ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় অঞ্চল
- আপলোড টাইম : ০৯:৪৬:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মে ২০২১
- / ১১৪ বার পড়া হয়েছে
দ্রুত ত্রাণ ও পুনর্বাসনের পদক্ষেপ নিন
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আঘাতে ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ঝড় বাংলাদেশে সরাসরি আঘাত না হানলেও এর প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে যে ক্ষতি হয়েছে তার পরিমাণও কম নয়। জলোচ্ছ্বাসের ধাক্কা ও বায়ুতাড়িত জোয়ারের তোড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে নিুাঞ্চলের শত শত গ্রাম তলিয়ে গেছে। ভেঙে পড়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি। ভেসে গেছে ঘেরের মাছ। নষ্ট হয়েছে উঠতি ফসল। বিভিন্ন স্থানে গাছ থেকে ঝরে পড়েছে মৌসুমি ফল। জোয়ারের পানিতে ডুবে এবং গাছ উপড়ে পড়ে বিভিন্ন স্থানে ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, যাদের বিশরভাগই শিশু। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খুলনার কয়রা ও বাগেরহাটের মোংলা এলাকা। ঝড়ের তাণ্ডবে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এখন প্রয়োজন ইয়াসের আঘাতে উপকূলীয় অঞ্চলে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের পাশে দাঁড়ানো। যাদের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। বারবার ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চলে টেকসই বাঁধ নির্মাণ কতটা জরুরি। ষাটের দশকে নির্মিত উপকূল রক্ষার বাঁধ এখন নাজুক হয়ে পড়েছে, যে কথা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন। বিভিন্ন সময়ে ঘূর্ণিঝড়ে যেসব বাঁধ ভেঙে গেছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো এখনো টেকসইভাবে মেরামত করা সম্ভব হয়নি। বস্তুত এখন সংস্কার বা মেরামতের চেয়েও বেশি জরুরি উপকূলজুড়ে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা। ঘূর্ণিঝড় আমাদের নিত্যসঙ্গী। কাজেই এ বিষয়ে দীর্ঘসূত্রতার সুযোগ নেই। অন্তত যেসব এলাকা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে, সেসব এলাকার বাঁধ দ্রুত পুনর্র্নিমাণের উদ্যোগ নিতে হবে। ইতঃপূর্বে ভেঙে যাওয়া অনেক বাঁধ জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা হয়েছে। ফলে সেগুলো ভেঙে পড়ার ঝুঁকি সবসময়ই বেশি। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব থেকে উপকূলীয় এলাকাকে রক্ষার সবচেয়ে বড় উপায় হল মজবুত ও সুউচ্চ বাঁধ। সরকারকে এদিকে দৃষ্টি দিতে হবে অবিলম্বে।
যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে আগাম ব্যবস্থা, সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ক্ষেত্রে আগাম ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে আমরা দেখেছি, উপকূলীয় অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিল। সরকারের প্রচারণা ও আগাম সতর্কতামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপে মানুষ যে সতর্ক হয়ে উঠছে, এটি তারই প্রমাণ। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রেই আগাম ও পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিকল্প নেই। কারণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ বা বন্ধ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে পূর্বপ্রস্তুতি ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব। দেশে এমন এক সময় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানল, যখন করোনা মহামারি সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনকে। তা সত্ত্বেও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ত্রাণ প্রেরণ এবং তাদের পুনর্বাসনে নিতে হবে দ্রুত পদক্ষেপ। ত্রাণ কাজ স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালিত হতে হবে। এমনিতেই করোনার কারণে বহু মানুষের আয়-রোজগারের পথ হয়ে গেছে বন্ধ। তার ওপর ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে অনেকের কৃষিক্ষেত্র, গবাদিপশু ও মৎস্য চাষের ক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রশাসনের পাশাপাশি এনজিওগুলোও ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে এসে দাঁড়াবে, এটিই কাম্য।