ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

মহামারি নিয়ে সরকারি তথ্যে অসঙ্গতি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:৩৮:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ অগাস্ট ২০২১
  • / ৮৭ বার পড়া হয়েছে

জনমনে অনাস্থা দেখা দিলে বিপদ
মহামারি পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারি সেবার তথ্য পাওয়া জনগণের জন্য অত্যন্ত জরুরি। মানুষ সরকারের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই চিকিৎসাসুবিধা পেতে চেষ্টা করে থাকেন। স্বজনরা রোগীকে নিয়ে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে ছুটে যান। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সরকারিভাবে করোনা চিকিৎসার যেসব তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে তার সাথে বাস্তবতার প্রায়ই মিল থাকছে না। বরং সরকারি তথ্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অসঙ্গতিতে ভরপুর। অনেক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিকর এবং অসম্পূর্ণ। ফলে মানুষের ভোগান্তি আরো বাড়ছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, সরকারি তথ্যে যেসব হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) আছে বলে জানানো হচ্ছে, সেখানে তা নেই বা থাকলেও অনেক কম। যে হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য যত শয্যা বরাদ্দ আছে বলে সরকার জানাচ্ছে বাস্তবে তার সামান্য অংশও নেই। একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে ভোলা, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, জামালপুর- এ পাঁচ জেলার হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের জন্য ২০টি আইসিইউ রয়েছে। অথচ গত রোববার পর্যন্ত সচল কোনো আইসিইউ শয্যাই ছিল না। এটি তথ্যগত অসঙ্গতির একটি উদাহরণ। রিপোর্টে একইরকম দৃষ্টান্ত উঠে এসেছে, কোভিড আক্রান্ত চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যার ক্ষেত্রেও। সিলেটে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত চারটি সরকারি হাসপাতালে রোববার চিকিৎসাধীন রোগী ছিলেন ৪৩৬ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতর ওই দিন জেলায় চিকিৎসাধীন করোনা রোগীর সংখ্যা দেখায় ১৩৬ জন। সারা দেশের চিত্র প্রায় একই রকম। করোনা চিকিৎসায় নির্ধারিত হাসপাতাল, বেড, আইসিইউ ও চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যায়ও একই রকম অসঙ্গতির চিত্র বিদ্যমান। এটি কেবল যে মহামারীর বর্তমান ভয়াবহতার সময়ে ঘটছে এমন নয়। ২০২০ সালের মার্চে প্রথম করোনা রোগীর মৃত্যুর সময় থেকেই সরকারি তথ্যে বিভ্রাট ও অসঙ্গতির চিত্র উঠে এসেছে। পরীক্ষা, শনাক্ত, মৃত্যু ও সুস্থতার হিসাবেও আদৌ সঙ্গতি আছে কিনা সন্দেহের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় যেসব সরঞ্জাম ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলোর হিসাবে কত যে গরমিল তা বলে শেষ করা যাবে না।
সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের ব্যর্থতা লুকানোর এই প্রয়াস নতুন নয়, সব সরকারই নিজের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করে। কিন্তু জনদরদি বলে দাবিদার সরকারও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করবে- এমনটা হওয়ার কথা নয়। দেখা যাচ্ছে, বর্তমান সরকারের আমলে এ প্রবণতা আরো বেশি। শুধু করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রে নয়, বরং রাষ্ট্র ও সমাজের এমন প্রায় সব ক্ষেত্রও নেই, যেখানে সরকার যথাযথ পরিসংখ্যান দিয়ে তথ্য প্রকাশ করেছে। কোভিড-১৯ মহামারীর অর্থনৈতিক ক্ষতির কোনো সরকারি তথ্যই প্রকাশ করা হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সমীক্ষায় যেসব মারাত্মক প্রভাবের কথা বলা হয়েছে সরকারিভাবে সেগুলো অস্বীকার করা হয়েছে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যেসব তথ্য ও পরিসংখ্যান সরকার প্রকাশ করেছে সেগুলো প্রায়ই অতিরঞ্জিত। বিশেষজ্ঞরা ওইসব পরিসংখ্যানের সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ভুল তথ্য দিলে মানুষ অহেতুক ভোগান্তির শিকার হয়। শয্যা খালি আছে জেনে একজন মানুষ হাসপাতালে গিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হন। এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে রোগীর মৃত্যুর বহু ঘটনা মিডিয়ায় এসেছে। আসছে। কিন্তু মানুষের ভোগান্তিতে সম্ভবত সরকারের কিছু আসে যায় না। নাগরিকদের ম্যান্ডেটের প্রয়োজন বোধ হয় তাদের নেই। কিন্তু মহামারী মোকাবেলায় যথাযথ তথ্যের প্রয়োজন আছে। মহামারী পরিস্থিতির মূল্যায়ন, প্রক্ষেপণ, নীতিনির্ধারণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা জরুরি। এরই মধ্যে সরকারি কার্যক্রম নিয়ে জনমনে আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। আস্থাহীন পরিবেশ মহামারী নিয়ন্ত্রণে কখনোই সহায়ক হতে পারে না। আস্থাহীন মানুষ সরকারের কোনো সেবার ওপরেই ভরসা করবে না। প্রণীত কর্মসূচি সফল করতে এগিয়ে আসবে না।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

মহামারি নিয়ে সরকারি তথ্যে অসঙ্গতি

আপলোড টাইম : ০৭:৩৮:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ অগাস্ট ২০২১

জনমনে অনাস্থা দেখা দিলে বিপদ
মহামারি পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারি সেবার তথ্য পাওয়া জনগণের জন্য অত্যন্ত জরুরি। মানুষ সরকারের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই চিকিৎসাসুবিধা পেতে চেষ্টা করে থাকেন। স্বজনরা রোগীকে নিয়ে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে ছুটে যান। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সরকারিভাবে করোনা চিকিৎসার যেসব তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে তার সাথে বাস্তবতার প্রায়ই মিল থাকছে না। বরং সরকারি তথ্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অসঙ্গতিতে ভরপুর। অনেক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিকর এবং অসম্পূর্ণ। ফলে মানুষের ভোগান্তি আরো বাড়ছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, সরকারি তথ্যে যেসব হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) আছে বলে জানানো হচ্ছে, সেখানে তা নেই বা থাকলেও অনেক কম। যে হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য যত শয্যা বরাদ্দ আছে বলে সরকার জানাচ্ছে বাস্তবে তার সামান্য অংশও নেই। একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে ভোলা, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, জামালপুর- এ পাঁচ জেলার হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের জন্য ২০টি আইসিইউ রয়েছে। অথচ গত রোববার পর্যন্ত সচল কোনো আইসিইউ শয্যাই ছিল না। এটি তথ্যগত অসঙ্গতির একটি উদাহরণ। রিপোর্টে একইরকম দৃষ্টান্ত উঠে এসেছে, কোভিড আক্রান্ত চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যার ক্ষেত্রেও। সিলেটে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত চারটি সরকারি হাসপাতালে রোববার চিকিৎসাধীন রোগী ছিলেন ৪৩৬ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতর ওই দিন জেলায় চিকিৎসাধীন করোনা রোগীর সংখ্যা দেখায় ১৩৬ জন। সারা দেশের চিত্র প্রায় একই রকম। করোনা চিকিৎসায় নির্ধারিত হাসপাতাল, বেড, আইসিইউ ও চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যায়ও একই রকম অসঙ্গতির চিত্র বিদ্যমান। এটি কেবল যে মহামারীর বর্তমান ভয়াবহতার সময়ে ঘটছে এমন নয়। ২০২০ সালের মার্চে প্রথম করোনা রোগীর মৃত্যুর সময় থেকেই সরকারি তথ্যে বিভ্রাট ও অসঙ্গতির চিত্র উঠে এসেছে। পরীক্ষা, শনাক্ত, মৃত্যু ও সুস্থতার হিসাবেও আদৌ সঙ্গতি আছে কিনা সন্দেহের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় যেসব সরঞ্জাম ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলোর হিসাবে কত যে গরমিল তা বলে শেষ করা যাবে না।
সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের ব্যর্থতা লুকানোর এই প্রয়াস নতুন নয়, সব সরকারই নিজের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করে। কিন্তু জনদরদি বলে দাবিদার সরকারও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করবে- এমনটা হওয়ার কথা নয়। দেখা যাচ্ছে, বর্তমান সরকারের আমলে এ প্রবণতা আরো বেশি। শুধু করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রে নয়, বরং রাষ্ট্র ও সমাজের এমন প্রায় সব ক্ষেত্রও নেই, যেখানে সরকার যথাযথ পরিসংখ্যান দিয়ে তথ্য প্রকাশ করেছে। কোভিড-১৯ মহামারীর অর্থনৈতিক ক্ষতির কোনো সরকারি তথ্যই প্রকাশ করা হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সমীক্ষায় যেসব মারাত্মক প্রভাবের কথা বলা হয়েছে সরকারিভাবে সেগুলো অস্বীকার করা হয়েছে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যেসব তথ্য ও পরিসংখ্যান সরকার প্রকাশ করেছে সেগুলো প্রায়ই অতিরঞ্জিত। বিশেষজ্ঞরা ওইসব পরিসংখ্যানের সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ভুল তথ্য দিলে মানুষ অহেতুক ভোগান্তির শিকার হয়। শয্যা খালি আছে জেনে একজন মানুষ হাসপাতালে গিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হন। এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে রোগীর মৃত্যুর বহু ঘটনা মিডিয়ায় এসেছে। আসছে। কিন্তু মানুষের ভোগান্তিতে সম্ভবত সরকারের কিছু আসে যায় না। নাগরিকদের ম্যান্ডেটের প্রয়োজন বোধ হয় তাদের নেই। কিন্তু মহামারী মোকাবেলায় যথাযথ তথ্যের প্রয়োজন আছে। মহামারী পরিস্থিতির মূল্যায়ন, প্রক্ষেপণ, নীতিনির্ধারণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা জরুরি। এরই মধ্যে সরকারি কার্যক্রম নিয়ে জনমনে আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। আস্থাহীন পরিবেশ মহামারী নিয়ন্ত্রণে কখনোই সহায়ক হতে পারে না। আস্থাহীন মানুষ সরকারের কোনো সেবার ওপরেই ভরসা করবে না। প্রণীত কর্মসূচি সফল করতে এগিয়ে আসবে না।