ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

টিসিবির ডিলারদের দুর্নীতি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:০৯:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ অগাস্ট ২০২১
  • / ৯১ বার পড়া হয়েছে

স্বল্প আয়ের মানুষেরা বঞ্চিত
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবি খোলাবাজারে নিত্য ভোগ্যপণ্য বিক্রি করে। এর বাজারকার্যক্রম এখন সারা দেশে। নিম্নজীবী মানুষের পণ্যমূল্যের কশাঘাত থেকে বাঁচাতে সরকারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে। বিশেষ করে বাজারে যখন পণ্যের দাম বেড়ে যায় তখন প্রতিষ্ঠানটি দুইভাবে কাজ করে। এক দিকে সস্তায় পণ্য সরবরাহ করে অভাবীদের সাহায্য করে। অন্য দিকে বাজারে পণ্যের দাম আরো ঊর্ধ্বমুখী হওয়া থেকে সাধারণ ভোক্তাদের রক্ষা করে। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা যাচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে-বাইরে দুর্নীতি হচ্ছে। টিসিবির ভেতর থেকে এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ডিলারশিপ সরবরাহ করছেন পছন্দের ব্যক্তিদের। অসাধু ডিলাররা টিসিবির কাছ থেকে পণ্য নিয়ে খোলাবাজারে বিক্রির বদলে কালোবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলে নির্ধারিত অনেক জায়গায় সংস্থাটির পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদনের তথ্য, এক কর্মকর্তা টিসিবির ডিলারশিপ নিয়েছেন স্ত্রীর নামে। কামরাঙ্গীরচরের একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে এটি নেয়া হয়। আরেকটি ঘটনায় দেখা যায়, একই পরিবারের স্বামী-স্ত্রীর নামে টিসিবির লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া জাল রসিদ দিয়েও ডিলারশিপ বাগিয়ে নেয়ার সত্যতা মিলেছে। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ধারার লঙ্ঘন হয়েছে। এসব অপরাধ প্রমাণ হওয়ার পর কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাস্তবে টিসিবির পণ্য সাধারণ নাগরিকরা অনেক জায়গায় ক্রয় করতে পারছেন না। ডিলারদের নানামুখী দুর্নীতিতে এমন ঘটছে। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত ১৪ জুলাই সিলেটের জৈন্তাপুরে দু’জন ডিলার টিসিবির আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে ৫০০ কেজি চিনি, ৫০০ কেজি ডাল ও এক হাজার লিটার করে সয়াবিন তেল নেন। এগুলো ওই এলাকার ২৬টি স্থানে ট্রাকে করে বিক্রি করার কথা। তবে স্পটগুলোতে এসব পণ্য বিক্রি হয়নি। টিসিবির পণ্যের মূল্য ও বাজারে এসব পণ্যের দাম বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিপুল ফারাক রয়েছে। সংস্থাটির প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১০০ টাকা, প্রতি কেজি চিনি ও ডাল ৫৫ টাকা করে। অন্যদিকে, বাজারে সয়াবিন তেল লিটার ১৫০ টাকা, প্রতি কেজি চিনি ৭৫ টাকা ও ডাল ১১০ টাকা। জৈন্তাপুরে ঝলক দাস ও হরেন্দ্র পুরোকায়স্ত নামের দুই ব্যক্তির নামে টিসিবির ডিলারশিপ রয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ডিলারশিপ নেয়া হয়েছে পত্রিকার প্রতিনিধি সরেজমিন গিয়ে দেখেছেন এসব ব্যক্তির নামে আদৌ এমন কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানই নেই। এরা সাধারণ মানুষের জন্য বরাদ্দ মালামাল জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করতেই ভুয়া নামে ডিলারশিপ নিয়েছেন। এদিকে জালিয়াতি রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানো হচ্ছে। তাতে সারা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ডিলারদের দুর্নীতির নানা খবর পাওয়া যাচ্ছে। চট্টগ্রাম, নেত্রকোনা, ঝিনাইদহ, নীলফামারী ও নোয়াখালী থেকে টিসিবির পণ্য কালোবাজারির সময় ডিলারদের হাতেনাতে ধরেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া ডিলাররা টিসিবির কাছ থেকে পণ্য এনে সেগুলো বাজারে না নিয়ে গুদামজাত করছেন। ওজনে বিভিন্ন পণ্য কম দিচ্ছেন। গণমাধ্যমে এসব দুর্নীতির খবর প্রকাশ হয়েছে যেগুলোর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। টিসিবি সারা দেশে যে পরিমাণ পণ্য ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির জন্য সরবরাহ করে তার কত শতাংশ সত্যিকারার্থে সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছে প্রশ্নটি দেখা দিয়েছে।
টিসিবির পক্ষ থেকে জানা যাচ্ছেÑ ভ্রাম্যমাণ আদালত, স্পেশাল মনিটরিং টিম এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও ডিলারদের কার্যক্রম তদারকি করা হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রকাশিত খবর থেকে বোঝা যাচ্ছে, টিসিবি ভেতর থেকে শুরু করে ডিলারের মাঠপর্যায়ে পণ্য পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত নানা ধরনের দুর্নীতি চলছে। বিস্তৃত এ দুর্নীতিকে রোধ করা না গেলে সস্তায় মানুষের কাছে নিত্যপণ্য বণ্টনের কার্যক্রম ফলপ্রসূ হবে না। করোনা মহামারীকালে টিসিবির পণ্য বিক্রির প্রয়োজনীয়তা বহু গুণে বেড়েছে। কারণ এখন পণ্যমূল্যের বাজার অনেক চড়া। এ কার্যক্রম সফল করতে হলে একটি উন্নত মানসিকতা জরুরি। এটি মূলত একটি সেবাকার্যক্রম। একে সেভাবেই পরিচালিত করতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

টিসিবির ডিলারদের দুর্নীতি

আপলোড টাইম : ০৪:০৯:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ অগাস্ট ২০২১

স্বল্প আয়ের মানুষেরা বঞ্চিত
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবি খোলাবাজারে নিত্য ভোগ্যপণ্য বিক্রি করে। এর বাজারকার্যক্রম এখন সারা দেশে। নিম্নজীবী মানুষের পণ্যমূল্যের কশাঘাত থেকে বাঁচাতে সরকারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে। বিশেষ করে বাজারে যখন পণ্যের দাম বেড়ে যায় তখন প্রতিষ্ঠানটি দুইভাবে কাজ করে। এক দিকে সস্তায় পণ্য সরবরাহ করে অভাবীদের সাহায্য করে। অন্য দিকে বাজারে পণ্যের দাম আরো ঊর্ধ্বমুখী হওয়া থেকে সাধারণ ভোক্তাদের রক্ষা করে। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা যাচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে-বাইরে দুর্নীতি হচ্ছে। টিসিবির ভেতর থেকে এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ডিলারশিপ সরবরাহ করছেন পছন্দের ব্যক্তিদের। অসাধু ডিলাররা টিসিবির কাছ থেকে পণ্য নিয়ে খোলাবাজারে বিক্রির বদলে কালোবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলে নির্ধারিত অনেক জায়গায় সংস্থাটির পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদনের তথ্য, এক কর্মকর্তা টিসিবির ডিলারশিপ নিয়েছেন স্ত্রীর নামে। কামরাঙ্গীরচরের একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে এটি নেয়া হয়। আরেকটি ঘটনায় দেখা যায়, একই পরিবারের স্বামী-স্ত্রীর নামে টিসিবির লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া জাল রসিদ দিয়েও ডিলারশিপ বাগিয়ে নেয়ার সত্যতা মিলেছে। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ধারার লঙ্ঘন হয়েছে। এসব অপরাধ প্রমাণ হওয়ার পর কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাস্তবে টিসিবির পণ্য সাধারণ নাগরিকরা অনেক জায়গায় ক্রয় করতে পারছেন না। ডিলারদের নানামুখী দুর্নীতিতে এমন ঘটছে। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত ১৪ জুলাই সিলেটের জৈন্তাপুরে দু’জন ডিলার টিসিবির আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে ৫০০ কেজি চিনি, ৫০০ কেজি ডাল ও এক হাজার লিটার করে সয়াবিন তেল নেন। এগুলো ওই এলাকার ২৬টি স্থানে ট্রাকে করে বিক্রি করার কথা। তবে স্পটগুলোতে এসব পণ্য বিক্রি হয়নি। টিসিবির পণ্যের মূল্য ও বাজারে এসব পণ্যের দাম বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিপুল ফারাক রয়েছে। সংস্থাটির প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১০০ টাকা, প্রতি কেজি চিনি ও ডাল ৫৫ টাকা করে। অন্যদিকে, বাজারে সয়াবিন তেল লিটার ১৫০ টাকা, প্রতি কেজি চিনি ৭৫ টাকা ও ডাল ১১০ টাকা। জৈন্তাপুরে ঝলক দাস ও হরেন্দ্র পুরোকায়স্ত নামের দুই ব্যক্তির নামে টিসিবির ডিলারশিপ রয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ডিলারশিপ নেয়া হয়েছে পত্রিকার প্রতিনিধি সরেজমিন গিয়ে দেখেছেন এসব ব্যক্তির নামে আদৌ এমন কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানই নেই। এরা সাধারণ মানুষের জন্য বরাদ্দ মালামাল জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করতেই ভুয়া নামে ডিলারশিপ নিয়েছেন। এদিকে জালিয়াতি রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানো হচ্ছে। তাতে সারা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ডিলারদের দুর্নীতির নানা খবর পাওয়া যাচ্ছে। চট্টগ্রাম, নেত্রকোনা, ঝিনাইদহ, নীলফামারী ও নোয়াখালী থেকে টিসিবির পণ্য কালোবাজারির সময় ডিলারদের হাতেনাতে ধরেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া ডিলাররা টিসিবির কাছ থেকে পণ্য এনে সেগুলো বাজারে না নিয়ে গুদামজাত করছেন। ওজনে বিভিন্ন পণ্য কম দিচ্ছেন। গণমাধ্যমে এসব দুর্নীতির খবর প্রকাশ হয়েছে যেগুলোর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। টিসিবি সারা দেশে যে পরিমাণ পণ্য ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির জন্য সরবরাহ করে তার কত শতাংশ সত্যিকারার্থে সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছে প্রশ্নটি দেখা দিয়েছে।
টিসিবির পক্ষ থেকে জানা যাচ্ছেÑ ভ্রাম্যমাণ আদালত, স্পেশাল মনিটরিং টিম এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও ডিলারদের কার্যক্রম তদারকি করা হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রকাশিত খবর থেকে বোঝা যাচ্ছে, টিসিবি ভেতর থেকে শুরু করে ডিলারের মাঠপর্যায়ে পণ্য পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত নানা ধরনের দুর্নীতি চলছে। বিস্তৃত এ দুর্নীতিকে রোধ করা না গেলে সস্তায় মানুষের কাছে নিত্যপণ্য বণ্টনের কার্যক্রম ফলপ্রসূ হবে না। করোনা মহামারীকালে টিসিবির পণ্য বিক্রির প্রয়োজনীয়তা বহু গুণে বেড়েছে। কারণ এখন পণ্যমূল্যের বাজার অনেক চড়া। এ কার্যক্রম সফল করতে হলে একটি উন্নত মানসিকতা জরুরি। এটি মূলত একটি সেবাকার্যক্রম। একে সেভাবেই পরিচালিত করতে হবে।