আট বছরে ঝিনাইদহ বাফার গোডাউন থেকে ১০৪০ মেট্রিক টন সার গায়েব!
- আপলোড টাইম : ০৫:২৮:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ জুন ২০১৭
- / ৫০৫ বার পড়া হয়েছে
ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ বি,সি,আই,সি’র বাফার সার গোডাউন থেকে একের পর এক ইউরিয়া সার গায়েবের ঘটনায় জেলা প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ২০১৬ সালে ৫৪৭ দশমিক ৪৯ মিট্রিক টন ইউরিয়া সার গায়েব হওয়ার পর নতুন করে আবার ২৮০ মেট্রিন টন সারের কোন হদিস মিলছে না। এই নিয়ে গত আট বছরে ১০৪০ মেট্রিক টন সার গায়েব হলো। এদিকে নতুন করে সারগায়েবের ঘটনায় চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে ৪ সদস্যর তদন্ত দল গত বুধবার থেকে সার গোডাউনে উপস্থিত হয়ে বাস্তব গোননা শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে কম ওজনের ২২৭৮ মেট্রিক টন ব্যবহার অনুপযোগী জমাট বাধা সার রি-প্যাকিং করা হয়েছে। আর এ সময়ই ২৮০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের ঘাটতি ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সুত্র। বাস্তব গননা তদন্ত দলের প্রধান ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: আসাদুজ্জামান বলেন, বাস্তবে কি পরিমাণ সার ঘাটতি রয়েছে তা গণনা শেষে জানা সম্ভব হবে। তিনি বলেন আমরা নির্ভুল ভাবে গননা করছি। চার সদস্যর বাস্তব গণনা কমিটির সদস্য সচিব বিসিআইসি’র সহকারী বানিজ্যিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন আজ (৮ জুন) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ এ গগনার কাজ শেষ করা হবে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, ২০০৯ সালে প্রথম এই বাফার গোডাউন থেকে সার গায়েবের খবর ধরা পড়ে। ওই বছর ৭২ লাখ ৪২ হাজার টাকা মুল্যের ২১৩ মেট্রিন টক ইউরিয়া সার আত্মসাৎ করে ফেঁসে যান তৎকালীন গুদাম কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ। তিনি আজো বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন। তবে আবুল কালামের মাসিক বেতন থেকে সারের ভুর্তুকি মূল্য আদায় করা হচ্ছে বলে বিসিআইসির একটি সুত্র জানায়। জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৮ মে আবারো ৫৪৭ দশমিক ৪৯ মিট্রিক টন ইউরিয়া সার আত্মসাতের ঘটনা ধরা পড়ে। সে সময়কার গোডাউন ইন চার্জ জালাল উদ্দিন, আবু সাইদ, আব্দুল লতিফ, হিসাব সহকারি (বর্তমান) জামির হোসেন, সহকারী সিকিউরিটি অফিসার বোরহান উদ্দিন এই সার লোপাটের সাথে জড়িত থাকলেও আজো তাদের বিরুদ্ধে বিসিআইসি কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি বলে অভিযোগ। সেই রেশ কাটতে না কাটতে ২০১৭ সালে আবারো ২৮০ মেট্রিক টন সার গায়েবের খবর ফাঁস হয়ে পড়ে। কালীগঞ্জ বাফার গুদামের ইনচার্জ মাসুদ বলেন ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার সময় খাতা পত্রে গুদামটিতে ২২৭৮ মেট্রিক টন (৪৫ হাজার ৫ শত ৬১ বস্তা ) জমাট বাধা ব্যবহার অনুপযোগী ইউরিয়া সার মওজুত ছিল। ওই বছরের ফেব্রয়ারী মাস থেকে ব্যবহার অনুপোযোগী সার ক্রাশিং করার কাজ শুরু করা হয়। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৩০ মে পর্যন্ত ৩৯,৫৬১ বস্তা জমাট বাধা সার ক্রাশিং করা হয়েছে। এ থেকে অনুমান ২৮০ মেট্রিকটন সারের ঘাটতি ধরা পড়েছে বলে মাসুদ রানা দাবী করেন। সেই হিসেবে লোপাট হওয়ায় সারের সরকারী ক্রয় মুল্য হবে ৯৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ বিষয়ে বি,আই,সির ডিলার সমিতির ঝিনাইদহ জেলা সভাপতি হাজী জাহাঙ্গীর হোসেন ও সহ-সভাপতি অনোয়ারুল ইসলাম বলেন, পাথরের মত শক্ত জমাট বাধা সার ক্রাশিং করা হচ্ছে। ক্রাশিং করার পর সারের গুনাগুন নষ্ট হয়ে পাউডারে পরণিত হচ্ছে। আর এই সার জোর করে ডিলারদের নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এতে করে কৃষক ও সার ব্যবসায়ীরা চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। ঝিনাইদহে মৃত্তিকা সম্পদ ইনিস্টিটিউটের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কমকর্তা মো: নাজমুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা জমাটবাঁধা সারের মান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। জমাট সার ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষা ছাড়া জমিতে ব্যবহার করা হলে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন বলে তিনি মনে করেন।