে এরপর পঙ্গু হয়ে গেছেন। তাদের ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ছিল। রিমান্ড বিষয়ে উচ্চ আদালতের বেঁধে দেয়া যেসব নিয়মনীতি রয়েছে দায়িত্বশীল আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সেগুলো যথাযথ পালন করা উচিত। পরীমণির দুর্দশার বিষয়টিতে মাননীয় উচ্চ আদালতের এভাবে মনোযোগ দেয়া আমরা অত্যন্ত ইতিবাচক বলে মনে করি। রিমান্ড সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের দেয়া নির্দেশনা মানার বিষয়ে অন্যদের ক্ষেত্রে যেভাবে অবজ্ঞা করা হয়েছে সেসব ব্যাপারেও নজর দেয়া দরকার। বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ সরকার যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অভিযোগ এনে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে তাদের পক্ষ থেকে রিমান্ডে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে, সেগুলো আমলে আনা গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া একজন ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ কতদিন রিমান্ড দেয়া হবে এবং সেটি কিভাবে সংশ্লিষ্ট বাহিনী বাস্তবায়িত করবে তা সুনির্দিষ্টভাবে পরিপালিত হওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে সব নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করাই উচিত।