ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

বেকারত্ব ও দারিদ্র্যে বেহাল মানুষ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:১৪:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ মে ২০২১
  • / ১২২ বার পড়া হয়েছে

নেই পর্যাপ্ত ত্রাণসহায়তা
মহামারিজনিত নতুন পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য মানুষ খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। তেমন আয়ের সংস্থান না থাকায় বাধ্য হয়ে আধাপেটা কিংবা কোনোবেলা না খেয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন মানুষ। বেঁচে থাকার জন্য অনেকে নিজের স্থাবর সম্পত্তি পর্যন্ত বিক্রি করে দিচ্ছেন। গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও অক্সফাম ইন বাংলাদেশ যৌথভাবে পরিচালিত এক জরিপে দরিদ্র জনসাধারণের এই দুরবস্থার কথা জানা যাচ্ছে। জরিপটি চালানো হয়েছে গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। অর্থাৎ এটি কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার আগেই করা হয়েছে। নতুন করে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর সরকার কয়েক সপ্তাহ কঠোর লকডাউন দিয়ে রেখেছে। এ অবস্থায় মানুষ নতুন করে কর্মসংস্থান হারিয়ে আরো বেশি বিপদের মধ্যে পড়েছে। অথচ সরকারি ত্রাণসহায়তাও বাড়েনি। আয় ও কর্মসংস্থান নিয়ে এই জরিপটি পরিচালনা করা হয়। শহর ও গ্রাম মিলিয়ে দুই হাজার ৬০০ খানার ওপর জরিপ চালানো হয়েছে। তাতে দেখা যায়- ৬২ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে কাজ হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে ভিন্ন আদলে অনেকে কর্মসংস্থান ফিরে পেয়েছেন। তবে আগের সেই সুযোগ সুবিধা নেই। বেতন-ভাতা কমে গেছে। তাদের কর্মঘণ্টা কমে গেছে। এ অবস্থায় তারা চলার জন্য ঋণ করছেন। ৫ শতাংশ মানুষ সম্পদ বিক্রি করে দিয়েছেন প্রয়োজন মেটানোর জন্য। ৭৮ শতাংশ মানুষ খরচ কমিয়ে ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। ৫২ শতাংশ মানুষ তা করার চেষ্টা করছেন খাওয়া কমিয়ে দিয়ে। বেশি বয়সী লোকেরা বেশি আয় হারিয়েছেন। অর্থাৎ কোভিডের নতুন পরিস্থিতিতে মানুষ বয়স্ক লোকদের দিয়ে অল্পদামে কাজ করিয়ে নিচ্ছে। প্রবীণ ও বুড়োরা কোভিডের বেশি শিকার। সমাজের একেবারে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আয়ও বেশি কমেছে। যারা আড়াই থেকে সাড়ে সাত হাজার টাকা আয় করতেন তাদের ২২ থেকে ২৮ শতাংশ আয় কমে গেছে।
জরিপে আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় ছিল- কৃষিতে নতুন কর্মসংস্থান। সেবা খাত ও অন্যান্য খাত থেকে কাজ হারিয়ে মানুষ কৃষিতে নিয়োজিত হচ্ছেন। কৃষিতে এর ফলে উদ্বৃত্ত উৎপাদন হচ্ছে- এমন খবর নেই। বরং জানা যাচ্ছে, কৃষি খাতে উদ্বৃত্ত শ্রমিক সৃষ্টি হয়েছে। এ দিকে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। লাখ লাখ উচ্চশিক্ষিত যুবক এখন বেকার। এদের মধ্যে বড় একটি অংশ ঢাকা চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোতে ছোটখাটো অস্থায়ী চাকরি কিংবা টিউশনি করে জীবিকা নির্বাহ করত। মহামারী কোভিডের প্রথম ধাক্কায় তারা চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে রয়েছে মাসের পর মাস। চাকরিতে নিয়োগ না থাকায় এদের বিরাট একটা অংশের চাকরির বয়সসীমা পার হয়ে যাচ্ছে। বিপুলসংখ্যক বেকার জনগোষ্ঠী এখন হতাশায় ভুগছে। সংবাদমাধ্যমে চাকরিপ্রত্যাশী তরুণদের হতাশার খবর প্রায়ই প্রকাশিত হচ্ছে। এভাবে কর্মক্ষম একটি বিরাট জনগোষ্ঠী যদি নিষ্কর্মা হয়ে যায়, জাতির জন্য এর চেয়ে বেশি হতাশার আর কিছু থাকতে পারে না। কর্মসংস্থান নিয়ে উপরিউক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে- এসব জরিপের কার্যকারিতা কী? সরকার কি এই জরিপের ফলাফল আমলে নিয়ে কাজ করে? তারা তো তাদের নিজেদের ইচ্ছেমতো কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছে। এই জরিপ ছাড়াও কোভিডের বিপদের মধ্যে আরো অনেকগুলো জরিপ পরিচালিত হয়েছে। প্রত্যেকটি জরিপে একই ধরনের ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। তাতে দেখা যায়, দেশের জনগণের বিরাট একটি অংশ নতুন করে দরিদ্র হয়ে গেছে। এর সাথে আগের দরিদ্ররা তো রয়েছেই। তাদের অনেকে নিত্যদিন খাওয়ার সামগ্রীও সংগ্রহ করতে পারছে না। সরকার গতানুগতিকভাবে ত্রাণ ও সহায়তা কার্যক্রম চালাচ্ছে। এতে সব মানুষ যে সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে আসতে পারছে না, সেটা ভালো করে অনুমান করা যায়। এ জন্য ব্যাপক ও কার্যকর জরুরি প্রণোদনা কার্যক্রম দরকার।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

বেকারত্ব ও দারিদ্র্যে বেহাল মানুষ

আপলোড টাইম : ০৮:১৪:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ মে ২০২১

নেই পর্যাপ্ত ত্রাণসহায়তা
মহামারিজনিত নতুন পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য মানুষ খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। তেমন আয়ের সংস্থান না থাকায় বাধ্য হয়ে আধাপেটা কিংবা কোনোবেলা না খেয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন মানুষ। বেঁচে থাকার জন্য অনেকে নিজের স্থাবর সম্পত্তি পর্যন্ত বিক্রি করে দিচ্ছেন। গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও অক্সফাম ইন বাংলাদেশ যৌথভাবে পরিচালিত এক জরিপে দরিদ্র জনসাধারণের এই দুরবস্থার কথা জানা যাচ্ছে। জরিপটি চালানো হয়েছে গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। অর্থাৎ এটি কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার আগেই করা হয়েছে। নতুন করে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর সরকার কয়েক সপ্তাহ কঠোর লকডাউন দিয়ে রেখেছে। এ অবস্থায় মানুষ নতুন করে কর্মসংস্থান হারিয়ে আরো বেশি বিপদের মধ্যে পড়েছে। অথচ সরকারি ত্রাণসহায়তাও বাড়েনি। আয় ও কর্মসংস্থান নিয়ে এই জরিপটি পরিচালনা করা হয়। শহর ও গ্রাম মিলিয়ে দুই হাজার ৬০০ খানার ওপর জরিপ চালানো হয়েছে। তাতে দেখা যায়- ৬২ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে কাজ হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে ভিন্ন আদলে অনেকে কর্মসংস্থান ফিরে পেয়েছেন। তবে আগের সেই সুযোগ সুবিধা নেই। বেতন-ভাতা কমে গেছে। তাদের কর্মঘণ্টা কমে গেছে। এ অবস্থায় তারা চলার জন্য ঋণ করছেন। ৫ শতাংশ মানুষ সম্পদ বিক্রি করে দিয়েছেন প্রয়োজন মেটানোর জন্য। ৭৮ শতাংশ মানুষ খরচ কমিয়ে ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। ৫২ শতাংশ মানুষ তা করার চেষ্টা করছেন খাওয়া কমিয়ে দিয়ে। বেশি বয়সী লোকেরা বেশি আয় হারিয়েছেন। অর্থাৎ কোভিডের নতুন পরিস্থিতিতে মানুষ বয়স্ক লোকদের দিয়ে অল্পদামে কাজ করিয়ে নিচ্ছে। প্রবীণ ও বুড়োরা কোভিডের বেশি শিকার। সমাজের একেবারে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আয়ও বেশি কমেছে। যারা আড়াই থেকে সাড়ে সাত হাজার টাকা আয় করতেন তাদের ২২ থেকে ২৮ শতাংশ আয় কমে গেছে।
জরিপে আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় ছিল- কৃষিতে নতুন কর্মসংস্থান। সেবা খাত ও অন্যান্য খাত থেকে কাজ হারিয়ে মানুষ কৃষিতে নিয়োজিত হচ্ছেন। কৃষিতে এর ফলে উদ্বৃত্ত উৎপাদন হচ্ছে- এমন খবর নেই। বরং জানা যাচ্ছে, কৃষি খাতে উদ্বৃত্ত শ্রমিক সৃষ্টি হয়েছে। এ দিকে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। লাখ লাখ উচ্চশিক্ষিত যুবক এখন বেকার। এদের মধ্যে বড় একটি অংশ ঢাকা চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোতে ছোটখাটো অস্থায়ী চাকরি কিংবা টিউশনি করে জীবিকা নির্বাহ করত। মহামারী কোভিডের প্রথম ধাক্কায় তারা চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে রয়েছে মাসের পর মাস। চাকরিতে নিয়োগ না থাকায় এদের বিরাট একটা অংশের চাকরির বয়সসীমা পার হয়ে যাচ্ছে। বিপুলসংখ্যক বেকার জনগোষ্ঠী এখন হতাশায় ভুগছে। সংবাদমাধ্যমে চাকরিপ্রত্যাশী তরুণদের হতাশার খবর প্রায়ই প্রকাশিত হচ্ছে। এভাবে কর্মক্ষম একটি বিরাট জনগোষ্ঠী যদি নিষ্কর্মা হয়ে যায়, জাতির জন্য এর চেয়ে বেশি হতাশার আর কিছু থাকতে পারে না। কর্মসংস্থান নিয়ে উপরিউক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে- এসব জরিপের কার্যকারিতা কী? সরকার কি এই জরিপের ফলাফল আমলে নিয়ে কাজ করে? তারা তো তাদের নিজেদের ইচ্ছেমতো কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছে। এই জরিপ ছাড়াও কোভিডের বিপদের মধ্যে আরো অনেকগুলো জরিপ পরিচালিত হয়েছে। প্রত্যেকটি জরিপে একই ধরনের ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। তাতে দেখা যায়, দেশের জনগণের বিরাট একটি অংশ নতুন করে দরিদ্র হয়ে গেছে। এর সাথে আগের দরিদ্ররা তো রয়েছেই। তাদের অনেকে নিত্যদিন খাওয়ার সামগ্রীও সংগ্রহ করতে পারছে না। সরকার গতানুগতিকভাবে ত্রাণ ও সহায়তা কার্যক্রম চালাচ্ছে। এতে সব মানুষ যে সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে আসতে পারছে না, সেটা ভালো করে অনুমান করা যায়। এ জন্য ব্যাপক ও কার্যকর জরুরি প্রণোদনা কার্যক্রম দরকার।