ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

মানবতার কবি নজরুল

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২৩:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মে ২০২১
  • / ১৩৪ বার পড়া হয়েছে

এগিয়ে যাক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ
আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন। প্রেমের কবি, দ্রোহের কবি হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত। অসাম্প্রদায়িক এই কবির অবস্থান প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে। শুধু কবিতা নয়, উপমহাদেশের রাজনীতিতেও নজরুল অসামান্য অবদান রেখেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নজরুল ছিলেন রণাঙ্গনের প্রেরণা। তাঁর কবিতা ও গান মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সাহস ও প্রেরণা জুগিয়েছে দেশের মুক্তিকামী মানুষকে। ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁর গদ্য রচনায়ও নানাভাবে তিনি ধর্মীয় সম্প্রীতির কথাই বলেছেন। একটি অভিভাষণে তিনি বলেছেন, ‘কেউ বলেন আমার বাণী যবন, কেউ বলেন কাফের। আমি বলি ও দুটোর কিছুই নয়। আমি মাত্র হিন্দু-মুসলমানকে এক জায়গায় ধরে এনে হ্যান্ডশেক করাবার চেষ্টা করেছি, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি।’ আবার কবিতায় তিনি লিখেছেন : ‘মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান।/মুসলিম তার নয়ন-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ।’ লিখেছেন “হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন্ জন?/কাণ্ডারী! বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’র!” দারিদ্র্য, অসাম্য, বিদেশি শাসন-শোষণ, বর্ণবাদ, ধর্মের অসৎ ব্যবহার, সাম্প্রদায়িকতা ও উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন তিনি। বিশ্বজোড়া ‘জাতের নামে বজ্জাতি’, ধর্মবিশ্বাসের অপব্যবহার, ক্ষমতার শীর্ষস্থান অধিকারের জন্য ধর্মের অপব্যবহারÍএসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন নজরুল। বাঙালি জীবনে ধর্ম-বর্ণ-আচার-কৃষ্টি-নির্বিশেষে নজরুল সব ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও গোত্রের কাছে প্রায় সমানভাবে গ্রহণযোগ্য। এককালে তাঁকে যারা কাফের ফতোয়া দিয়েছে, ‘পাজিটার জাত মেরে’ দিতে চেয়েছে, তারাই আজ তাঁকে ধর্মীয় ঐতিহ্য ও পুনর্জাগরণের কবি হিসেবে আখ্যায়িত করছে। তাঁকে স্মরণ করতে হলে মানবধর্মের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার প্রতিবন্ধকতা খতিয়ে দেখা জরুরি। এটা শুধু বাঙালির দায়িত্ব নয়, মনুষ্যত্বধারী সব মানুষের অবশ্যকর্তব্য। তিনি যুবসমাজকে বলছেন এগিয়ে আসতে। লিখেছেন, ‘কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যৎ।’ ভবিষ্যৎ এখনো হেঁকেই যাচ্ছে, তরুণরা এগিয়ে এসো, তোমাদের দায়িত্ব পালন করো। নজরুল বাংলাদেশের চির কাণ্ডারিদের হুঁশিয়ার করে লিখেছেন : ‘গিরি-সঙ্কট, ভীরু যাত্রীরা, গুরু গরজায় বাজ,/পশ্চাৎ-পথ-যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ!/কাণ্ডারী! তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ-মাঝ?/করে হানাহানি, তবু চলো টানি’, নিয়াছ যে মহাভার!’ বর্তমান বাংলাদেশেও নজরুল রচিত এই স্তবকটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আজ সংকট সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চলছে। বাংলাদেশের সার্বিক সাফল্য ম্লান করার জন্য একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী অপপ্রচারে লিপ্ত। ‘গুরু গরজায় বাজ’-এর মতো আজও ধর্মীয় মৌলবাদের আস্ফাালন শুনি চারদিকে। এ অবস্থায় যিনি দেশ পরিচালনার ‘মহাভার’ নিয়েছেন, তাঁর তো বিচলিত হওয়া চলবে না। নজরুল লিখেছেন, ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, আর হাতে রণ-তূর্য।’ একটি গণতান্ত্রিক সমাজে এই বৈপরীত্যকে মিলিয়ে রণ-তূর্যকে বাঁশিতে পরিণত করাই একজন গণতন্ত্রীর কাজ। সত্যিকারের মানবিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নজরুল আমাদের পথের দিশারি। জন্মদিনে তাঁকে আমাদের শ্রদ্ধা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

মানবতার কবি নজরুল

আপলোড টাইম : ১০:২৩:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মে ২০২১

এগিয়ে যাক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ
আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন। প্রেমের কবি, দ্রোহের কবি হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত। অসাম্প্রদায়িক এই কবির অবস্থান প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে। শুধু কবিতা নয়, উপমহাদেশের রাজনীতিতেও নজরুল অসামান্য অবদান রেখেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নজরুল ছিলেন রণাঙ্গনের প্রেরণা। তাঁর কবিতা ও গান মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সাহস ও প্রেরণা জুগিয়েছে দেশের মুক্তিকামী মানুষকে। ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁর গদ্য রচনায়ও নানাভাবে তিনি ধর্মীয় সম্প্রীতির কথাই বলেছেন। একটি অভিভাষণে তিনি বলেছেন, ‘কেউ বলেন আমার বাণী যবন, কেউ বলেন কাফের। আমি বলি ও দুটোর কিছুই নয়। আমি মাত্র হিন্দু-মুসলমানকে এক জায়গায় ধরে এনে হ্যান্ডশেক করাবার চেষ্টা করেছি, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি।’ আবার কবিতায় তিনি লিখেছেন : ‘মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান।/মুসলিম তার নয়ন-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ।’ লিখেছেন “হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন্ জন?/কাণ্ডারী! বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’র!” দারিদ্র্য, অসাম্য, বিদেশি শাসন-শোষণ, বর্ণবাদ, ধর্মের অসৎ ব্যবহার, সাম্প্রদায়িকতা ও উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন তিনি। বিশ্বজোড়া ‘জাতের নামে বজ্জাতি’, ধর্মবিশ্বাসের অপব্যবহার, ক্ষমতার শীর্ষস্থান অধিকারের জন্য ধর্মের অপব্যবহারÍএসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন নজরুল। বাঙালি জীবনে ধর্ম-বর্ণ-আচার-কৃষ্টি-নির্বিশেষে নজরুল সব ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও গোত্রের কাছে প্রায় সমানভাবে গ্রহণযোগ্য। এককালে তাঁকে যারা কাফের ফতোয়া দিয়েছে, ‘পাজিটার জাত মেরে’ দিতে চেয়েছে, তারাই আজ তাঁকে ধর্মীয় ঐতিহ্য ও পুনর্জাগরণের কবি হিসেবে আখ্যায়িত করছে। তাঁকে স্মরণ করতে হলে মানবধর্মের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার প্রতিবন্ধকতা খতিয়ে দেখা জরুরি। এটা শুধু বাঙালির দায়িত্ব নয়, মনুষ্যত্বধারী সব মানুষের অবশ্যকর্তব্য। তিনি যুবসমাজকে বলছেন এগিয়ে আসতে। লিখেছেন, ‘কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যৎ।’ ভবিষ্যৎ এখনো হেঁকেই যাচ্ছে, তরুণরা এগিয়ে এসো, তোমাদের দায়িত্ব পালন করো। নজরুল বাংলাদেশের চির কাণ্ডারিদের হুঁশিয়ার করে লিখেছেন : ‘গিরি-সঙ্কট, ভীরু যাত্রীরা, গুরু গরজায় বাজ,/পশ্চাৎ-পথ-যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ!/কাণ্ডারী! তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ-মাঝ?/করে হানাহানি, তবু চলো টানি’, নিয়াছ যে মহাভার!’ বর্তমান বাংলাদেশেও নজরুল রচিত এই স্তবকটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আজ সংকট সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চলছে। বাংলাদেশের সার্বিক সাফল্য ম্লান করার জন্য একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী অপপ্রচারে লিপ্ত। ‘গুরু গরজায় বাজ’-এর মতো আজও ধর্মীয় মৌলবাদের আস্ফাালন শুনি চারদিকে। এ অবস্থায় যিনি দেশ পরিচালনার ‘মহাভার’ নিয়েছেন, তাঁর তো বিচলিত হওয়া চলবে না। নজরুল লিখেছেন, ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, আর হাতে রণ-তূর্য।’ একটি গণতান্ত্রিক সমাজে এই বৈপরীত্যকে মিলিয়ে রণ-তূর্যকে বাঁশিতে পরিণত করাই একজন গণতন্ত্রীর কাজ। সত্যিকারের মানবিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নজরুল আমাদের পথের দিশারি। জন্মদিনে তাঁকে আমাদের শ্রদ্ধা।