হাসপাতালে অক্সিজেন সঙ্কট
- আপলোড টাইম : ০৪:৪৭:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ জুলাই ২০২১
- / ১০১ বার পড়া হয়েছে
চিকিৎসা-সামগ্রী সরবরাহ নিশ্চিত করুন
দেশে খুব দ্রুত অবনতি ঘটছে করোনা পরিস্থিতির। রাতারাতি বেড়ে গেছে মৃত্যু এবং শনাক্তের হার। টানা ছয় দিন ধরে মৃতের সংখ্যা শতাধিক। ইতোমধ্যে এক দিনে শনাক্তের হার ২৮ শতাংশ ছাড়িয়েছে। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় জেলা-উপজেলার হাসপাতালগুলোতে যথারীতি বাড়ছে রোগীর চাপ। বিশেষ করে ভারতঘেঁষা সীমান্তের জেলাগুলোতে করোনা পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসার পাশাপাশি অক্সিজেন সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে অনেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে অক্সিজেনের অভাবে বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে সাতজনের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার সঙ্কট থাকায় অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসকষ্টে তাদের মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে। আর সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অক্সিজেন সঙ্কটে অন্তত সাতজন রোগী মারা গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন মৃতদের স্বজনরা। এমন অবস্থা অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
খবরে প্রকাশ, খুলনা অঞ্চলে ঘরে ঘরে সর্দি, কাশি ও জ্বরের রোগী। ফলে সেখানে অক্সিজেনের চাহিদা প্রায় চার গুণ বেড়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের বেশির ভাগ জেলায় করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় অক্সিজেন সিলিন্ডারের সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের হিসাবে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, বিভিন্ন সংগঠন আর ব্যক্তি পর্যায়ে শুধু করোনা রোগীদের জন্য খুলনা শহরে বর্তমানে দৈনিক সিলিন্ডারের চাহিদা ৭০০টি। এর বিপরীতে সরবরাহ মাত্র ৪১০টি। চাহিদা আর সরবরাহের ভেতর ফারাকের দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছে। এ জনপদের বাসাবাড়িতে চিকিৎসা নেয়া রোগীদের স্বজনরা তৎপর আগেভাগে অক্সিজেন সিলিন্ডার সংগ্রহে। যে পরিস্থিতি চলছে তাতে অক্সিজেন সিলিন্ডার একসময় দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠতে পারে খুলনায়। সাম্প্রতিককালে ছোট সিলিন্ডারের চাহিদা বেড়ে প্রায় চার গুণ হয়েছে। এ দিকে বগুড়ায় তিনটি করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালেই অক্সিজেন এবং শয্যাসঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। উদ্বেগজনক খবর হলো- সময়মতো অক্সিজেন না পাওয়ায় এসব অঞ্চলে করোনা চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। অবস্থা এমন যে, অক্সিজেন সিলিন্ডার কে আগে নেবেন, তা নিয়ে কাড়াকাড়ি চলছে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের স্বজনদের মধ্যে। চিকিৎকদের মতে, করোনা একটি বক্ষব্যাধিজনিত রোগ। এই ভাইরাসে আক্রান্তদের অন্যতম প্রধান সমস্যা শ্বাসকষ্ট। এ সমস্যার সমাধানে রোগীকে প্রয়োজন অনুযায়ী অক্সিজেন সরবরাহ করা জরুরি। সময়মতো অক্সিজেন দেয়া সম্ভব না হলে রোগীর জীবন বিপন্ন হতে পারে। যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন নব্বইয়ের উপরে কেবল তাদের ফেস মাস্ক দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করে সারিয়ে তোলা সম্ভব। যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন নব্বইয়ের নিচে, কিন্তু ৮৭-এর উপরে তাদের রিব্রিদার মাস্ক দিয়েও সুস্থ করে তোলা যায়। তবে যাদের অক্সিজেনের মাত্রা ৮৭-এর নিচে তাদের জন্য অবশ্যই হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলাযুক্ত অক্সিজেন প্রয়োজন। করোনার প্রাদুর্ভাবে সারা দেশের বেশির ভাগ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে অক্সিজেন সহজলভ্য করার বিষয়টি প্রায় এক বছর ধরে আলোচনায় থাকা সত্ত্বেও এখনো এর সঙ্কট কাটেনি। এতে করে জেলা-উপজেলা হাসপাতালগুলোতে করোনার চিকিৎসা নিতে রোগীদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। জেলা-উপজেলার হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসার পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে অনেক জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে অক্সিজেনের সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনসহ চিকিৎসাবিষয়ক নানা রকম সঙ্কট বহু দিন ধরেই একটি বহুল আলোচিত বিষয়। অপ্রতুল স্বাস্থ্যসেবার জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলের করোনা রোগীরা চিকিৎসা পেতে বিভাগীয় শহর বা রাজধানীতে ছুটছেন। তবে গ্রামের অনেকের পক্ষে চিকিৎসার ব্যয়ভাব বহন করা তাদের সামর্থ্যরে বাইরে। সামর্থ্য আছে এমন রোগীদেরও কোনো কারণে সময়মতো বিভাগীয় শহর বা ঢাকায় নেয়া সম্ভব না হলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। তাই করোনা চিকিৎসায় জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে রোগীরা যাতে যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা পান সে জন্য অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহ যেকোনোভাবেই হোক নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব হবে না।