ইপেপার । আজ রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

দামুড়হুদার চিৎলা গ্রামে ঘুমন্ত ছেলেকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যার পর নাটক সাজিয়েও হলো না শেষ রক্ষা : নিজের প্রতিবন্ধী সন্তানকে খুন করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে চেয়েছিলো পাষ- মা : হাসিনার স্বীকারোক্তিতে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার : ছেলে হত্যার ঘটনায় স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীর মামলা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:৩২:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ জুন ২০১৭
  • / ৪০৭ বার পড়া হয়েছে

এম এ মামুন: ছেলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, কথার অবাধ্য। ভবিষ্যতে ছেলে সংসারের বোঝা হবে। এই ভেবে গত বৃহস্পতিবার রাতে শিশু আলামিনকে (১২) নিজ ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে তার মা হাসিনা। হত্যার পর গল্প সাজায়, তার দুই প্রতিবেশী আলামিনকে খুঁন করেছে। জমি নিয়ে ইব্রাহিম ও জহুরুলের সাথে বিরোধ থাকায় নিজের ছেলেকে হত্যার দায় তাদের উপর চাপানোর চেষ্টা করে। তবে, আলামিনের মা হাসিনাকে পুলিশ ও গ্রামবাসীদের সন্দেহ হওয়ায় পুলিশ হাসিনাসহ সন্দিগ্ধ ইব্রাহিম (৪৫) ও জহুরুল (৩৫)কে  আটক করে। পরে পুলিশের জেরার মুখে হাসিনা নিজেই হত্যার ঘটনা স্বীকার করে এবং নিজের অপরাধের সাজা প্রত্যাশা  করে। পরে পুলিশ আটক দুই গ্রামবাসীকে ছেড়ে দেন। এঘটনায় নিহত আলমিনের বাবা আজিবর বাদী  হয়ে অভিযুক্ত স্ত্রী হাসিনাকে আসামী করে দামুড়হুদা থানায় একটি হত্যা মামলা দয়ের করে। এরপর অশ্রুসিক্ত আজিবর দুটি শিশু বাচ্চা ও আলামিনের মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি ফেরে।
চুয়াডাঙ্গায় মায়ের হাতে ছেলে খুঁনের ঘটনাটি প্রতিবেশী ও এলাকাবাসীর কাছে হৃদয়বিদায়ক। বর্তমানে নানাভাবে হত্যার  ঘটনা প্রায় ঘটছে। তবে গত বৃহস্পতিবার রাতে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার চিৎলা হাটপাড়ায় মায়ের হাতে নৃশংসভাবে বুদ্ধি প্রতিবন্দী আলামিন (১২) হত্যা মেনে নিতে পারছে না এলাকাবাসী। গ্রামবাসীদের দাবী মা নামের ডাইনী হাসিনার উপযুক্ত বিচার করা হোক। চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দিন ও এলাকাবাসী জানান গত বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার চিৎলা হাট পাড়ার আলামিনের বাবা আজিবর ব্যবসার কাজে বিকালেই ঢাকায় রওয়ানা দেয়। স্বামী বাড়ী না থাকায় ছেলের প্রতি দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে মরিয়া হয়ে ওঠে হাসিনা। তাছাড়া বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছেলে সংসারের বোঝা ভেবে হাসিনা আলামিনকে হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। আজিবর বাড়ী ছাড়ার পরপরই হাসিনা ঐদিন বিকালেই আলামিনকে বাড়ীর পাশের হাট এলাকা থেকে মারতে মারতে টেনে হিঁচড়ে বাড়ী আনে। সারাদিন আলামিনকে এক মুঠো ভাতও খেতে দেয়নি হাসিনা। রাতেও আলামিনকে না খাইয়ে জোর করে ঘুম পাড়াই। এরপর রাত ১১টার দিকে হাসিনা একটি ধারলো হেঁসো দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে আলামিনের মৃত্যু নিশ্চিত করে নিজের রক্তমাখা শাড়ী বাড়ীর একপাশে পুতে রাখে।
আলামিনকে হত্যার পর হাসিনা গল্প সাজায় এবং তার ছেলের লাশ ঘরের মধ্যে রেখে ঘরে তালা দিয়ে চিৎকার করে প্রতিবেশীদের ডেকে বলে তার ছেলে আলামিনকে প্রতিবেশী  ইব্রাহিম (৪৫) ও জহুরুল (৩৫) খুঁন করে পালিয়ে গেল।  প্রতিবেশীরা এসে দেখে ঘরে তালাবদ্ধ অবস্থায় আলামিনের লাশ। স্থানীয়রা ঘরের তালা খুলে তাকে দামুড়হুদা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক আলামিনকে মৃত ঘোষণা করেন। স্থানীয়রা ঘটনাটি পুলিশকে জানালে পুলিশ ঐ রাতেই আলামিনের লাশ উদ্ধারসহ সন্দিগ্ধ আলামিনের মা’ হাসিনা এবং একই গ্রামের ইব্রাহিম (৪৫) ও জহুরুল (৩৫ কে আটক করে থানায় আনে। থানায় আনার পরেও হাসিনা ছেলের মৃত্যু শোকের নাটক করতে থাকে ও  আলামিন, আলামিন বলে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।
ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতেই আলামিনের বাবা আজিবর ঢাকা থেকে বাড়ী ফিরে আসে এবং সব জানার পর থানায় যায়। স্ত্রী হাসিনার নিষ্ঠুর কর্মের জন্য তাকে ধিক্কার দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশের জেরার মুখে বৃহস্পতিবার বিকালে হাসিনা নিজেই হত্যার বিষয়ে মুখ খোলে এবং সে নিজেই তার সন্তানকে খুঁন করেছে বলে পুলিশের কাছে খুনের কারণ ও বর্ণনাসহ স্বীকারোক্তি দেয়। নিহত আলমিনের বাবা আজিবর বাদী হয়ে অভিযুক্ত স্ত্রী হাসিনাকে আসামী করে দামুড়হুদা থানায় একটি হত্যা মামলা দয়ের করে। এরপর অশ্রুসিক্ত আজিবর দুটি শিশু বাচ্চা ও আলামিনের মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি ফেরে।
এ দিকে,  চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে তিনি আলামিনের বাবা আজিবর ও এলাকাবাসীকে এই নৃশংস হত্যাকান্ডের বিচারে পুলিশ সঠিক পদক্ষেপ নেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

দামুড়হুদার চিৎলা গ্রামে ঘুমন্ত ছেলেকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যার পর নাটক সাজিয়েও হলো না শেষ রক্ষা : নিজের প্রতিবন্ধী সন্তানকে খুন করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে চেয়েছিলো পাষ- মা : হাসিনার স্বীকারোক্তিতে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার : ছেলে হত্যার ঘটনায় স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীর মামলা

আপলোড টাইম : ০৪:৩২:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ জুন ২০১৭

এম এ মামুন: ছেলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, কথার অবাধ্য। ভবিষ্যতে ছেলে সংসারের বোঝা হবে। এই ভেবে গত বৃহস্পতিবার রাতে শিশু আলামিনকে (১২) নিজ ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে তার মা হাসিনা। হত্যার পর গল্প সাজায়, তার দুই প্রতিবেশী আলামিনকে খুঁন করেছে। জমি নিয়ে ইব্রাহিম ও জহুরুলের সাথে বিরোধ থাকায় নিজের ছেলেকে হত্যার দায় তাদের উপর চাপানোর চেষ্টা করে। তবে, আলামিনের মা হাসিনাকে পুলিশ ও গ্রামবাসীদের সন্দেহ হওয়ায় পুলিশ হাসিনাসহ সন্দিগ্ধ ইব্রাহিম (৪৫) ও জহুরুল (৩৫)কে  আটক করে। পরে পুলিশের জেরার মুখে হাসিনা নিজেই হত্যার ঘটনা স্বীকার করে এবং নিজের অপরাধের সাজা প্রত্যাশা  করে। পরে পুলিশ আটক দুই গ্রামবাসীকে ছেড়ে দেন। এঘটনায় নিহত আলমিনের বাবা আজিবর বাদী  হয়ে অভিযুক্ত স্ত্রী হাসিনাকে আসামী করে দামুড়হুদা থানায় একটি হত্যা মামলা দয়ের করে। এরপর অশ্রুসিক্ত আজিবর দুটি শিশু বাচ্চা ও আলামিনের মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি ফেরে।
চুয়াডাঙ্গায় মায়ের হাতে ছেলে খুঁনের ঘটনাটি প্রতিবেশী ও এলাকাবাসীর কাছে হৃদয়বিদায়ক। বর্তমানে নানাভাবে হত্যার  ঘটনা প্রায় ঘটছে। তবে গত বৃহস্পতিবার রাতে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার চিৎলা হাটপাড়ায় মায়ের হাতে নৃশংসভাবে বুদ্ধি প্রতিবন্দী আলামিন (১২) হত্যা মেনে নিতে পারছে না এলাকাবাসী। গ্রামবাসীদের দাবী মা নামের ডাইনী হাসিনার উপযুক্ত বিচার করা হোক। চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দিন ও এলাকাবাসী জানান গত বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার চিৎলা হাট পাড়ার আলামিনের বাবা আজিবর ব্যবসার কাজে বিকালেই ঢাকায় রওয়ানা দেয়। স্বামী বাড়ী না থাকায় ছেলের প্রতি দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে মরিয়া হয়ে ওঠে হাসিনা। তাছাড়া বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছেলে সংসারের বোঝা ভেবে হাসিনা আলামিনকে হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। আজিবর বাড়ী ছাড়ার পরপরই হাসিনা ঐদিন বিকালেই আলামিনকে বাড়ীর পাশের হাট এলাকা থেকে মারতে মারতে টেনে হিঁচড়ে বাড়ী আনে। সারাদিন আলামিনকে এক মুঠো ভাতও খেতে দেয়নি হাসিনা। রাতেও আলামিনকে না খাইয়ে জোর করে ঘুম পাড়াই। এরপর রাত ১১টার দিকে হাসিনা একটি ধারলো হেঁসো দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে আলামিনের মৃত্যু নিশ্চিত করে নিজের রক্তমাখা শাড়ী বাড়ীর একপাশে পুতে রাখে।
আলামিনকে হত্যার পর হাসিনা গল্প সাজায় এবং তার ছেলের লাশ ঘরের মধ্যে রেখে ঘরে তালা দিয়ে চিৎকার করে প্রতিবেশীদের ডেকে বলে তার ছেলে আলামিনকে প্রতিবেশী  ইব্রাহিম (৪৫) ও জহুরুল (৩৫) খুঁন করে পালিয়ে গেল।  প্রতিবেশীরা এসে দেখে ঘরে তালাবদ্ধ অবস্থায় আলামিনের লাশ। স্থানীয়রা ঘরের তালা খুলে তাকে দামুড়হুদা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক আলামিনকে মৃত ঘোষণা করেন। স্থানীয়রা ঘটনাটি পুলিশকে জানালে পুলিশ ঐ রাতেই আলামিনের লাশ উদ্ধারসহ সন্দিগ্ধ আলামিনের মা’ হাসিনা এবং একই গ্রামের ইব্রাহিম (৪৫) ও জহুরুল (৩৫ কে আটক করে থানায় আনে। থানায় আনার পরেও হাসিনা ছেলের মৃত্যু শোকের নাটক করতে থাকে ও  আলামিন, আলামিন বলে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।
ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতেই আলামিনের বাবা আজিবর ঢাকা থেকে বাড়ী ফিরে আসে এবং সব জানার পর থানায় যায়। স্ত্রী হাসিনার নিষ্ঠুর কর্মের জন্য তাকে ধিক্কার দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশের জেরার মুখে বৃহস্পতিবার বিকালে হাসিনা নিজেই হত্যার বিষয়ে মুখ খোলে এবং সে নিজেই তার সন্তানকে খুঁন করেছে বলে পুলিশের কাছে খুনের কারণ ও বর্ণনাসহ স্বীকারোক্তি দেয়। নিহত আলমিনের বাবা আজিবর বাদী হয়ে অভিযুক্ত স্ত্রী হাসিনাকে আসামী করে দামুড়হুদা থানায় একটি হত্যা মামলা দয়ের করে। এরপর অশ্রুসিক্ত আজিবর দুটি শিশু বাচ্চা ও আলামিনের মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি ফেরে।
এ দিকে,  চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে তিনি আলামিনের বাবা আজিবর ও এলাকাবাসীকে এই নৃশংস হত্যাকান্ডের বিচারে পুলিশ সঠিক পদক্ষেপ নেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন।