ইপেপার । আজ বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫

চুয়াডাঙ্গা সবুজপাড়ায় মসজিদের ভিতরে জন্মদিনের কেক কাটার ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ টক অব দ্য টাউনে পরিণত : কথিত নবাবের আত্মগোপন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:৩৭:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ জুন ২০১৭
  • / ২৩৩৩ বার পড়া হয়েছে

18985557_1794272040885973_571478737_n

চুয়াডাঙ্গা সবুজপাড়ায় মসজিদের ভিতরে জন্মদিনের কেক কাটার ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ
টক অব দ্য টাউনে পরিণত : কথিত নবাবের আত্মগোপন
মসজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দকে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনে আশ্বাস দিলেন এসপি নিজাম উদ্দীন
নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গা শহরের সবুজপাড়ার বায়তুল আতিক জামে মসজিদে ভিতরের সর্বজন শ্রদ্ধেয় নবাব স্যার সলিমুল্লাহ’র ১৪৬তম জন্মবার্ষিকী পালন উপলক্ষ্যে কেক কাটার সংবাদ দৈনিক সময়ের সমীকরণ-এ প্রকাশিত হলে চুয়াডাঙ্গার ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে মসজিদের ভিতরের কেক কাটাদের বিরুদ্ধে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। গতকাল এ ঘটনা টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়। এঘটনার পর থেকেই আত্মগোপন করেন নবাব স্যার সলিমুল্লাহর নাতি ছেলে পরিচয়দানকারি আলী হাসান আসকারি। এদিকে এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ ধর্মপ্রাণ মুসুল্লী ও ওই মসজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দ নিন্দনীয় কাজের জন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দীনের শরণাপন্ন হন। এসময় নবাগত সুযোগ্য পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দীন তাদের কাছ থেকে পুরো ঘটনা শোনেন এবং কথিত নবাবের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন ও সেই সাথে নিন্দনীয় এ ঘটনায় সহযোগিতাকারী সকলকে জবাবদিহিতা করতে হবে বলে জানান বলে বায়তুল আতিক জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা হাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের এমন তথ্য নিশ্চিত করেন।
এমন নিন্দনীয় ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আন্দোলনের হুশিয়ারী দেওয়া এলাকাবাসী, সুযোগ্য পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দীনের বক্তব্যে আশ্বস্ত হয়ে পুলিশি পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে আছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া কোন কুচক্রী মহল এঘটনাকে পুঁজি করে এলাকার পরিবেশ যেন অশান্ত করতে না পারে সেই পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দীনের নিদের্শে গতকাল সবুজপাড়ার বায়তুল আতিক জামে মসজিদে ধর্মপ্রাণ মুসুল্লীদের সাথে তারাবি নামাজ আদায় করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তরিকুল ইসলাম। নামাজ শেষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তরিকুল ইসলাম উপস্থিত মুসুল্লীদেরকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন চুয়াডাঙ্গার সুযোগ্য পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দীন স্যার তদন্তপূর্বক ব্যবস্থাগ্রহনে আশ্বাস দিয়েছেন। আপনারা শান্ত থাকুন, এসপি স্যারের উপর ভরসা রাখুন।
এদিকে, নবাব পরিবারের সদস্য পরিচয় দানকারি আলী হাসান আসকারি সাহেবের বিরুদ্ধে বেরিয়ে আসে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওই এলাকায় বসবাসকারী একজন জানান, কথিত এই নবাব আত্মসার্থ হাসিল করতে একাধিক জেলায় ৮টি বিবাহ করেছেন। ওই সমস্ত এলাকায় পারিবারিক সম্পর্কের মাধ্যমে সিন্ডিকেট তৈরী করে এক শ্রেণীর সহজ-সরল মানুষেদেরকে বিভিন্ন দিক বুঝিয়ে-নিজের অস্তিত্বের বয়ান দিয়ে তাদের মনে জায়গা করে নেন। পরে তাদের দিয়ে গোটা এলাকায় নিজের অস্তিত্বের জানান দেন এবং নবাব পরিবারের সদস্য বলে দাবি করেন।
তথ্যনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে কথিত এই নবাবের আসল চেহারা। এ ব্যাপারে ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ বাহাদুরের বংশধর এবং নবাব স্যার সলিমুল্লাহ মেমোরিয়াল কমিটির সম্পাদক খাজা মোহাম্মদ কামেল নবাব পরিবারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলেছেন, খাজা সৈয়দ আলী হাসান আসকারী নামে নবাব পরিবারে কোন সদস্য নেই। এই নামে কেউ কোনদিন ছিলও না। এমন তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে বার্তা সংস্থা পিএনএস’র এক প্রতিবেদনে। গত ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ রয়েছে, স¤প্রতি খাজা সৈয়দ আলী আহসান আসকারী নামে এক ব্যক্তি নিজেকে স্যার সলিমুল্লাহ বাহাদুরের বংশধর দাবী করে পত্রিকায় এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় বক্তব্য তুলে ধরছেন-যা কিনা অবৈধ, মিথ্যা, ভূয়া, বানোয়াট এবং উদ্দেশ্য প্রনোদিত। নবাব পরিবারের ভূঁয়া বংশধর পরিচয়দানকারী ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে এক বানানো কথিত সংবর্ধনা সভায় নিজেকে নবাব পরিবারের বংশধর দাবী করে নবাব পরিবারের সম্পত্তি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দান করার ঘোষনা দেন। খাজা মোহাম্মদ কামেল বলেন, সম্পত্তি কার আর দান কওে কে। নেদারল্যান্ডসে বসবাসকারী জনৈক খাজা নামধারী ভূয়া সৈয়দ আলী আহসান আসকারী তাকে নবাব পরিবারের বংশধর দাবী করতে হলে তার পিতার নাম, ভাই-বোন, চাচা, ফুফু মোটকথা তাকে চিনতে পারা যাবে এমন সব দলিল-দস্তাবেজ অবশ্যই উপস্থাপন করতে হবে। তারপর তিনি যে নবাব পরিবারের ওয়ারিশ তথা বংশধর তার স্ব-পক্ষে অবশ্যই প্রামানিক কাগজপত্রাদি দাখিল করতে হবে। সেই সাথে তিনি নবাব পরিবারের বংশধর হলে ইসলামী শয়ীয়াহ-মিরাসী আইন মোতাবেক তার কিংবা তার পিতার অংশের প্রাপ্ত সমুদয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির তালিকাও প্রকাশ করতে হবে । জনাব খাজা কামেল স্পষ্ট করে বলেন, খাজা তথা নবাব পরিবারের বংশধররা কে কোথায় থাকেন সেটা আমাদের জানা আছে। হঠাৎ করে ভূঁইফোড় কেউ নবাব পরিবারের বংশধর দাবী করা পাশাপাশি নবাব পরিবারের সম্পত্তি দান করার ঘোষনা বেআইনী, অযৌক্তিক, পাগলের প্রলাপ মাত্র । তিনি নবাব পরিবারের বংশধরদের ঐক্যবদ্বভাবে এই সমস্যা সমাধানের আহবান জানান। প্রয়োজনে ভূঁয়া খাজা নামধারী আলী হাসান আসকারীকে পুলিশে সোপর্দ করারও দাবী জানান নবাব স্যার সলিমুল্লাহ মেমোরিয়াল কমিটির সম্পাদক খাজা মোহাম্মদ কামেল। তিনি বলেন, খুব শীঘ্রই আমরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নবাব পরিবারের বংশধর এবং সম্পত্তির অংশীদার-হকদারদের বিশদ বিবরন তুলে ধরবো। এখানে ভূয়া কথিত ভিত্তিহীন বিদেশে বসবাসকারী কারো উড়ে এসে নবাব পরিবারের বংশধর সাজার কোন সুযোগ নেই। উল্লেখ্য খাজা মোহাম্মদ কামেল এর পাশাপাশি ঢাকাবাসীও অনুরুপ দাবী জানান।
উল্লেখ্য, গত পরশু আলী হাসান আসকারি সাহেব সর্বজন শ্রদ্ধেয় নবাব স্যার সলিমুল্লাহ’র জন্মদিন পালন উপলক্ষে মসজিদের ভিতরে জন্মদিন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। ওই অনুষ্ঠানে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা, সাবেক ছাত্রনেতাসহ স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিককে দাওয়াতও দেন। পরস্পর সূত্রে জানা যায়, আলী হাসান আসকারি এই অনুষ্ঠান মসজিদের ভিতরে কেক কেটে উদযাপন করবেন এবং সেখানে ইতোমধ্যেই আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক মুজিবুল হক মালিক মজু, সাবেক ছাত্রদল সভাপতি মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু, স্থানীয় আ.লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন বিশ্বাস খোকন, যমুনা টিভির জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম ডালিম, আলোছায়া স্টুডিও’র সত্ত্বাধিকারি জাকির হোসেনসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক উপস্থিত হয়েছেন। এঘটনা শুনে এলাকার মুসুল্লিরা মসজিদে উপস্থিত হয়ে ইসলাম ধর্মের রীতি বিরুদ্ধ মসজিদের ভিতরে বে-ধর্মীদের মত কেক কেটে জন্মদিন পালনে নিষেধ করেন। কিন্তু আয়োজক আলী হাসান আসকারি নিষেধ অমান্য করে পাল্টা যুক্তি দেখিয়ে বলেন, তিনি কোরআনে পিএইচডি করেছেন, তাই তিনি জানেন এটা নাজায়েয নয়, কাবা শরীফে তিনি কেক কেটেছেন বলে দাবি করেন। তার এই বক্তব্যে উপস্থিত মুসল্লিসহ এলাকাবাসী আরো উত্তেজিত হয়ে তার শ্বশুর হাতেম আলীর দোকানসহ বাড়িতে চড়াও হতে উদ্যত হলে স্থানীয় মুরুব্বীদের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি তখনকার মত শান্ত হয়। এলাকার মুসল্লীরা ঘোষণাদেন আজ থেকে আসকারির দেওয়া ইফতার আর এই মসজিদে নেয়া হবে না।
ঘটনা জানতে অনুষ্ঠানের আয়োজক আলী হাসান আসকারির সাথে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেন না।
এ ছাড়াও এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট স্থানীয় বেশ কয়েক জন রাজনীতিবীদ ও সাংবাদিকদের সাথে কথা বলা হলে তারা নিজেদেরকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টায় বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরেন। অনেকে আবার এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতেই অপারগতা জানিয়েছেন।
মসজিদের ভিতরে জন্ম দিনের কেক কাটার বিষয়ে জেলা ওলামা পরিষদের সাধারন সম্পাদক আবুল কালাম কাসেমির কাছে এর সঠিক ফতোয়া কী জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন আমি এ ঘটনা এখনও জানিনা। তবে আমি পত্রিকা পড়ে এর সঠিক ফতোয়া কী হবে সে বিষয়ে মুরুব্বিদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে পরে জানাবো। তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সে কিছুই জানায়নি।
জেলা জুড়ে আলোচনা সমালোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে থাকা এমন একটি ঘটনা তারা জানেন না শুনে অনেকে বিরুপ মন্তব্য ছোড়েন। সাথে সাথে এ ঘটনা চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। এক শ্রেণীর কথিত নবাব অনুসারীরা তার পক্ষে মন্তব্য করেন। অনেকে তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েও মন্তব্য প্রকাশ করেন। এ ঘটনা এখন চুয়াডাঙ্গার টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা জুড়ে আলী হাসান আসকারির এহেন নিন্দনীয় ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে অনেকে পত্রিকা অফিসে ফোন করে এবং স্ব-শরীরে এসে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। সাথে সাথে জেলা ওলামা পরিষদ এখনো পর্যন্ত কোন মন্তব্যে না করায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

চুয়াডাঙ্গা সবুজপাড়ায় মসজিদের ভিতরে জন্মদিনের কেক কাটার ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ টক অব দ্য টাউনে পরিণত : কথিত নবাবের আত্মগোপন

আপলোড টাইম : ০৫:৩৭:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ জুন ২০১৭

18985557_1794272040885973_571478737_n

চুয়াডাঙ্গা সবুজপাড়ায় মসজিদের ভিতরে জন্মদিনের কেক কাটার ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ
টক অব দ্য টাউনে পরিণত : কথিত নবাবের আত্মগোপন
মসজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দকে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনে আশ্বাস দিলেন এসপি নিজাম উদ্দীন
নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গা শহরের সবুজপাড়ার বায়তুল আতিক জামে মসজিদে ভিতরের সর্বজন শ্রদ্ধেয় নবাব স্যার সলিমুল্লাহ’র ১৪৬তম জন্মবার্ষিকী পালন উপলক্ষ্যে কেক কাটার সংবাদ দৈনিক সময়ের সমীকরণ-এ প্রকাশিত হলে চুয়াডাঙ্গার ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে মসজিদের ভিতরের কেক কাটাদের বিরুদ্ধে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। গতকাল এ ঘটনা টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়। এঘটনার পর থেকেই আত্মগোপন করেন নবাব স্যার সলিমুল্লাহর নাতি ছেলে পরিচয়দানকারি আলী হাসান আসকারি। এদিকে এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ ধর্মপ্রাণ মুসুল্লী ও ওই মসজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দ নিন্দনীয় কাজের জন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দীনের শরণাপন্ন হন। এসময় নবাগত সুযোগ্য পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দীন তাদের কাছ থেকে পুরো ঘটনা শোনেন এবং কথিত নবাবের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন ও সেই সাথে নিন্দনীয় এ ঘটনায় সহযোগিতাকারী সকলকে জবাবদিহিতা করতে হবে বলে জানান বলে বায়তুল আতিক জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা হাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের এমন তথ্য নিশ্চিত করেন।
এমন নিন্দনীয় ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আন্দোলনের হুশিয়ারী দেওয়া এলাকাবাসী, সুযোগ্য পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দীনের বক্তব্যে আশ্বস্ত হয়ে পুলিশি পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে আছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া কোন কুচক্রী মহল এঘটনাকে পুঁজি করে এলাকার পরিবেশ যেন অশান্ত করতে না পারে সেই পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দীনের নিদের্শে গতকাল সবুজপাড়ার বায়তুল আতিক জামে মসজিদে ধর্মপ্রাণ মুসুল্লীদের সাথে তারাবি নামাজ আদায় করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তরিকুল ইসলাম। নামাজ শেষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তরিকুল ইসলাম উপস্থিত মুসুল্লীদেরকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন চুয়াডাঙ্গার সুযোগ্য পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দীন স্যার তদন্তপূর্বক ব্যবস্থাগ্রহনে আশ্বাস দিয়েছেন। আপনারা শান্ত থাকুন, এসপি স্যারের উপর ভরসা রাখুন।
এদিকে, নবাব পরিবারের সদস্য পরিচয় দানকারি আলী হাসান আসকারি সাহেবের বিরুদ্ধে বেরিয়ে আসে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওই এলাকায় বসবাসকারী একজন জানান, কথিত এই নবাব আত্মসার্থ হাসিল করতে একাধিক জেলায় ৮টি বিবাহ করেছেন। ওই সমস্ত এলাকায় পারিবারিক সম্পর্কের মাধ্যমে সিন্ডিকেট তৈরী করে এক শ্রেণীর সহজ-সরল মানুষেদেরকে বিভিন্ন দিক বুঝিয়ে-নিজের অস্তিত্বের বয়ান দিয়ে তাদের মনে জায়গা করে নেন। পরে তাদের দিয়ে গোটা এলাকায় নিজের অস্তিত্বের জানান দেন এবং নবাব পরিবারের সদস্য বলে দাবি করেন।
তথ্যনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে কথিত এই নবাবের আসল চেহারা। এ ব্যাপারে ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ বাহাদুরের বংশধর এবং নবাব স্যার সলিমুল্লাহ মেমোরিয়াল কমিটির সম্পাদক খাজা মোহাম্মদ কামেল নবাব পরিবারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলেছেন, খাজা সৈয়দ আলী হাসান আসকারী নামে নবাব পরিবারে কোন সদস্য নেই। এই নামে কেউ কোনদিন ছিলও না। এমন তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে বার্তা সংস্থা পিএনএস’র এক প্রতিবেদনে। গত ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ রয়েছে, স¤প্রতি খাজা সৈয়দ আলী আহসান আসকারী নামে এক ব্যক্তি নিজেকে স্যার সলিমুল্লাহ বাহাদুরের বংশধর দাবী করে পত্রিকায় এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় বক্তব্য তুলে ধরছেন-যা কিনা অবৈধ, মিথ্যা, ভূয়া, বানোয়াট এবং উদ্দেশ্য প্রনোদিত। নবাব পরিবারের ভূঁয়া বংশধর পরিচয়দানকারী ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে এক বানানো কথিত সংবর্ধনা সভায় নিজেকে নবাব পরিবারের বংশধর দাবী করে নবাব পরিবারের সম্পত্তি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দান করার ঘোষনা দেন। খাজা মোহাম্মদ কামেল বলেন, সম্পত্তি কার আর দান কওে কে। নেদারল্যান্ডসে বসবাসকারী জনৈক খাজা নামধারী ভূয়া সৈয়দ আলী আহসান আসকারী তাকে নবাব পরিবারের বংশধর দাবী করতে হলে তার পিতার নাম, ভাই-বোন, চাচা, ফুফু মোটকথা তাকে চিনতে পারা যাবে এমন সব দলিল-দস্তাবেজ অবশ্যই উপস্থাপন করতে হবে। তারপর তিনি যে নবাব পরিবারের ওয়ারিশ তথা বংশধর তার স্ব-পক্ষে অবশ্যই প্রামানিক কাগজপত্রাদি দাখিল করতে হবে। সেই সাথে তিনি নবাব পরিবারের বংশধর হলে ইসলামী শয়ীয়াহ-মিরাসী আইন মোতাবেক তার কিংবা তার পিতার অংশের প্রাপ্ত সমুদয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির তালিকাও প্রকাশ করতে হবে । জনাব খাজা কামেল স্পষ্ট করে বলেন, খাজা তথা নবাব পরিবারের বংশধররা কে কোথায় থাকেন সেটা আমাদের জানা আছে। হঠাৎ করে ভূঁইফোড় কেউ নবাব পরিবারের বংশধর দাবী করা পাশাপাশি নবাব পরিবারের সম্পত্তি দান করার ঘোষনা বেআইনী, অযৌক্তিক, পাগলের প্রলাপ মাত্র । তিনি নবাব পরিবারের বংশধরদের ঐক্যবদ্বভাবে এই সমস্যা সমাধানের আহবান জানান। প্রয়োজনে ভূঁয়া খাজা নামধারী আলী হাসান আসকারীকে পুলিশে সোপর্দ করারও দাবী জানান নবাব স্যার সলিমুল্লাহ মেমোরিয়াল কমিটির সম্পাদক খাজা মোহাম্মদ কামেল। তিনি বলেন, খুব শীঘ্রই আমরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নবাব পরিবারের বংশধর এবং সম্পত্তির অংশীদার-হকদারদের বিশদ বিবরন তুলে ধরবো। এখানে ভূয়া কথিত ভিত্তিহীন বিদেশে বসবাসকারী কারো উড়ে এসে নবাব পরিবারের বংশধর সাজার কোন সুযোগ নেই। উল্লেখ্য খাজা মোহাম্মদ কামেল এর পাশাপাশি ঢাকাবাসীও অনুরুপ দাবী জানান।
উল্লেখ্য, গত পরশু আলী হাসান আসকারি সাহেব সর্বজন শ্রদ্ধেয় নবাব স্যার সলিমুল্লাহ’র জন্মদিন পালন উপলক্ষে মসজিদের ভিতরে জন্মদিন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। ওই অনুষ্ঠানে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা, সাবেক ছাত্রনেতাসহ স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিককে দাওয়াতও দেন। পরস্পর সূত্রে জানা যায়, আলী হাসান আসকারি এই অনুষ্ঠান মসজিদের ভিতরে কেক কেটে উদযাপন করবেন এবং সেখানে ইতোমধ্যেই আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক মুজিবুল হক মালিক মজু, সাবেক ছাত্রদল সভাপতি মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু, স্থানীয় আ.লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন বিশ্বাস খোকন, যমুনা টিভির জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম ডালিম, আলোছায়া স্টুডিও’র সত্ত্বাধিকারি জাকির হোসেনসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক উপস্থিত হয়েছেন। এঘটনা শুনে এলাকার মুসুল্লিরা মসজিদে উপস্থিত হয়ে ইসলাম ধর্মের রীতি বিরুদ্ধ মসজিদের ভিতরে বে-ধর্মীদের মত কেক কেটে জন্মদিন পালনে নিষেধ করেন। কিন্তু আয়োজক আলী হাসান আসকারি নিষেধ অমান্য করে পাল্টা যুক্তি দেখিয়ে বলেন, তিনি কোরআনে পিএইচডি করেছেন, তাই তিনি জানেন এটা নাজায়েয নয়, কাবা শরীফে তিনি কেক কেটেছেন বলে দাবি করেন। তার এই বক্তব্যে উপস্থিত মুসল্লিসহ এলাকাবাসী আরো উত্তেজিত হয়ে তার শ্বশুর হাতেম আলীর দোকানসহ বাড়িতে চড়াও হতে উদ্যত হলে স্থানীয় মুরুব্বীদের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি তখনকার মত শান্ত হয়। এলাকার মুসল্লীরা ঘোষণাদেন আজ থেকে আসকারির দেওয়া ইফতার আর এই মসজিদে নেয়া হবে না।
ঘটনা জানতে অনুষ্ঠানের আয়োজক আলী হাসান আসকারির সাথে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেন না।
এ ছাড়াও এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট স্থানীয় বেশ কয়েক জন রাজনীতিবীদ ও সাংবাদিকদের সাথে কথা বলা হলে তারা নিজেদেরকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টায় বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরেন। অনেকে আবার এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতেই অপারগতা জানিয়েছেন।
মসজিদের ভিতরে জন্ম দিনের কেক কাটার বিষয়ে জেলা ওলামা পরিষদের সাধারন সম্পাদক আবুল কালাম কাসেমির কাছে এর সঠিক ফতোয়া কী জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন আমি এ ঘটনা এখনও জানিনা। তবে আমি পত্রিকা পড়ে এর সঠিক ফতোয়া কী হবে সে বিষয়ে মুরুব্বিদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে পরে জানাবো। তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সে কিছুই জানায়নি।
জেলা জুড়ে আলোচনা সমালোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে থাকা এমন একটি ঘটনা তারা জানেন না শুনে অনেকে বিরুপ মন্তব্য ছোড়েন। সাথে সাথে এ ঘটনা চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। এক শ্রেণীর কথিত নবাব অনুসারীরা তার পক্ষে মন্তব্য করেন। অনেকে তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েও মন্তব্য প্রকাশ করেন। এ ঘটনা এখন চুয়াডাঙ্গার টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা জুড়ে আলী হাসান আসকারির এহেন নিন্দনীয় ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে অনেকে পত্রিকা অফিসে ফোন করে এবং স্ব-শরীরে এসে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। সাথে সাথে জেলা ওলামা পরিষদ এখনো পর্যন্ত কোন মন্তব্যে না করায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।