বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন
- আপলোড টাইম : ০৮:০৫:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ অগাস্ট ২০২১
- / ১১৯ বার পড়া হয়েছে
সংস্কারে আন্তরিকতা জরুরি
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভিসি, প্রোভিসি ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের দায়িত্ব নেবে সরকার। একই সাথে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সংখ্যা ৯ থেকে বাড়িয়ে ১৫ জন করা হবে এবং সেখানে পাঁচজন শিক্ষাবিদ নিয়োগ দেয়া হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা নিয়ে একধরনের বিশৃঙ্খলা শুরু থেকেই চলে আসছে। শিক্ষা বিস্তারের পরিবর্তে এগুলো অনেকাংশেই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন উদ্যোক্তারা। অভিযোগ আছে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ট্রাস্টি বোর্ডে বেশির ভাগ সদস্য নেয়া হয় উদ্যোক্তাদের পরিবার বা তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের লোকজন থেকে। ফলে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ অনেক ক্ষেত্রেই উপেক্ষিত হয়। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিউশন ফির টাকা শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ব্যয় হওয়ার কথা থাকলেও প্রায়ই তা করা হয় না। বরং ওই অর্থ উদ্যোক্তাদের ব্যবসায় বিনিয়োগ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রতিষ্ঠানে উদ্যোক্তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি-প্রোভিসি পদ শূন রেখে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে পরিচালনা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক কাঠামো থেকে শুরু করে সংবিধি, বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা, বাজেটসহ সবকিছুই অনুমোদন দেয় ট্রাস্টি বোর্ড। এ জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ট্রাস্টি বোর্ডের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু সেখানে সদস্য সংখ্যা বাড়ানো বা শিক্ষাবিদ সদস্য অন্তর্ভুক্তিই একমাত্র সমাধান নয়। ভিসি, প্রোভিসি বা ট্রেজারার নিয়োগের দায়িত্ব সরকারের তরফ থেকে হলেই যে সব অনিয়ম, অব্যবস্থাপনার অবসান হবে তা মনে হয় না। অভিজ্ঞতা বলে, গত ১৫ বছরে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেভাবে ভিসি নিয়োগ দেয়া হয়েছে অনেক ক্ষেত্রেই নিয়োগবিধি ও প্রক্রিয়া যথাযথভাবে পরিপালন করা হয়নি। যোগ্যতা ও একাডেমিক রেকর্ডের পরিবর্তে প্রাধান্য পেয়েছে দলীয় ও রাজনৈতিক আনুগত্যের পরাকাষ্ঠা। এর কুফল মিলেছে হাতেনাতে। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন ভিসি দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম, দলীয়করণ থেকে শুরু করে হেন অপকর্ম নেই যাতে জড়িয়ে পড়েননি। অবস্থা এতটাই চরম পর্যায়ে পৌঁছায় যে, শিক্ষক বিশেষ করে কিছু ভিসির ভাবমর্যাদা এমন দাঁড়িয়েছে, তারা সমাজের নীতিনৈতিকতাহীন সবচেয়ে অধঃপতিত মানুষ।
সুতরাং সরকারের হাতে দায়িত্ব যাওয়ার মধ্যে কোনো সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা আদৌ নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি আইনবহির্ভূতভাবেও অনেক কাজ করা হয়েছে, যেগুলো সরকার দেখেও দেখেনি বা ব্যবস্থা নেয়নি। অনুমোদনহীন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা, স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি অনেক বিষয়ে সরকার চোখ বুজে থেকেছে। এমন তথ্য গণমাধ্যমে এসেছে যে, অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজে (বিওটি) মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা আছেন। তাদের অনৈতিক চাপে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ব্যর্থ হন। শিক্ষাবিদ ও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সব বিশ্ববিদ্যালয়কে আইনের আওতায় আনতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত জরুরি বলে বিভিন্ন সময়ে মত দিয়েছেন; কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? বিষয়টি সেই পর্যায়ে থেকে গেছে।
প্রশ্ন হলো, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডে শিক্ষাবিদদের অন্তর্ভুক্ত করলেই কি সুফল পাওয়া যাবে? যদি মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের নিয়োগ বন্ধ করা না হয়? গত প্রায় দুই বছরের মহামারীকালে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, আমাদের কাছে অগ্রাধিকারের দিক থেকে শিক্ষা সবার পেছনে। বিশ্বের অনেক দেশই মহামারীতে আমাদের চেয়ে বেশি ভুগেছে; কিন্তু এভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখেনি। এ থেকে স্পষ্ট যে, শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। বরং আইন সংস্কারের মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে সরকারের হস্তক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রণ আরো পাকাপোক্ত করা হবে।